সুপার কম্পিউটারের ক্ষমতা কতটা হতে পারে সে বিষয়ে সবারই কম বেশী ধারণা আছে। তাই একটি সুপার কম্পিউটার নিয়ে সরাসরিই লিখছি। এর নাম “সুগার” (SUGAR – Syracuse University Gravitational and Relativity Cluster)। নিউ ইয়র্কের সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটির (এসইউ) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ নির্মিত এই সুপার কম্পিউটারের কনফিগারেশনটা এরকম: ৩২০টি সিপিইউ, ৪৬০ গিগিবাইট র্যাম এবং হার্ডডিস্কের জায়গা ৯৬ টেরাবাইট। এই ১৮ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত সংবাদে জানানো হয়েছে, তারা আশা করছেন এই কম্পিউটারের মাধ্যমে কৃষ্ণ গহ্বর থেকে নিঃসৃত শব্দ চিহ্নিত করা যাবে। ঘটা সত্য কি-না তা যাচাই করার জন্য অচিরেই ক্যালটেক ও এমআইটি পরিচালিত লিগো মানমন্দির (Laser Interferometer Gravitational-Wave Observatory – LIGO) থেকে কৃষ্ণ গহ্বর সংশ্লিষ্ট সকল তথ্য সংগ্রহ করবে সুগার। আর তথ্যের এই স্থানান্তর ঘটবে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে।
তারা এর মাধ্যমে ঠিক কি চিহ্নিত করতে চাচ্ছেন তা বলা যাক এবার। মহাবিশ্বে কিছু কিছু ঘটনা রহস্যজনক মহাকর্ষীয় তরঙ্গের জন্ম দেয়। এ ধরণের ঘটনার মধ্যে রয়েছে দুই বা ততোধিক কৃষ্ণ গহ্বরের বিস্ফোরণ বা অতি বৃহৎ অতি নবতারার বিস্ফোরণ। কিন্তু এই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চিহ্নিত করা যায় না। আইনস্টাইন ১৯১৬ সালেই তার আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বে এ ধরণের মহাকর্ষীয় তরঙ্গের অস্তিত্বের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। কিন্তু তা প্রমাণিত হয়েছে অনেক পরে। যুগে যুগে আইনস্টাইনের সেই যুগান্তকারী তত্ত্বের যে প্রমাণগুলো আমরা পাচ্ছি তার সাথে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হল এই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ। কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের সাথে হয়তো এই তত্ত্বের বিরোধ রয়েছে কিন্তু নিজ ক্ষেত্রে সবসময়ই সফল হয়ে এসেছে। তাই কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের সাথে এর একীকরণের প্রচেষ্টার পাশাপাশি সাধারণ আপেক্ষিকতা নিয়ে আরও বিস্তর গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে সুগার কম্পিউটার এক বিপ্লব সাধন করবে সন্দেহ নেই। উত্তরাধুনিক বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের একটি উপাদান হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে এটি।
কেবল একটি কাজই বাকি। তা হল, ক্যালটেকের সাথে সিরাকিউজের সংযোগ স্থাপন। এ জন্য আবার পুরো আমেরিকা পাড়ি দিতে হবে। কারণ সিরাকিউজ হল নিউ ইয়র্কে তথা আটলান্টিকের তীরে, অন্যদিকে ক্যালটেক ক্যালিফোর্নিয়াতে, প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে। অচিরেই তথ্য বহনকারী অপটিক্যাল ফাইবার এই কাজ করে ফেলবে। এ উদ্দেশ্যে সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটি “নিসারনেট” (NYSERNet – New York State Education and Research Network)-এর সাথে একটি চুক্তি করেছে। সে হিসেবে, এক গিগাবাইট গতিতে তথ্য সঞ্চালনে সক্ষম অপটিক্যাল ফাইবার যাত্রা শুরু করবে এসইউ-এর পদার্থবিজ্ঞান ভবন থেকে। তারপরের গতিপথটা হবে এমন: পদার্থবিজ্ঞান ভবন -> ইউনিভার্সিটির মেশিনারি হল -> ডাউনটাউন সিরাকিউজের একটি ফ্যাসিলিটি -> নিসারনেটের ফাইবার অপটিক সংযোগ -> নিউ ইয়র্ক সিটি -> ইন্টারনেট টু হাই হাই স্পিড নেটওয়ার্ক -> ক্যালটেকের কম্পিউটার রুম। বুঝতেই পারছেন সিরাকিউজ তাদের ৯৬ টেরাবাইট জায়গা ভরেই ছাড়বে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য মতে এই ফেব্রুয়ারির মধ্যেই অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ শেষ হয়ে যাবে। এরপর কেবল তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ আর যাচাই। সফল হলে মানুষ শুনতে পাবে কৃষ্ণ বিবরের শব্দ। অনেকেই একে মহাজাগতিক সুর বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং সেখানকার বিজ্ঞানী ব্রাউনের মতে, “মহাকর্ষীয় তরঙ্গ মহাবিশ্বে কি আছে সে সম্বন্ধে আমাদের আরও স্পষ্ট ধারণা দিতে পারে। … আইনস্টাইনের তত্ত্বকেও আমরা কখনও এদিক থেকে ভেবে দেখি নি।”
i wish i could b a part of that research project.
diner
http://www.dinerthegenious.tk