পরিবেশ ও পৃথিবীসাধারণ বিজ্ঞান

সমুদ্র বনাম গাছ: অক্সিজেন উৎপাদনে কে এগিয়ে?

Share
Share

নিশ্বাসে নেওয়া অক্সিজেন আমাদের জীবনের জন্য অত্যাবশ্যক, কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না এই অক্সিজেনের প্রকৃত উৎস কোথা থেকে আসে। অনেকের ধারনা, গাছই পৃথিবীর প্রধান অক্সিজেন সরবরাহকারী। তবে বিজ্ঞান বলছে, আসল হিরো হলো সমুদ্র

১. ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের জগৎ

সমুদ্রের তলদেশে চোখে দেখা যায় না এমন কোটি কোটি ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন বাস করে। এগুলো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এক ধরনের সামুদ্রিক উদ্ভিদ যারা সূর্যালোক পেলে ফটোসিন্থেসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অক্সিজেন তৈরি করে।

  • ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন গাছের মতোই কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে।
  • এরপর সূর্যের আলো দিয়ে অক্সিজেন ও গ্লুকোজ তৈরি করে।
  • এই প্রক্রিয়ায় যে বিশাল পরিমাণ অক্সিজেন তৈরি হয়, তা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।

প্রায় ৭০% বাতাসের অক্সিজেন এভাবেই সমুদ্র থেকে আসে।

২. বনভূমি ও গাছপালা কী ভূমিকা রাখে?

বিশ্বের বড় বড় রেইনফরেস্ট যেমন আমাজন বন (যাকে অনেকে “পৃথিবীর ফুসফুস” বলেন), অনেকটা অক্সিজেন তৈরি করে ঠিকই, কিন্তু:

  • গাছপালাও রাতে ও নিজের কোষীয় কাজের জন্য অক্সিজেন খরচ করে।
  • গাছ থেকে উৎপন্ন অক্সিজেন পৃথিবীর মোট চাহিদার আনুমানিক ২০%–৩০%

৩. বাস্তব সংখ্যা ও গবেষণা

  • প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ৫৫০ বিলিয়ন টন অক্সিজেন উৎপন্ন হয়।
  • এর মধ্যে ৩০০–400 বিলিয়ন টন আসে সামুদ্রিক জীব থেকে, বিশেষ করে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন ও শৈবাল থেকে।

তাহলে কেন গাছ রোপণ করা হয় প্রচুর?

এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। যদিও গাছ প্রধান অক্সিজেন উৎপাদনকারী নয়, তবে:

  • গাছ কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে যা গ্লোবাল ওয়ার্মিং হ্রাস করে।
  • ছায়া, বাসস্থান, খাদ্য, কাঠ এবং বহু প্রাকৃতিক সম্পদ দেয়।
  • তারা জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে এবং জলচক্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

অতএব, গাছ ও বনভূমি রক্ষা যেমন দরকার, তেমনি দরকার সমুদ্রের সুরক্ষা।

সমুদ্র এখন হুমকির মুখে

যদি আমরা সমুদ্রের এই অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রাণগুলোর পরিবেশ নষ্ট করি, তাহলে পৃথিবীর বাতাসে অক্সিজেনের ঘাটতি হতে পারে। আজ যে বিষয়গুলো সমুদ্রের ক্ষতি করছে:

  • প্লাস্টিক দূষণ
  • অত্যধিক মাছ ধরা
  • জলবায়ু পরিবর্তন ও উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়া
  • তেল নিঃসরণ ও কেমিক্যাল দূষণ

উপসংহার

গাছ নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সমুদ্র আমাদের বেঁচে থাকার জন্য আরও বড় ভূমিকা রাখে। তাই শুধু “গাছ লাগান” বললেই হবে না, বলতে হবে:

“গাছ লাগান, সমুদ্র বাঁচান—দু’টোই জীবন বাঁচায়।”

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
গল্পে গল্পে বিজ্ঞানপরিবেশ ও পৃথিবী

মরুভূমির বুকে হাজার বছরের রহস্যময় গাছ

ওয়েলউইটসিয়া মিরাবিলিসের হাজার বছরের পুরনো রহস্য আবিষ্কার করুন, মরুভূমির উদ্ভিদ যা তার...

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাপরিবেশ ও পৃথিবী

এআই ডিজাইন করা এনজাইম: প্লাস্টিক ধ্বংসের নতুন বিপ্লব!

আবিষ্কার করুন কিভাবে একটি বিপ্লবী AI-পরিকল্পিত এনজাইম প্লাস্টিককে ২৫ গুণ দ্রুত ভেঙে...

বিজ্ঞান বিষয়ক খবরসাধারণ বিজ্ঞান

জ্যোতিষশাস্ত্র বনাম বাস্তব বিজ্ঞান

জ্যোতিষশাস্ত্র কি বাস্তব নাকি শুধুই একটি মিথ? বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে রাশিচক্র এবং...

সাধারণ বিজ্ঞানস্বাস্থ্য ও পরিবেশ

খাদ্য বিজ্ঞানের নামে প্রতারণা: অর্গানিক সুপারফুড ও ডিটক্স কতটা বিজ্ঞানসম্মত?

জৈব খাবার কি সত্যিই স্বাস্থ্যকর? সুপারফুড কি প্রচারের যোগ্য? ডিটক্স ডায়েট কি...

গবেষণায় হাতে খড়িপরিবেশ ও পৃথিবী

আর্কটিকের অন্ধকারেও গাছ খাদ্য তৈরি করতে পারে

ঘন বরফের নিচে চরম অন্ধকারে আর্কটিক শৈবাল কীভাবে বেঁচে থাকে তা আবিষ্কার...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.