নিউজ ডেস্ক, বিজ্ঞানী অর্গ |
১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই, পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। এই দিনই মানবজাতি প্রথমবারের মতো পা রাখে চাঁদের মাটিতে, নাসার অ্যাপোলো ১১ মিশনের মাধ্যমে। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে অসংখ্য নাম, অসংখ্য প্রযুক্তি, আর অসংখ্য সংগ্রাম। তবে একটি বিখ্যাত ছবিতে সেই সময় কেনেডি স্পেস সেন্টারের কন্ট্রোল রুমে শত শত পুরুষ কর্মীর মাঝে সাদা শার্ট ও কালো টাই পরিহিতদের ভিড়ে একমাত্র একজন নারীর উপস্থিতি চোখে পড়ে — তিনি হলেন জোয়ান মর্গান (JoAnn Morgan), নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টারের প্রথম নারী প্রকৌশলী।
এই একটি ছবি যেন এক হাজার শব্দের সমান। পুরুষ-প্রধান প্রযুক্তি ও মহাকাশ গবেষণার জগতে একজন নারীর নির্ভীক উপস্থিতি — এটি কেবল এক ব্যক্তির গল্প নয়, বরং একটি প্রজন্মের অনুপ্রেরণা, সাহস আর অগ্রযাত্রার গল্প।
জোয়ান মর্গানের গল্প: একা কিন্তু অদম্য
জোয়ান মর্গান ছিলেন সেই সময়ের কনিষ্ঠ প্রকৌশলীদের একজন, যিনি অ্যাপোলো ১১ মিশনের সময় সরাসরি কমিউনিকেশন লুপে কাজ করেছিলেন। অর্থাৎ, তিনি ছিলেন সেই ছোট্ট দলের একজন যারা সরাসরি মহাকাশযান ও পৃথিবীর মধ্যকার বার্তালাপের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। এটি ছিল অত্যন্ত উচ্চ চাপ ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
তখনকার দিনে একজন নারী হিসেবে বিজ্ঞান বা প্রকৌশলে কাজ করাই ছিল চ্যালেঞ্জিং, তার ওপর মহাকাশ মিশনের মতো উচ্চ প্রযুক্তির প্রজেক্টে পুরুষ সহকর্মীদের মাঝে কাজ করাটা ছিল আরও কঠিন। তিনি প্রতিনিয়ত প্রমাণ করেছেন, দক্ষতা ও নিষ্ঠাই সাফল্যের চাবিকাঠি।
জোয়ানের অভিজ্ঞতা কেবল এক নারী কর্মীর সংগ্রামের গল্প নয়, বরং এটি একটি সময়ে প্রযুক্তি ও সমাজের রূপান্তরের প্রতীক। তাঁর উপস্থিতি ও অবদান ভবিষ্যতের বহু নারী বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীকে পথ দেখিয়েছে।
মহাকাশে নারীর যাত্রা: গল্পগুলো ছোটবেলাতেই শুরু হোক
জোয়ান মর্গানের মতো নারী পথিকৃতদের গল্প শিশুদের কাছে তুলে ধরলে তারা ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। এজন্যই আমরা উৎসাহিত করি বাবা-মা, শিক্ষক ও অভিভাবকদের — শিশুদেরকে যেন সাহসী মহাকাশবিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদের গল্প শুনানো হয়, বিশেষ করে নারীদের গল্প, যারা বাধা অতিক্রম করে ইতিহাস গড়েছেন।
উপসংহার
১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো ১১-এর মহাকাশ যাত্রা ছিল মানবজাতির এক ঐতিহাসিক সাফল্য। কিন্তু সেই সাফল্যের পিছনে যেসব নারী নিরবে নিজেদের দক্ষতা ও সাহসিকতা দিয়ে অবদান রেখেছেন — তাদের গল্পও আমাদের জানা দরকার। জোয়ান মর্গান ছিলেন এমন একজন, যিনি শত পুরুষের ভিড়ে একা হয়েও মহাকাশযাত্রার ইতিহাসে নিজের নাম লেখাতে পেরেছেন।
আজকের বাংলাদেশি কিশোরী, যদি তাঁর গল্প পড়ে অনুপ্রাণিত হয়, তবে ভবিষ্যতের কোনো দিন আমরা দেখতে পারি — ঢাকার কোনো স্কুলের মেয়ে চাঁদের পৃষ্ঠে বাংলাদেশের পতাকা গেড়ে আসছে।
প্রকাশনায়: biggani.org | বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গণমাধ্যম
সম্পর্কে যোগাযোগ: [email protected]
Leave a comment