GenZসাক্ষাৎকার

GenZ গবেষক সুহাইল হক রাফি

Share
Share

নবীন প্রজন্মদের সাক্ষাৎকার সিরিজে এবার আমরা সাক্ষাৎকার নিয়েছি সুহাইল হক রাফি এর। তিনি ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। তার সাক্ষাৎকারটি পড়ুন:

প্রথমেই আপনার সম্বন্ধে আমাদের একটু বলুন।

আমি সুহাইল হক রাফি। ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ব্যাচেলর শেষ করে এখন এখানেই গবেষনা সহকারী হিসেবে কর্মরত। বর্তমানে ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মসঙ্গযান ‘মঙ্গলতরী’ এবং ডুবোযান ‘ডুবুরি’ প্রজেক্ট দুটোর সাথে কাজ করছি। আমি রোবট এবং তার কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি।

আপনার গবেষনার বিষয় কি? আপনার মূল গবেষনার বিষয়টি আমাদের জন্য একটু সহজভাবে লিখুন

আমি রোবট এবং তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহনের সক্ষমতা নিয়ে কাজ করি। আমার ভালো লাগার একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি (অটোনমাস সিস্টেমস)। এর মধ্যে রোবট চালানাবিদ্যা (নেভিগেশন) অন্যতম। ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান টেসলার সেল্ফ ড্রাইভিং কার বা স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং গাড়ির ধারনার সাথে অনেকেই পরিচিত থাকবেন। এরকমই স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং প্রযুক্তি কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নিয়ে মঙ্গলযান কিংবা চালকবিহীন বিমানের (ড্রোন) কিভাবে কাজে লাগানো যায় সেটা নিয়েই মূলত কাজ করে থাকি। এছাড়া কৌশলে নিপুনভাবে রোবটের বাহু চালনার (ম্যানিপুলেশন) মাধ্যমে বিভিন্ন কার্যসম্পাদনও আমার কাজের অন্তর্ভুক্ত।

প্রায় সময়ই এসব প্রযুক্তিতে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ জুড়ে থাকে। যেমন ধরুন আপনি যদি একটি বিমানকে (ড্রোন) স্বয়ংক্রিয়ভাবে ল্যান্ড করাতে চান কোনো একটি হেলিপ্যাডে অথবা কোনো চলন্ত গাড়ি অথবা জাহাজের উপর, তাহলে সে হেলিপ্যাড/গাড়ি/জাহাজটি চিনতে এবং তার গতিবিধি অনুসরণ করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটা শাখা কম্পিউটার ভিশন প্রয়োজন পড়ে।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ইন্টারন্যাশনাল স্পেইস স্টেশন) নাসার (NASA) অ্যাস্ট্রোবি রোবটের উপর আমার একটি গবেষনা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। আপনারা হয়তো জানেন যে মহাকাশে অবস্থিত স্টেশনটি খুবই নাজুক একটি জায়গা। এখানে দুর্ঘটনা ঘটলে তা সেখানে অবস্থানরত মহাকাশচারীদের (অ্যাস্ট্রোনট) জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে। তাই আমাদের চেষ্টা ছিলো যে মহাকাশ স্টেশনে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে নাসার অ্যাস্ট্রবি রোবটের সাহায্য নিয়ে সেটা নিঁখূতভাবে মেরামত করা।

আপনার গবেষনার কাজগুলি কিভাবে আমাদের উপকৃত করছে?

রোবটিক্সের সহায়তায় যখন মহাকাশ স্টেশনের সংকটকালীন সময়ে তাকে ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব হয়, তখন সেখানে অবস্থানরত মানুষের মুল্যবান জীবন বাঁচানো সম্ভব। শুধু তাই নয়, সেখানকার দামি যন্ত্রপাতিগুলোও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।

মঙ্গলযানের কথায় যদি আসি, তাহলে আপনারা জানেন যে, মঙ্গলগ্রহে এখন পর্যন্ত কোনো মানুষ পা রাখেনি। অথচ মানুষেরই বানানো বিভিন্ন মঙ্গলযান গত ত্রিশ বছর ধরে মঙ্গলগ্রহে ঘুরে ঘুরে সেখানকার আবহাওয়া, ভূগোল, ভূমণ্ডল, পানির সন্ধান কিংবা জীবনের অস্তিত্ব আছে কিনা সেসব তথ্য আমাদেরকে দিয়ে যাচ্ছে। এসকল যান একস্থান থেকে আরেক স্থানে যাওয়ার জন্য স্বয়ংক্রিয় নেভিগেশন খুবই জরুরী। স্থলযান ছাড়াও, মানুষবিহীন বিমানের (ড্রোন) স্বয়ংক্রিয় নেভিগেশন এবং ল্যান্ডিং সক্ষমতা থাকলে খুব সহজেই দূর দূরান্তে জরুরী মেডিকেল সরবরাহ, দুর্যোগ কবলিত এলাকায় ত্রান পৌছে দেয়া কিংবা খাবার বিতরণ (ডেলিভারি) সেবা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনের অনেক বিতরণ সংক্রান্ত কাজ খুবই অল্প সময়ের মধ্যে করে ফেলা সম্ভব।

গবেষনা কাজের কোন অভিজ্ঞতা কি আমাদের সাথে শেয়ার করবেন?

রোবোটিক্সে কাজ করে আমি যেটা লক্ষ্য করেছি যে, রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং খুবই দরকারি একটি দক্ষতা। যেমন ধরুন আমরা যখন ছাত্রাবস্থায় ব্র‍্যাকইউ মঙ্গলতরী মঙ্গলযানে কাজ করছিলাম, তখন আমাদের সার্ভেইং সাইট এর প্যানোরামিক ছবি তোলার প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু মুশকিল হলো যে তখন কোভিডের কারনে দেশের বাইরে থেকে ইলেকট্রনিকস কিনলে সেটা চড়া দামে কেনা লাগতো আর কিনলেও সেটা হাতে আসতে আসতে দেরি হয়ে যেতো। তাই আমাদের একটি বিকল্প উপায় বের করতে হতো। আমরা চেষ্টা করলাম একটি সাধারন ক্যামেরা দিয়ে প্যানোরামিক ক্যামেরার কাজটি মিমিক করা যায় কিনা। শুরু করলাম রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং। একটি প্যানোরামিক ক্যামেরা সাধারন ক্যামেরার থেকে বেশি এরিয়া কাভার করে। তাই আমরা একটি সাধারন ক্যামেরার সাথে মটর বসিয়ে সেটা নির্দিষ্ট কিছু ডিগ্রিতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পরপর তিনটি ছবি তুলি এবং পরে মতো মঙ্গলযানে অনবোর্ড স্বয়ংক্রিয় ছবি প্রসেসিং এর মাধ্যমে ওভারল্যাপিং অংশগুলো বাদ দিয়ে তিনটি সাধারন ছবি থেকে একটিমাত্র প্যানারোমিক ছবি তৈরি করতে সক্ষম হই।

একজন বিজ্ঞানীর কি কি গুণ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন?

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণটি হলো অধ্যবসায়। একজন বিজ্ঞানী হিসেবে আপনি যে কাজ করছেন তা সাধারনত আমাদের বর্তমান জ্ঞানের পরিধিকে সম্প্রসারিত করার চেষ্টা করছেন। মাথায় রাখতে হবে যে কাজটি আগে কেউ কখোনো করেনি, সেটা যখন করতে যাবেন তখন নানারকম জটিলতার সম্মুখীন হবেন। এরকম সংকটময় পরিস্থিতিতেই একজন বিজ্ঞানীর বৈজ্ঞানিক মনোভাব প্রকাশ পায়। যে যতটা ধৈর্য্য ও অধ্যবসায়ের সাথে চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকবে, তার সফলতার মুখ দেখার সম্ভাবনা তত বেশি।

বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থী যারা বিজ্ঞানে কাজ করতে চায় – তাদের জন্য আপনার কোন ম্যাসেজ কিংবা বার্তা কি?

যখন আপনি শুরু করছেন, তখন অবশ্যই আপনি পারদর্শী নন। ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করুন। প্রথমে গবেষনার বিষয়টির উপর একশত ঘন্টা সময় দিন, এরপর এক হাজার। দেখবেন আস্তে আস্তে আপনি জিনিসগুলো সহজেই ধরে ফেলতে পারছেন।

কোনো একটি বিষয়ে গবেষনা করতে গেলে প্রথমে সেই নির্দিষ্ট বা কাছাকাছি বিষয়ের উপর যারা কাজ করেছে তাদের কাজগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। এজন্য প্রচুর গবেষনা প্রবন্ধ পড়তে হবে, বুঝে পড়তে হবে।

বিজ্ঞান বা গবেষনার কাজ করতে গেলে প্রথম প্রথম সবকিছুই একটু কঠিন মনে হয়। এমনটি মনে হওয়া স্বাভাবিক। একটি গবেষনাপত্রের যে ভাষা, তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যে ভাষার সাথে পরিচিত তার থেকে আলাদা। তাছাড়া, একটি গবেষনাপত্র পড়তে গেলে এমন কঠিন কঠিন সব পরিভাষার (টার্মিনোলজি) মুখোমুখি হয়ে হয়, তার অর্থ বের করাটাই সময়সাপেক্ষ হয়ে পরে। এটা একদম শুরুর দিকে, যখন আপনি নতুন নতুন কোনো গবেষনাপত্র পড়ছেন। তবে শুরুতেই এই ভয়কে জয় করতে হবে। পড়ার এই ধারা অব্যাহত রাখুন। আস্তে আস্তে যত বেশি পড়বেন, ব্যাপারগুলো ততটাই সহজ হয়ে যাবে কারন প্রত্যেকটি বিষয়েই কিছু প্রচলিত পরিভাষা (টার্মিনোলজি) থাকে যেগুলো বহুল ব্যবহৃত। তাই আপনি যখন একটি বিষয়ের উপর একটি লেখা পড়ে শেষ করার পর আরেকটি পড়তে যাবেন, তখন দেখবেন যে সেটা প্রথমটির মত অতটা কঠিন লাগছেনা, কারন আগের পত্রে যে পারিভাষিক শব্দগুলো (টার্মিনোলজি) জানার কারনে অর্থ বের করে জেনে নিয়েছেন, তার অনেকাংশই পরের প্রবন্ধগুলোতে ব্যবহৃত হচ্ছে। এভাবে আপনি যত বেশি গবেষনাপত্র পড়বেন এবং গবেষনা করবেন, ততই জিনিসগুলো আপনার আয়ত্তে চলে আসবে।

টেসলা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা এবং অটোপাইলট ভিশনের প্রাক্তন পরিচালক আন্দ্রে কারপাথি প্রায়ই মালকম গ্লাডওয়েলের সূত্র ধরে বলে থাকেন “একজন মানুষের যে কোনো বিষয়ে পারদর্শী হওয়ার জন্য তাকে সে বিষয়ের উপর দশ হাজার ঘন্টা সময় ব্যয় করতে হবে।”

আপনার যোগাযোগের তথ্য:

Email: suhailrafi [ইমেইলের চিহ্ন] proton.me
Website: https://sites.google.com/view/suhailsh7

আপনার লিংকডইন সাইটের ওয়েবএড্রেস

https://linkedin.com/in/suhailsh7

আপনার ওয়েবসাইট, গবেষনাকাজের লিংক ইত্যাদি

Website: https://sites.google.com/view/suhailsh7

Google Scholar Profile: https://scholar.google.com/citations?user=I-nkStcAAAAJ&hl=en

Share
Written by
ড. মশিউর রহমান -

ড. মশিউর রহমান বিজ্ঞানী.অর্গ এর cofounder যার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৬ সনে। পেশাগত জীবনে কাজ করেছেন প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী ও শিক্ষক হিসাবে আমেরিকা, জাপান, বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরে। বর্তমানে তিনি কাজ করছেন ডিজিটাল হেল্থকেয়ারে যেখানে তার টিম তথ্যকে ব্যবহার করছেন বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবার জন্য। বিস্তারিত এর জন্য দেখুন: DrMashiur.com

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসাক্ষাৎকার

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষক মুহাম্মদ মহসিন কাবির

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষক মুহাম্মদ মহসিন কাবির: নবীন প্রজন্মদের সাক্ষাৎকার সিরিজে এবার আমরা...

GenZপরিবেশ ও পৃথিবীসাক্ষাৎকারস্বাস্থ্য ও পরিবেশ

ই-বর্জ্য এর গবেষক হৃদয় রায়

ই-বর্জ এর গবেষক হৃদয় রায়। বাংলাদেশের মধ্যে ই-বর্জ নিয়ে কাজ করছে এমন...

GenZসাক্ষাৎকার

GenZ গবেষক শামস নাফিসা আলী

নবীন প্রজন্মদের সাক্ষাৎকার সিরিজে এবার আমরা সাক্ষাৎকার নিয়েছি শামস নাফিসা আলী এর।...

GenZকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসাক্ষাৎকার

Z-Gen গবেষক দীপংকর সরকার দীপ্ত

বিজ্ঞানী ডট অর্গে আমরা Z-Gen প্রজন্মদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছি। সেই সিরিজে আমরা এইবার...

GenZকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসাক্ষাৎকার

GenZ বিজ্ঞানী জাহিন আলম

বিজ্ঞানী জাহিন আলম বর্তমানে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন। তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার...

দেশ-বিদেশের গবেষক, বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের একটি অলাভজনক প্লাটফর্ম। বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে বাংলাকে আরো সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে আমাদের নিবেদন biggani.org

যোগাযোগ

Copyright 2024 biggani.org