শুরুতেই আপনাকে আমি টাইম মেশিনে আজ থেকে ৫০ বছর আগে নিয়ে যাচ্ছি নিউইয়র্ক এর ৬ষ্ট অ্যাভিনিউতে। সেখানে মোট্রোলোরার একজন প্রযুক্তিবিদ একটি যন্ত্রে ক্যালকুলেটরের মতন বাটন চাপ দিলেন এবং তা বিনা-তারে সংযুক্ত হয়ে কথা বললেন অপরপ্রান্তে বেল ল্যাবের একজন প্রযুক্তিবিদ জোয়েল এন্জেল এর সাথে। আর যিনি এই ফোনটি করছিলেন তিনি হলে মার্টিন কুপার, পরবর্তীতে তাকে বলা হয় “Father of the cell phone” বা “মোবাইল ফোনের জনক” নামে। এই যন্ত্রটি পরবর্তীতে পৃথিবীর প্রথম বাণিজ্যিক মোবাইল ফোন DynaTAC নামে আত্মপ্রকাশ করে। তবে এই সফলতার পিছনের রয়েছে বেল ল্যাব এবং মোট্রোলোরা এর ভীষণ রকমের প্রতিযোগিতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এই দুটি প্রতিষ্ঠানই চেষ্টা করছিল সহজে বহনযোগ্য মোবাইল ফোন তৈরির।
ডাইনাটেক (DynaTAC) জন্ম:
ডাইনাটেক এর পুরো নাম হল Dynamic Adaptive Total Area Coverage । সেই ১৯৭৩ সনের পর থেকে মানুষের হাতে বাণিজ্যিকভাবে পৌঁছে দিতে মোট্রোলোরাকে কাজ করতে হয়েছিল আরো দীর্ঘ ১০ বছর। এর নাম ছিল DynaTAC 8000X যা আমেরিকায় বিক্রি হচ্ছিল চার হাজার ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা। এক কেজির মতন ওজন এবং ৯ ইঞ্চির এই যন্ত্রটি দেখতে ইটের মতন ছিল বলে এর একটি ডাক নাম হল, “ব্রিক”। ৩০ মিনিটের কথোপকথনের জন্য একে “মাত্র” ১০ ঘণ্টা চার্জ করতে হতো, আজকের যুগে যা হাস্যকর।
DynaTAC এর আবির্ভাবের পরে মোবাইল ফোনের এক নতুন যুগ শুরু হয়। নিম্নে মোবাইল ফোনের ক্রমবিকাশগুলি বর্ণিত হল:
- ১৯৮০ দশক: মোবাইল ফোনে কথা বলার জন্য পৃথিবীর বড় বড় শহরগুলিতে মোবাইল ফোনের টাওয়ার দেখা যেতে থাকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মধ্যে নতুন প্রতিযোগিতা শুরু হয় কে ভালো মোবাইল ফোন তুলে দিতে পারে তার ব্যবহারকারীদের হাতে। আর তাদের এই প্রতিযোগিতার কারণে ধীরে ধীরে মোবাইল ফোন হতে থাকে আরো হালকা, আরো দীর্ঘ ব্যবহার উপযোগী।
- ১৯৯০ দশক: এসএমএস বা টেক্সট ম্যাসেজ শুরু হয় এবং মানুষজন ছোট ছোট ম্যাসেজ দিয়ে যোগাযোগ শুরু করে। নোকিয়া মোবাইল ফোনের মূল বাজার দখল করে এবং তারা নিয়ে আনে তাদের নোকিয়া ৩৩১০ যা সস্তা এবং দীর্ঘদিন চার্জ থাকতে পারে।
- ২০০০ দশক: এই দশকে বাজার দখল করে স্মার্ট ফোন। শুরুটা হয় এ্যপল এর iPhone দিয়ে। এবং মোবাইল ফোন শুধু মাত্র কথা বলার যন্ত্র নয়, সেটি দিয়ে ইন্টারনেট ওয়েবসাইট দেখা, ই-মেইল করা, ছবি তোলা, গান শোনা এবং বিনোদন যন্ত্র। একসাথে অনেক কাজ করতে পারে বলে বলা হয় স্মার্টফোন।
- ২০১০ দশক: এই দশকটি হল মোবাইল অ্যাপের যুগ। মোবাইল ফোনের জন্য আসতে থাকে বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ এবং সংযুক্ত হয় ফেসবুক সহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাপ।
- ২০২০ দশক: পঞ্চম পর্যায় বা 5G এর দ্রুত ইন্টারনেট সংযোগ আসার কারণে আরো দ্রুত মোবাইল ফোনে কাজ করা সহজ হচ্ছে। এছাড়া ভাজ করে রাখা যাবে এমন ডিসপ্লে ফোল্ড করার উপযোগী ফোন বাজারে আসা শুরু হয়।
মোবাইল ফোনের আজ ৫০ তম বার্ষিকী উদ্যাপন হতে যাচ্ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি কত দ্রুত এই ছোট ডিভাইসটি আমাদের ব্যক্তিগত এবং সামাজিক জীবনকে পরিবর্তন করে চলছে। ডাইনাট্যাকের যাত্রার পরে আজকের অত্যাধুনিক স্মার্টফোন পর্যন্ত, মোবাইল ফোন সত্যিই আমাদের জীবন, কাজ এবং আমাদের পরস্পরের সাথে যোগাযোগের পদ্ধতি সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করে ফেলেছে।
যে মার্টিন কুপারের কথা ধরে লেখাটি শুরু করেছিলাম, তাঁকে সিএনবিসি এর সাংবাদিক জিজ্ঞাস করেছিলেন, ভবিষ্যতের মোবাইল ফোন কেমন হবে? উত্তরে তিনি বলেছিলেন সম্ভবত আমাদের শরীরের ভিতরেই চিপ হিসাবেই সেটি থাকবে, আর তা শরীরের ভিতরে বায়োইনার্জি ব্যবহার করে চার্জ হয়ে যাবে। তাই আর কষ্ট করে মোবাইল ফোন বহন করতে হবে না, কোথাও ভুলে রেখে যাবার ভয় নেই এবং নেই ভুলে চার্জ না করে আফসোস করার যন্ত্রণা।
অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি আগামী ৫০ বছর এটি কীভাবে আরো আমাদেরকে পরিবর্তন করবে।
তথ্যসূত্র:
Leave a comment