গবেষণায় হাতে খড়ি

ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীদের টেক্সট বুক পড়ার অভাব একটি গভীর উদ্বেগজনক!

Share
Share

প্রফেসর ড. মোহা: ইয়ামিন হোসেন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

⊕ টেক্সট বুক পড়ে না!

⊕ পুরাতন ফটোকপির দোকানের নোট পড়ে!

⊕ নিয়মিত পড়াশোনা করে না, শুধু পরীক্ষাস সময়ে পড়াশোনা করে!

⊕ বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান খুবই কম!

⊕ বিসিএস নিয়ে চরম বিজি, কিন্তু চাকুরি প্রাপ্তির সংখ্যা খুবই কম!

⊕ চাকুরী পেলে কর্মস্থলে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান ভালোমত না থাকায় চরম হতাশ!

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের টেক্সটবুক পড়ার অভাব একটি গভীর উদ্বেগজনক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে দেশের বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রী শুধুমাত্র পরীক্ষায় ভালো ফলাফল, বিশেষ করে A+ পেতে, নোট ও সাজেশন নির্ভর হয়ে পড়ছে। তারা টেক্সটবুকের গভীর জ্ঞান অর্জন না করেই শুধুমাত্র পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্যে মুখস্থ করে অগ্রসর হচ্ছে। এই প্রবণতা বেসিক জ্ঞানের ঘাটতি তৈরি করছে, যা তাদের শিক্ষাগত মান এবং পেশাগত দক্ষতায় প্রভাব ফেলছে।

বর্তমান পরিস্থিতির কারণ:

১. নোট এবং সাজেশন নির্ভরতা:

বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় পরীক্ষার সিলেবাস অনেক ক্ষেত্রে সংকুচিত হয়ে গেছে, যেখানে শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদের নির্দিষ্ট নোট ও সাজেশন দিয়ে প্রস্তুতি নিতে উৎসাহিত করছেন। এর ফলে, শিক্ষার্থীরা গভীরভাবে বই পড়া বা বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করা থেকে বিরত থাকছে।

২. প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা:

বিশেষত বিসিএস পরীক্ষা একটি প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী পড়াশোনা এবং জ্ঞান অর্জনের চেয়ে চাকুরীর প্রস্তুতিতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তারা মনে করে যে, বিসিএস জব পাওয়ার জন্যই পড়াশোনা করতে হবে, অথচ বাস্তবে এ চাকরিতে প্রবেশের হার খুবই কম।

৩. গবেষণার অভাব:

দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার অভাব রয়েছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক গবেষণা ও নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করতে আগ্রহী নন, যা শিক্ষার মান কমিয়ে দিচ্ছে। টেক্সটবুকের গভীর জ্ঞান ছাড়া গবেষণার চর্চা করাও অসম্ভব।

এর প্রভাব:

⊕ বেসিক জ্ঞানের অভাব:

শিক্ষার্থীরা টেক্সটবুক পড়ার মাধ্যমে মৌলিক ধারণা গঠনের বদলে নোট মুখস্থ করায়, তারা নির্দিষ্ট বিষয়গুলির গভীরে যেতে পারছে না। ফলস্বরূপ, তারা বাস্তব জীবনের সমস্যাগুলি সমাধান করতে অক্ষম হয়।

⊕ চাকুরীর অযোগ্যতা:

চাকুরীর বাজারে তাদের দক্ষতা কম হওয়ায় তারা চাকুরীর ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। বিশেষ করে বিসিএস পরীক্ষায় সফলতা পেতে ব্যর্থ হয়, যা তাদের হতাশ করে তুলছে।

এ থেকে উত্তরণের উপায়:

১. টেক্সটবুক পড়ায় উৎসাহিত করা:

শিক্ষার্থীদের টেক্সটবুক পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এজন্য শিক্ষকদের পাঠদানের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হবে, যেখানে নোটের চেয়ে টেক্সটবুকের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। শিক্ষকরা ক্লাসে টেক্সটবুকের নির্দিষ্ট অংশ ব্যাখ্যা করবেন এবং শিক্ষার্থীদের সেই অংশগুলো গভীরভাবে বুঝতে উৎসাহিত করবেন।

২. গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি:

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মৌলিক গবেষণায় অংশগ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে এবং শিক্ষকরা এ ক্ষেত্রে পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করবেন। গবেষণা করলে শিক্ষার্থীরা টেক্সটবুক থেকে জ্ঞান আহরণ করতে আগ্রহী হবে।

৩. প্রকৃত শিক্ষার মানোন্নয়ন:

পরীক্ষার ফলাফলের চেয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের বুঝতে শেখানো উচিত যে, শুধুমাত্র A+ অর্জন বা চাকুরীর প্রস্তুতিই শিক্ষার একমাত্র লক্ষ্য নয়। বরং জ্ঞান অর্জন এবং দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই সত্যিকারের সফলতা অর্জন সম্ভব।

৪. কারিকুলাম সংস্কার:

শিক্ষার কারিকুলামে টেক্সটবুক ভিত্তিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। শিক্ষার্থীদেরকে বিশ্লেষণাত্মক চিন্তা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এবং সৃজনশীলতার দিকে ধাবিত করতে কারিকুলামে পরিবর্তন আনা জরুরি।

৫. শিক্ষক প্রশিক্ষণ:

শিক্ষকরা যদি টেক্সটবুককে গুরুত্ব না দেন, তাহলে শিক্ষার্থীরা ও তা গুরুত্ব দেবে না। তাই শিক্ষকদের টেক্সটবুক নির্ভর পাঠদানের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যাতে তারা শিক্ষার্থীদের সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারেন।

৬. চাকুরীর বিকল্প সুযোগ সৃষ্টি:

বিসিএসের মতো পরীক্ষার বাইরে বিভিন্ন পেশাগত ক্ষেত্রে আরও সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা একটিমাত্র লক্ষ্যের পেছনে না ছুটে নিজ নিজ আগ্রহের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠতে পারে।

উপসংহার:

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় টেক্সটবুক নির্ভর জ্ঞান অর্জনের অভাব একটি গভীর সমস্যা। ছাত্র-ছাত্রীরা যদি শুধুমাত্র নোট ও সাজেশনের ওপর নির্ভর করে চলে, তাহলে তাদের প্রকৃত শিক্ষা অর্জন সম্ভব নয়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন শিক্ষার প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে টেক্সটবুকের গুরুত্ব এবং জ্ঞান অর্জনের প্রকৃত উদ্দেশ্য তুলে ধরা হবে। এর মাধ্যমে জাতিকে প্রকৃত জ্ঞানসাধনায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

বিদ্র: ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত:——–https://www.facebook.com/share/p/1E4ucbF9Sr/

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
কলামগবেষণায় হাতে খড়ি

কলাম: গবেষক হতে কেন আগ্রহী?

গবেষক হওয়া কেন একটি ফলপ্রসূ যাত্রা তা আবিষ্কার করুন। গবেষণার গুরুত্ব, জ্ঞান...

গবেষণায় হাতে খড়ি

হেমিংওয়ে এডিটর: একাডেমিক লেখার মান উন্নয়নের সহায়ক টুল

হেমিংওয়ে এডিটর ব্যবহার করে একাডেমিক লেখাকে আরও সহজ ও প্রাঞ্জল করুন! জটিল...

গবেষণায় হাতে খড়ি

মাস্টার্স থিসিস এবং পিএইচডি থিসিসের পার্থক্য

মাস্টার্স নাকি পিএইচডি থিসিস? 🤔 পার্থক্য, সময়কাল ও ক্যারিয়ার সম্ভাবনা জানুন এই...

কলামগবেষণায় হাতে খড়ি

কলাম: বিদেশি স্কলারশিপ বন্ধের পথে: আমাদের অসচেতনতা নাকি ইচ্ছাকৃত ভুল?

এজেন্সির মাধ্যমে স্কলারশিপ আবেদন করা অনৈতিক ও ঝুঁকিপূর্ণ। এটি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের...

গবেষণায় হাতে খড়ি

থিসিস থেকে জার্নাল আর্টিকেল লেখার পদ্ধতি

আপনার থিসিসকে সহজ ধাপে জার্নাল আর্টিকেলে রূপান্তর করুন। সফল গবেষণা প্রকাশনার জন্য...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.