[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””] বিজ্ঞানী.অর্গঃ বিজ্ঞানী.অর্গ এর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। আমাদেরকে সাক্ষাৎকার দেবার জন্য ধন্যবাদ। প্রথমেই আপনার সম্বন্ধে আমাদের একটু বলুন।
প্রফেসর মোঃ মাহবুব আলমঃ বিস্মিল্লাহির রহ্মানির রহিম। বিজ্ঞানী.অর্গ পরিবারকে রইলো আমার আন্তরিক সালাম ও শুভেচ্ছা। সাক্ষাৎকার গ্রহনের জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। আমি চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার দেবীনগর ইউনিয়নের চরচাকলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করি। হাইস্কুল পর্যন্ত দেবীনগরেই বড় হয়েছি। তারপর রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলাই মাইগ্রেশন করি ১৯৮৬ সালে। এইচএসসি চাঁপাই নবাবগঞ্জ কলেজ এবং বিএসসি রুয়েট, মেকানিক্যাল। রুয়েটে তিন বৎসর সক্রিয় শিক্ষকতার পর মনবুশো স্কলারশিপ নিয়ে জাপানের ‘KITAMI INSTITUTE OF TECHNOLOGY’ থেকে মাস্টার্স (২০০১ সালে) এবং পিএইচডি (২০০৪ সালে) ডিগ্রি লাভ করি। ছোট্ট দেশ Hong Kong-এর THE HONG KONG POLYTECHNIC UNIVERSITY-তে পোস্টডক্টরাল ফেলো, রিসার্চ ফেলো, এবং ভিজিটিং লেকচারার হিসাবে কর্মরত ছিলাম ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত। চলে যাই বন জঙ্গলের দেশ সাউথ আফ্রিকা-তে ২০১০ সালে; যোগদান করি PRETORIA UNIVERSITY-তে সিনিয়র লেকচারার হিসাবে।
২০১২ সালে চাইনার থাওজ্যান্ড-ট্যালেন্ট–প্রোগ্রাম স্কলার টাইটেল নিয়ে প্রোফেসর হিসাবে যোগদান করি HARBIN INSTITUTE OF TECHNOLOGY গ্রীনসিটি সেনজেন ক্যাম্পাসে। এখানে এসে একটা রিসার্চ টিম গঠন করার সুযোগ লাভ করি। বর্তমানে, ২ জন পোস্টডক্টরাল ফেলো, ৪ জন পিএইচডি, এবং ১৩ জন মাস্টার্স স্টুডেন্ট আমার টিমে সক্রিয় রয়েছে; আর থিসিস ও গবেষণা করেছে সমাপ্ত ৩ জন পোস্টডক্টরাল ফেলো, ৪ জন পিএইচডি, এবং ৩৫ জন মাস্টার্স স্টুডেন্ট। আমার গবেষণা থেকে বের হয়েছে ৯৫-টি SCI গবেষণা প্রবন্ধ, ১৫টি বুক চাপ্টারস, ২-টি কমপ্লিট বই, এবং ১৩০-টি আন্তর্জাতিক কনফারেন্স প্রোসিডিং। “Wind and Structures” জার্নালের এডিটোরিয়াল টীমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছি। এছাড়াও অর্জিত হয়েছে National Research foundation (NRF) Rating Award (South Africa), Overseas High-Level Talent Award (Shenzhen), ২০১৫ Shenzhen Outstanding Teaching Award (by Shenzhen Govt), ২০১৬ Creative Talent Teacher Award (by University), এবং ২০১৭ Nanshan District High-Level Talent award. [/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””] বিজ্ঞানী.অর্গঃ কে আপনাকে বিজ্ঞানী হতে উদ্বুদ্ধ করল?
প্রফেসর মোঃ মাহবুব আলমঃ আপনি আমাকে বলছেন বিজ্ঞানী, কিন্তু আমার একমাত্র স্ত্রী-তো বলে যে আমার কোনই জ্ঞান নাই। কার কথা যে বিশ্বাস করি। আপাতত আপনাকেই বিশ্বাস করলাম, নাহলে তো ইন্টারভিউ নেয়া এখনি বন্ধ করে দিবেন। আপনাকে আরও একবার ধন্যবাদ। আসলে বিজ্ঞানী হতে পেরেছি কিনা তা জানিনা, তবে এ অবস্থানে আসার জন্য প্রথমেই ধন্যবাদ এবং শুকরিয়া জানাই আল্লাহ্কে। ছোটবেলা থেকেই আমার পড়া, কৃষি কাজ, খেলা, এবং মাছ ধরা (শখ), এই চারটি কাজের সমন্বয় ছিল রুয়েটে পড়ার শেষ বর্ষ পর্যন্ত। স্কুল থেকে কলেজ পর্যন্ত প্রাইভেট পড়ার সুযোগ হয়েছিলো মোটের উপর মাত্র কয়েক মাস। যার ফলে, নিজে নিজে পড়ে বিজ্ঞান বইয়ের বিষয়বস্তু অনুরপ্ত করার এবং উদাহরণ দেখে গণিত সমাধান করার দক্ষতাটা বেশ উপভোগ করতাম। বইয়ের কোন চ্যাপ্টার গুরুত্বপূর্ণ আর কোনটি নয় এটা নির্ধারণ করার দক্ষতা মোটেই ছিল না। সব চ্যাপ্টার গুলই সমানভাবে পড়তাম, পরীক্ষায় কমন না পরার ঝুঁকি নিতাম না। বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় গণিত এবং গাণিতিক সাবজেক্ট গুলোই আমাকে আকর্ষণ করতো, উপভোগ করতাম পড়াকে – যেমনটি একজন খেলাকে উপভোগ করে। পিএইচডি-তে গবেষণা ফলাফল বিশ্লেষণ এবং গবেষণা প্রবন্ধ লিখা দুটিই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। প্রথমটা কেও ভালভাবে ডাইজেস্ট করতে পারলে, দ্বিতীয়টা সহজ হয়ে যাই। এই কাজগুলো কারো জন্য শ্রমসাধ্য আর কারো জন্য উপভোগ্য। আমি গবেষণা ফলাফলগুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে পারতাম, যেটা আমার সুপারভাইজার প্রশংসা করতেন, নিজেও প্রাউড ফীল করতাম। প্রবন্ধগুলোর রিভিউ-রিপোর্ট গুলোতেও প্রশংসার বাক্য থাকতো। এখানেই আমার টার্নিং পয়েন্ট। গবেষণার কাজ কৌতূহলপূর্ণ এবং উপভোগ্য, তাই চালিয়ে এসেছি। পরমশ্রদ্ধেয় বাবা-মার উৎসাহ ও অভিপ্রায় গভীরভাবে স্মরণ করছি। দোয়া করবেন। [/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””] বিজ্ঞানী.অর্গঃ আপনি জাপানের Kitami Institute of Technology থেকে পিএইচডি করেছেন। আপনার গবেষণার বিষয় কি ছিল?
প্রফেসর মোঃ মাহবুব আলমঃ যখন ফ্লুয়িড (যেমন বাতাস বা পানি) কোনো STRUCTURE এর উপর দিয়ে প্রবাহ করে, তখন ওই প্রবাহ একটা বল প্রয়োগ করে ওই STRUCTURE-এ। প্রবাহ বল যদি ঠিকমত বিবেচনা করা না হয় STRUCTURE ডিজাইন করার সময়, তবে ওই STRUCTURE-টা ফেইল করতে পারে। যখন একের অধিক STRUCTURES গ্রুপ হয়ে থাকে (যেমন বেশকিছু হাইরাইজ বিল্ডিং একসাথে, OIL EXTRACTION RISERS FROM OCEAN BED), প্রবাহের কারণে কোন STRUCTURE-এ কতটুকু বল প্রয়োগ হবে তা নির্ধারণ করা নিতান্তই প্রয়োজনীয়। এটা শুধু প্রবাহ বেগের উপরই নির্ভর করে না, করে STRUCTURE-গুলোর অবস্থান বিন্যাসের উপরও। আমার গবেষণার বিষয় ছিল STRUCTURE গুলোর উপর প্রবাহ বল তাদের অবস্থান বিন্যাসের উপর কিভাবে নির্ভরশীল। গবেষণায় দেখা গেলো, অবস্থান অনুযায়ী কোনো কোনো STRUCTURE-এ অপ্রত্যাশিতভাবে তিনগুণ পর্যন্ত বেশী বল প্রয়োগ হচ্ছে। তারপরের কাজ ছিল, এই অপ্রত্যাশিত বল কিভাবে কমানো যায়। PASSIVE CONTROL TECHNIC প্রয়োগ করে ৯০% পর্যন্ত বল কমানো হয়েছিলো। [/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]
বিজ্ঞানী.অর্গঃ জাপানে গবেষণার পরিবেশ কেমন লেগেছে? সেই অভিজ্ঞতা বলুন।
প্রফেসর মোঃ মাহবুব আলমঃ জাপানে ল্যাবে কাজ করার শুরুতেই নতুন নতুন INSTRUMENT-এর সাথে পরিচিত হতে লাগলাম। ওই ল্যাবে প্রায় ১৫ জন ছাত্র ছিল। গবেষণার INFRASTRUCTURE হিসাবে ছিল চারটি WIND TUNNEL এবং তিনটি WATER CHANNEL। আমাকে এক সেট INSTRUMENT এবং একটা WIND TUNNEL দিয়ে দেয়া হল গবেষণার জন্য। একজন নতুন ছাত্রের জন্য INSTRUMENT-গুলোর সাথে পরিচিত হওয়া এবং WIND TUNNEL-এ কাজ শুরু করা মোটেও সহজ কাজ নয়। অন্য ছাত্ররা আমাকে আন্তরিকভাবে সাহায্য করত, সাথে আমার সুপারভাইজারও। আমি অন্যদের এক্সপেরিমেন্টগুলোও দাড়িয়ে থেকে দেখতাম। এই দেখাটা পরে আমার গবেষণার পরিধি বাড়াতে সাহায্য করেছে। সব ছাত্রের ডেস্ক একই কক্ষে, বড় গবেষণা কক্ষের সাথে এ্যাটাচড। আমি একই লাবে সাড়ে পাঁচ বৎসর ছিলাম। অনেক নতুন ছাত্রের আগমন এবং পুরাতন ছাত্রের ডিগ্রি নিয়ে প্রস্থান দেখেছি। কিন্তু কখনই দেখি নাই ছাত্রদের মধ্যে সামান্যতম মনোমালিন্য, উচ্চবাচ্য। ল্যাবে আসা যাওয়ার বাঁধাধরা কোনো সময় ছিল না, তবুও বলা চলে সবাই সকাল থেকে রাত্রি সাতটা-এগারটা পর্যন্ত কাজ করতো। কারো কোনদিন ভালো না লাগলে দুপুরে বা বিকালে বাসায় চলে যেত। গ্রীষ্মকালে দুপুরে (লাঞ্চের আগে) ফুটবল খেলতাম ল্যাব মেটসহ অন্য ছাত্রদের সাথে। কখনো কখনো শনি রবিবারেও ল্যাবে যেতাম, না হয় ব্যাডমিন্টন খেলতাম। বাঁধাধরা কোনো সময় না থাকার কারণে মনে হত জীবনটা যেন একটা মুক্ত হাওয়া। এই মুক্ত পরিবেশে তিক্ত অভিজ্ঞতা একেবারেই ছিল না। মনটা তাই সবসময় সতেজ থাকতো, কাজে পূর্ণ একাগ্রতাসহ। কাজের পরিবেশটা ছিল সত্যতা, সততা ও শিষ্টতা পূর্ণ। জীবনটাকে স্ফটিকের মত স্বচ্ছ করে প্রস্ফুটিত করার পরিবেশ বিরাজমান ছিল। জাপানিজ ল্যাবগুলো আপটুডেট INSTRUMENT দিয়ে পরিপাটিভাবে সাজানো। খুব অরিজিনাল গবেষণা হয়। আমি একটু আগেই বলেছি, একটা WIND TUNNEL আমি একাই ব্যবহার করেছি। পরে যখন অন্যদেশে কাজ করার সুযোগ হল, তখন দেখলাম একটা WIND TUNNEL ৫-১০ জন ছাত্রকে শেয়ার করতে হয়। শেয়ারিং-এ মডেল ইন্সটল এবং আনইন্সটল করতে অনেক সময় নষ্ট হয়। প্রতিবার মডেল সেটআপ করতে গিয়ে, সেটআপের ACCURACY চেক করতে হয়। INSTRUMENT-এ এরোর আসে। আমি ভাগ্যবান ছিলাম, একটা WIND TUNNEL একাই ব্যবহার করেছি। ধন্যবাদ আমার শ্রদ্ধেয় সুপারভাইজার প্রফেসর HIROSHI SAKAMOTO-কে (মধ্যমণি নিচের ছবিতে)।
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””] বিজ্ঞানী.অর্গঃ এরপরে আপনি Hong Kong Polytechnic University তে পোস্টডক করেছেন। সেখানে গবেষণার বিষয় কি ছিল।
প্রফেসর মোঃ মাহবুব আলমঃ এখানে গবেষণার বিষয় ছিল ‘rain-wind-induced vibrations’ । যেমন ধরুন ঝুলন্ত ব্রিজে অনেক গুলো ক্যাবলস (inclined bars) থাকে ব্রিজডেক-কে ধরে রাখার জন্য। এই ক্যাবলগুলো শুধু বৃষ্টি হলে ভাইব্রেট করে না, আবার শুধু ঝড় হলেও তেমন ভাইব্রেট করে না, কিন্তু বৃষ্টি এবং ঝড় একসাথে হলে violently ভাইব্রেট করে। আমার কাজ ছিল violently ভাইব্রেট করার কারন এবং এর প্রতিকার বের করা। নিচের ভিডিওতে দেখুন ঝুলন্ত ব্রিজের একটা ক্যাবল কীভাবে ভাইব্রেট করছে।
[/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””] বিজ্ঞানী.অর্গঃ তারপরে আপনি সাউথ আফ্রিকাতে University of Pretoria তে শিক্ষকতা করেছেন। সেখানে কি বিষয় পড়াতেন? সেখানে কি কোন গবেষণা করেছেন? এবং সাউথ আফ্রিকার গবেষণার পরিবেশ সম্বন্ধে বলুন।
প্রফেসর মোঃ মাহবুব আলমঃ সেখানে আমি THERMAL & FLUID MACHINES পড়াতাম আন্ডারগ্রাজুয়েট ছাত্রদের জন্য, আর ‘ADVANCED FLUID MECHANICS’ এবং ‘FLUID-STRUCTURE INTERACTIONS’ পোস্টগ্রাজুয়েট ছাত্রদের জন্য। সাউথ আফ্রিকাতে কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো গবেষণা হয়। সরকারী ফান্ডিং মোটামুটি। তবে যে সব শিক্ষক NRF রেটিং অর্জন করতে পারে, তাদের জন্য ফান্ডিং অনেক সহজ। এখানেই আমি WIND TURBINE-এর উপর কাজ শুরু করি এক পিএইচডি ছাত্রকে দিয়ে। [/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””] বিজ্ঞানী.অর্গঃ বর্তমানে আপনি Harbin Institute of Technology তে শিক্ষকতা ও গবেষণা করছেন। কি গবেষণা করছেন এখানে?
প্রফেসর মোঃ মাহবুব আলমঃ এখানে আমার পোস্টডক্টরাল ফেলো এবং ছাত্র বেশী থাকাই আমাকে গবেষণার পরিধিও বিস্তৃত করতে হয়েছে। আমি চারটি মৌলিক বিষয়ের উপর গবেষণা করছি। প্রথমটি হচ্ছে WIND TURBINE-এর CUT-IN SPEED কমানো যাতে বাতাসের গতি যখন কম তখনও WIND TURBINE চালানো যায়। দ্বিতীয়টি হচ্ছে উড়োজাহাজের ডানা (উইং-) উপর লিফট বল বৃদ্ধিকরণ। এটা করতে গিয়ে একটি পাখির ডানাতে তার পালকগুলোর প্রভাব কি তা পরীক্ষামূলক ভাবে বুঝার চেষ্টা করলাম। প্রথমে একটি পালকবিহীন ডানার সিমপ্লিফাইড মডেল তৈরি করলাম। তারপর চাইনীজ স্পট কবুতরের (fastest-speed racing pigeon species) পালক সংগ্রহ করলাম। এবার পালকগুলো দিয়ে একটা ফালি (strip) তৈরি করে ডানার উপর তলে (upper surface) সামনের কিনারায় (leading edge) বসালাম। পালকসহ মডেলটি WIND TUNNEL-এ ইন্সটল করে তার লিফট বল পরীক্ষা করে নিলাম। এবার পালক ফালিটি যথাক্রমে ডানার মধ্যখানে এবং শেষ কিনারায় সরিয়ে একই পরীক্ষা করলাম। এবার ডানার নিচের তলে (lower surface) বিভিন্ন জায়গায় পালক ফালিটি বসিয়ে তার প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা হল। সারপ্রাইজিং ফলাফল হল ডানার নিচের তলে সামনের ধারের পালকগুলো ১৮৬% পর্যন্ত লিফট বল বৃদ্ধি করতে পারে এ্যাটাক এ্যাংগেল পরিবর্তন না করেই। পাখির ডানার বিভিন্ন জায়গায় পালকগুলোর কার্যকারিতা কি সেটাও এই পরীক্ষা থেকে জানা গেল। তৃতীয়টি হচ্ছে ফ্লুয়িড (বাতাস বা পানি) প্রবাহ জনিত STRUCTURAL VIBRATION-এর মেকানিজম জানা এবং VIBRATION দমন করা। এখন অনেক আকাশচুম্বী (স্কাইস্ক্রাপার ) বিল্ডিং হচ্ছে যেগুলো সহজেই ঝড়ের কারণে VIOLENTLY স্পন্দিত হয়ে ভেঙ্গে জেতে পারে। ভিডিও-তে দেখুন কিভাবে একটি ঝুলন্ত ব্রিজ ঝড়ে স্পন্দিত হয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে। একইভাবে OFFSHORE MARINE STRUCTURES (যেমন OIL RISERS) OCEAN CURRENT-এর কারণে স্পন্দিত হয়। স্পন্দনের EXACT MECHANISM না জানা গেলে ওটা প্রতিকারের উপায়ও বের করা যায় না। নিচের পরীক্ষামূলক ভিডিওতে দেখুন, দুটি সিলিন্ড্রিক্যাল STRUCTURE-এর একে অপরের উপর প্রভাব। ক্যান্টিলিভার সিলিন্ডারটি (subjected to wind) যখন একা তখন স্পন্দিত হচ্ছে না। কিন্তু যখন আরেকটি সিলিন্ডার তার পাশে দেয়া হচ্ছে, তখন স্পন্দিত হচ্ছে। বৈশিষ্ট্যটি মানুষের জীবনের সাথেও মিল আছে। বিবাহিত জীবনে একটু বেশী দোড়-ঝাঁপ লেগে থাকে, সিঙ্গেল থাকলে কম। চতুর্থটি হচ্ছে ছোট মাছগুলো কিভাবে বড় মাছগুলো থেকে নিজেকে বাঁচাই, আর কিভাবেই বা ধরা খাই। আমার গবেষণাতে এটা পাওয়া যাচ্ছে যে ছোট মাছগুলো লেজ নাড়ানোর মাধ্যমে বড় মাছের উপস্থিতি অনেক দূর থেকেই বুজতে পারে। বড় মাছ ছোট মাছকে ধরার জন্য কাছে আসলে ছোট মাছের সুইমিং দক্ষতা (EFFICIENCY) বেড়ে যাই। অর্থাৎ, বড় মাছ কাছে আসলে ছোট মাছ একই শক্তিতে বেশী সুইমিং SPEED অর্জন করতে পারে। ছোট মাছের এই সুইমিং দক্ষতা বড় মাছ যত কাছে আসে তত বেড়ে যায়। ছোট মাছ এভাবেই নিজেকে রক্ষা করে বড় মাছ থেকে। এই জন্য মাছ স্থির থাকলেও অনবরত লেজ নাড়াতে থাকে, অন্তত সে যখন শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, বা সাবধান থাকতে চাই। এই PHYSICS-এর মাধ্যমেই হয়তো আল্লাহ্ ছোটদের টিকে থাকার বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন। অপরপক্ষে, বড় মাছ যত কাছে আসে তার সুইমিং দক্ষতা কমতে থাকে, যার ফলে তার জন্য ছোট মাছটি ধরা কঠিন হয়ে পরে। মজার ব্যাপার হলো, বড় মাছটি যদি হা করে তেড়ে আসে তাহলে কখনই ছোট মাছটির কাছে আসতে পারবে না। কারণ মাছ হা করে সুইমিং করলে তার সুইমিং দক্ষতা মারাত্মক ভাবে কমে যায়। বড় মাছটি যদি ছোট মাছটির কাছে অসাবধানতার কারণে পোঁছতে পারে, তাহলে বড় মাছটিকে একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে (খুব কাছে) গিয়ে হা করতে হবে এবং এই দূরত্ব নির্ভর করে ওই দুটো মাছের সাইজের অনুপাতের উপর।
[/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””] বিজ্ঞানী.অর্গঃ চীনের গবেষণার পরিবেশ ও পদ্ধতি সম্বন্ধে আমাদের বলুন।
প্রফেসর মোঃ মাহবুব আলমঃ চীনে চমৎকার পরিবেশ রয়েছে গবেষণার জন্য। ফান্ডিং পাওয়ার সুযোগ রয়েছে স্টেট, প্রদেশ, এবং সিটি লেভেল থেকে। যোগ্যতা থাকলেই অত্যাধুনিক (STATE-OF-ART ) যন্ত্র দিয়ে আপনার ল্যাবকে সাজিয়ে গবেষণার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবেন। লিভিং COST কম হওয়াই, ছাত্রদের স্টাইপেন্ড কম, একজন শিক্ষক কম খরচেই একজন পিএইচডি ছাত্রকে রোলিং করতে পারে। [/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””] বিজ্ঞানী.অর্গঃ Wind turbine এর কার্যকারিতা উপর আপনি একজন বিশ্বের প্রথম সারির গবেষক। এই গবেষণাতে কি আবিষ্কার করলেন।
প্রফেসর মোঃ মাহবুব আলমঃ এই গবেষণাতে (এক) টারবাইনের অবস্থান নির্বাচন, (দুই) একটি স্থানে একটি টারবাইন বৎসরে কতদিন পাওয়ার দিবে আর কতদিন নিষ্ক্রিয় থাকবে তার estimation, (তিন) টারবাইনের উচ্চতার সাথে টারবাইনের পাওয়ারের সম্পর্ক কি, এবং (চার) টারবাইনের শক্তিকে কিভাবে hydraulically স্টোর করে রাখা যায় , সেগুলো investigate করা হয়েছে।[/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””] বিজ্ঞানী.অর্গঃ আপনি বেশ কিছু বই প্রকাশিত করেছেন। বইগুলি সম্বন্ধে আমাদের বলুন।
প্রফেসর মোঃ মাহবুব আলমঃ আমি দুটো বই এবং একটি প্রসিডিং (proceeding) প্রকাশ করেছি। প্রথম বইটি “Physics of flow around cylindrical structures in a cross flow এর উপর, যেখানে আলোকপাত করা হয়েছে steady and fluctuating fluid forces, surface pressure, vortex shedding frequency, flow structures, wake characteristics, flow switching mechanisms, and possible interaction mechanisms and instabilities। আর দ্বিতীয় বইটি “wind speed characteristics and effect of tower shading on wind measurements” এর উপর। প্রসিডিংটি হচ্ছে ৩৫টি কনফারেন্স প্রবন্ধের সংগ্রহ। কনফারেন্সটি হয়েছিলো ইন্ডিয়ার কেরালাতে ২০১৫ সালে। এ ছাড়াও তিনটি বিশেষ বিষয় (SPECIAL ISSUE) প্রকাশিত হয়েছে SCI জার্নাল ‘WIND AND STRUCTURE’-এ। [/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””] বিজ্ঞানী.অর্গঃ আপনার একটি গবেষণাপ্রবন্ধ Pumped hydro energy storage system: A technological review টি রেফারেন্স হিসাবে প্রচুর ব্যবহৃত হয়েছেন। এই গবেষণাপ্রবন্ধটি কিসের উপর?
প্রফেসর মোঃ মাহবুব আলমঃ হাঁ, আপনি ঠিকই ধরেছেন, এই গবেষণাপ্রবন্ধটি ‘TOP 1% highly cited article‘ হিসাবে THOMPSON REUTERS সনাক্ত করেছে। সনাক্তকরনটি একটি এওয়ার্ড হিসাবে দেখা হয়। এই গবেষণাপ্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিলো ২০১৫ সালে। ২০১৬ সাল থেকে এই গবেষণাপ্রবন্ধটি highly cited প্রবন্ধ হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। এই চার বৎসরেই প্রবন্ধটি ESI এবং গুগল ডাটাবেজ অনুযায়ী যথাক্রমে ১৫২টি এবং ২৫৫টি প্রবন্ধে রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি একটি পর্যালোচনা (review) প্রবন্ধ। এখানে Pumped Hydroelectric Energy Storage সিস্টেম কিভাবে একটা ব্যাটারির মত কাজ করে সেটা দেখানো হয়েছে। এর প্রয়োগ, ফিজিবিলিটি, সুবিধা, অসুবিধা এবং গুরুত্ত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এটা কিভাবে কাজ করে সংক্ষেপে একটু ধারনা দিই। ধরুন কোন এক জায়গায় সোলার সিস্টেম এবং/অথবা উইন্ড টারবাইন আছে যেখানে দিনের বেলায় বা কোন মৌসুমে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে যাহা LARGE SCALE-এ স্টোরেজ (save) করে রাখতে হবে। সেই স্টোরড শক্তি ব্যবহার করা যাবে রাত্রে, পিক মৌসুমে অথবা যখন বিদ্যুতের ঘাটতি থাকবে। এই বৈদ্যুতিক এনার্জি স্টোর করার জন্য দুটি ভিন্ন উচ্চতার হাইড্রলিক জলাধার (reservoir) দরকার। যখন সোলার বা উইন্ড থেকে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে, তখন অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করে কম উচ্চতার (lower level) জলাধার থেকে বেশী উচ্চতার (higher level) জলাধারে পানি উঠানো হবে পাম্পের সাহায্যে। যখন প্রয়োজন, এই বেশী উচ্চতার পানি থেকে হাইড্রলিক টারবাইনের সাহায্যে আবার বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা যাবে। বেশী উচ্চতার জলাধারটি এখানে ব্যাটারি হিসাবে কাজ করবে মাধ্যাকর্ষণ POTENTIAL এনার্জি সংরক্ষণের মাধ্যমে। [/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””] বিজ্ঞানী.অর্গঃ বাংলাদেশের অনেক বিজ্ঞানীরা এখন পশ্চিমা দেশ থেকে চীনে প্রচুর পরিমানে শিক্ষকতা ও গবেষণাতে যুক্ত হচ্ছে। এই পরিবর্তনের কারণ কি বলে মনে হয়? চীনের গবেষণার পরিবেশ সম্বন্ধে বলুন। চীনে সরকারী না বেসরকারি বিনিয়োগ বেশী। ফান্ড সম্বন্ধে বলুন। চীনে যারা গবেষণা কাজে যেতে চায় তাদের জন্য কি উপদেশ দিবেন?
প্রফেসর মোঃ মাহবুব আলমঃ শুধু বাংলাদেশী নয়, অন্য দেশের বিজ্ঞানীরাও চীনে আসতেছে। চীন সরকার বিভিন্ন প্রোগ্রাম চালু করেছে বিদেশী স্কলারদের আকর্ষণ করার জন্য। আকর্ষণ বেইট (BAIT) হিসাবে, বিদেশী স্কলারদের স্টেট, প্রদেশ, এবং সিটি আলাদাভাবে ট্যাক্স ফ্রী SETTLEMENT ALLOWANCE দিয়ে থাকে, যেটা ইর্ষনীয়। চীন সরকার গবেষণার মান অতি উচ্চতাই নেওয়ার টার্গেট করে এটা করেছে এবং সফলের দিকে এগুচ্ছে। তারা শুধু YOUNG SCIENTIST-দের টার্গেট করেছে তা নয়, টার্গেট করেছে নোবেল বিজয়ীদেরও। শুধু সেনজেনেই দশটির মত NOBLE LAUREATE ল্যাব স্থাপিত হয়েছে ২০১৬ সাল থেকে। চীনে গবেষণার পরিবেশ এবং চালিকা শক্তি (ফান্ড) দুটোই আছে। কেও কেও আবার বাসাতেও চাইনিজ পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য চাইনিজ (চাই+নিজ) মেয়ে বিয়ে করছে। বিদেশী গবেষকরা পদমর্যাদা অনুযায়ী পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পেয়ে যাচ্ছে। এখন হয়তো বলবেন, চিনে এত মারভেলাস সুযোগ, কিন্তু কোনো সমস্যা আছে কি? হাঁ, সেটাও আছে (!)। যেমন বাচ্চাদের পড়াশুনা। এখানে ইন্টারন্যাশনাল স্কুল গুলো অতিমাত্রাই ব্যয়বহুল। যদি আপনার ছেলেমেয়েকে চাইনিজ স্কুলে পড়াতে চান, তাহলে আর্থিকভাবে সহজ; তবে ভর্তি করানো কঠিন। আরেকটি সমস্যা হল ভাষা। এটা বিদেশিদের জন্য একটা স্ফীত সমস্যা।
গবেষণা কাজে চিনে আসতে চান! যারা ফ্রেশ পিএইচডি শেষ করেছেন, তাদের জন্য পোস্টডক্টরাল ফেলো হিসাবে কাজ করার একটা উর্বর ক্ষেত্র হচ্ছে চীন। ফ্যাকাল্টি হিসাবে আসতে চাইলে, নিজের পাবলিকেশন ট্র্যাকটি সমৃদ্ধ করুন কোয়ালিটি পাবলিকেশন দিয়ে। টোটাল সাইটেশনকে ও এখানে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। অগ্রিম শুভ কামনা রইল। [/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””] বিজ্ঞানী.অর্গঃ তরুন শিক্ষার্থী যারা বিজ্ঞানে কাজ করতে চায় তাদের জন্য আপনার কোন উপদেশ বা বক্তব্য কি?
প্রফেসর মোঃ মাহবুব আলমঃ চীনে বিভিন্ন গ্রেডের সরকারি স্কলারশিপ আছে (CSC, CAS-TWAS)। এছাড়াও রয়েছে লোকাল গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ, ইউনিভার্সিটির নিজস্ব স্কলারশিপ। মাস্টার্স, পিএইচডি তে এসে গবেষণার কাজে মনোযোগ দিন, গবেষণাকে উপভোগ করুন। এই দুটো লেভেল ভালো করবে যদি তার ইন্ডিপেনডেন্ট (শিক্ষকের সাহায্য ছাড়া) লার্নিং স্কিল ভালো থাকে। প্রাইভেট পড়ুয়া ছাত্ররা সাধারণত এই স্কিল অর্জনে পিছিয়ে থাকে। গবেষণা প্রবন্ধ লিখার সময় স্ট্যান্ডার্ড গ্রামার অনুসরণ করে লিখা CONCISE করার কৌশলগুলো রপ্ত করে নিন। দৈহিক এবং মানুষিক ভাবে নিজেকে ফিট রাখার জন্য, আপনি যে খেলাটি পছন্দ করেন, সেটিকে অবসর সময়ের সাথে সমন্বয় করুন। অবসর সময়ের একটা অংশ খেলা দিয়ে প্রতিস্থাপন করুন। এতে দৈহিক ফিটনেসের সাথে মেন্টাল শার্পনেস বৃদ্ধি প্রাপ্ত হবে। আপনি যখন দেখবেন কাজ আপনাকে আকর্ষণ করছে, আপনি কাজকে নয়, তখনই বুঝবেন আপনি কাজ উপভোগ করতেছেন। শুধু ল্যাবেই নয়; বাসাতে, খেলার মাঠে, যেখানেই থাকুন না কেন, নিজের সময়ের প্রতি যত্নশীল হন, অন্যদের সময়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন। শুভ কামনা রইল। [/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””] বিজ্ঞানী.অর্গঃ আপনার সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুন গবেষকদের মাস্টার্স ও পিএইচডি তে ভর্তি হবার সুযোগ আছে কি? কোথায় যোগাযোগ করবে এবং এর জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে?
প্রফেসর মোঃ মাহবুব আলমঃ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন ক্যাম্পাসে CSC স্কলারশিপের প্রায় ৭০টির মত কোটা আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে জেনে নিতে পারবেন দরখাস্ত করার সময় এবং নিয়মাবলী। এছাড়াও SELF-FINANCE স্টুডেন্টদের জন্য রয়েছে ‘Shenzhen Universiade International Scholarship’। [/box]
[divider style=”solid” top=”20″ bottom=”20″]
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে আরো নতুন নতুন সংবাদ জানতে সাবস্ক্রাইব করুন।
[mc4wp_form id=”3448″]
Leave a comment