নবীন প্রজন্মদের সাক্ষাৎকার সিরিজে এবার আমরা সাক্ষাৎকার নিয়েছি সাদিয়া ফাতেমা মওলা এর।তিনি বর্তমানে টিএইচএম ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স প্রোগ্রামে থিসিসের গবেষনায় আছেন। তার মেজর হলো , রোবটিক্স এবং অটোমোটিভ সাইবার সিকিউরিটি।। তার সাক্ষাৎকারটি পড়ুন:
প্রথমেই আপনার সম্বন্ধে আমরা জানতে চাই ?
আমি বর্তমানে টিএইচএম ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স প্রোগ্রামে থিসিসের গবেষসণায় আছি। আমার মেজর হল, রোবটিক্স এবং অটোমোটিভ সাইবার সিকিউরিটি।
মাস্টার্স শেষে এআই অটোমোটিভ সাইবার সিকিউরিটি এর সেক্টরেই পিএইচডি করার ইচ্ছা আছে। বর্তমানে এই ভার্সিটিতেই রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট এবং টিএ হিসেবে রয়েছি।
আপনার গবেষনার বিষয় কি?
মূল বিষয় হল, অটোমেটিক এবং এ আই সেক্টরে, এখন সব কিছু ডিজিটালি কানেক্টেড। গাড়ি থেকে শুরু করে ঘরের, ফ্যাক্টরি, অফিসের সব কিছুতে স্মার্ট টেক্নোলজি সংযুক্ত হচ্ছে।
যেমন ধরুন, আমি অফিসে বসে মোবাইল দিয়েই ঘরের এসি চালানো, টবে পানি দেয়া, পানির ফিল্টার চালু করা, ঘর মোছা, কিংবা স্মার্ট গাড়ির অটোড্রাইভিং থেকে শুরু করে অনেক কিছু করতে পারবেন। যেমন আপনি ডিজিটালি এগুলো ইউজ করতে পারছেন। সেরকম ডিজিটাল ক্রিমিনাল বা চোরেরাও একই টেক্নোলজি ব্যবহার করে আপনার গাড়ি, বাড়ি, ফ্যাক্টরির অনেক মূল্যবান জিনিস তথ্য, ডাটা নিজেদের দখলে নিতে পারে৷ আপনার নিজের ইলেক্ট্রনিক জিনিস আপনার কথা শুনবে না। ব্যবসা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক, সামাজিক- কোটি কোটি টাকার লস হতে পারে।
দেশের নিরাপত্তা, প্রতিষ্ঠানের কনফেডেনশিয়াল তথ্য অন্য প্রতিপক্ষের কাছে চলে যেতে পারে।
এইসব হ্যাকিং বা ডিজিটাল চুরি-ডাকাতি ঠেকাতে, রিয়েল লাইফ পুলিশের মতো, ডিজিটাল বা সাইবার পুলিশ আছে। যারা এমনভাবে এলগোরিদম, বা ডিজিটাল সিস্টেম ডিজাইন করে, যাতে কোন ডিজিটাল চোর বা হ্যাকার সহজে আপনার সিস্টেম দখল করতে না পারে।
কিংবা কোনভাবে যদি দখল করেও নেয়, রিয়েল লাইফ পুলিশের মতো, ডিজিটাল পুলিশ তাদের থেকে সেই দখল ছাড়িয়ে আনতে পারে।
এই ব্যাপারটার আবার নানা শাখা প্রশাখা আছে। এক কথা, এই ব্যাপারটাকেই সাইবার সিকিউরিটি বলে।
আমি এই সাইবার সিকিউরিটির এমন একটা ব্রাঞ্চে আছি, যেখানে যে কোন অটোমোটিভ সিস্টেমের মেইন্টেনেন্স- সেটা হার্ডওয়ার হলে নানা সেন্সরের মাধ্যমে ডাটা নিয়ে মেশিন লার্নিং বা এ আই এর মাধ্যমে ক্যালকুলেট করে ইউজারকে জানাবে, প্রবাবিলিটি যে কত দিনের মধ্যে কোন পার্টস চেঞ্জ করা লাগতে পারে, আর সফটওয়্যার হলে, রেগুলার আপডেট আর মনিটরের মাধ্যমে ওয়ার্নিং দিবে, এলার্ট করবে ইউজারকে।
যেহেতু এই সেন্সর এবং মনিটর ডিজিটালি করা হবে, ডিজিটাল হওয়া মানেই, সেটাকে হ্যাক করার জন্য ডিজিটাল চোরের সুযোগ আছে। আর আমি সাইবার পুলিশ৷ যে এমনভাবে ঐ ডিজিটাল সিস্টেম আর্কিটেকচার বানাবো এবং পাহারা দিব, যে কোন ডিজিটাল চোর সহজে হ্যাক করতে না পারে।
সহজ ভাষায় এটাই আমার কাজ। যেটার টেক্নিকাল নাম হল,” সাইবার সিকিউরিটি ইন অটোমোটিভ ভেইকেল মেইনটেইনেন্স প্রেডিক্টিভ এলার্ট”।
এই টেক্নোলজি খালি গাড়িতে নয়, বিমান, জাহাজ, ফ্যাক্টরি সহ যে কোন স্মার্ট সিস্টেমে ইউজ করা যাবে।
আপনার গবেষনার কাজগুলি কিভাবে আমাদের উপকৃত করছে কিংবা করবে?
সবচেয়ে বড় কথা, এই যুগের সবচেয়ে বড় থ্রেট, সাইবার ভালনারিবিলিটির থেকে আপনাকে, আপনার প্রতিষ্ঠান, আপনার বিষয়, সম্পদ, গবেষণাকে সেইভ করবে। বাকিটা আমার গবেষণার বর্ণনাতেই আছে।
সম্প্রতি, ফিয়াট, টেসলা থেকে শুরু করে ফক্সওয়াগেন বা বড় বড় কোম্পান, ব্যাংক, হ্যাকিং এর শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকেই কয়েক দফায় হাজার কোটির উপর টাকা চলে গেল এই হ্যাকিং করেই। বর্তমানে টেক বিশ্বের এক আতংক হল সাইবার এটাক। আর এই এটাককে থামাতেই আমরা এক্টিভ সাইবার পুলিশ-এথিক্যাল হ্যাকার, সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট।
গবেষনা কাজের বিশেষ কোন অভিজ্ঞতা কি আমাদের সাথে শেয়ার করবেন?
কাজ করছি এ আই বেইসড মেশিন লার্নিং আর অটোমোটিভ মেইনটেইনেন্স প্রেডিক্টিভ এলার্টের সাইবার সিকিউরিটি এর বিষয়ে। গবেষণা এখনও মাঝামাঝি পথে। যেহেতু জার্মান কোম্পানির অর্থায়নে শুরু গবেষণা, এখন ডিসক্লোজ করা উচিৎ হবে না। তবে পেপার প্রকাশিত হওয়ার পর, অবশ্যই করব। সবচেয়ে বড় কথা, আমার স্বাধীনতা থাকবে, আমার এই টেকনোলজি আমাদের দেশেও প্রয়োগ করার। কেননা। বাংলাদেশের ফ্যাক্টরিগুলো ধীরে ধীরে ডিজিটালাইজড হচ্ছে।
একজন বিজ্ঞানীর কি কি গুণ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
সত্যকে জানবার প্রচন্ড ক্ষুধা, বিখ্যাত হওয়ার লোভ না থাকা। প্রকৃতিকে ভালোবাসা এবং মানবতার মূল্যবোধ থাকা।
বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থী যারা বিজ্ঞানে কাজ করতে চায় – তাদের জন্য আপনার কোন ম্যাসেজ কিংবা বার্তা কি?
প্রচুর সু্যোগ রয়েছে। বর্তমান বিশ্ব গ্লোবালাইজেশন এর। দেশে বসেও ইন্টারনেট এর মাধ্যমে সংযুক্ত থেকে কাজ করা সহজ।
এরপরও কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে আগ্রহী হলে, আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে, অবশ্যই প্রপার গাইডেন্স করতে পারব।
আপনার ইমেইল : [email protected]
আপনার লিংকডইন : https://www.linkedin.com/in/sadia-fatema-moula?utm_source=share&utm_campaign=share_via&utm_content=profile&utm_medium=android_app
আমরা বিজ্ঞানী অর্গ এর পক্ষ এর থেকে সাদিয়া ফাতেমা মওলা এর উত্তোরত্তর সাফল্য কামনা করি। তিনি আমাদের নবীন গবেষকদের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
Leave a comment