গবেষণায় হাতে খড়ি

গবেষণাপত্র প্রত্যাখ্যানের ৫টি প্রধান কারণ এবং সেগুলি এড়ানোর উপায়

Share
Share

অতিথি লেখক:
আজিজুল হক
সহকারী অধ্যাপক, ইয়েংনাম বিশ্ববিদ্যালয়।

একটি গবেষণাপত্র প্রস্তুত করা এবং তা প্রকাশের জন্য উপযুক্ত জার্নালে জমা দেওয়া গবেষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ডেস্ক রিজেকশন (Desk rejection) এড়ানো — অর্থাৎ, গবেষণাপত্রটি রিভিউয়ারদের কাছে পাঠানোর আগেই সম্পাদক কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হওয়া। জার্নাল সম্পাদকরা বছরের পর বছর ডেস্ক রিজেকশনের প্রধান কারণগুলো পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং দেখা গেছে, বিষয়বস্তু যাই হোক না কেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রিজেকশনের কারণগুলো একই ধরনের। গবেষণা প্রকাশনার ক্ষেত্রে ডেস্ক রিজেকশনের অধিকাংশ কারণই লেখকের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে। তাই সঠিক প্রস্তুতি নিলে এই ধাপটি সহজেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। এই লেখায় ডেস্ক রিজেকশনের শীর্ষ পাঁচটি প্রধান কারণ এবং কীভাবে সেগুলো এড়ানো যায় তা নিয়ে আলোচনা করব।

১. ভুল জার্নালে পাঠানো

সঠিক জার্নাল নির্বাচন করতে না পারলে গবেষণা প্রকাশনার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হতে পারে। তাই প্রথমেই নিজের গবেষণার জন্য উপযুক্ত জার্নাল খুঁজে বের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য প্রচুর গবেষণাপত্র পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যদি নিজের গবেষণার সাথে মিল রয়েছে এমন কোনো গবেষণাপত্র পাওয়া যায়, তাহলে সেটি কোন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে তা লক্ষ্য করুন। এছাড়াও, সহকর্মী ও মেন্টরদের পরামর্শ নিন, কারণ তারা সাধারণত সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের জার্নাল সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখেন এবং আপনার গবেষণার জন্য উপযুক্ত জার্নাল সুপারিশ করতে পারেন। জার্নাল নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছু অনলাইন টুলও ব্যবহার করা যেতে পারে, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে আপনার গবেষণার সাথে মিল থাকা জার্নাল সুপারিশ করে। একবার সম্ভাব্য জার্নালগুলোর তালিকা তৈরি হয়ে গেলে, প্রতিটি জার্নালের aims and scope পড়ুন, যাতে বোঝা যায় তারা কী ধরনের গবেষণা প্রকাশ করতে আগ্রহী।

২. প্রকৃত জার্নাল আর্টিকেল নয়

অনেক সময় সম্পাদকরা বুঝতে পারেন যে জমা দেওয়া গবেষণাপত্রটি প্রকৃত অর্থে জার্নাল আর্টিকেল নয়। এটি হতে পারে কোনো বইয়ের অধ্যায়, থিসিসের সংক্ষিপ্তসার বা অন্য ধরনের একাডেমিক লেখা। কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য থাকলে গবেষণাপত্রটি জার্নাল আর্টিকেলের জন্য উপযুক্ত নয় বলে বিবেচিত হতে পারে। যেমন: বেশী বিচ্ছিন্ন পয়েন্ট, অসংলগ্ন বিষয়বস্তু, সাংবাদিক ধাঁচের লেখা, অথবা জার্নাল আর্টিকেলের কাঠামো ও ভাষার অভাব। সুতরাং, লেখার পূর্বে নিশ্চিত হয়ে নিন যে এটি একটি প্রকৃত জার্নাল আর্টিকেল এবং এর কাঠামো সঠিক।

৩. জার্নালের নির্দেশনা অনুসরণ না করা

প্রতিটি জার্নালের নিজস্ব নিয়ম ও নির্দেশিকা থাকে, যা লেখকদের গবেষণাপত্র প্রস্তুত করতে সাহায্য করে। এই নির্দেশিকাগুলোকে Instructions for Authors (IFAs) বলা হয়। এসব নির্দেশিকা থেকে জানা যায়: জার্নালের ধরণ ও কাঠামো, গবেষণাপত্র প্রস্তুতির নিয়মাবলী, প্রকাশনার বিকল্প (যেমন ওপেন অ্যাক্সেস), পিয়ার রিভিউ প্রক্রিয়া এবং তথ্য share নীতিমালা। তাই, কোন জার্নালে জমা দেওয়ার আগে এটি নিশ্চিত করা জরুরি যে, গবেষণাপত্রটি ওই জার্নালের নির্দেশনাগুলোর সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ।

৪. দুর্বল মানের ম্যানুস্ক্রিপ্ট

একটি ম্যানুস্ক্রিপ্ট নিম্নমানের হলে সেটি ডেস্ক রিজেকশন হতে পারে। দুর্বল মানের ম্যানুস্ক্রিপ্টের কয়েকটি কারণ হতে পারে: জার্নালের নির্ধারিত রীতি অনুসরণ না করা, দুর্বল ব্যাকরণ, অপ্রাসঙ্গিক বিন্যাস বা পদ্ধতি, গবেষণার নতুনত্বের অভাব, উপযুক্ত তাত্ত্বিক কাঠামো বা প্রেক্ষাপটের অনুপস্থিতি, অনুচিত উপস্থাপনা এবং দুর্বল প্রুফরিডিং। সঠিক কাঠামো অনুসরণ, স্পষ্ট ও প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা এবং সহকর্মীদের কাছ থেকে পর্যালোচনা নেওয়া এই সমস্যাগুলো এড়াতে সহায়ক হতে পারে।

৫. অনৈতিকতা বা পক্ষপাতিত্ব

যদি কোনো গবেষণাপত্র অনৈতিক হয় বা পক্ষপাতমূলকভাবে উপস্থাপন করা হয়, তাহলে সেটি ডেস্ক রিজেকশন হতে পারে। কিছু সাধারণ অনৈতিকতার মধ্যে রয়েছে: লেখকের নাম সংক্রান্ত সমস্যা, স্বার্থের সংঘাত (Competing interests), একই গবেষণাপত্র একাধিক জার্নালে জমা দেওয়া, ডেটা বা চিত্রের বিকৃতি, প্লেজিয়ারিজম (Plagiarism), কপিরাইট লঙ্ঘন ইত্যাদি। এই ভুলগুলো এড়ানোর জন্য প্রকাশনার নৈতিকতা সম্পর্কিত নির্দেশিকা পড়া এবং সতর্ক থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


বিদ্র: ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত:——–

https://www.fachttps://www.facebook.com/share/p/19rzjD9Ehc/ebook.com/share/p/15fa7ccFbC

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগগবেষণায় হাতে খড়ি

বাংলাদেশে গবেষণার ভবিষ্যৎ: চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা ও করণীয়

বাংলাদেশে গবেষণার ভবিষ্যৎ আবিষ্কার করুন, যার মধ্যে রয়েছে তরুণ গবেষকদের মুখোমুখি হওয়া...

কলামগবেষণায় হাতে খড়ি

কলাম: বিনামূল্যে অসৎ গবেষক শনাক্তকরণের টুলস

গবেষণায় সহযোগিতা করার আগে, বিনামূল্যের Argos টুল ব্যবহার করে একজন গবেষকের প্রত্যাহারের...

উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগগবেষণায় হাতে খড়ি

বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রত্যাহার বা রিট্র্যাকশন

জালিয়াতি, তথ্য কারসাজি এবং ভুয়া পিয়ার রিভিউয়ের কারণে বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রত্যাহারের হার...

গবেষণায় হাতে খড়ি

রিভিউ আর্টিকেল কীভাবে লিখবেন?

কীভাবে কার্যকরভাবে একটি পর্যালোচনা নিবন্ধ লিখতে হয় তা শিখুন! এই নির্দেশিকাটিতে একটি...

কলামগবেষণায় হাতে খড়ি

কলাম: গবেষক হতে কেন আগ্রহী?

গবেষক হওয়া কেন একটি ফলপ্রসূ যাত্রা তা আবিষ্কার করুন। গবেষণার গুরুত্ব, জ্ঞান...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.