মানুষের মস্তিষ্কের গঠন কমবেশি একই, প্রায় ৪০ ভাগ গ্রে ম্যাটার আর ৮০ ভাগ হোয়াইট ম্যাটার। কিন্তু তারপরও ছেলেদের সাথে মেয়েদের মস্তিষ্কের কিছু গঠনগত পার্থক্য রয়েছে যার কারণে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা কথা বেশি বলে আবার মানচিত্র ছেলেরা ভালো ও দ্রুত বুঝতে পারে। কিন্তু কেন এমন হয়? বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে এর উত্তর পাওয়া গিয়েছে।
ইন্টেলিজেন্স টেস্ট এর মাধ্যমে দেখা যায় ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় ৭ গুণ গ্রে ম্যাটার ব্যবহার করে আবার মেয়েরা ৯ গুণ বেশি হোয়াইট ম্যাটার ব্যবহার করে। গ্রে ম্যাটার এর অন্যতম কাজ হল লজিক্যাল বিষয় যেমন অবস্থান সম্পর্কে ধারণা, মানচিত্র পঠন, গণিত, ও প্রব্লেম-সলভিং জাতীয় কাজগুলো করা। অন্যদিকে হোয়াইট ম্যাটার মস্তিষ্কের প্রসেসিং সেন্টারগুলোকে যুক্ত করে, যা ভাষাগত দক্ষতা, ইমোশনাল চিন্তা ও একসাথে অনেক কাজ করতে ভূমিকা পালন করে।
যেহেতু মেয়েদের হোয়াইট ম্যাটার বেশি ব্যবহৃত হয়, তাই তারা ভাষাগত যোগাযোগে বেশি পারদর্শি। প্রকৃতপক্ষে, ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মস্তিষ্কের অনেক বেশি অংশ এই যোগাযোগের কাজে ব্যবহৃত হয় ফলে তারা ভাষাকে সামাজিক বন্ধন গঠনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারে অধিক পারদর্শি, আর ছেলেরা ভাষা ব্যবহার করে তথ্য আদানপ্রদান ও সমস্যা সমাধানের মাধ্যম হিসেবে। গড়ে, একজন মহিলা দিনে ৭০০০ শব্দ আর পুরুষ দিনে ২০০০ শব্দ ব্যবহার করে।
ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মস্তিষ্কের দুটি অংশের (হেমিস্ফেয়ার) মধ্যে যোগাযোগ আরও বেশি কার্য্যকর, তাই ছেলেরা যখন একসময়ে একটি কাজেই মনোনিবেশ করে, তখন মেয়েরা একাধিক কাজ করতে পারে। ধারণা করা হয়, এই অধিক কার্য্যকরী যোগাযোগের জন্যই মেয়েদের স্বভাবসুলভ বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়।এই পার্থক্যগুলো প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকেই ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে। যখন পুরুষেরা শিকারের খোঁজে বের হত এবং তাদের শিকারের অবস্থান নির্ণয় ও সমস্যা সমাধানে মস্তিষ্ক বেশি ব্যবহৃত হত, আর নিজেদের ঘরবাড়ি ও সন্তানদের নিরাপত্তা ও বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে মহিলাদের ভাষাগত দক্ষতা অর্জন করতে হয়েছিলো।
এক্ষেত্রে এখনও অনেক গবেষণার সুযোগ রয়েছে। আশা করা যায় ভবিষ্যতে আরও নতুন তথ্য আমাদের সামনে উঠে আসবে।
Leave a comment