বিজ্ঞান বিষয়ক খবরমহাকাশ

সূর্য কি সুপারফ্লেয়ার এর মতন বিস্ফোরিত হতে পারে?

Share
Share

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এমন এক বিস্ময়কর তথ্য তুলে ধরেছেন, যা আমাদের নিজের সূর্য সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। মহাবিশ্বের কিছু তারা—যারা আকার, গঠন ও তাপমাত্রায় সূর্যের মতোই—সুপারফ্লেয়ার নামক এক ধরণের প্রবল বিস্ফোরণের মুখোমুখি হয়। এই সুপারফ্লেয়ারে মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ১০²⁹ (১ এর পরে ২৯ টি শূন্যযুক্ত) জুল শক্তি, যা আমাদের সূর্য ২০ মিনিটে নির্গত করে। এমন শক্তি মুক্তির পরিমাণ এত বিশাল যে এর সঙ্গে কোটি কোটি পারমাণবিক বোমার তুলনা করা যায়।

সুপারফ্লেয়ার কীভাবে ঘটে?

সূর্যের অভ্যন্তরে প্লাজমা নামক গ্যাসীয় পদার্থ থাকে যা অত্যন্ত উত্তপ্ত ও চার্জযুক্ত কণা (ইলেকট্রন, প্রোটন ইত্যাদি) দিয়ে তৈরি। গরম ও ঠান্ডা প্লাজমা একে অপরের সঙ্গে মিশে তৈরি করে জটিল চৌম্বক ক্ষেত্র। এই চৌম্বক ক্ষেত্রগুলো যখন আচমকা ও অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তিত হয়, তখন সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে বিপুল পরিমাণ চার্জযুক্ত কণাকে মহাশূন্যে দ্রুত গতিতে নিক্ষেপ করে, যা একটি ফ্লেয়ার বা বিস্ফোরণ হিসেবে দেখা যায়। অত্যন্ত শক্তিশালী ফ্লেয়ারগুলোকে বলা হয় সুপারফ্লেয়ার।

এই চার্জযুক্ত কণাগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পৌঁছে নাইট্রোজেন (N₂) এর সঙ্গে সংঘর্ষ করলে তৈরি হয় একটি বিশেষ আইসোটোপ—বেরিলিয়াম-১০ (Be-10)। গবেষকরা পৃথিবীর বরফের স্তরে এই Be-10 এর উপস্থিতি পরীক্ষা করে গত ১০,০০০ বছরে অন্তত পাঁচটি বড় ফ্লেয়ারের প্রমাণ পেয়েছেন।

সূর্যের ক্ষেত্রেও কি সম্ভব?

নাসার কেপলার টেলিস্কোপ প্রায় ৫ লাখ তারা পর্যবেক্ষণ করে ৫৬ হাজার সূর্যের মতো তারার মধ্যে ২,৮৮৯টি সুপারফ্লেয়ার শনাক্ত করেছে। অর্থাৎ গড়ে প্রতি ১০০ বছরে একটি করে সুপারফ্লেয়ার হচ্ছে। এই তথ্য আমাদের সূর্যের জন্যও আশঙ্কার কারণ হতে পারে, কারণ সূর্যও একটি সাধারণ তারা যা এ ধরনের ফ্লেয়ার তৈরি করতে পারে। তবে সূর্য সাধারণত ছোট ও মাঝারি মাত্রার ফ্লেয়ার উৎপন্ন করে। কিন্তু বিরল ক্ষেত্রে বড় সুপারফ্লেয়ার হওয়ার সম্ভাবনা বিজ্ঞানীরা উড়িয়ে দেননি।

পৃথিবীর ওপর প্রভাব কী হতে পারে?

পৃথিবীর প্রাণজগত অনেকটাই সুরক্ষিত পৃথিবীর নিজস্ব চৌম্বক ক্ষেত্রের জন্য, যা মহাকাশ থেকে আগত ক্ষতিকর রশ্মি ও কণাগুলো প্রতিহত করে। কিন্তু প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রভাব হবে ভয়াবহ। জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফিল প্লেইট বলেন, “একটি বড় ফ্লেয়ার হলে সবচেয়ে সুরক্ষিত স্যাটেলাইটগুলোও ধ্বংস হতে পারে। বৈদ্যুতিক গ্রিড বিকল হয়ে পড়ে, বিস্তৃত ব্ল্যাকআউট সৃষ্টি হতে পারে, যা কয়েক মাস থেকে বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।”

এছাড়া, যোগাযোগ ব্যবস্থা, ইন্টারনেট, ব্যাংকিং সিস্টেম, এমনকি উড়োজাহাজের যাতায়াতও ব্যাহত হতে পারে। বর্তমানে প্রকৌশলীরা এই বিপর্যয় থেকে সুরক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও, অতি প্রবল সুপারফ্লেয়ার হলে তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব না-ও হতে পারে।

ভবিষ্যতে প্রস্তুতি কী?

সুপারফ্লেয়ার এর মতো মহাজাগতিক বিপর্যয় ঠেকানো না গেলেও, আগাম সতর্কতা ও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব। বিজ্ঞানীরা সূর্যের আচরণ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে, যাতে আগে থেকেই সতর্কবার্তা জারি করে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া যায়। ভবিষ্যতে মহাকাশ প্রযুক্তি আরও উন্নত করে এ ধরনের ঝুঁকি মোকাবেলার পরিকল্পনা তৈরি করাই হতে পারে আমাদের প্রধান লক্ষ্য।

আপনি কি কখনো ভেবেছেন, একটিমাত্র সূর্য বিস্ফোরণ পুরো পৃথিবীর ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিতে পারে? এখনই সচেতন হবার সময়!

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact:

biggani.org@জিমেইল.com

সম্পাদক: ড. মশিউর রহমান

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ইমেইল নিউজলেটার, টেলিগ্রাম, টুইটার X, WhatsApp এবং ফেসবুক -এ সাবস্ক্রাইব করে নিন।

Copyright 2024 biggani.org