নবীন প্রজন্মদের সাক্ষাৎকার সিরিজে এবার আমরা সাক্ষাৎকার নিয়েছি তানভীর ইসলাম রাজীব এর। তানভীর ইসলাম রাজীব বর্তমানে ফিজিক্সে ডিপার্টমেন্ট অফ ফিসিক্স এন্ড অ্যাস্ট্রোনমি, টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করছেন । তার সাক্ষাৎকারটি পড়ুন:
প্রথমেই আপনার সম্বন্ধে আমরা জানতে চাই ?
আমি বর্তমানে ফিজিক্সে ডিপার্টমেন্ট অফ ফিসিক্স এন্ড অ্যাস্ট্রোনমি, টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করছি । আমি আমার ব্যাচেলর, মাস্টার্স এবং এমফিল সম্পন্ন করেছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পরবর্তীতে, ২০১৯ সালে আমি একই বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। বর্তমানে, আমি শিক্ষা ছুটিতে আছি।
আপনার গবেষনার বিষয় কি?
আমার গবেষণার বিষয় হলো কোয়ান্টাম অপটিক্স। সহজভাবে বললে, এটি আলো বা ফোটনের ক্ষুদ্র কণার আচরণ নিয়ে কাজ করে। বিশেষ করে, আমি এন্ট্যাংগল্ড ফোটন (Entangled Photon) ইন্টারফেরোমিটার নিয়ে গবেষণা করছি, যা হং-উ-ম্যান্ডেল ইন্টারফেরোমিটার (Hong-Ou-Mandel Interferometer) বিশেষ নামে পরিচিত। এন্ট্যাংগল্ড ফোটন বলতে বোঝায় দুটি আলোক কণা (ফোটন) যাদের আচরণ এমনভাবে যুক্ত থাকে যে, একটি ফোটনের অবস্থান ও গতি অন্যটির অবস্থান ও গতির সাথে সম্পর্কিত থাকে, এমনকি তারা দূরে থাকলেও। এটি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের একটি বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য (https://en.wikipedia.org/wiki/Hong%E2%80%93Ou%E2%80%93Mandel_effect)
HOM ইন্টারফেরোমিটার পরীক্ষায় দুটি বিমস্প্লিটার (Beam Splitter) ব্যবহৃত হয়। প্রথম বিমস্প্লিটার দিয়ে ফোটনগুলোকে দুটি আলাদা পথে বিভক্ত করা হয়। এরপর দ্বিতীয় বিমস্প্লিটার ফোটনগুলোকে আবার একসাথে মিলিত করে। এই মিলনের পরে ডিটেক্টরের মাধ্যমে কোয়ানসিডেন্স পরিমাপ করা হয়, যেখানে আমরা ফোটনগুলোর মিলিত আচরণের উপর ভিত্তি করে হং-উ-ম্যান্ডেল ডিপ পর্যবেক্ষণ করি। এই পরীক্ষায় উৎপন্ন ফোটনগুলোর মধ্যে একটি ফোটন (যা সাধারণত “সিগন্যাল ফোটন” বলা হয়) sample (for example, IR140 and IR806 ) মাধ্যমে প্রবাহিত হয়, যখন অন্যটি (যাকে “আইডলার ফোটন” বলা হয়) ডিলে প্রক্রিয়ার (Delay Process) মাধ্যমে অতিরিক্ত সময় নিয়ে পৌঁছায়। সিগন্যাল এবং আইডলার ফোটনের মধ্যে এই পার্থক্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি সিগন্যাল ফোটনের নীতিমালা নির্ধারণে সহায়তা করে। পার্থক্য যত কম, কোয়ান্টাম বৈশিষ্ট্য (indistinguishability) ততো বেশি।
এই পরীক্ষায় একটি ননলিনিয়ার প্রক্রিয়া (Nonlinear Process) এবং স্পন্টেনিয়াস প্যারামেট্রিক ডাউন-কনভার্শন (SPDC) প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত থাকে। SPDC প্রক্রিয়ায় একটি উচ্চ-শক্তি ফোটন একটি (for example, 405nm) ননলিনিয়ার মিডিয়ায় (special crystal) প্রবাহিত হলে, এটি দুটি নিম্ন শক্তির ফোটনে (810nm) বিভক্ত হয়। এই প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন ফোটনগুলো কোয়ান্টাম আন্তঃসংযোগ তৈরি করে। হং-উ-ম্যান্ডেল পরীক্ষায়, কোয়ানসিডেন্স পরিমাপের সময় ফোটনগুলোর আপেক্ষিক বিলম্ব (relative delay) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যখন সিগন্যাল এবং আইডলার ফোটন একসাথে পৌঁছায়, তখন তারা একই ডিটেক্টরের মধ্যে মিলিত হয় এবং এই মিলনের ফলে তৈরি হয় একটি ডিপ, যা আমাদের কোয়ান্টাম বৈশিষ্ট্য এবং সিস্টেমের আচরণ সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য প্রদান করে।
আপনার গবেষনার কাজগুলি কিভাবে আমাদের উপকৃত করছে কিংবা করবে?
আমার পরীক্ষামূলক পদ্ধতি ফোটন শোষণের (absorption) প্রভাব প্রদর্শন করবে, যা জৈব অণুর অপটিক্যাল বৈশিষ্ট্যগুলি আরও ভালোভাবে বুঝতে পারব। ভবিষ্যতে, এই পদ্ধতিটি ননলিনিয়ার অপটিক্যাল বৈশিষ্ট্যগুলোর জন্য আরও উন্নত গবেষণায় প্রয়োগ করা যাবে।
গবেষনা কাজের বিশেষ কোন অভিজ্ঞতা কি আমাদের সাথে শেয়ার করবেন?
আমি থিওরেটিক্যাল রিসার্চ থেকে এক্সপেরিমেন্টাল রিসার্চে পরিবর্তন করেছি । সত্যি বলতে, থিওরি এবং এক্সপেরিমেন্ট দুটি ভিন্নভাবে কাজ করে। অপটিক্যাল লসারের কারণে আমরা কখনও ১০০% নির্ভুল ফলাফল পাব না যা থিওরিতে সম্ভব। যেহেতু সিঙ্গেল ফোটনের এক্সপেরিমেন্ট অত্যন্ত সংবেদনশীল, বিশেষ করে অ্যালাইনমেন্টের জন্য, আমি খুব ভাগ্যবান যে ভালো ল্যাবমেট পেয়েছি । তারা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে মৌলিক দৃষ্টিকোণ থেকে । এখনও শিখছি এবং তিনটি সাইড প্রোজেক্ট শেষ করার পর, এখন আমি আমার নিজের প্রোজেক্ট শুরু করেছি।
Zheltikov Nonlinear Optics and Quantum Sensing Lab-এ প্রায় সময় বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানীরা, বিশেষ করে নোবেল বিজয়ীরা আসেন। তাদের কাছে নিজের গবেষণা তুলে ধরার অনুভূতি ভিন্ন।
একজন বিজ্ঞানীর কি কি গুণ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
একজন বিজ্ঞানীর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো: গঠনমূলক চিন্তা, সৃজনশীলতা, অধ্যবসায়, এবং সততা (most important) । “The focus should be on the quality and impact of research rather than just the quantity.” এই গুণাবলী তাদের গবেষণায় সাহায্য করে এবং নতুন ধারণা তৈরি করতে উত্সাহিত করে। শিক্ষার্থী ও নবীন বিজ্ঞানীদের জন্য এসব গুণ অনুসরণ করা উচিত বলে আমি মনে করি ।
বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থী যারা বিজ্ঞানে কাজ করতে চায় – তাদের জন্য আপনার কোন ম্যাসেজ কিংবা বার্তা কি?
আপনার লক্ষ্যের পিছনে দৌড়ান যতক্ষণ না আপনি এটি অর্জন করেন এবং কৌতূহলী হন।
আপনার ইমেইল : [email protected]
আপনার লিংকডইন : https://www.linkedin.com/in/tanvir-islam-rajib-14609bb3/
আপনার ওয়েবসাইট, গবেষনাকাজের লিংক : https://juniv.edu/teachers/tirajibphys
আমরা বিজ্ঞানী অর্গ এর পক্ষ থেকে তানভীর ইসলাম রাজীব এর উত্তোরত্তর সাফল্য কামনা করি। তিনি আমাদের নবীন গবেষকদের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
Leave a comment