কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার খরচ কমছে

Share
Share

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যাকে ইংরেজীতে বলা হয় Artificial Intelligence বর্তমান সময়ে প্রযুক্তি বিষয়ের মধ্যে সবথেকে আলোচিত বিষয়। শুধু বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদরাই নয়, এর ব্যবহার এসে পৌছেছে আমাদের ঘরদোরে। চিকিৎসা, শিক্ষা, ব্যাংক কিংবা বীমা কোন ক্ষেত্রে বলেন এটি ব্যবহার হচ্ছে না। কিন্তু এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবথেকে বড় বাধা হল এটির খরচ। যদিও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ফ্রি ব্যবহার করতে দিচ্ছে কিন্তু এর পেইড কিংবা প্রোফেশনাল কোন প্যাকেজ কিনতে গেলে এটি দাম দেখে চমকে যেতে হয়। এবং অনেক ক্ষেত্রেই সেই দামের কারণেই এটির পেইড প্যাকেজগুলি কিনছেন না। আশার কথা হল বর্তমানে এর খরচ সময়ের সাথে সাথে দ্রুত কমে যাচ্ছে। এর ফলে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা কিংবা অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা সম্ভব হবে। সম্প্রতি, OpenAI তার GPT-4o মডেলের মূল্য প্রতি মিলিয়ন টোকেনের জন্য মাত্র $৪ ডলার করেছে, যেখানে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে GPT-4 মডেলের জন্য প্রতি মিলিয়ন টোকেনের খরচ ছিল $৩৬ ডলার। এটি প্রায় ১৭ মাসে প্রায় ৭৯% খরচ হ্রাসের সমান। এছাড়াও, একটি নতুন Batch API ব্যবহার করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল পাওয়ার শর্তে এই খরচ $২ পর্যন্ত কমে এসেছে, যা আরও বেশি সাশ্রয়ী।

AI সিস্টেমে "টোকেন" হল একটি মৌলিক একক বা ইউনিট যা বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংরক্ষণ এবং প্রসেস করার জন্য ব্যবহৃত হয়। সাধারণভাবে, টোকেনগুলি প্রায়ই লেখার মধ্যে শব্দ, অক্ষর, বা প্রতীক হিসেবে ব্যবহার হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি ভাষার মডেলে "বাংলাদেশ আমার দেশ", এইখানে  প্রতিটি শব্দ বা চিহ্নকে টোকেন হিসেবে গণ্য হয়, অর্থাৎ এইখানে ৩ টি টোকেন ব্যবহৃত হয়েছে। সহজ ভাষায় বললে, টোকেন হল তথ্যের একটি মৌলিক অংশ যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সিস্টেমকে সেই তথ্য বুঝতে এবং প্রক্রিয়া করতে সাহায্য করে। এটি মনে রাখা দরকার যে টোকেনের আকার এবং প্রকার বিভিন্ন হতে পারে, যেমন একক শব্দ, শব্দাংশ, বা এমনকি একটি পূর্ণ বাক্যও হতে পারে।

টোকেনের মূল্যহৃাসের কারণ কি?

টোকেনের মূল্যহৃাসের অন্যতম প্রধান কারণ হল নতুন এবং অপেনসোর্স বা উন্মুক্ত মডেলের আগমন, যেমন Llama ৩.১। স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলি যেমন Anyscale, Fireworks, Together.ai এবং অন্যান্য বড় প্রতিষ্ঠানগুলি, যাদের নিজেদের মডেল তৈরি করতে খরচ করতে হয় না, তারা মূলত দাম এবং আরও কয়েকটি বিষয়ে প্রতিযোগিতা করতে পারছে। এর ফলে টোকেনের মূল্য কমে যাচ্ছে।

এছাড়াও, নতুন নতুন হার্ডওয়্যারের উদ্ভাবন মূল্য এই কমার পিছনে ভূমিকা রাখছে। যেমন Groq-এর মতো কোম্পানি দ্রুত টোকেন জেনারেশনে অগ্রগামী, আর Samba Nova প্রতি সেকেন্ডে ১১৪ টোকেন উৎপাদন করছে। Cerebras এবং সেমিকন্ডাক্টর জায়ান্ট NVIDIA, AMD, Intel, এবং Qualcomm-এর মতো কোম্পানিগুলি উন্নত হার্ডওয়্যার সরবরাহ করে ভবিষ্যতে মূল্য আরও কমিয়ে আনবে।

ভবিষ্যত

নতুন প্রযুক্তি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, এবং তাই অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করার সময় কেবল বর্তমান অবস্থা নয়, ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। উন্নত সেমিকন্ডাক্টর, ছোট মডেল এবং অ্যালগরিদমিক উদ্ভাবনগুলির প্রযুক্তিগত রোডম্যাপ দেখে এটা সহজেই বলা যায় যে টোকেনের মূল্য আরও কমবে।

এই পরিবর্তনের ফলে, এমনকি যদি আজকের দিনে কোনও অ্যাপ্লিকেশন চালানোর খরচ একটু বেশি হয়, তা ভবিষ্যতে সাশ্রয়ী হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি এমন একটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেন যা প্রতি সেকেন্ডে ১০০ টোকেন ব্যবহার করে, তাহলে বর্তমান মূল্য অনুযায়ী প্রতি ঘণ্টায় খরচ হবে মাত্র $১.৪৪, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যূনতম মজুরির চেয়েও অনেক কম।

পণ্য তৈরি জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেন?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে কোন পন্য বা এপ্লিকেশন তৈরির সময় প্রতিষ্ঠানগুলি এই নতুন পরিস্থিতিতে নিজেদের কীভাবে প্রস্তুত করতে পারে? তার কিছু পরামর্শ নিম্নে দেয়া হল:

১. খরচ সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট করা: অনেকেই তাদের প্রকল্প চালু করার সময় দেখতে পান যে LLM ব্যবহারের খরচ আসলে তাদের ভাবনার চেয়ে অনেক কম। তাই খরচ কমানোর জন্য বেশি জটিলতা এড়িয়ে সহজে উপযোগী অ্যাপ্লিকেশন তৈরিতে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

২. আগাম প্রস্তুতি নেওয়া: যদি কোনও অ্যাপ্লিকেশন আজকের দামে একটু বেশি ব্যয়বহুল মনে হয়, তবে ভবিষ্যতের মূল্য হ্রাসের কথা মাথায় রেখে এটি চালু করা বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে।

৩. মডেল পরিবর্তনের সুযোগ রাখা: নতুন মডেল চালু হলে, পুরোনো মডেল থেকে নতুন মডেলে স্যুইচ করা যেতে পারে, যেমন GPT-4 থেকে নতুন GPT-4o-2024-08-06 এ যাওয়া। এছাড়াও, বিভিন্ন মডেল প্রদানকারীর মধ্যে স্যুইচ করাও সম্ভব হতে পারে, বিশেষ করে যখন উন্মুক্ত মডেলগুলি বিভিন্ন সরবরাহকারীর মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে।

উপসংহার

টোকেনের মূল্য দ্রুত হ্রাস পাওয়ার ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অ্যাপ্লিকেশন তৈরি ও পরিচালনা আরও সহজ ও সাশ্রয়ী হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির এই অগ্রগতি নতুন নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিচ্ছে, এবং এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য ভবিষ্যতের প্রযুক্তি রোডম্যাপের দিকে নজর রেখে তাদের কৌশলগত পরিকল্পনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Share
Written by
ড. মশিউর রহমান -

ড. মশিউর রহমান বিজ্ঞানী.অর্গ এর cofounder যার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৬ সনে। পেশাগত জীবনে কাজ করেছেন প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী ও শিক্ষক হিসাবে আমেরিকা, জাপান, বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরে। বর্তমানে তিনি কাজ করছেন ডিজিটাল হেল্থকেয়ারে যেখানে তার টিম তথ্যকে ব্যবহার করছেন বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবার জন্য। বিস্তারিত এর জন্য দেখুন: DrMashiur.com

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসাক্ষাৎকার

মোঃ ফাহিম-উল-ইসলাম

সম্প্রতি আমরা সাক্ষাৎকার নিয়েছি মোঃ ফাহিম-উল-ইসলাম এর। তিনি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্স...

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

REMspace-এর যুগান্তকারী সাফল্য: প্রথমবারের মতো স্বপ্নের মধ্যে মানুষের মধ্যে যোগাযোগ

REMspace-এর যুগান্তকারী সাফল্য: প্রথমবারের মতো স্বপ্নের মধ্যে মানুষের মধ্যে যোগাযোগ: প্রবন্ধটি পড়ুন: লিওনার্দো ডি...

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসাক্ষাৎকার

ফয়সাল আহাম্মদ খান

নবীন প্রজন্মদের সাক্ষাৎকার সিরিজে এবার আমরা সাক্ষাৎকার নিয়েছি ফয়সাল আহাম্মদ খান এর।...

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচিকিৎসা বিদ্যা

এবার সার্জারি করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা !

মনে করো তুমি তোমার মা কিংবা কাউকে নিয়ে গেছ অপারেশন থিয়েটারে কোন...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.