একটি ফরাসি ট্রেন দ্রুতবেগে ছুটে চলায় বিশ্বরেকর্ড করেছে| ট্রেন গ্রান্ডে ভিতস Traine a Grande Vitesse
(TGV) নামের ওই ট্রেনটি গত মঙ্গলবার ঘণ্টায় ৩৫৬ মাইল (৫৭৪ কিমি) গতিতে ছুটে এ রেকর্ড গড়ে| ফরাসি সরকার আগেই ঘোষণা করেছিল, মঙ্গলবার ট্রেনটির পরীক্ষামূলক চলাচলের গতি রেকর্ড করা হবে|
ট্রেনটির নির্মাতা কোম্পানি অ্যালস্ট্রম জানায়, গতিবেগ রেকর্ডের আগে প্যারিস থেকে স্ট্র্যাসবুর্গ পর্যন্ত নতুন করে দ্রুতগতির উপযোগী রেললাইন বসানো হয়| পরীক্ষার দিন ট্রেনটি ওই লাইনে ছুটে চলে| এ সময় প্যারিস ও স্ট্র্যাসবুর্গে কয়েক হাজার উতসাহী মানুষ ট্রেনটি একনজর দেখার জন্য ভিড় করে| ট্রেনটি যাত্রা শুরু করলে জনতা মুহুর্মুহু তালি দিতে থাকে। পরিমাপক যন্ত্রে এর সর্বোচ্চ গতি উঠে ঘণ্টায় ৫৭৪ দশমিক ৮ কিমি। ট্রেনের গতির ক্ষেত্রে এটি একটি বিশ্বরেকর্ড|
২০০৩ সালে জাপানের অত্যাধুনিক চুম্বকীয় ম্যাগলেভ ট্রেন ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩৬১ মাইল (৫৮১ কিমি) অতিক্রমের রেকর্ড করে| রেকর্ড গড়ার খবর শুনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান|অ্যালস্টম আরও জানায়, আগে তাদের টিজিভি ট্রেনের রেকর্ড গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৩২০ দশমিক ২ মাইল| ট্রেনটিকে আধুনিক করা হয়েছে| এ নিয়ে বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষাও চলে| তবে জাপানি ট্রেনের গতিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই| কারণ জাপানের ম্যাগলেভ একটি অত্যাধুনিক চৌম্বকীয় ট্রেন| এ অবস্থায় ওই গতিবেগ ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা মানেই মারাত্মক ঝুঁকি নেওয়া| পরীক্ষা সফল হওয়ায় ট্রেন ব্যবসার ক্ষেত্রে অ্যালস্টম প্রতিপক্ষ কোম্পানির চেয়ে অনেক এগিয়ে যেতে পারবে| কারণ দামে কম অথচ দ্রুতগতির জন্য সারা বিশ্বে টিজিভি ট্রেনের চাহিদা অনেক| বিশেষ করে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান এ ধরনের ট্রেন বেশি আমদানি করে থাকে|
ফরাসি রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, ট্রেনটির ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে| পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেনটি কয়েক দফা চালানোও হয়েছিল| তখনো ট্রেনটি গতিতে রেকর্ড গড়েছিল| তবে তা সরকারিভাবে রেকর্ড করা হয়নি বলে শেষ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা চালানো হয়|
তথ্যসূত্র: এএফপি
প্রথম আলো ৫ এপ্রিল ২০০৭
এই খবরটির সাথে পাঠকদের সাথে দুটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি।
প্রথমটি হল বুলেট ট্রেন যাকে জাপানিজরা বলে শিনকানসেন (Shinkansen)। জাপানের সাধারণ ট্রেনগুলির পাশাপাশি এই বিশেষ দ্রুতগতি সম্পন্ন ট্রেনটি বড় বড় শহরগুলির মধ্যে যাতায়াতের জন্য বহুল পরিমানে ব্যবহৃত হয়। প্লেনের থেকেও বুলেট ট্রেন বেশী ব্যবহার হবার কারণ হল প্লেনের ক্ষেত্রে টিকেট, চেকআপ, অপেক্ষা ইত্যাদি কারণে বেশ সময় চলে যায় কিন্ত বুলেট ট্রেনে সেই সময়টা কম লাগে ফলে প্লেনের থেকে কম দ্রুত হলেও মোট সময় পরিমাপ করলে প্লেনের থেকে বুলেট ট্রেনে কম সময় লাগে। আমি নিজেও বেশ বুলেট ট্রেন ব্যবহার করেছি। এবং সত্যিই এত দ্রুত চলে অথচ কম কম্পন হয়। এত কম কম্পন হয় যে আপনি বুঝতেই পারবেননা যে আপনি ট্রেনে বসে আছেন।
এর পরের অভিজ্ঞতাটি হল লিনিয়ার ট্রেনের (যেটিকে প্রথম আলো চুম্বকীয় ম্যাগলেভ ট্রেন বলছে)অভিজ্ঞতা। লিনিয়ার ট্রেনে সাধারণ লোহার পাতের ট্রেনলাইনের পরিবর্তে চৌম্বক লাইন ব্যবহার করা হয়। এবং ট্রেনটির চাকাগুলিও চৌম্বকের। ট্রেনটি যখন চলে তখন ট্রেনটি ট্রেনলাইন থেকে দূরে ভাসমান অবস্থায় থাকে। যেহেতু সরাসরি চাকার সাথে ট্রেনলাইন সংযুক্ত হয়না তাই ঘর্ষণ জনিত রোধগুলি কমান যায়। লিনিয়ার ট্রেনটি মারাত্মক গতিতে চালান সম্ভব। যদিও জাপান এই ট্রেনটি নিয়ে অনেকদিন ধরেই গবেষনা করছে কিন্তু এটিকে এখনও বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহৃত হয়নি। তবে এই ট্রেনটিতে চলার অভিজ্ঞতা হয়েছিল নাগোয়াতে অনুষ্ঠিত এক্সপো অনুষ্ঠানে। সেটিতে পরিক্ষামূলক ভাবে চলবার সুযোগ দিয়েছিল। লিনিয়ার ট্রেনের কম্পন বুলেট ট্রেনের থেকেও অনেক কম।
উপরের খবরে গতি নিয়ে যে বিপদের কথা বলা হয়েছে তা একটু ব্যাখা করছি। যদি খুব বেশী দ্রুত হয় তবে সেরকম ট্রেনকে নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন এবং তাতে দূর্ঘটনা হবার সম্ভবনা বেশী থাকে। সমান্য সময়ের মধ্যে ট্রেনটি অনেক দূরে চলে যাবে তাই এই ভয়। এছাড়া আরো একটি সমস্যা হল মানুষ বেশী দ্রুত যানবাহনে চললে শরীরের মধ্যে বিভিন্ন বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে।