বাংলাদেশের তরুণ বিজ্ঞানপ্রেমী, গবেষণায় আগ্রহী শিক্ষার্থী এবং উচ্চশিক্ষায় আগ্রহীদের জন্য biggani.org আয়োজন করতে যাচ্ছে এক বিশেষ অনলাইন সাক্ষাৎকার ও সেমিনার, যেখানে অতিথি হিসেবে থাকছেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সৌর প্রযুক্তি গবেষকদের একজন — সহযোগী অধ্যাপক ড. শাহিদুজ্জামান সোহেল, কানাজাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান। আধুনিক সৌরশক্তি, ন্যানোম্যাটেরিয়াল এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তি নিয়ে তাঁর অসাধারণ গবেষণা আজ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশেষভাবে স্বীকৃত।
বিজ্ঞানের পথে এক অনুপ্রেরণার গল্প
১৯৮৪ সালে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশের এই সন্তান ২০১০ সালে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি দেন জাপানে। দীর্ঘ সাধনা, গবেষণায় নিবেদন এবং কঠোর পরিশ্রম তাঁকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গবেষকদের কাতারে পৌঁছে দিয়েছে। তিনি ২০১৩ সালে JAIST থেকে মাস্টার্স এবং ২০১৬ সালে Kanazawa University থেকে MEXT স্কলারশিপে পিএইচডি সম্পন্ন করেন—যেখানে তাঁর বিশেষায়ন ছিল অত্যাধুনিক Perovskite Solar Cell (PSC) প্রযুক্তি। এটি এমন এক আধুনিক সৌর প্রযুক্তি যেখানে ‘পেরোভস্কাইট’ নামে পরিচিত একটি বিশেষ স্ফটিক কাঠামো সূর্যের আলোকে অত্যন্ত দক্ষভাবে বিদ্যুতে রূপান্তর করে। প্রচলিত সোলার প্যানেলের তুলনায় PSC কম খরচে, হালকা ওজনের এবং ভবিষ্যতে সৌরশক্তিকে আরও সস্তা ও সহজলভ্য করার সম্ভাবনা রাখে।

গবেষণায় অসামান্য দক্ষতার কারণে তিনি দ্রুতই আন্তর্জাতিক গবেষণা-সমাজের নজরে আসেন। কানাজাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্টডক শেষ করার পর তিনি ২০১৮ সালে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং ২০২৫ সালের ১ মে টেনিউরড অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর পদে উন্নীত হন—যা একজন গবেষকের ক্যারিয়ারের বড় মাইলফলক। তাঁর গবেষণাকর্মের জন্য তিনি ২০২৩ সালে Kanazawa University–এর Best Young Researcher Encouragement Award লাভ করেন।
গবেষণায় বিশ্বস্বীকৃতি: বাংলাদেশের জন্য এক গৌরব
ড. সোহেলের গবেষণা আন্তর্জাতিকভাবে এতটাই প্রভাবশালী যে Stanford University এবং Elsevier তাঁকে টানা দুই বছর (২০২৪ ও ২০২৫) বিশ্বের Top 2% Scientist তালিকায় স্থান দিয়েছে। সৌর প্রযুক্তি গবেষণায় এমন স্বীকৃতি অত্যন্ত সম্মানজনক, এবং বাংলাদেশের জন্য বিশেষ গৌরবের।
তাঁর গবেষণায় রয়েছে—
- ১২০টির বেশি আন্তর্জাতিক জার্নাল পেপার (মোট ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর ৬৫০+)
- ৩,০০০+ উদ্ধৃতি,
- H-index: 32,
- ১৫+ পেটেন্ট,
- ৫০+ কী-নোট লেকচার,
- ৬০+ কনফারেন্স প্রেজেন্টেশন।
বিশেষ করে ionic liquid-aided perovskite technology, roll-to-roll scalable solar modules, এবং Building Integrated Photovoltaics (BIPV)—এই অত্যাধুনিক উদ্ভাবনগুলো তাঁর উল্লেখযোগ্য গবেষণা অবদান। এ প্রযুক্তি ভবিষ্যতের সৌরশিল্পের চেহারা পাল্টে দিতে পারে এবং পৃথিবীর কার্বন-নির্ভরতা কমাতে অসাধারণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এই ইভেন্ট কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বাংলাদেশের তরুণরা আজ গবেষণায় এগিয়ে যেতে চায়। কিন্তু কোথা থেকে শুরু করতে হবে, কী যোগ্যতা প্রয়োজন, কোন দেশে কী ধরনের সুযোগ আছে — এ প্রশ্নের উত্তর সহজে পাওয়া যায় না। এই ইভেন্ট সেই উত্তর হাতে তুলে দেবে।
এই সেশনে শিক্ষার্থীরা জানতে পারবে—
১. উচ্চশিক্ষা অর্জনের বাস্তব পথনির্দেশ
জাপান, ইউরোপ, কানাডা বা অন্যান্য দেশে গবেষণার সুযোগ কীভাবে তৈরি হয়, কোন প্রস্তুতি প্রয়োজন, কোন ক্ষেত্রগুলোতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বেশি সম্ভাবনা—এসব নিয়ে ড. সোহেলের বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে।
২. গবেষক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার অনুপ্রেরণা
গরীব পরিবারের সন্তান থেকে শুরু করে কঠোর পরিশ্রমে বিশ্বের টপ–২% বিজ্ঞানীদের তালিকায় উঠে আসার তাঁর গল্প শিক্ষার্থীদের জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণা হবে।
৩. নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভবিষ্যৎ বোঝা
Future Energy, Green Technology, Climate Solutions—এসব বিষয়ে বৈজ্ঞানিক ও বাস্তব ধারণা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গবেষণা-চিন্তায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
৪. আন্তর্জাতিক গবেষণা নেটওয়ার্ক সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা
কানাডা, জাপান, জার্মানি, মালয়েশিয়া, হংকং, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বহু প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের সাথে তাঁর যৌথ কাজ ভবিষ্যৎ সহযোগিতার পথও দেখাবে।
এই ইভেন্টে যোগ দিলে শিক্ষার্থীরা কী লাভ করবে?
- উচ্চশিক্ষা আবেদন প্রস্তুতির স্পষ্ট রোডম্যাপ
- গবেষণায় নিজের আগ্রহ কোথায় তা খুঁজে বের করার কৌশল
- আন্তর্জাতিক গবেষকদের সাথে যোগাযোগের উপায়
- নবায়নযোগ্য শক্তির ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি সম্পর্কে গভীর ধারণা
- মোটিভেশন—“আমিও পারব” এই আত্মবিশ্বাস
এই ইভেন্ট এমন একটি সেতুবন্ধন, যা বাংলাদেশি তরুণদের গবেষণা-স্বপ্নকে আন্তর্জাতিক মানের সাথে যুক্ত করবে।
রেজিস্ট্রেশন লিংক
📌 রেজিস্ট্রেশন লিংক : https://forms.gle/CtZfLDDr5tGcKRCn6
ইভেন্টের সময়: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, বিকেল ৬ টা (বাংলাদেশ সময়)

Leave a comment