[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””] বিজ্ঞানী.অর্গঃ বিজ্ঞানী.অর্গ এর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। আমাদেরকে সাক্ষাতকার দেবার জন্য ধন্যবাদ। প্রথমেই আপনার সম্বন্ধে আমাদের একটু বলুন।
মনজুরুল আমিন রনিঃ আপনাদেরকেও আমার আন্তরিক ধন্যবাদ। আমি বিগত দশ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণা ও শিক্ষকতার সাথে জড়িত। বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থিত হ্যাম্পটন ইউনিভার্সিটিতে ফার্মাসিউটিকাল সাইন্স বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কৰ্মরত আছি। অধ্যাপনার স্বীকৃতি স্বরূপ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশ কিছু সম্মাননা পেয়েছি যার মধ্যে প্রফেসর অব দা ইয়ার এবং একাডেমিক এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড উল্লেখযোগ্য।
যুক্তরাষ্ট্রে আমি প্রথম আসি ২০০৯ সালে সাউথ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হতে। সেখান থেকে অধ্যাপক শফিকুর রহমানের অধীনে পাঁচ বছর পর পিএইচডি ডিগ্রী (ফার্মাসিউটিকাল সাইন্স) সম্পন্ন করি। আমার পিএইচডি গবেষণা থেকে ছয়টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে আসার পূর্বে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৩ সালে ফার্মেসীতে বি.ফার্ম এবং ২০০৪ সালে এম.ফার্ম ডিগ্রী গ্রহণ করে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসী বিভাগে লেকচারার পদে নিয়োজিত ছিলাম। [/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””] বিজ্ঞানী.অর্গঃ আপনি মূলত একজন ফার্মাসিস্ট কিন্তু সেখানে সীমাবদ্ধ না থেকে আপনি প্রচুর গবেষণা করছেন। কি আপনাকে গবেষক হতে অনুপ্রাণিত বা উদ্বুদ্ধ করেছে?
মনজুরুল আমিন রনিঃ ফার্মাসিস্ট হিসেবে কর্মজীবনের শুরুতেই আমি গবেষণাকে বেছে নিয়েছিলাম মূলত নিত্য নতুন বিষয়কে জানার অদম্য আগ্রহ থেকে। ফার্মেসিতে ব্যাচেলর ডিগ্রী নেয়ার পর আমি বছর খানেক কাজ করেছি বাংলাদেশের প্রথম সারির একটি ওষুধ কোম্পানির ফর্মুলেশন ডেভেলপমেন্ট বিভাগে। সেখানে আমি extended release drug delivery এবং drug stability এর উপর গবেষণা করার সুযোগ পাই যা পরে আমার মাস্টার্স এর থিসিসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পরবর্তীতে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার থিসিস সুপারভাইজার অধ্যাপক রেজা উল জলীলের সহযোগিতায় গবেষণা চালু রাখি। সংক্ষেপে বলতে গেলে গবেষক হওয়ার অনুপ্রেরণা ছিল নতুন কিছু জানার আগ্রহ, আমার সম্মানিত শিক্ষকবর্গ ও পরিবারের সকলের সমৰ্থন। যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণার ব্যাপারে বন্ধু মামুনুর রশিদের দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণাও উল্লেখযোগ্য। [/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””] বিজ্ঞানী.অর্গঃ Pharmacology বিষয়টি সম্বন্ধে আমাদের বলুন।
মনজুরুল আমিন রনিঃ pharmacology হচ্ছে ফার্মেসির অন্যতম একটি শাখা যা ফার্মাসিস্ট সহ health professionals দের ওষুধের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে অবহিত করে । একটি ওষুধ কিভাবে কাজ করে (mechanism of action), ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া (side effects), কখন ওষুধ ব্যবহার করবেন (indication), কখন ব্যবহার করা যাবেনা (contraindication), এক ওষুধের সাথে অন্য ওষুধ যোগ করলে কি হতে পারে (drug interaction), দেহ কিভাবে ওষুধকে ধাপে ধাপে পরিবর্তন করে (pharmacokinetics) ইত্যাদি বিষয় pharmacology তে শেখানো হয়। [/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””] বিজ্ঞানী.অর্গঃ আপনি একজন ফার্মাসিস্ট হিসাবে নিউরোসায়েন্স ক্ষেত্রে কি ধরনের গবেষণা করছেন?
মনজুরুল আমিন রনিঃ আমি নিউরোসায়েন্সএর ফলিত শাখা neuropharmacology/psychopharmacology নিয়ে গবেষণা করেছি। [/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””] বিজ্ঞানী.অর্গঃ আপনি ড্রাগ ডেলিভারি নিয়ে বেশ কিছু গবেষণা করেছেন। এই বিষয়টি সমন্ধে আমাদের একটু বলুন। কি ধরনের গবেষণা করছেন এবং কোন সমস্যাটি আপনারা সমাধান করতে চাচ্ছেন?
মনজুরুল আমিন রনিঃ ড্রাগ ডেলিভারি নিয়ে আমাদের কাজের ক্ষেত্র ছিল dissolution enhancement of poorly soluble drugs । নতুন আবিষ্কৃত বেশিরভাগ ওষুধই poorly soluble বা পানিতে কম দ্রবীভূত হয়, যার ফলে আমাদের দেহে এসব ওষুধ ভালোভাবে শোষিত ( absorb) হয়না । বিভিন্ন সহকারী উপাদান (excipient) দিয়ে ওষুধের দ্রাব্যতা ( solubility) বৃদ্ধি করতে না পারলে ওষুধের কার্যকারিতা মারাত্মক ভাবে কমে যায়। আমরা self-emulsification এবং solid dispersion পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে কিছু ওষুধের দ্রাব্যতা বৃদ্ধি করতে সফল হয়েছি যা সেসব ওষুধের কার্যকারিতা বাড়াতে ভূমিকা রাখবে। [/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””] বিজ্ঞানী.অর্গঃ Psychopharmacology নিয়ে আপনি কিছু গবেষণা করছেন। এই বিষয়টি সম্বন্ধে আমাদের বলুন।
মনজুরুল আমিন রনিঃ psychopharmacology গবেষণার উদ্দেশ্য মূলত বিষন্নতার মতো মানসিক রোগের প্রতিকারের জন্য অধিক কার্যকরী নতুন ওষুধ উদ্ভাবন। বিষন্নতার চিকিৎসায় বর্তমানে যেসব ওষুধ ব্যবহার করা হয় তার কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। বিষন্নতার ওষুধগুলো সেবনের ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ পর কাজ করা শুরু করে এবং এদের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও অনেক বেশি। আমরা এমন ওষুধ উদ্ভাবন করতে চাই যা এই সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করবে। পরীক্ষামূলক ভাবে আমরা এক নতুন ধরণের ড্রাগ মেরুদণ্ডী প্রাণীর উপর প্রয়োগ করে ইতিবাচক ফলাফল পেয়েছি। আমাদের গবেষণার আরেকটি বিষয় হচ্ছে alcohol আসক্তির প্রতিকার। আমাদের পরীক্ষামূলক ড্রাগ alcohol আসক্তি এবং alcohol জনিত বিষন্নতা উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস করে। মানবদেহে ব্যবহারের পূর্বে এই ড্রাগ মস্তিষ্কে কি কি প্রভাব বিস্তার করে তা নিয়ে আরো গবেষণা করা প্রয়োজন।[/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””] বিজ্ঞানী.অর্গঃ আপনি বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক জার্নাল Neuroscience Letters এর সাথে সংযুক্ত আছেন এবং আপনি Elsevier Outstanding Reviewer হিসাবে সম্মাননাও পেয়েছেন। এই প্রাপ্তি সম্বন্ধে আমাদের বলুন।
মনজুরুল আমিন রনিঃ Neuroscience Letters জার্নালে reviewer হিসেবে আমার অবদানের জন্য ২০১৭ সালে Elsevier Outstanding Reviewer সম্মাননা পেয়েছিলাম। Neuropharmacology বিশেষজ্ঞ হিসেবে Neuroscience Letters এ সাবমিট করা বহু গবেষণা নিবন্ধের মান যাচাই এবং গবেষণার উপর বিস্তারিত মন্তব্য প্রদান করার জন্য জার্নালের সম্পাদক আমাকে আমন্ত্রণ জানান। Neuroscience Letters ছাড়াও আরো বারোটি জার্নালের reviewer এবং আটটি জার্নালের সম্পাদনা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। [/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””] বিজ্ঞানী.অর্গঃ ভবিষ্যতে কি নিয়ে কাজ করতে চান?
মনজুরুল আমিন রনিঃ ভবিষ্যতে আমার বর্তমান গবেষণার পাশাপাশি neuroscience এবং pharmacology বিষয়গুলো বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য আরো পরিচিত করার ইচ্ছা আছে। এসব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণার প্রচুর সুযোগ এবং ফান্ডিং বিদ্যমান। যুক্তরাষ্ট্রে অসংখ্য শিক্ষার্থী এসব বিষয়ে পূর্ণ ফান্ডিংসহ মাস্টার্স বা পিএইচডি করছে।
এই উদ্দেশ্য আমি নবগঠিত বাংলাদেশ নিউরোসায়েন্স সোসাইটির (http://www.bnss.org.bd/) সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেছি। এছাড়া তরুণ ফার্মেসী বা মেডিকেল শিক্ষার্থীরা যেন pharmacology সম্পর্কে আরো জানতে পারে তাদের জন্য একটি ওয়েবসাইটও তৈরী করা শুরু করেছি (pharmacoloz.com)। [/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””] বিজ্ঞানী.অর্গঃ তরুণ শিক্ষার্থী যারা বিজ্ঞানে কাজ করতে চায় তাদের জন্য আপনার কোন উপদেশ বা বক্তব্য কি?
মনজুরুল আমিন রনিঃ যারা বিজ্ঞানে কাজ করতে চায় তাদের জন্য আমার উপদেশ হলো বিজ্ঞানের যা কিছু জানবে এমন ভাবে জানবে যেন অন্য কাউকে সেটা শিখাতে পারো। মুখস্ত না করে বিষয়বস্তু বোঝার উপর জোর দাও। সবসময় ‘কেন’, ‘কিভাবে‘ ধরণের প্রশ্নের উত্তর খুঁজো। বিজ্ঞানী হতে হলে মেধার থেকে বেশি দরকার অসীম আগ্রহ, বিনয় ও কঠোর পরিশ্রম।
বাংলাদেশের বিজ্ঞানমনস্ক তরুণরা অনেক মেধাবী ও তারা অনেক কিছু করার ক্ষমতা রাখে। তারা শুধু সঠিক দিকনির্দেশনা ও সুযোগের অভাবে মেধাকে কাজে লাগাতে পারেনা। যেহেতু বিদেশে বিজ্ঞানচর্চার সুযোগ সুবিধা অনেকগুণ বেশি, তাই উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার প্রশিক্ষণের জন্য আমি বিদেশে যেতে উপদেশ দিবো।[/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””] বিজ্ঞানী.অর্গঃ আপনার সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুন গবেষকদের মাস্টার্স ও পিএইচডি তে ভর্তি হবার সুযোগ আছে কি? কোথায় যোগাযোগ করবে এবং এর জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে?
মনজুরুল আমিন রনিঃ হ্যাম্পটন ইউনিভার্সিটিতে বিভিন্ন বিষয়ে মাস্টার্স ও পিএইচডিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ আছে। এই বিষয়ে জানতে হলে graduate college এর ওয়েবসাইট এ তথ্য পাওয়া যাবে (http://www.hamptonu.edu/academics/schools/gradcol.cfm) । এসব বিষয়ে ভর্তির জন্য সাধারণত TOEFL এবং GRE পরীক্ষা দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হয় । [/box]
[divider style=”solid” top=”20″ bottom=”20″]
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে আরো নতুন নতুন সংবাদ জানতে সাবস্ক্রাইব করুন।
[mc4wp_form id=”3448″]
Leave a comment