যুক্তরাষ্ট্রে সুপারকন্ডাকটিভিটির ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে, যা এটি নিয়ে পুনরায় সবাই নতুন ভাবে আশার আলো দেখতে যাচ্ছেন। বিজ্ঞানীরা নতুন ধরনের সুপারকন্ডাকটর উপাদানের আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন, যা আগের চেয়ে অনেক উচ্চ তাপমাত্রায় কাজ করতে সক্ষম। এই আবিষ্কারটি বিদ্যুত পরিবরন, ইলেকট্রনিক্স, এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে বিপ্লব ঘটাতে পারে।
সুপারকন্ডাকটিভিটি কী?
সুপারকন্ডাকটিভিটি হল একটি পদার্থগত অবস্থা যেখানে কোনো উপাদান (পদার্থ) কোনো বৈদ্যুতিক প্রতিরোধ ছাড়াই বিদ্যুৎ প্রবাহিত করতে সক্ষম হয়। সাধারণত, লোহা, তামা জাতীয় বিদ্যুত পরিবাহিপদার্থগুলোতে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে, বিদ্যুতের কিছু অংশ তাপ হিসাবে হারিয়ে যায়, যা শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু যখন একটি উপাদান সুপারকন্ডাকটিভ অবস্থায় থাকে, তখন এই শক্তি নষ্ট হবার পরিমান প্রায় শূন্য হয়ে যায়। এটি ১৯১১ সালে হেইকে কামারলিং অনেসের দ্বারা প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিল।
তাপমাত্রা এবং সুপারকন্ডাকটিভিটি
সুপারকন্ডাকটিভিটি সাধারণত খুব কম তাপমাত্রায় ঘটে, প্রায় -২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা এর চেয়েও নিচে। এই কম তাপমাত্রা বজায় রাখতে প্রচুর শক্তি এবং উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন হয়, যা এর ব্যবহারকে সীমাবদ্ধ করে। তাই, বিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরেই উচ্চ তাপমাত্রায় (বা সাধারণ ঘরের তাপমাত্রায়) ব্যবহার করা যাবে এমন সুপারকন্ডাকটিভ উপাদান খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন, যা বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে খরচ কমাতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন আবিষ্কার
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফর্নিয়া এর বিজ্ঞানী পেং ওয়ে একটি নতুন ধরনের সুপারকন্ডাকটর আবিষ্কার করেছেন যা তুলনামূলকভাবে অনেক উচ্চ তাপমাত্রায় সুপারকন্ডাকটিভ হতে পারে। এই আবিষ্কারটি নতুন প্রযুক্তি এবং উপাদানের ব্যবহারকে সামনে নিয়ে আসতে পারে, যা বিদ্যুৎ সংরক্ষণ এবং পরিবহণের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাবে। এই প্রযুক্তিটি “topological superconductor” নামে পরিচিত।
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং সুপারকন্ডাকটিভিটি
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এমন একটি প্রযুক্তি যা সুপারকন্ডাকটিভিটির উপর নির্ভর করে। কোয়ান্টাম কম্পিউটারগুলির কাজ করার পদ্ধতি অনেকটাই পারমাণবিক স্তরে ঘটে, যেখানে সনাতন কম্পিউটারগুলির তুলনায় অনেক দ্রুত এবং জটিল গণনা করা সম্ভব হয়। উচ্চ তাপমাত্রায় কাজ করতে সক্ষম সুপারকন্ডাকটর এই কোয়ান্টাম কম্পিউটারগুলির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে এবং এগুলিকে আরও কম সময়ে দ্রুত কাজ করার ক্ষমতা অর্জন করেত পারে।
ইলেকট্রনিক্সে বিপ্লব
উচ্চ তাপমাত্রায় সুপারকন্ডাকটর ব্যবহারের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক্স শিল্পে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। বর্তমানের ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলোতে বিদ্যুৎ ব্যবহার এবং তাপমাত্রা ব্যবস্থাপনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সুপারকন্ডাকটর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে, কারণ এটি বিদ্যুতের কোন ক্ষতি ছাড়াই প্রবাহিত হতে দেয়।
বিদ্যুত পরিবহন বা ব্যবস্থাপনা
বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে সংরক্ষণ এবং বিতরণ পর্যন্ত সুপারকন্ডাকটিভিটির ব্যবহার করলে আমাদের বর্তমান বিদ্যুত পরিবহন ব্যবস্থাপনাকে অনেক বেশি সাশ্রয়ী করতে পারে। এটি বিদ্যুতের খরচ কমাবে এবং বিদ্যুৎ পরিবহণে আরও দক্ষতা আনবে। যেহেতু বিদ্যুত বিতরণ করার ক্ষেত্রে কম বিদ্যুত নষ্ট হবে, তাই দূর দূরান্ত পর্যন্ত বিদ্যুত পরিবহন করার ক্ষেত্রে কম খরচ হবে, এবং সার্বিকভাবে বিদ্যুতের দাম কমবে।
চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ
যদিও এই নতুন সুপারকন্ডাকটরটি উচ্চ তাপমাত্রায় কাজ করতে সক্ষম, তবুও এর ব্যবহার এবং উৎপাদনের ক্ষেত্রে এখনও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। যেমন, এই উপাদানটি এখনও খুবই ব্যয়বহুল এবং এর উৎপাদন প্রক্রিয়াও জটিল। তবে, বিজ্ঞানীরা আশা করছেন যে ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রযুক্তি এবং উৎপাদন প্রক্রিয়া এই চ্যালেঞ্জগুলোকে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
উপসংহার
যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন সুপারকন্ডাকটর আবিষ্কার বৈজ্ঞানিক জগত এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একটি বড় সাফল্য। এটি শক্তি, ইলেকট্রনিক্স, এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হতে পারে। তবে, এই আবিষ্কারকে ব্যবহারিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে আরও কিছু চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হবে। ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।
তথ্যসূত্র:
https://www.sciencedaily.com/releases/2024/08/240823144718.htm
Leave a comment