নবীন বিজ্ঞানীদের সাক্ষাতকারের ধারাবাহিকতায় এইবার আমরা সাক্ষাতকার নিয়েছি তরুন বিজ্ঞানী মো সাওমুন আজাদের। তিনি বর্তমানে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কর্মরত। তিনি কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং মেশিন লার্নিং নিয়ে গবেষনা করেন।
প্রশ্ন: প্রথমেই আপনার সম্বন্ধে আমাদের একটু বলুন।
আমি মো সাওমুন আজাদ, একজন গবেষেক কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং মেশিন লার্নিং ফিল্ডের। আমি বর্তমানে রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করছি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর আগে আমি টিচিং এসিস্ট্যান্ট হিসেবেও কাজ করেছি।
প্রশ্ন: আপনার গবেষনার বিষয় কি?
আমার কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ক্ষেত্রের গবেষণার বিষয় গুলির মধ্যে রয়েছে কোয়ান্টাম কী (key) ডিস্ট্রিবিউশন (কিউকেডি), কোয়ান্টাম মেশিন লার্নিং (কিউএমএল) এবং কোয়ান্টাম অ্যালগরিদম। এছাড়া কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ক্ষেত্রগুলির পাশাপাশি আমি ক্লাসিক্যাল মেশিন লার্নিং এর বিভিন্ন বিষয় যেমন ডেটা মাইনিং, মেশিন লার্নিং এবং ডিপ লার্নিংকে কিভাবে অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রগুলিতে ব্যাবহার করা যায় সেটি নিয়ে গবেষনা করি।
প্রশ্ন: আপনার গবেষনার কাজগুলি কিভাবে আমাদের উপকৃত করছে?
আমার গবেষণার প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে মানব কল্যাণ। সহজ ভাবে বলতে, মানুষের জীবন মান উন্নয়ন এবং নিরাপদ করাই আমার গবেষণার মূল বিষয়বস্তু। যেমন, আমার একটি গবেষণাতে আমি সোশ্যাল মিডিয়াতে ভোক্তা ক্রয় আচরণের (consumer purchasing behavior) মডেলিং করেছিলাম মেশিন লার্নিং এবং মনস্তাত্ত্বিক তত্ত্বের সাহায্যে। এই গবেষণার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা হচ্ছে এই মডেল ব্যবহার করে খুব সহজে ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলি ক্রেতার purchasing behavior বা ক্রয় আচরণ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত ধারণা লাভ করতে পারবে যা প্রতিষ্ঠানগুলির সেবার মান উন্নয়নে সহায়তা করবে। এছাড়া আমার কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এর গবেষণার বিষয়গুলি আমাদের ভবিষ্যতের তথ্য নিরাপত্তা প্রদান করবে কোয়ান্টাম নিরাপত্তার সাহায্যে।
প্রশ্ন: আপনার গবেষণা কাজের কোন অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করবেন?
আমি যখন প্রথম কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের সম্ভাবনা সম্পর্কে শিখেছিলাম, তখন আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। এর অসীম সম্ভাবনা আমাকে আকৃষ্ট করেছিল। কিন্তু একই সাথে, আমি এই প্রযুক্তির সাথে আসা নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ সম্পর্কেও চিন্তিত ছিলাম। বিশেষ করে, আমি তথ্য প্রেরণের ক্ষেত্রে এই চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে খুব চিন্তিত ছিলাম।
এই চিন্তা থেকেই আমার কোয়ান্টামে গবেষণার যাত্রা শুরু হয়। আমি কোয়ান্টাম কী বিতরণ (QKD) এবং লজিস্টিক কেওস মানচিত্রের(Logistic Chaos Map) সংমিশ্রণের মাধ্যমে একটি নিরাপদ ইমেজ প্রেরণ ব্যবস্থা তৈরির চেষ্টা করেছি।
প্রথমে আমি E91 প্রোটোকল নিয়ে কাজ করেছি। এটি কোয়ান্টাম কী বিতরণের একটি মৌলিক প্রোটোকল যা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের Entanglement এর উপর ভিত্তি করে তৈরি। এরপর আমি Logistic Chaos mapএর সাহায্যে এই প্রোটোকলকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছি। Chaos map এর অনির্দেশ্য Quantum data transmission এর নিরাপত্তাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
আমার গবেষণার একটি চ্যালেঞ্জ ছিল চ্যালিংয়ের সম্ভাবনা। কারণ, কোনো হ্যাকার এই ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করতে পারে। তাই আমি কোয়ান্টাম Entanglement এর CHSH অসমতা পরীক্ষা ব্যবহার করে এই সমস্যার সমাধান করেছি। এই পরীক্ষাটি প্রটোকলে কোনো হ্যাকারের উপস্থিতি শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
আমার গবেষণার ফলাফল পেয়েছি যে, আমার প্রস্তাবিত ব্যবস্থা Image এনক্রিপশন টেকনোলোজি, উচ্চ এন্ট্রপি এবং মূল চিত্রের key এর প্রতি সংবেদনশীলতা অর্জনের ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর। এটি কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের অগ্রগতির কারণে সৃষ্ট classical encryption দুর্বলতার বিরুদ্ধে একটি কার্যকর সমাধান হিসাবে এই ব্যবস্থার সম্ভাবনা দেখিয়েছে।
আমি আশা করি, আমার গবেষণা কোয়ান্টাম যুগে নিরাপদ যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।
প্রশ্ন: একজন বিজ্ঞানীর কি কি গুণ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
একজন বিজ্ঞানীর মধ্যে আগ্রহ, উৎসাহ, এবং জ্ঞানের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ গুণ থাকা জরুরি বলে আমি মনে করি। এই গুণগুলো তাকে বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে, নতুন জ্ঞান আবিষ্কার করতে এবং বিশ্বকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে।
একজন বিজ্ঞানীর মধ্যে থাকা উচিত এমন কিছু গুণ:
১) জিজ্ঞাসাবত্তা: একজন বিজ্ঞানী সবসময় কেন, কীভাবে এবং কেন না এসব প্রশ্ন করে। তার মধ্যে জিনিসপত্রের প্রতি গভীর অনুসন্ধানের মনোভাব থাকে।
২) পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা: বিশ্বকে খুব মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা একজন বিজ্ঞানীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছোট ছোট বিষয়ও তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
৩) বিশ্লেষণ ক্ষমতা: পর্যবেক্ষণ করা তথ্যগুলোকে বিশ্লেষণ করে তার মধ্যে নিদর্শন খুঁজে বের করা এবং তা থেকে উপসংহারে আসা একজন বিজ্ঞানীর মূল কাজ।
৪) সৃজনশীলতা: নতুন ধারণা এবং সমাধান খুঁজে বের করার জন্য সৃজনশীলতা অত্যন্ত জরুরি।
৫) ধৈর্য: বিজ্ঞানী হওয়া মানে অনেক ধৈর্য ধরা। অনেক সময় একটা পরীক্ষা অনেকবার করতে হয় সঠিক ফলাফল পেতে।
৬) দলবদ্ধ কাজ করার ক্ষমতা: আজকের বিজ্ঞানীরা সাধারণত দলবদ্ধভাবে কাজ করে। তাই অন্যদের সাথে মিলেমিশে কাজ করার ক্ষমতা একজন বিজ্ঞানীর জন্য জরুরি।
৭) লেখার দক্ষতা: নিজের আবিষ্কার এবং গবেষণা ফলাফল অন্যদের কাছে পৌঁছে দিতে ভালো লেখার দক্ষতা থাকা জরুরি।
এই গুণগুলো মিলে একজন বিজ্ঞানীকে সফল করে তোলে বলে আমি মনে করি।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থী যারা বিজ্ঞানে কাজ করতে চায় – তাদের জন্য আপনার কোন ম্যাসেজ কিংবা বার্তা কি?
বাংলাদেশের তরুণ বিজ্ঞানীদের উদ্দেশ্যে আমার বার্তা হল, আমরা সবাই অনেক সম্ভাবনাময়। আমাদের মধ্যে বিজ্ঞানের প্রতি যে আগ্রহ আছে, তা দেশের জন্য এক বিরাট সম্পদ। আমরা যদি নিজেদের মেধা ও দক্ষতাকে কাজে লাগাতে পারি, তাহলে বাংলাদেশকে বিশ্বের মঞ্চে এক উজ্জ্বল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারবো। তাই জ্ঞান অর্জন করতে থাকো, প্রশ্ন করতে থাকো, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে থাকো এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, বাংলাদেশের সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করো।
প্রশ্ন: আপনার সাথে যোগাযোগের তথ্য
আমার সাথে যোগাযগের সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম হলো LinkedIn (https://www.linkedin.com/in/shawmoonazad) এছাড়াও আমাকে ই-মেইল করতে পারো, shawmoon98 @ gmail.com এ।
বিজ্ঞানী ডট অর্গ এর পক্ষ থেকে আমরা মো সাওমুন আজাদ এর উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি। তাদের মতন নবীন বিজ্ঞানীরা আমাদের দেশের সম্পদ এবং চলুন আমরা এই নবীন বিজ্ঞানীদের সাপোর্ট করি। কমেন্টে আপনাদের সাপোর্ট জানাতে ভুলবেন না।
Leave a comment