জানো, ভবিষ্যতের নিরাপত্তা ক্যামেরা আর ক্যামেরা নয়! এখন শুধু একটি সাধারণ ওয়াই-ফাই রাউটারই যথেষ্ট—তাও আবার দেয়ালের ওপারে মানুষের অবস্থান ও গতিবিধি দেখার জন্য! যেমন ধরো, একজন বৃদ্ধ মানুষ যিনি একা বাস করছেন—তার ঘরের দেয়ালের ওপার থেকেও তার চলাফেরা নিরীক্ষণ করা সম্ভব এই প্রযুক্তির মাধ্যমে। এমনই চমকপ্রদ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন আমেরিকার কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা।
কীভাবে কাজ করে এই প্রযুক্তি?
এই প্রযুক্তির মূল ভিত্তি হলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI)। গবেষকেরা ওয়াই-ফাই সিগন্যালের “ফেজ” এবং “অ্যামপ্লিটিউড” বিশ্লেষণ করে বোঝার চেষ্টা করেন, কোন সিগন্যাল কোথা থেকে প্রতিফলিত হয়েছে—যেমন মানুষের শরীর থেকে। এসব তথ্য ব্যবহার করে তারা গঠন করেন একটি ৩ডি মডেল, যা থেকে বোঝা যায়, একজন মানুষ কীভাবে দাঁড়িয়ে আছে বা চলাফেরা করছে। ভাবতে পারো, যেন একটি অদৃশ্য ক্যামেরা—যেটা দেয়ালের ওপার থেকেও মানুষের অবস্থান দেখতে পায়।
তাদের ব্যবহৃত এই প্রযুক্তির নাম DensePose from WiFi, যেখানে প্রতিটি পিক্সেলকে মানুষের শরীরের সুনির্দিষ্ট স্থানে ম্যাপ করা হয়। অর্থাৎ, ওয়াই-ফাই ডেটা দিয়েই একটি মানুষের আসল ভঙ্গিমা বা পজ শনাক্ত করা যায়।
সম্ভাব্য ব্যবহার:
এই প্রযুক্তির ব্যবহারিক প্রয়োগ অনেকখানি বিস্তৃত হতে পারে। যেমন:
- 👴 বয়স্ক মানুষদের নিরাপদে নজরদারি রাখা — বিশেষ করে যারা একা বাস করেন।
- 🏡 বাড়ির নিরাপত্তা বাড়ানো — দেয়ালের ওপারে কোনো অনুপ্রবেশকারী আছে কি না, তা বোঝা।
- 🧠 স্মার্ট হোম সিস্টেম — হাতে কিছু না নিয়েই নড়াচড়া করে বিভিন্ন যন্ত্র নিয়ন্ত্রণ।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, এতে কোনো ক্যামেরা বা অতিরিক্ত যন্ত্রপাতির প্রয়োজন নেই—ওয়াই-ফাই সিগন্যালই যথেষ্ট।
কিন্তু উদ্বেগও রয়েছে…
তবে এই প্রযুক্তি যেমন নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি তৈরি করেছে গুরুতর গোপনীয়তার (privacy) প্রশ্ন। কারণ কেউ যদি এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে গোপনে অন্যের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে, তবে সেটা হতে পারে একধরনের ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তি। ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) এই ধরনের নজরদারি প্রযুক্তির ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ এবং নীতিমালা তৈরির কাজ শুরু করেছে, যাতে নাগরিকদের গোপনীয়তা সুরক্ষিত থাকে।
এই কারণে গবেষকেরা ও বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এখনই সময় এই প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে নীতিমালা তৈরি করার। যেন একে ব্যবহার করে মানবাধিকার লঙ্ঘন না ঘটে।
উপসংহার
ওয়াই-ফাই দিয়ে শরীর দেখা—শুনতে যেন সায়েন্স ফিকশন! কিন্তু এটা এখন বাস্তব। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আর প্রতিফলিত সিগন্যাল বিশ্লেষণের মাধ্যমে আজ আমরা এমন জায়গায় পৌঁছে গেছি, যেখানে অদৃশ্য জগতকেও দেখা সম্ভব। তবে এই প্রযুক্তিকে যেন মানবকল্যাণে ব্যবহারের পাশাপাশি মানবগোপনীয়তা রক্ষায়ও ভূমিকা রাখতে হয়, সেটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
আপনার মতামত জানান – আপনি কি এই প্রযুক্তিকে স্বাগত জানাচ্ছেন, নাকি এতে গোপনীয়তা নিয়ে শঙ্কিত? মতামত দিন আমাদের ফেসবুক পেজে অথবা মেইল করুন [email protected] ঠিকানায়।
Leave a comment