ওয়্যারেবল ডিভাইস: শরীরে সেন্সর লাগিয়ে পর্যবেক্ষন করার যন্ত্র
ওয়্যারেবল ডিভাইস এক ধরনের মেডিকেল ডিভাইস যা শরীর এর সাথে সংযুক্ত থেকে সেন্সরের মাধ্যমে রক্তচাপ, হার্টবিট, ডায়াবেটিক বা রক্তে গ্লুকোজ সহ অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করে। বিশ্বের নামকরা ওয়্যারেবল ডিভাইস এর মধ্যে রয়েছে ফিটবিট এবং অ্যাপল ওয়াচ। নিচে এক নজরে দেখা যাক কিছু বিখ্যাত ডিভাইসগুলি:
অ্যাপল ওয়াচ: কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনের পরে অ্যাপল এপ্রিলের ২০১৪ এর দিকে ঘোষনা করে যে তারা ফিটনেস ট্রাকার তৈরী করছে। এক বছর পরে এপল ওয়াচ বা এপল ঘড়ি রিলিজ হয় এপ্রিল ২০১৫ তে। যদিও ফিটনেস ট্রাকার ও পরিধানযোগ্য স্মার্টডিভাইস কিন্তু যেহেতু এটি ঘড়ির আকারের এবং তা অনেক কাজ করতে পারে তাই একে স্মার্ট ওয়াচ বলা হয়।
অ্যাপল স্টোরে বিভিন্ন অ্যাপল ওয়াচ
বর্তমানে নতুন ৪র্থ সিরিজে ইসিজি মাপতে সক্ষম এই ঘড়িটি। এই ঘড়িতে নিম্নের সেন্সর গুলি রয়েছে।
- জিপিএস বা নিজের অবস্থান নির্নয় করা
- ব্লুটুথ
- অপটিক্যাল হার্ট সেন্সর
- ইলেকট্রিক্যাল হার্ট সেন্সর
- Accelerometer
- Gyroscope
- Ambient light sensor আলোর পরিমান নির্নয়
- Altimeter
তবে স্মার্ট ওয়াচ যে শুধু মাত্র সৌখিন জিনিস নয়, এটি যে মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে তা প্রমাণ করে জেমস গ্রীনের ক্ষেত্রে। হটাৎ তার হৃদপিন্ডের রক্তের কনিকা জমে তার হার্টরেট বাড়িয়ে দেয় এবং তা অ্যাপল ওয়াচ চিহ্নিত করে জেমসকে সতর্ক করে। জেমস ব্যাপারটির গুরুত্ব বুঝতে পেরে হাসপাতালে যাবার পরে তা চিকিৎসকরা ধরতে পারেন এবং সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেন। যদি সতর্ক না করতো তবে হয়তো ব্যাপারটি আরো খারাপ দিকে যেতে পারতো।
ওয়্যারেবল ডিভাইস সরাসরি রোগ নির্নয়ে ভূমিকা না রাখলেও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখছে বলে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা মনে করেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়।, যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তারা ওয়্যারেবল ডিভাইসের মাধ্যমে নিয়মিত রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ করে জটিল অবস্থা এড়িয়ে চলতে পারেন। পরোক্ষভাবে এই ডিভাইসগুলো আমাদের অসুখ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে বলে আমরা একে প্যাসিভ ডিভাইস (passive device) বা পরোক্ষ ডিভাইস বলি।
ওয়্যারেবল ডিভাইস এতদিন পর্যন্ত সেন্সরের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে প্রদর্শন করতো। কিন্তু এখন ওয়্যারেবল ডিভাইস নতুন ২য় ধাপ শুরু হয়েছে যাবে আমরা ওয়্যারেবল ডিভাইস ২.০ বলছি। এ ধাপে ওয়্যারেবল ডিভাইসগুলি আমাদের পার্সোনালাইজড কোচ বা ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে কাজ করবে অর্থাৎ আপনাকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করবে। যেমনঃ ডাক্তার আপনাকে প্রতিদিনের ৩০ মিনিট হাটতে বলেছেন। কোন কারনে আপনি নিয়মিত তা মেনে চলছেননা, তখন যদি ওয়্যারেবল ডিভাইস ব্যবহার করেন, তাহলে ডিভাইসটি এলার্মের মাধ্যমে বা বিভিন্ন উপায়ে আপনাকে আপনার করনীয় সম্পর্কে আপনাকে অবহিত করবে বা পরামর্শ দিবে।
ওয়্যারেবল ডিভাইসে এখন নতুনভাবে আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংযুক্ত হচ্ছে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলতে আমরা বুঝি একটি কম্পিউটারের চিন্তাভাবন, যা অনেক তথ্যকে পর্যবেক্ষণ করে আপনাকে ফলাফল নির্ণয় করতে সহায়তা করে। কিন্তু ওয়্যারেবল ডিভাইসে আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স শুধুমাত্র আপনার তথ্যই দেখাবে না, সেই তথ্যগুলো পর্যবেক্ষণ করে কোন পদক্ষেপ নিবে।
ওয়্যারেবল ডিভাইসটির আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স তার পূর্বলব্ধ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আপনার তথ্যগুলোকে তুলনা করে আপনাকে সঠিক পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করবে। প্রযুক্তিবিদরা মনে করছেন ওয়্যারেবল ডিভাইসের এই নতুন যাত্রা সামনে আর বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ হবে। ওয়্যারেবল ডিভাইসের মাধ্যমে শরীরের খুটিনাটি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কোন রোগ এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে ও সুস্থতা বজায় রাখা যাবে। যদিও এখন ওয়্যারেবল ডিভাইসের সেন্সরের পরিমান কম এবং বর্তমানে শুধুমাত্র রক্তচাপ, গ্লুকোজ লেভেল বা হার্টবিট মাপতে পারে। কিন্তু আরো নতুন নতুন সেন্সর তৈরির কাজ চলছে। গবেষণাগারের তৈরী সেন্সরগুলি এখন বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসা শুরু করেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আপনার ত্বকের সাথে সংযুক্ত থাকা ডিভাইস টি আপনার ত্বক থেকে নিঃসৃত ঘাম বা তরল পদার্থ পর্যবেক্ষণ করবে এবং আপনাকে আপনার করণীয় কাজটি করতে পরামর্শ প্রদান করবে।
ওয়্যারেবল ডিভাইস দুই ধরনের হয়ে থাকে,
১। ইমপ্ল্যান্ট যা আপনার শরীরের ভিতরে সংযুক্ত থাকবে।
২। আউটপ্ল্যান্ট ডিভাইস যা আপনার ত্বকের সংস্পর্শে থাকবে।
ইমপ্লান্ট ডিভাইস সাধারণ বিশেষ কোন অসুস্থ রোগীদের পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত হয়। যেহেতু শরীরের ভিতরে সংযুক্ত থাকে, তাই এইগুলি খুবই সতর্কতার সাথে তৈরী করা হয়। এবং বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসার আগে এর নিরাপত্তা নিয়ে অনেক পরীক্ষা নিরিক্ষা করে দেখা হয়। তাই বেশীরভাগ সময়েই এই সেন্সরগুলি গবেষনাগার থেকে সাধারণ মানুষের হাতে পৌছতে অনেক সময় প্রয়োজন হয়।
আউটপ্লান্ট ডিভাইসগুলি ত্বক থেকেই বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে। বর্তমানে স্মার্ট ওয়াচে এই সেন্সরগুলি সংযুক্ত করে শরীরের অবস্থা নিরুপন করা হয়ে থাকে।
ওয়্যারেবল ডিভাইস শুধু মাত্র অসুস্থ মানুষেরাই নয়, সুস্থ মানুষেরাও তাদের সুস্থতার পরিমানকে পর্যবেক্ষন করার জন্য এই ডিভাইসগুলি ব্যবহার করছেন। বাজারে হরেক রকমের ওয়্যারেবল ডিভাইস এখন আসছে।
———————————————————— চলবে।
ড. মশিউর রহমান
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে আরো নতুন নতুন সংবাদ জানতে সাবস্ক্রাইব করুন।
[mc4wp_form id=”3448″]
Leave a comment