লেখক: ফারহানা জুঁই মিথিলা, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
ড. ফিরদৌসি কাদরি বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, যিনি জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন, বিশেষ করে কলেরা, টাইফয়েড এবং অন্ত্রের রোগের জন্য ইমিউনোলজি এবং ভ্যাকসিন নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। তাঁর অগ্রণী গবেষণা এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে তিনি দেশের স্বাস্থ্যখাতে নতুন দিগন্তের সূচনা করছেন।
২০২১ সালে, ড. কাদরি র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কারে ভূষিত হন, যা এশিয়ার নোবেল পুরস্কার হিসেবে পরিচিত। র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার ফাউন্ডেশন তাঁর প্রতি সম্মান জানিয়ে উল্লেখ করে, “বিজ্ঞান পেশার প্রতি তাঁর আবেগ এবং আজীবন সমর্পণ, বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য মানব ও পদার্থিক অবকাঠামো গড়ে তোলার তাঁর দৃষ্টি, বিশেষ করে মহিলা বিজ্ঞানীদের জন্য, এবং ভ্যাকসিন উন্নয়ন, উন্নত জৈবপ্রযুক্তি থেরাপিউটিকস এবং গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় তাঁর অবিরাম অবদান যা লক্ষ লক্ষ মূল্যবান জীবন বাঁচাচ্ছে।“
শিক্ষা ও কর্মজীবন
ড. ফিরদৌসি কাদরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োকেমিস্ট্রিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরে তিনি যুক্তরাজ্যের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ে সংক্রামক রোগ এবং ইমিউনোলজিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশে (আইসিডিডিআর,বি) যোগদান করেন। সেখানে তিনি সংক্রামক রোগ, ইমিউনোলজি, ভ্যাকসিন উন্নয়ন এবং ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের উপর বিশেষজ্ঞতা অর্জন করেন।
গবেষণা ও উদ্ভাবন
ড. কাদরি কম খরচে এবং কার্যকর মৌখিক কলেরা ভ্যাকসিন “শানচল” (Shanchol) তৈরির নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই ভ্যাকসিনটি বাংলাদেশের দরিদ্র এবং স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকারহীন মানুষদের মধ্যে রোগ নিয়ন্ত্রণের প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনি টাইফয়েডের জন্যও একটি সংযুক্ত ভ্যাকসিন উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, যা প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদের জন্য সমানভাবে কার্যকর।
২০১১ সালে, তিনি বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সাথে অংশীদারিত্বে একটি গবেষণা পরিচালনা করেন, যেখানে তাঁর দল “শানচল” ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে। সাম্প্রতিককালে, তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে কলেরা প্রতিরোধে একটি টিকাদান কর্মসূচির নেতৃত্ব দিয়েছেন, যাদের জীবনযাত্রার অবস্থা তাদের এই সংক্রামক অন্ত্রের রোগগুলির জন্য বিশেষভাবে সংবেদনশীল করে তুলেছে।
ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপিং সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভস (আইডিএসএইচআই)
২০১৪ সালে, ড. কাদরি আইডিএসএইচআই প্রতিষ্ঠা করেন, যা একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বায়োমেডিক্যাল গবেষণা, প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষা নিয়ে কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটি উন্নত বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং দেশের আগামী প্রজন্মের বিজ্ঞানীদের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করে।
পুরস্কার ও স্বীকৃতি
ড. ফিরদৌসি কাদরির এই অসামান্য অর্জনগুলি তাঁকে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি এনে দিয়েছে। ২০২১ সালে, সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক ম্যাগাজিন “এশিয়ান সায়েন্টিস্ট” তাঁকে এশিয়ার সেরা ১০০ জন বিজ্ঞানীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।
আমাদের গর্ব
ড. ফিরদৌসি কাদরির জীবন ও কর্ম বাংলাদেশের বিজ্ঞানী এবং গবেষকদের জন্য এক উজ্জ্বল উদাহরণ। তাঁর গবেষণা ও উদ্ভাবন শুধু বাংলাদেশের নয়, সমগ্র বিশ্বে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাঁর অর্জনগুলি আমাদেরকে গর্বিত করে এবং আগামী দিনের বিজ্ঞানীদেরকে অনুপ্রেরণা যোগায়। বিজ্ঞানী ডট অর্গ তার গবেষণা এবং সামাজিক কাজের অবদানের জন্য গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছে।
তথ্যসূত্র :
https://ideshi.org/2021/10/dr-firdausi-qadri-wins-ramon-magsaysay-award-2021/
Leave a comment