নবীন বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকার পর্বে আমরা কথা বলেছিলাম বিজ্ঞানী জান্নাতুল শাহরীন শশী এর সাথে। তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি এর অপ্টিক্স ল্যাবে কর্মরত। তিনি অপটিক্স/ফটোনিক্স নিয়ে গবেষণা করছি। নিম্নে তার সাক্ষাৎকারটি পড়ুন:
আপনার গবেষণার বিষয় কি?
আমার গবেষণার ক্ষেত্র অপ্টিক্স বা ফটোনিক্স, যেখানে মূলত আমি অপটিক্যাল ম্যানুপুলেশন, বিশেষ করে অপটিক্যাল সর্টিং ও অপটিক্যাল পুলিং নিয়ে কাজ করি। এক্ষেত্রে আমি বিভিন্ন পার্টিক্যাল ব্যবহার করে বিভিন্ন সাবস্ট্রেট বা বিশেষ ডিজাইনের মেটাসার্ফেস বিল্ড করে এক্সপেরিমেন্ট করে থাকি।
আমার গবেষণার লক্ষ্য হলো এই প্রযুক্তিগুলোকে কীভাবে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি, স্বাস্থ্যখাত ও মানব কল্যাণে প্রয়োগ করা যায়।
আপনার গবেষণার কাজগুলি কীভাবে আমাদের উপকৃত করছে?
অপটিক্যাল ম্যানুপুলেশন প্রযুক্তি বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি, স্বাস্থ্যখাত এবং ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ন্যানোম্যাটারিয়াল প্রসেসিং এবং উচ্চ-নির্ভুলতা ম্যান্যফ্যাকচারিংয়ে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়, যেখানে ন্যানোস্কেল উপাদানকে সুনির্দিষ্টভাবে পৃথক ও স্থাপন করা যায়।
স্বাস্থ্যখাতে, অপটিক্যাল সর্টিংয়ের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ধরনের কোষগুলোকে দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে পৃথক করা সম্ভব। ফার্মাসিটিউক্যাল কোম্পানিতে, অপটিক্যাল সর্টিং উচ্চমানের বিশুদ্ধ স্যাম্পল প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়, যা ড্রাগ টেস্টিং এবং গবেষণার জন্য অপরিহার্য। অপটিক্যাল পুলিং প্রযুক্তির ওষুধের ক্ষুদ্র কণাকে নির্দিষ্ট কোষে টেনে নিয়ে যেতে সক্ষম। আর এভাবে ড্রাগ ডেলিভারি এর কাজটিকে আরো সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর করা সম্ভাব হবে।এছাড়াও অপটিক্যাল পুলিং বায়োমোলিকুলার ইন্টারেকশন স্টাডিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা নিতুন ওষুধের কার্যকারিতা বিশ্লেষণে সহায়ক। অর্থাৎ মানব কল্যাণের জন্যই আমার এই গবেষণা।
গবেষণা কাজের কোন অভিজ্ঞতা কি আমাদের সাথে শেয়ার করবেন?
আমি গবেষণায় আগ্রহী হই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মাহদী রহমান চৌধুরী স্যারের কাছে ইলেকট্রোম্যাগনেটিজম এর একটি কোর্স করতে গিয়ে। গবেষণার প্রথম দিকে আমি একটা জিনিস দেখে খুব অবাক হই। ছোট বেলা থেকেই বিভিন্ন সায়েন্স ফিকশন মুভি দেখা হতো। মুভিতে দেখা যেত UFO থেকে একধরনের লাইট ফেলা হয় এবং এই লাইট এর ভিতর দিয়েই কোন সিঁড়ি বা কিছুর সংস্পর্শ ছাড়াই আস্তে আস্তে এলিয়েন নিচে নেমে আসে এবং সেইম এভাবেই লাইটের ভিতর দিয়েই আস্তে আস্তে তারা UFO এর ভিতরে ঢুকে যায়।
অপটিক্যাল ম্যানুপুলেশনের সাথে UFO-এর এই জিনিসটা আমি মিল পাই যা আমার কাছে খুবই ইন্টারেস্টিং লেগেছিলো। অপটিক্যাল ম্যানুপুলেশনেও অবজেক্টে সোর্স থেকে লাইট ফেলা হয়। এবং অবজেক্টটি সোর্সের দিকে(পুলিং ফোর্স) বা সোর্সের বিপরীতে(পুশিং ফোর্স) বা ডানে বামে(লেটারাল ফোর্স) আসতে পারে।
পরবর্তীতে আমি এটি নিয়ে কাজ করার জন্য আগ্রহী হই। এটি নিয়ে আমি কাজ করি এবং বিভিন্ন দিক থেকে আলো ফেলে আমি Rayleigh রেঞ্জে ফলাফল আনতে সফল হই। এবং একটি সেট আপ থেকেই সিংগেল ভাবে ৩টি পার্টিক্যালের তিন ধরনের ফোর্স- পুলিং, পুশিং, ল্যাটারাল ফোর্স পাই।
একজন বিজ্ঞানীর কি কি গুণ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
আমার মতে গবেষণার জন্য যা যা লাগে তা হলো আগ্রহ, কঠোর চেষ্টা এবং ধৈর্য। অনেক সময় দীর্ঘ সময় ধরে হার্ড ওয়ার্কের পরেও ব্যর্থতার মুখোমুখি হতে হয়। তবুও, সেই ব্যর্থতা থেকে শিখে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। মোট কথা লেগে থাকতে হবে। কিছু না কিছু রেজাল্ট আসবেই। আর নিজের গবেষণার রেজাল্ট নিয়ে অনেস্ট থাকতে হবে যেন পর্বরতীতে অন্যরা তাদের কাজ থেকে উপকৃত হতে পারে।
বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থী যারা বিজ্ঞানে কাজ করতে চায় – তাদের জন্য আপনার কোন ম্যাসেজ কিংবা বার্তা কি?
বিজ্ঞান এবং গবেষণা সবার জন্য উন্মুক্ত। গবেষণা করতে হলে যে খুব ভালো সিজিপিএ থাকতে হবে সেটিও কিন্তু না। যে কেউ গবেষণা করতে পারে যদি তার নিজের চেষ্টা ও আগ্রহ থাকে।
আর আমি মনে করি বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে আরো বেশি তরুণ সমাজকে গবেষণায় আসা উচিত।বাংলাদেশেও বড় বিজ্ঞানী হওয়ার সুযোগ আছে, শুধু প্রয়োজন একাগ্রতা, ধৈর্য, এবং কঠোর পরিশ্রমের। তাদের হাত ধরে আমাদের দেশের বিজ্ঞানচর্চা আরও সমৃদ্ধ হবে এবং নতুন দিগন্তে পৌঁছাবে। সুতরাং, স্বপ্ন দেখা উচিত এবং সেই স্বপ্ন পূরণ হবে একদিন!
আপনার সাথে যোগাযোগের তথ্য:
আমার সাথে LinkedIn- এ যোগাযোগ করতে পারেন- http://www.linkedin.com/in/jannatul-shahrin-3b7b5629b এছাড়াও আমাকে ই-মেইল করতে পারেন- shahrinshoshi09@জিমেইল.com
আপনার লিংকডইন এর ঠিকানা
http://www.linkedin.com/in/jannatul-shahrin-3b7b5629b
আপনার ওয়েবসাইট, গবেষনাকাজের লিংক ইত্যাদি
Google Scholar https://scholar.google.com/citations?hl=en&user=zUhjCSIAAAAJ
আমরা জান্নাতুল শাহরীন শশী এর উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি
Leave a comment