তথ্যপ্রযুক্তি - বাংলা কম্পিউটিং

ইউনিকোডে বাংলা কিভাবে লিখবেন

Share
Share

[এই প্রবন্ধটি ১২ জুলাই ২০২৪ তারিখে নতুনভাবে আপডেট করা হল। মূল লেখাটি ১ ডিসেম্বর ২০০৬ সনে লিখিত যার কিছু তথ্য মেয়াদ উত্তীর্ণ ছিল এবং আপডেট করা প্রয়োজন ছিল – লেখক]

৮০এর দশকে কম্পিউটারে যখন বাংলা টাইপ করার কাজ হচ্ছিল, বিশেষ করে প্রকাশনা শিল্পে, তখন মূলত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের সুবিধামতন বিভিন্ন ধরনের বাংলা টাইপ করার সফটওয়্যার নিয়ে এনেছিল। সেগুলির মধ্যে কোন সমন্বয় ছিল না কিংবা তারা কোন স্ট্যান্ডার্ড পদ্ধতি ব্যবহার করতো না। এর ফলে একটি সফটওয়্যার দিয়ে টাইপ করলে তা অন্য সিস্টেম দিয়ে পড়া কিংবা প্রিন্ট করা যেত না। সময়ের সাথে সাথে একটি সার্বজনীন পদ্ধতি বা স্ট্যান্ডার্ড গ্রহণ করা খুব প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। সেই সময়ে ইউনিকোড নামের একটি আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়াম বিভিন্ন দেশের ভাষাগুলিকে কম্পিউটারে সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে একটি স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে কাজ করছিল।

ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম (Unicode Consortium) কি?

ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম (Unicode Consortium) হল একটি অলাভজনক সংস্থা যা ইউনিকোড স্ট্যান্ডার্ডের বিকাশ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং প্রসার নিশ্চিত করে। এই সংস্থাটি বিভিন্ন ভাষা এবং লিপির অক্ষর ও প্রতীকগুলিকে একটি অভিন্ন কোডিং পদ্ধতিতে রূপান্তর করার জন্য কাজ করে, যা সারা বিশ্বে ইলেকট্রনিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ মান সরবরাহ করে।

ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামের ভূমিকা ও কাজ:

  1. ইউনিকোড স্ট্যান্ডার্ড বিকাশ: ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম ইউনিকোড স্ট্যান্ডার্ড তৈরি ও উন্নয়ন করে। এই স্ট্যান্ডার্ড বিভিন্ন ভাষার অক্ষর ও প্রতীকগুলিকে কোড পয়েন্ট দিয়ে চিহ্নিত করে।
  2. মান রক্ষণাবেক্ষণ: সংস্থাটি নিয়মিতভাবে স্ট্যান্ডার্ড আপডেট করে এবং নতুন ভাষা ও প্রতীক সংযোজন করে, যাতে ইউনিকোড সর্বদা আধুনিক ও প্রাসঙ্গিক থাকে।
  3. সহযোগিতা: ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম বিভিন্ন প্রযুক্তি সংস্থা, সরকারী সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগত সদস্যদের সাথে সহযোগিতা করে। এই সহযোগিতার মাধ্যমে তারা স্ট্যান্ডার্ডের বিস্তৃতি ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়।
  4. সুবিধা ও সমর্থন: এই সংস্থাটি ডেভেলপার, প্রোগ্রামার এবং ব্যবহারকারীদের ইউনিকোড স্ট্যান্ডার্ড সম্পর্কে প্রশিক্ষণ, ডকুমেন্টেশন এবং অন্যান্য সুবিধা প্রদান করে।

ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামের সদস্যপদ:

ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামের সদস্যরা সাধারণত বিভিন্ন বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানি, যেমন গুগল, অ্যাপল, মাইক্রোসফট, অ্যাডোবি ইত্যাদি। এছাড়াও, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগত সদস্যরাও এই সংস্থার সদস্য হতে পারে। সদস্যরা ইউনিকোড স্ট্যান্ডার্ডের উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে এবং বিভিন্ন কমিটি ও ওয়ার্কিং গ্রুপের মাধ্যমে তাদের মতামত প্রদান করে।

ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামের প্রতিষ্ঠা:

ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯১ সালে। এর প্রধান কার্যালয় ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত। প্রতিষ্ঠার পর থেকে, এই সংস্থাটি বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ ও তথ্য বিনিময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা, যা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার অক্ষর ও প্রতীকগুলিকে একটি অভিন্ন স্ট্যান্ডার্ডের মধ্যে নিয়ে আসে, যা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও সফটওয়্যারে সঠিকভাবে প্রদর্শিত হয়।

ইউনিকোড (Unicode) কি?

ইউনিকোড হল একটি আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড যা বিভিন্ন ভাষা ও লিপির সমস্ত অক্ষর ও প্রতীকগুলিকে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা বা কোড পয়েন্ট দিয়ে উপস্থাপন করে। এর মূল উদ্দেশ্য হল বিশ্বের সমস্ত লিখিত ভাষার অক্ষরগুলির জন্য একটি অভিন্ন এবং সর্বজনীন কোডিং পদ্ধতি সরবরাহ করা, যাতে যে কোনও প্ল্যাটফর্ম, প্রোগ্রাম, বা ডিভাইসে এই অক্ষরগুলি একইভাবে প্রদর্শিত হয়।

ইউনিকোডের কিছু মূল বৈশিষ্ট্য:

  1. বৈচিত্র্যপূর্ণ ভাষার সমর্থন: ইউনিকোড প্রায় সমস্ত প্রধান ভাষা এবং লিপির অক্ষরগুলি অন্তর্ভুক্ত করে, যেমন বাংলা, ইংরেজি, চীনা, আরবি, হিন্দি ইত্যাদি। এর ফলে আপনি একই ডকুমেন্টে একাধিক ভাষা ব্যবহার করতে পারেন।
  2. একক স্ট্যান্ডার্ড: বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম এবং ডিভাইসের মধ্যে সামঞ্জস্যতা নিশ্চিত করে। একই ইউনিকোড কোড পয়েন্ট সব জায়গায় একই অক্ষর প্রদর্শন করবে।
  3. প্রতীক ও ইমোজি: ইউনিকোড শুধুমাত্র অক্ষর নয়, বিভিন্ন প্রতীক, গাণিতিক চিহ্ন এবং ইমোজিও অন্তর্ভুক্ত করে।
  4. স্টোরেজ এবং ট্রান্সমিশন: ইউনিকোড ব্যবহারের ফলে টেক্সট স্টোরেজ ও ট্রান্সমিশন সহজ ও নির্ভরযোগ্য হয়। এটি বিভিন্ন এনকোডিং ফর্ম্যাটে ব্যবহার করা যায়, যেমন UTF-8, UTF-16, এবং UTF-32।

ইউনিকোডের প্রয়োগ

ইউনিকোড বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যেমন:

  1. ওয়েবসাইট: ইন্টারনেট ব্রাউজারে বিভিন্ন ভাষার টেক্সট সঠিকভাবে প্রদর্শনের জন্য ইউনিকোড ব্যবহৃত হয়।
  2. অপারেটিং সিস্টেম: উইন্ডোজ, ম্যাক ওএস, লিনাক্স ইত্যাদি অপারেটিং সিস্টেমে ইউনিকোড স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করা হয়।
  3. ডাটাবেস: ইউনিকোড ব্যবহার করে ডাটাবেসে বিভিন্ন ভাষার তথ্য সংরক্ষণ করা যায়।
  4. টেক্সট এডিটর: ইউনিকোড সমর্থিত টেক্সট এডিটর ব্যবহার করে আপনি সহজেই একাধিক ভাষায় টেক্সট লিখতে ও সম্পাদনা করতে পারেন।

ইউনিকোডের মাধ্যমে আমরা একক কোডিং পদ্ধতিতে বিভিন্ন ভাষার টেক্সট সহজেই ব্যবহার ও প্রদর্শন করতে পারি, যা বৈশ্বিক যোগাযোগ ও তথ্য বিনিময়কে সহজ করে তুলেছে।

ইউনিকোডে বাংলা

কম্পিউটারে বাংলা প্রচলনের জন্য ইউনিকোড একটা অসাধারণ সুবিধা এনে দিয়েছে যা এতদিন পর্যন্ত হয়নি। সেই ৮০ এর পরে কম্পিউটারে বাংলা প্রচলন হলেও তা হয়েছে গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানের উদ্দোগ্যে হয়েছে এবং তারা তাদের সুবিধামত বিভিন্ন ধরনের ফন্ট বের করেছে। কিন্তু কোন সাধারণ কোন কোড ছিলনা। ইউনিকোডে বিভিন্ন ভাষাকে প্রকাশ করবার জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু চার্ট তৈরী করেছে। এবং তার মধ্যে আমাদের প্রিয় বাংলা ভাষাও আছে। আমরা সবাই মিলে যদি একটা চার্ট তৈরী করতাম তবে সমস্যা ছিলনা। কিন্তু দুঃখ হল সেই কাজটা করল বিদেশীরা। সে যাই হোক, একটা সার্বজনীন স্ট্যান্ডার্ড হবার কারণে কম্পিউটারে বাংলা টাইট এবং প্রদর্শন করতে সুবিধা হল। বর্তমানে বাংলা টাইপ করার জন্য  যে সফটওয়্যার তৈরী হচ্ছে তা সবই ইউনিকোর্ড সাপোর্ট করছে, ফলে সেগুলিতে বাংলা ব্যবহার করতে পারছি। আর আমাদের বেশীরভাগ বাংলা ব্যবহারকারী উইন্ডোজ ব্যবহার করেন। আর এর বর্তমানে প্রচলিত সব  ওএস বা অপারেটিং সিস্টেমই বাংলা সাপোর্ট করে। মাইক্রোসফট ভৃন্দা নামে একটি ফন্ট ব্যবহার করে। তবে আপনি ইচ্ছা করলে ইউনিকোডের যে কোন বাংলা ফন্ট ব্যবহার করতে পারেন।

ইউনিকোড সমন্ধে আরো বিস্তারিত দেখুন

ফ্রি বাংলা ইউনিকোড ফন্ট ডাউনলোডের কিছু ওয়েবসাইট

  1. ওমিক্রন ল্যাব: বিভিন্ন ধরনের বাংলা ইউনিকোড ফন্ট সহ অন্যান্য বাংলা টাইপিং টুল https://www.omicronlab.com/bangla-fonts.html 
  2.  ফ্রি বাংলা ফন্ট: ১০০০+ বাংলা ফন্টের একটি বিশাল সংগ্রহ রয়েছে, যার মধ্যে অনেকগুলি ইউনিকোড ফন্ট রয়েছে। https://www.freebanglafont.com/ 
  3. গুগল এর বাংলা ফন্ট নত স্যানস:  https://fonts.google.com/noto/specimen/Noto+Sans+Bengali?query=bengali 
  4. লিপিঘর: একটি বড় সংগ্রহশালা যেখানে অনেক ফ্রি ও ওপেন সোর্স বাংলা ফন্ট পাওয়া যায়। https://lipighor.com/ 

কিভাবে ইউনিকোডে বাংলা টাইপ করব?

ইউনিকোডে বাংলা দেখা সমস্যা না হলেও বাংলায় লিখতে আপনাকে অন্য কোন সফটওয়ারের সাহয্য নিতে হবে। কিংবা টাইপ করার জন্য আপনার কম্পিউটারে কিংবা মোবাইলে সেটিং পরিবর্তন করতে হবে। নিম্নে কিছু জনপ্রিয় টাইপ করার লেআউটগুলোর সাথে আপনাদের পরিচয় করে দেব।

অভ্র কীবোর্ড: বাংলা টাইপিং এর সহজ ও জনপ্রিয় সমাধান

অভ্র কীবোর্ড (Avro Keyboard) হল একটি বহুল ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয় বাংলা টাইপিং সফটওয়্যার। এটি মূলত মেহেদী হাসান খান দ্বারা ২০০৩ সালে তৈরি করা হয়। বাংলা টাইপ করার জন্য অভ্র কীবোর্ড অত্যন্ত সুবিধাজনক এবং কার্যকরী সিস্টেম বা টুল।

অভ্র কীবোর্ডের বৈশিষ্ট্য

১. ফনেটিক টাইপিং: অভ্র কীবোর্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এর ফনেটিক টাইপিং পদ্ধতি। এটি ব্যবহার করে আপনি ইংরেজি বর্ণ ব্যবহার করে বাংলা শব্দ লিখতে পারেন। যেমন, “ami banglay gan gai” টাইপ করলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে “আমি বাংলায় গান গাই” এ রূপান্তরিত হবে। এই পদ্ধতিটি নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য খুবই সহজ এবং দ্রুত শেখা যায়।

২. ইনসক্রিপ্ট এবং ইউনিজয় লেআউট: অভ্র কীবোর্ড ফনেটিক টাইপিং ছাড়াও ইনসক্রিপ্ট এবং ইউনিজয় লেআউট সমর্থন করে। যারা পেশাগতভাবে বাংলা টাইপিং করেন, তাদের জন্য এই লেআউটগুলি খুবই উপযোগী।

৩. কাস্টমাইজেশন: অভ্র কীবোর্ড ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন কাস্টমাইজেশন অপশন দেয়। আপনি নিজের মতো করে কীবোর্ড লেআউট পরিবর্তন করতে পারেন এবং শর্টকাট কীগুলি নির্ধারণ করতে পারেন।

৪. অনলাইন ও অফলাইন মোড: অভ্র কীবোর্ড অনলাইন এবং অফলাইন উভয় মোডেই ব্যবহার করা যায়। এটি ইন্টারনেট কানেকশন ছাড়াই ব্যবহার করা যায়, ফলে আপনি যেকোনো সময় এবং যেকোনো স্থানে বাংলা টাইপ করতে পারবেন।

৫. উইন্ডোজ, ম্যাক এবং লিনাক্স সমর্থিত: অভ্র কীবোর্ড বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমে সমর্থন করে, যেমন উইন্ডোজ, ম্যাক এবং লিনাক্স। এটি একটি ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হওয়ায় ব্যবহারকারীরা সহজেই এটি ডাউনলোড ও ব্যবহার করতে পারেন।

অভ্র কীবোর্ডের উপকারিতা

  • ১. সহজ ব্যবহার: অভ্র কীবোর্ডের ইন্টারফেস খুবই ব্যবহারবান্ধব, যা নতুন ব্যবহারকারীরাও সহজে ব্যবহার করতে পারেন।
  • ২. ফ্রি সফটওয়্যার: এটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ডাউনলোড ও ব্যবহার করা যায়। কোন প্রকার লাইসেন্স ফি বা সাবস্ক্রিপশন চার্জ নেই।
  • ৩. কম্পিউটার ও মোবাইল উভয় ডিভাইসে সমর্থিত: অভ্র কীবোর্ড কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোন উভয় ডিভাইসে ব্যবহার করা যায়, যা ব্যবহারকারীদের জন্য অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করে।

রিদ্মিক কীবোর্ড: বাংলা টাইপিংয়ের জন্য সেরা মোবাইল অ্যাপ

রিদ্মিক কীবোর্ড (Ridmik Keyboard) হল একটি জনপ্রিয় বাংলা কীবোর্ড অ্যাপ, যা মোবাইল ডিভাইসে বাংলা টাইপিংকে সহজ ও সাবলীল করে তুলেছে। ২০১২ সনে শামীম হাসনাত এর প্রতিষ্ঠাতা। রিদ্মিক কীবোর্ড তার ব্যবহারকারী-বান্ধব ইন্টারফেস এবং কার্যকরী বৈশিষ্ট্যের জন্য ব্যাপকভাবে সমাদৃত। বিস্তারিত: https://ridmik.com/ 

রিদ্মিক কীবোর্ডের বৈশিষ্ট্য

১. ফনেটিক টাইপিং: রিদ্মিক কীবোর্ডের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এর ফনেটিক টাইপিং পদ্ধতি। আপনি ইংরেজি বর্ণ ব্যবহার করে সহজেই বাংলা শব্দ লিখতে পারবেন। যেমন, “ami banglay gan gai” টাইপ করলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে “আমি বাংলায় গান গাই” এ রূপান্তরিত হবে।

২. ইনসক্রিপ্ট লেআউট: যারা পেশাগতভাবে বাংলা টাইপিং করেন বা ইনসক্রিপ্ট লেআউট ব্যবহার করতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য রিদ্মিক কীবোর্ড ইনসক্রিপ্ট লেআউটও সমর্থন করে।

৩. প্রেডিক্টিভ টেক্সট: রিদ্মিক কীবোর্ডে প্রেডিক্টিভ টেক্সট ফিচার রয়েছে, যা আপনার টাইপিং স্পীড বাড়ায়। এটি আপনার টাইপ করা শব্দগুলি পূর্বাভাস করে এবং পরামর্শ দেয়।

৪. থিম এবং কাস্টমাইজেশন: রিদ্মিক কীবোর্ড বিভিন্ন ধরনের থিম এবং কাস্টমাইজেশন অপশন প্রদান করে। আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী কীবোর্ডের রঙ এবং ডিজাইন পরিবর্তন করতে পারেন।

৫. ইমোজি এবং স্টিকার: এই কীবোর্ডে প্রচুর ইমোজি এবং স্টিকার সমর্থন রয়েছে, যা আপনার চ্যাটিং অভিজ্ঞতাকে আরও আনন্দময় করে তোলে।

৬. গ্লাইড টাইপিং: রিদ্মিক কীবোর্ড গ্লাইড টাইপিং বা সোয়াইপ টাইপিং সাপোর্ট করে, যা দ্রুত টাইপিংয়ে সহায়ক।


বিল্ট-ইন কীবোর্ড লেআউট

উইন্ডোজ এবং ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমে বিল্ট-ইন (ভিতরেই রয়েছে) বাংলা কীবোর্ড লেআউট রয়েছে যা আপনি সিস্টেম সেটিংস থেকে সক্রিয় বা চালু করতে পারবেন।

  • উইন্ডোজ: ১. কন্ট্রোল প্যানেল (Control Panel) খুলুন। ২. ক্লক, ল্যাঙ্গুয়েজ এবং রিজিয়ন (Clock, Language, and Region) এ যান। ৩. ল্যাঙ্গুয়েজ (Language) এ ক্লিক করুন। ৪. বাংলা (Bangla) ভাষা যোগ করুন এবং কীবোর্ড লেআউট নির্বাচন করুন।
  • ম্যাক: ১. সিস্টেম প্রেফারেন্সেস (System Preferences) খুলুন। ২. কীবোর্ড (Keyboard) এ ক্লিক করুন। ৩. ইনপুট সোর্সেস (Input Sources) ট্যাবে যান। ৪. বাংলা (Bangla) ভাষা যোগ করুন।

গুগল ইনপুট টুলস (Google Input Tools)

গুগল ইনপুট টুলস (Google Input Tools) হল গুগলের একটি শক্তিশালী প্লাটফর্ম এবং সিস্টেম যা ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন ভাষায় টাইপ করতে সাহায্য করে। অন্যান্য ভাষার পাশাপাশি আপনি এটি দিয়ে খুব সহজেই বাংলাতে টাইপ করতে পারবেন। https://www.google.com/inputtools/try/

গুগল ইনপুট টুলসের বৈশিষ্ট্য

১. বহুভাষিক সমর্থন: গুগল ইনপুট টুলস বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা সমর্থন করে। আপনি বাংলা সহ অন্যান্য অনেক ভাষায়ও টাইপ করতে পারবেন।

২. ফনেটিক টাইপিং: ফনেটিক টাইপিং পদ্ধতির মাধ্যমে ইংরেজি বর্ণ ব্যবহার করে বাংলা লেখা যায়। যেমন, “ami banglay gan gai” টাইপ করলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে “আমি বাংলায় গান গাই” এ রূপান্তরিত হবে।

৩. স্ক্রিন কীবোর্ড: গুগল ইনপুট টুলস ভার্চুয়াল কীবোর্ড প্রদান করে, যা ব্যবহার করে আপনি সরাসরি স্ক্রিনে টাইপ করতে পারবেন।

৪. অটোকরেকশন এবং সাজেশন: এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার টাইপ করা শব্দগুলি সংশোধন করে এবং পরামর্শ দেয়, ফলে টাইপিং স্পীড বাড়ে এবং ভুল কম হয়।

৫. ইজি সুইচিং: আপনি সহজেই বিভিন্ন ভাষার মধ্যে সুইচ করতে পারবেন, যা বহুভাষিক কাজের জন্য খুবই সুবিধাজনক।

গুগল ইনপুট টুলস ব্যবহারের উপায়

১. ওয়েব ভার্সন: আপনি গুগল ইনপুট টুলসের ওয়েব ভার্সন ব্যবহার করে সরাসরি আপনার ব্রাউজারে বাংলা টাইপ করতে পারেন। এটি খুবই সহজ এবং কোন ইনস্টলেশনের প্রয়োজন নেই।

২. ক্রোম এক্সটেনশন: গুগল ইনপুট টুলস ক্রোম এক্সটেনশন হিসেবে উপলব্ধ। আপনি এটি ইনস্টল করে সহজেই ব্রাউজারে বিভিন্ন ভাষায় টাইপ করতে পারেন।

৩. ডেস্কটপ ভার্সন: গুগল ইনপুট টুলসের ডেস্কটপ ভার্সনও পাওয়া যায়, যা ইনস্টল করে আপনি আপনার কম্পিউটারে সরাসরি বাংলা টাইপ করতে পারবেন।

গুগল ইনপুট টুলসের উপকারিতা

১. সহজ ব্যবহার: এটি ব্যবহার করা খুবই সহজ এবং ব্যবহারকারীদের জন্য কোনো বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই।

  1. ফ্রি টুল: গুগল ইনপুট টুলস বিনামূল্যে উপলব্ধ, তাই এটি ব্যবহার করতে কোনো অতিরিক্ত খরচ হয় না।
  2. উচ্চ কার্যকারিতা: টাইপিং স্পীড এবং নির্ভুলতা বাড়াতে এটি খুবই কার্যকরী।
  3. বহুভাষিক কাজ: একাধিক ভাষায় কাজ করার জন্য এটি একটি আদর্শ টুল।

অনলাইন কীবোর্ড

অনেক ওয়েবসাইটে অনলাইন বাংলা কীবোর্ড পাওয়া যায় যা ব্যবহার করে আপনি সরাসরি বাংলা টাইপ করতে পারেন এবং তারপর সেগুলো কপি করে আপনার প্রয়োজনীয় স্থানে পেস্ট করতে পারেন। তেমনই কিছু সাইট হল

  • https://www.easybengalityping.com/

মোবাইল অ্যাপ

মোবাইল ফোনে বাংলা টাইপ করতে আপনি রিদ্মিক কীবোর্ড বা গুগল  কীবোর্ড ব্যবহার করতে পারেন। তবে গুগলের জিবোর্ড ব্যবহার করে আপনি কথা বলার মাধ্যমে বা ভয়েস দিয়েই টাইপ করতে পারবেন।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.google.android.inputmethod.latin&hl=en_SG&pli=1 

জিবোর্ডে (Gboard) ভয়েস ইনপুট ব্যবহার করে বাংলায় টাইপ করার উপায়

জিবোর্ড (Gboard) হল গুগলের তৈরি একটি জনপ্রিয় কীবোর্ড অ্যাপ, যা বিভিন্ন ফিচারের মধ্যে ভয়েস ইনপুট সাপোর্ট করে। আপনি সহজেই গবোর্ড ব্যবহার করে বাংলায় ভয়েস ইনপুট দিতে পারেন। নিচে বাংলায় ভয়েস ইনপুট ব্যবহার করার পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো:

ধাপ ১: জিবোর্ড ইনস্টল করুন

  1. গুগল প্লে স্টোর থেকে Gboard অ্যাপটি ডাউনলোড এবং ইনস্টল করুন।
  2. অ্যাপ ইনস্টল করার পর সেটি ওপেন করুন এবং সেটআপ নির্দেশনা অনুসরণ করুন।

ধাপ ২: ভাষা সেটআপ করুন

  1. Gboard অ্যাপটি ওপেন করুন।
  2. Settings (সেটিংস) > Languages (ভাষা) এ যান।
  3. Add Keyboard (কীবোর্ড যোগ করুন) অপশনে ক্লিক করুন।
  4. Bengali (বাংলা) ভাষাটি নির্বাচন করুন এবং ইনস্টল করুন।

ধাপ ৩: ভয়েস ইনপুট সক্রিয় করুন

  1. Gboard এর Settings (সেটিংস) > Voice typing (ভয়েস টাইপিং) এ যান।
  2. Use voice typing (ভয়েস টাইপিং ব্যবহার করুন) অপশনটি সক্রিয় করুন।

ধাপ ৪: বাংলায় ভয়েস ইনপুট ব্যবহার করুন

  1. যেকোনো অ্যাপ (যেমন মেসেজিং অ্যাপ, নোটপ্যাড ইত্যাদি) খুলুন যেখানে আপনি বাংলায় টাইপ করতে চান।
  2. কীবোর্ডে মাইক্রোফোন আইকনটি খুঁজে বের করুন। এটি সাধারণত স্পেসবারের পাশে বা উপরের সারিতে থাকে।
  3. মাইক্রোফোন আইকনে ক্লিক করুন।
  4. এখন বাংলায় কথা বলুন। আপনার কথাগুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলায় টেক্সটে বা লেখাতে রূপান্তরিত হবে।

টিপস:

  • স্পষ্টভাবে কথা বলুন: সঠিক টাইপিংয়ের জন্য স্পষ্ট এবং ধীরে ধীরে কথা বলুন।

পরিশেষে

এই প্রবন্ধে বাংলা ভাষার জন্য সার্বজনীন স্ট্যান্ডার্ড ইউনিকোড এবং সেই সাথে ইউনিকোডে টাইপ করার পদ্ধতিগুলির সাথে পরিচয় করান হল। আশা করি বাংলা টাইপ করতে সমস্যা হবে না। এই লেখাটি সম্বন্ধে কিংবা আরো কোন পদ্ধতি জানা থাকলে মন্তব্যতে লিখে আমাদের সাথে শেয়ার করুন।

Share
Written by
ড. মশিউর রহমান -

ড. মশিউর রহমান বিজ্ঞানী.অর্গ এর cofounder যার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৬ সনে। পেশাগত জীবনে কাজ করেছেন প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী ও শিক্ষক হিসাবে আমেরিকা, জাপান, বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরে। বর্তমানে তিনি কাজ করছেন ডিজিটাল হেল্থকেয়ারে যেখানে তার টিম তথ্যকে ব্যবহার করছেন বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবার জন্য। বিস্তারিত এর জন্য দেখুন: DrMashiur.com

19 Comments

  • শেষ পর্যন্ত আমি ইউনিকোড দিয়ে বাংলা টাইপ করতে পারছি । আমার খুবই ভাল লাগছে ।।।

  • আমি office 10 use করি এবং বিজয় ৫২ ২০১৪ install করেছি। কিন্তু ওয়ার্ডে লিখতে গেলে প্রথমে লিখা হয়না, space দিলে লেখা যায়। এবং য এ রেফ দেয়া যায় না। একটু দয়া করে বলবেন কি করতে পারি? কৃতজ্ঞ থাকবো।

  • আমি stm/bnt/arjun ব্যবহার করি। এটা কি ইউনিকোডের পক্ষে উপযুক্ত

  • সংখ্যা গুলো লিখলে ইংরেজী হয়ে যাচ্ছে। এর সমাধান কি?
    উদাহরণ আজ 19 মে 2019। এখানে সংখ্যা গুলো বাংলায় হচ্ছে না কেন?

    • ইউনিজয় দিয়ে টাইপ করলে হবার কথা নয়। তবে বিভিন্ন সফটওয়্যার এ এখনও ইংরেজীতে সংরক্ষীত করে। কোথায় এমনটি হচ্ছে, তা বাস্তারিত লিখলে হয়তো সমস্যাটি সমাধান করতে পারবো।

      • সংখ্যাগুলো ইংরেজি হয়ে যাচেছ। এক্সেল-এ নিকষ ফন্টে লিখতে গেলে এই সমস্যা হচ্ছে। সমাধান চাইছি। প্লিজ।

  • নিকস ফন্ট এর কিভাবে য এর উপর রেফ দেয়া যাবে? যেমতন পর্যন্ত লিখতে য এর উপর রেফ।

    • For unijoy:
      প + র + (G) + য + ন + (G) ত

      পর্যন্ত

      নিকস যেহেতু ইউনিকোডের, তাই একই দেখাবে।

      • আপনার বলে দেওয়া নিয়ম অনুসারে চেষ্টা করলে “পর‌্যন্ত” হয় পর্যন্ত হয় না । এটা কিভাবে ঠিক করবো ?
        সঠিক পদ্ধতি টা বলেন প্লিজ…..

      • কি বোর্ডের ইংরেজী অক্ষরের উপরে বাংলা সংখ্যাগুলো ব্যবহার করুন।

    • ইউনিকোডে পর্যন্ত বানানটা লিখতে পারছিনা,,একটু হেল্প করবেন

    • পর্যন্ত লিখতে পযন্ত লিখে য এর পেছনে কার্সর এনে shift + A অর্থাৎ ৃ দিলে কনভার্ট হয়ে পর্যন্ত হয়। একই কাজ কর্মচারী লিখতেও করা যায়। এটা একটা বিকল্প হিসেবে পেলাম।

  • আমি ’কর্মচারী’ লিখতে পারছিনা নিকস একটু বলবেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
তথ্যপ্রযুক্তি - বাংলা কম্পিউটিং

কম্পিউটার নিরাপত্তার পাঠ – Denial of Service attack বা সেবা-বিঘ্নকারী আক্রমণ

(আমার গবেষণার বিষয় কম্পিউটার নিরাপত্তা। বাংলাতে এ নিয়ে লেখালেখি নেই বললেই চলে,...

তথ্যপ্রযুক্তি - বাংলা কম্পিউটিং

উইকিপিডিয়া: জনমানুষের বিশ্বকোষ

{mosimage}  [জানুয়ারি ১৫, ২০০৭ তারিখে বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির আয়োজিত ৩য় জহুরুল...

ওয়েবসাইট সংক্রান্ত খবরতথ্যপ্রযুক্তিতথ্যপ্রযুক্তি - বাংলা কম্পিউটিং

সহজে বাংলা ওয়েবসাইট তৈরি করুন

কীভাবে সহজে বাংলায় ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন? গুগল সাইটস নামে একটি সিস্টেম...

তথ্যপ্রযুক্তি - বাংলা কম্পিউটিং

সবিনয় নিবেদনঃ কম্পিউটারে বাংলা ব্যবহার করুন

(১২ জুলাই ২০২৪: কিছু তথ্য আপডেট করা হল- লেখক) আজকের এই তথ্যপ্রযুক্তির...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.