সাইন্স ফিকশন

একটি ভালোবাসার গল্প

Share
Share

love

আমি বড় সাধাসিধা একটা ছেলে। ছোট বেলা থেকেই বড় হয়েছি কঠিন শাসন ও আদরের মাঝে। নষ্ট হয়ে যাব এই ভয়ে আমার মা আমাকে ঘরে আটকে রাখতেন। কখনো বাইরে বের হতে দিতেন না। যদি কখনো বের হই তো সেটা আমাদের পরিবারের কারো সাথে। এখানে একটা কথা আগেভাগে বলে নিই, আমি আমাদের পরিবারের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছেলে। বোধ হয় সেজন্যই সবাই সবচেয়ে আদর করে।

তা যাই হোক যা বলছিলাম, আমি সবসময় নিউট্রাল। মানে বুঝলেনতো? কারো আগেও নেই, কারো পিছেও নেই। তবে কেউ বিনা কারনে খারাপ ব্যবহার করলে তার প্রতিশোধ অবশ্য এক সময় নিয়ে নিই। এমনভাবে নিই যে সে নিজেও বুঝতে পারে না আমি প্রতিশোধ নিয়েছি। তবে মানুষটা খুব পছন্দের হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাফ করে দিই। যেমন প্রায়ই মাফ করি আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু সাগরকে। তবে ইদানিং তাকে এড়িয়ে চলছি। আর কত সহ্য করা যায়? সব কিছুরোতো একটি সীমা আছে! তবে তাকে এড়িয়ে চলছি তার প্রধান কারন হলো পাছে তাকে না কষ্ট দিয়ে দিই। এ ব্যপারে আমি নিশ্চিত, আমি প্রায় সব কিছুরই প্রতিশোধ নিই। এক সময় যখন তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে যাবো, তখন হয়তো প্রতিশোধ নেয়া শুরু করবো; যেটা আমাদের কারো জন্য সুখকর হবে না।

আমি কখনো এর আগে প্রেম করিনি। প্রেম আসলে কিভাবে করে তাও বুঝি না। ছেলে মেয়েরা একসাথে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কিভাবে যে পার করে দেয় আমার মাথা ঢুকে না! এত কথা তারা পায় কোত্থেকে? একবার এক বড় ভাইকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তরে বলেছিলেন, আগে প্রেম কর তারপর বুঝবি কোত্থেকে এত কথা আসে। হাহ্‍ প্রেম? ওটা আবার আমি করবো! এর থেকে আশ্চর্যজনক ব্যপার আর হতে পারে না। তবে আমার চেহারায় হয়তো আকর্ষন আছে, যে কারনে প্রথমে কোথাও গেলে মেয়েরা আমার সাথে নিজে থেকে কথা বলতে এগিয়ে আসে। অবশ্য, শেষ পর্যন্ত কথাও হয়, বন্ধুত্বও হয়; কিন্ত্ত প্রেম আর হয় না। হয় না কেন, কে জানে! কিন্ত্ত এটা দেখেছি, তারা আমাকে খুব বিশ্বাস করে। কেননা, তারা এমন কিছু স্পর্শকাতর ঘটনা ঘটায় আমার সামনে যে অন্য কোন ছেলে হলে হয়তো বা এর কোন বদ সুযোগ নিয়ে নিতো। আর যাই হোক কোন মেয়ে বন্ধুর প্রতি আমার কখনো উল্টাপাল্টা আকর্ষন জন্বায় নি। আচ্ছা, কেনো জন্মায় নি? প্রথম ওর সাথে দেখা হয় লিফটের সামনে। ও একাই দাঁড়িয়ে ছিলো। আমি যখন ওর পেছনে এসে লাইনে দাঁড়াই ও আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে দু’সেকেন্ডের জন্য চোখে চোখ রেখেছিলো। ব্যাস, আমার সব কিছু উলটপালট হয়ে গেলো। এখনো মনে আছে; ওর সেই চাউনিতে ছিলো কি এক রকম প্রশ্ন, কি উত্তর যেন খুঁজে পেতে চাচ্ছিলো আমার চোখে। এক বিশাল আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে ছিলো সে। এখনো মাঝে মাঝে ভাবলে শিউরে উঠি। সেদিন আমার আবেগকে পাত্তা দিতে চাইনি। ভেবেছিলাম মোহ। কত মেয়ে দেখলে তো ভালো লাগে, সেই রকমই কিছু হবে হয়তো। কিন্ত্ত টের পেলাম পরে। সবসময় কিরকম এক অস্থিরতায় যেন ভুগি! বিশেষ করে প্রতি সন্ধ্যা বেলায় তার কথা মনে হয়। সন্ধ্যার সময় যখন সূর্য অস্ত যায়, চারিদিক বিসন্ন করে পাখি ডেকে উঠে ঠিক তখনই তার কথা মনে পড়ে। তার মাথা নিচু করে কথা বলার ভঙ্গিমাটা, গালে লাজুক রংয়ের খেলা চোখে ভাসতে থাকে। ও সবসময়ে ফতুয়া-জামা পড়ে আসে। যখনই দেখি- সেই ফতুয়াই। একেক সময় একেক ডিজাইনের; কিন্ত্ত সেটা ফতুয়া। মজার ব্যপার, তাই না! অবশেষে, আর সহ্য করতে পারলাম না। ঠিক করলাম যোগাযোগ করবো। খোঁজ নিয়ে জানলাম সে আমাদের ইউনিভার্সটিতেই পড়ে। তবে সিএসই ডিপার্টমেন্টে না, ফারমাসি ডিপার্টমেন্টে। তবে ব্যপার হচ্ছে, সে বাঙ্গালী নয়, আফগান! ব্যাস, দমে গেলাম। বাঙালী মেয়েদের প্রতিই আমার এক ধরনের বিতৃষ্ণা কাজ করে। আর এতো হচ্ছে খোদ বিদেশীনী। কতটা উগ্র যে হবে, তাতো খোদাই ভালো জানেন। কিন্ত্ত, যতবার ওকে দেখি, ওর ভঙ্গিমা লক্ষ্য করি ততবারই মনে হয় এই মেয়ের সাথে আমার স্বপ্নের মেয়ের অদ্ভুত ধরনের মিল। ছোটবেলা থেকেই একটি কাল্পনিক মেয়েকে প্রেমিকা বানিয়ে নিয়েছিলাম। যার সাথে আদৌ কোন মেয়ের মিল পাওয়া সম্ভব নয় বলে ভাবতাম। কেননা, এতোটা ভালো আর এতোটা নম্‍ª মেয়ে আল্লাহ-তা’লা পৃথিবীতে নামিয়েছে কিনা সে ব্যপারে আমার যথেষ্ঠ সন্দেহ ছিলো। কিন্ত্ত সারা হাবিবিয়া আমার ধারনা পরিবর্তন করা শুরু করলো। আমিও একসময় ভাবতে শুরু করলাম এই মেয়েকে ছাড়া আমার চলবে না।
একদিন, ওর ফোন নাম্বার জোগাড় করে মেসেজ পাঠাতে শুরু করলাম। কিন্ত্ত… কোন রেসপন্স নেই! আশ্চর্য! এতো মেসেজ পেয়েও কোন মানুষ চুপচাপ বসে থাকতে পারে বলে আমার ধারনা ছিলো না। অবশ্য মানুষকে কতটুকুই বা চেনা যায়! অবশেষে, একদিন সরাসরি ফোন করলাম।

আহ্‍, ও আসবে আজকে… আমার সাথে দেখা করার জন্য। প্রথম প্রথমতো আমার সাথে কথা বলতে রাজিই হয়নি। বাব্বাহ্‍ কি ধমক! “I am not that kind of girl, what you are thinking!” । আমিতো স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। অবশেষে অনেক কষ্টে ওকে রাজি করিয়েছি শুধু মাত্র দেখা করার জন্য। যেহেতু একই ইউনিভার্সটির, তবে দেখা করতে সমস্যা কি? তবে আমি জানি, আমাকে ওর ভালো লাগবে; কেননা আমি প্রথম শ্রেনীর।

 

হ্যাঁ, ঐতো ও দাড়িয়ে আছে বনানী বাজারের নিচ তলায়, যেমনটি আমাদের কথা ছিলো। আজো ফতুয়া-জামা পড়ে এসেছে। কাঁধে ব্যাগ ঝুলানো। গাল দু’টো লাল হয়ে আছে। লজ্জায়, নাকি রেগে আছে? যা হোক, আমাকে আজকে কথা বলতেই হবে। নাহলে হয়তো আর কোন দিন বলা হবে না।

ওর কাছে গেলাম। আজকে ভালো করে লক্ষ্য করলাম, লম্বায় ও আমার গলা সমান। এর আগে এতো কাছে আসিনি। রজনীগন্ধার একটি ষ্টিক সামনে এগিয়ে দিলাম। ও অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে ইউনিভার্সটিতে দেখেছে অনেকদিন। বোধহয় আশা করেনি আমিই সেই ছেলে, যে তাকে উম্মাদের মত ভালোবাসে। ওর ঠোঁট কাঁপছে। আমি একরাশ আশা নিয়ে ওর সুন্দর চোখ দু’টোতে আমার দৃষ্টি ফেললাম। কিন্ত্ত… সেকি! ওর চোখে একরাশ ভয় কাজ করছে!

-“তুমি! ”, প্রায় ফিসফিসিয়ে ইংরেজীতে বললো।

-“হ্যাঁ।” , আমি গাঢ় কন্ঠে বললাম।

-“কিন্ত্ত, কিভাবে সম্ভব! ” , সারা কোন কারনে ভয় পেয়েছে। বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে।

-“কেন নয়? ” , আমার বুক চিরে যেন হাহাকার বের হয়ে আসলো। আমি সব ভেবেছি, কিন্ত্ত ও এখন যা ভাবছে তা কখনো ভাবিনি। আমার চোখ বোধহয় রক্তবর্ণ হয়ে উঠেছে। কান দিয়ে মনে হচ্ছে ধোঁয়া বের হচ্ছে।

-“তুমিতো রোবট! তোমার সাথে সম্পর্ক হতে পারে না… ” , ও চিৼকার করে বলে উঠলো।

-“শোন… ” , আমি ওকে ধরতে গেলাম। কিন্ত্ত ও ঝাড়া দিয়ে আমার হাত সরিয়ে দিয়ে দৌড়ে পালালো।

 

দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। হ্যাঁ, আমি রোবট। কিন্ত্ত তাতে কি? বাংলাদেশের প্রথম শ্রেনীর রোবট। যারা মানুষের মতো ধীরে ধীরে জ্ঞান অর্জন করতে পারে। যাদের মধ্যে ভালোবাসার অনুভূতিও বিজ্ঞানীরা সফলভাবে প্রোগ্রামিং করতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্ত্ত ভালোবাসলেই চলে না, ভালোবাসাকে কাছেও পাওয়া চাই। এ কথাকি তাদের ভাবা উচিত ছিলো না?

 

 

 

কাহিনী কাল্পনিক, তবে পুরোটাই নয়!

Share

27 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
প্রযুক্তি বিষয়ক খবরমহাকাশসাইন্স ফিকশন

কল্পনা নাকি বিজ্ঞান? টাইম মেশিনের ৫টি মজার রহস্য!

🚀 টাইম মেশিনে চড়ে ভবিষ্যতে যাচ্ছেন? কিন্তু হোমওয়ার্ক এখনো শেষ হয়নি! 🤯...

সাইন্স ফিকশন

science fiction (মানুষ )

            মানুষ                                                            ফয়েজ আহমেদ      তিনশত একুশ নাম্বার দল | ছয় ...

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.

যোগাযোগ: biggani.org@জিমেইল.com

Copyright © biggani.org