ধরুন, কেউ আপনাকে বলল—“তুমি এমন একটা রঙ দেখেছো, যা আদৌ দেখা সম্ভব নয়।” কেমন লাগবে? গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠবে নিশ্চয়। অথচ বিজ্ঞান এখন এমনই এক অদ্ভুত রঙের খোঁজ দিয়েছে, যার অস্তিত্ব আছে, কিন্তু আপনি তা দেখতে পারবেন না—যদি না আপনার চোখে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে লেজার রশ্মি নিক্ষেপ করা হয়।
এই রহস্যময় রঙটির নাম বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন “ওলো” (Olo)। এটা এমন একটি রঙ যা মানুষের চোখের সাধারণ সীমার বাইরে—অর্থাৎ, স্বাভাবিকভাবে আমরা যে তিন ধরনের কন কোষ (S, M, L cone) দিয়ে রঙ দেখতে পাই, তাদের একটির একক উদ্দীপনায় এই রঙ দেখা যায়, যা প্রাকৃতিক আলোয় সম্ভব নয়। আমাদের চোখ তিন ধরনের কোষ ব্যবহার করে রঙ চেনার কাজ করে—S, M, এবং L cone। প্রতিটি কোষ আলোর একটি নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যে সাড়া দেয়। কিন্তু “ওলো” দেখা যায় তখন, যখন শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট কোষকে—M cone—উদ্দীপিত করা হয়।
কোথায় এবং কীভাবে এটি আবিষ্কৃত হলো?
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেন এনজি ও তাঁর গবেষক দল একটি যন্ত্র তৈরি করেছেন, যার নাম “Oz”। এই যন্ত্র অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে চোখের মধ্যে লেজার পাঠিয়ে নির্দিষ্ট একটি কন কোষকে এককভাবে সক্রিয় করে। এই উপায়ে তারা যখন M cone-এ আলো পাঠান, তখন গবেষণা অংশগ্রহণকারীরা এমন একটি রঙ দেখেন যা তারা আগে কখনোই দেখেননি।
তাদের ভাষায়, এটি ছিল একটি অসম্ভব পরিপূর্ণ, নীল-সবুজ রঙ—যেমনটি তারা আগে কখনোই দেখেননি। এক গবেষণা অংশগ্রহণকারী বলেছিলেন, “এটা এমন যেন আপনার চোখে কেউ রঙের এক নতুন স্তর যোগ করে দিয়েছে, যা স্ক্রিনে বা বাস্তব জীবনে কল্পনাও করা যায় না।” কেউ কেউ এটিকে ‘বেজোড় রঙ’ বলেও অভিহিত করেন, কারণ এটি চোখে পরিচিত রঙের গণ্ডি পেরিয়ে এক অজানা অনুভূতি তৈরি করে। এতটা তীব্র এবং প্রাণবন্ত যে, কোনো স্ক্রিন বা রঙের প্যালেট তা অনুকরণ করতে পারে না।
কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ?
এটি শুধু একটি নতুন রঙ দেখার বিষয় নয়। এই আবিষ্কার আমাদের চোখের সীমাবদ্ধতা এবং মস্তিষ্কের ব্যাখ্যা পদ্ধতি সম্পর্কে নতুন প্রশ্ন তোলে। আমরা কি সত্যিই সব রঙ দেখতে পাই? না কি চোখ ও মস্তিষ্ক মিলে আমাদের এমন একটি বাস্তবতা দেখায়, যা সত্যিকারের সম্পূর্ণ নয়?
এছাড়া, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি রঙ-অন্ধতা নিরাময়, চাক্ষুষ সিমুলেশন, এবং নতুন ধরনের চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
শেষ কথা
আমরা জানি যে মহাবিশ্বের অনেক কিছুই আমাদের চোখে পড়ে না—ইনফ্রারেড, আল্ট্রাভায়োলেট, বা রেডিও ওয়েভের মতো। যেমন ধরুন, ইনফ্রারেড আলো আমরা দেখতে না পারলেও, এই আলো ব্যবহার করে রাতের চশমা বা সেন্সর ক্যামেরা দিয়ে অন্ধকারেও দেখা সম্ভব হয়। কিন্তু এবার দেখা গেল, দৃশ্যমান আলোর মধ্যেই এমন কিছু রঙ লুকিয়ে রয়েছে, যা শুধু লেজারের নিখুঁত কারিগরিতেই ধরা দেয়।
“ওলো” তাই শুধু একটি রঙ নয়—এটা আমাদের চেনা জগতের সীমারেখা পেরিয়ে এক নতুন বাস্তবতার দরজা খুলে দেয়।
আপনি কি কখনো “ওলো” দেখতে চান? ভবিষ্যতের কোনো অপটিকাল মিউজিয়ামে হয়তো এমন একটি অভিজ্ঞতা আপনার অপেক্ষায় থাকবে!
বিজ্ঞানী অর্গ-এ এমনই আরও বিস্ময়কর আবিষ্কারের খবর নিয়মিত পেতে চোখ রাখুন।
Leave a comment