অতিথি লেখক: রউফুল আলম
লেখক ও গবেষক
ইমেইল: [email protected]
১৭৭৬ সালে পৃথিবীতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। একটা হলো আমেরিকার স্বাধীনতা লাভ আর অন্যটি হলো স্টিম ইঞ্জিনের আবিষ্কার।
জেমস ওয়াট সে বছর আধুনিক স্টিম ইঞ্জিন উদ্ভাবন করেন। মানুষ প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করল, যন্ত্র দিয়ে কাজ করানো সম্ভব। অটোমেশনের যুগ শুরু হলো। স্টিম ইঞ্জিনের হাত ধরে এল রেল। ব্রিটিশরা প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে লাগল। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী হলো। ইউরোপে শুরু হলো শিল্পবিপ্লব।
একটা উদ্ভাবন সারা দুনিয়াকে কতটা বদলে দিতে পারে, স্টিম ইঞ্জিনের চেয়ে সম্ভবত এর ভালো উদাহরণ আর হতে পারে না।
বিজ্ঞান পড়তে হবে এবং চর্চা করতে হবে নতুন জ্ঞান সৃষ্টির জন্য। নতুন নতুন আবিষ্কার–উদ্ভাবনের জন্য। অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার জন্য।
ব্রিটেনের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী তখন ফ্রান্স। ব্রিটেনকে যদি টেক্কা দিতে হয়, তাহলে ফ্রান্সের প্রয়োজন স্টিম ইঞ্জিনের মতো কিছু উদ্ভাবন করা কিংবা স্টিম ইঞ্জিনের উন্নতি সাধন। কিন্তু কীভাবে সম্ভব সেটা!
২৪ বছরের এক ফ্রেঞ্চ তরুণ লক্ষ করলেন, স্টিম ইঞ্জিন যদিও প্রচুর আলোড়ন তৈরি করেছে, ব্যবসায়িকভাবে ব্রিটেন লাভবান হচ্ছে, তবে স্টিম ইঞ্জিন কীভাবে কাজ করে, সেটার পুরো মেকানিজম তখনো অজানা। ঠিক সেই বিষয় নিয়েই ওই তরুণ ভাবতে লাগলেন। হাউ ডাজ ইট রিয়েলি ওয়ার্ক?
স্টিম ইঞ্জিন নিয়ে গবেষণা করে ওই তরুণ একটা বই লিখলেন—রিফ্লেকশনস অন দ্য মোটিভ পাওয়ার অব ফায়ার! সেই তরুণের নাম নিকোলাস লিওনার্ডো সাদি কার্নো। কার্নো (Carnot) বিজ্ঞানের ইতিহাসের অন্যতম এক মেধাবী তরুণ। তাঁর হাত ধরেই বিজ্ঞানে সূচনা হয়েছিল থার্মোডায়নামিকস (Thermodynamics) তথা তাপগতিবিদ্যা শাখাটির।
তাপশক্তি কীভাবে যান্ত্রিক শক্তি বা গতিতে রূপান্তরিত হয়, সে নিয়ে গবেষণা করতে গিয়েই এই থার্মোডায়নামিকসের জন্ম। আর সেই জ্ঞান পরবর্তী সময়ে আমাদের আরও বহু ইঞ্জিন উদ্ভাবনে সাহায্য করেছে। গাড়ির ইঞ্জিন তার আরেকটা উদাহরণ।
ব্রিটেনের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী তখন ফ্রান্স। ব্রিটেনকে যদি টেক্কা দিতে হয়, তাহলে ফ্রান্সের প্রয়োজন স্টিম ইঞ্জিনের মতো কিছু উদ্ভাবন করা কিংবা স্টিম ইঞ্জিনের উন্নতি সাধন।
সুতরাং বিজ্ঞান পড়তে হবে এবং চর্চা করতে হবে নতুন জ্ঞান সৃষ্টির জন্য। নতুন নতুন আবিষ্কার–উদ্ভাবনের জন্য। অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার জন্য। বিজ্ঞানচর্চা শুধু সমাজের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বাড়ায় না; বরং সমাজে যৌক্তিক চিন্তার যে সংস্কৃতি, প্রশ্ন করার সংস্কৃতি, সেই বিষয়গুলোকেও প্রতিষ্ঠিত করে।
সমাজে বিজ্ঞান গবেষণার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে হলে স্কুল পর্যায় থেকেই রাষ্ট্রীয়ভাবে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। সে জন্য ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগ, বিজ্ঞান পাঠের আধুনিকায়ন ও শিক্ষার্থীদের এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে বিজ্ঞানের আনন্দ ধরিয়ে দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
তথ্যসূত্র:
এই লেখাটি বিজ্ঞানচিন্তা ম্যাগাজিনের প্রকাশিত প্রবন্ধ থেকে সংগৃহীত।
লেখক: ড. রউফুল আলম, গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।
Leave a comment