কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাপ্রযুক্তি বিষয়ক খবর

এআই কি সত্যিই বুদ্ধিমান?

Share
Share

বিশ্বজুড়ে এআই (Artificial Intelligence) প্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতি মানুষকে মুগ্ধ করছে। চ্যাটবট কথা বলছে মানুষের মতো, ছবি আঁকছে শিল্পীর মতো, এমনকি চিকিৎসকের মতো পরামর্শও দিচ্ছে। কিন্তু আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি—এই সবকিছুর পেছনে থাকা প্রযুক্তিটা কি আদৌ বুদ্ধিমান?

কগনিটিভ নিউরোসায়েন্টিস্ট গিয়োম থিয়েরি (Guillaume Thierry) এ ব্যাপারে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন: “এআই বুদ্ধিমান নয়, আর আমাদের এই মিথ্যাচার বন্ধ করা উচিত।”

এআই কি বোঝে?

থিয়েরির মতে, বর্তমানের এআই সিস্টেমগুলো মূলত একটি পরিসংখ্যানভিত্তিক যন্ত্র। তারা বিশাল পরিমাণ ডেটা থেকে প্যাটার্ন বের করে এবং তার ভিত্তিতে উত্তর তৈরি করে। কিন্তু এর মধ্যে কোনো ‘বোঝা’, ‘অনুভব’, বা ‘উদ্দেশ্য’ কাজ করে না। অর্থাৎ, এআই যতই মানুষের মতো কথা বলুক না কেন, তারা জানে না কী বলছে—শুধু অনুমান করে চলছে।

তাহলে ভয় কোথায়?

সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হলো—এই এআইগুলো দেখতে, শুনতে, এবং কথাবার্তায় এতটাই মানবসদৃশ যে মানুষ ভুল করে ধরে নেয় তারা সত্যিকারের বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন। এবং সেখান থেকেই শুরু হয় বিপত্তি।

থিয়েরির মতে, আসল হুমকি হচ্ছে এআই নয়, বরং যারা এআই তৈরি করছে, তাদের উদ্দেশ্য ও ব্যবহার পদ্ধতি। যখন ডিজাইনাররা এআইকে মানুষের মতো করে উপস্থাপন করেন—চোখ, মুখ, আবেগের প্রকাশ, এমনকি কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে—তখন সাধারণ ব্যবহারকারীরা আবেগগতভাবে যুক্ত হয়ে পড়ে। তারা এআইকে বন্ধু, সহকর্মী বা এমনকি উপদেষ্টা হিসেবেও গ্রহণ করতে শুরু করে।

মানবীয় চেতনার উৎস

মানব চেতনার মূলভিত্তি হলো শরীরভিত্তিক অভিজ্ঞতা—চোখে দেখা, ত্বকে অনুভব করা, মন খারাপ হওয়া, ভালো লাগা। এই জৈবিক অভিজ্ঞতা ছাড়া চেতনা তৈরি হয় না। কিন্তু একটি সফটওয়্যার সিস্টেম, যেটার শরীর নেই, অনুভূতি নেই, সেটা কীভাবে চেতনার অধিকারী হবে?

সমাধান কী?

থিয়েরি যে সমাধানটি প্রস্তাব করেন, তা হলো একটি সাংস্কৃতিক পরিবর্তন

  • এআইকে মানবীয় ভাষায় বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকতে হবে—যেমন “সে ভাবছে”, “সে বুঝতে পারছে” ইত্যাদি।
  • এআই অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে চোখ, মুখ, আবেগ দেখানোর উপায় বাদ দিতে হবে।
  • এআইকে শুধু একটি উপকরণ (tool) হিসেবে ব্যবহার ও উপস্থাপন করতে হবে।

উপসংহার

এআই একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি—তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সেটা বুদ্ধিমান, অনুভূতিপ্রবণ বা সচেতন কোনো অস্তিত্ব নয়। আমরা যদি একে সেই রূপে দেখতে শুরু করি, তবে ভুল সিদ্ধান্ত, আবেগপ্রবণ ব্যবহার, এবং প্রযুক্তির অপব্যবহার অনিবার্য হয়ে উঠবে।

এআইকে বুঝতে হবে এর প্রকৃত সীমাবদ্ধতার মধ্যে, না যে রূপে তাকে ডিজাইন করা হচ্ছে। প্রযুক্তি যতটা না ভয়ংকর, তাতে যারা মানবিক রূপ দেয়, তারাই বেশি ভয়ংকর।


তথ্যসূত্র:
https://theconversation.com/we-need-to-stop-pretending-ai-is-intelligent-heres-how-254090 

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact:

biggani.org@জিমেইল.com

সম্পাদক: ড. মশিউর রহমান

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

Copyright 2024 biggani.org