নিউজ ডেস্ক, বিজ্ঞানী অর্গ
[email protected]
সম্প্রতি চীনে একটি গবেষণায় মানবদেহের প্রজনন উপাদানে বিপুল পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। গবেষকরা ৪০ জন সুস্থ পুরুষের বীর্যের নমুনা পরীক্ষা করেন এবং প্রত্যেকটি নমুনাতেই ক্ষুদ্র প্লাস্টিকের উপস্থিতি শনাক্ত করেন। গবেষণায় মোট আট ধরনের প্লাস্টিক শনাক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে পলিস্টাইরিন সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে।
মাইক্রোপ্লাস্টিক কী?
মাইক্রোপ্লাস্টিক হলো প্লাস্টিকের অত্যন্ত ছোট টুকরো, সাধারণত ৫ মিলিমিটারের চেয়ে কম দৈর্ঘ্যের। প্লাস্টিকের বোতল, প্যাকেজিং, ব্যাগ বা অন্যান্য পণ্য ব্যবহারের পর এগুলো মাটি, পানি এবং বায়ুতে মিশে যায় এবং ধীরে ধীরে ভেঙে মাইক্রোপ্লাস্টিকে রূপান্তরিত হয়। খাবার, পানি, এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমেও এগুলো মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে।
গবেষণার ফলাফল ও গুরুত্ব
চীনের এই গবেষণায় দেখা গেছে, ৪০ জনের মধ্যেই বীর্যে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে, যা একটি গুরুতর সতর্ক সংকেত। গবেষকদের মতে, সবচেয়ে বেশি পাওয়া প্লাস্টিক পলিস্টাইরিন সাধারণত খাবারের পাত্র, কাপ, প্লেট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও অন্যান্য গবেষণা
এই গবেষণা কেবল চীনে সীমাবদ্ধ নয়। ইতালিতেও মানবদেহের প্রজনন অঙ্গে মাইক্রোপ্লাস্টিক শনাক্ত করা হয়েছে। চীনের অন্যান্য অংশেও স্তন্যদুগ্ধ এবং শুক্রাশয়ে (testicles) মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী পুরুষের শুক্রাণুর গুণগত মান (sperm quality) প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এর পিছনে অন্যতম কারণ হতে পারে এই মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ।
প্রভাব ও ঝুঁকি
যদিও মানুষের ক্ষেত্রে এখনো বিস্তারিত গবেষণা চলছে, ইঁদুরের উপর গবেষণায় দেখা গেছে যে, মাইক্রোপ্লাস্টিক শুক্রাণুর সংখ্যা (sperm count) কমাতে পারে, শুক্রাণুকে বিকৃত করতে পারে এবং হরমোনাল ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। এর ফলে ভবিষ্যতে মানব প্রজনন ক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রয়োজন জরুরি ব্যবস্থা
জাতিসংঘ ইতোমধ্যে প্লাস্টিক দূষণ কমাতে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি তৈরির আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা জোর দিয়ে বলছেন, মাইক্রোপ্লাস্টিকের কারণে মানবস্বাস্থ্যের সম্ভাব্য ক্ষতি রোধে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
করণীয়
পরিবেশবান্ধব পণ্যের ব্যবহার বাড়ানো, প্লাস্টিক ব্যবহার সীমিত করা এবং রিসাইক্লিং পদ্ধতি জোরদার করা জরুরি। জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমেই কেবল এই ঝুঁকি মোকাবেলা সম্ভব।
সুতরাং, আগামী দিনের বিজ্ঞানী ও গবেষক হিসেবে আমাদের সকলের উচিত বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা এবং প্লাস্টিক দূষণ রোধে সক্রিয় ভূমিকা রাখা।
Leave a comment