ড. মশিউর রহমান
“যদি ভুল ট্রেনে ওঠো, তাহলে পরবর্তী স্টেশনে নেমে যাও। যত বেশি সময় যাবে, ফিরে আসার খরচ ততই বেশি হবে।”
– জাপানি প্রবাদ
অসংখ্য শিক্ষার্থী তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে না। ফলে তারা দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ে এবং সময়ের সাথে সাথে ভুল পথে অনেক দূর এগিয়ে যায়। কিন্তু একটি জাপানি প্রবাদ আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়—যদি ভুল পথে চলতে শুরু করো, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব সেখান থেকে ফিরে আসাই শ্রেয়। অন্যথায়, সঠিক গন্তব্যে পৌঁছানো কঠিন হয়ে যাবে।
লক্ষ্য নির্ধারণ না করলে কী হয়?
অনেক শিক্ষার্থী মনে করে, “বাড়তি চিন্তা না করে কেবল ভালো রেজাল্ট করলেই হবে। পরে দেখা যাবে কী করা যায়।” কিন্তু বাস্তবে এই অনিশ্চয়তা তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে দুর্বল করে দেয়।
- অনেকে স্নাতক শেষে বুঝতে পারে যে তারা যে বিষয়ে পড়েছে, সেটি তাদের আগ্রহের জায়গা নয়।
- অনেকের ক্যারিয়ার শুরু হয় দিকনির্দেশনা ছাড়া, ফলে তারা নিজেদের সর্বোচ্চ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারে না।
- গবেষণা, চাকরি বা উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও সঠিক প্রস্তুতি না থাকলে তা অধরা থেকে যায়।
বাংলাদেশের বাস্তব চিত্র
দেশের প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে ভালো রেজাল্টের পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট দক্ষতা, আগ্রহ ও লক্ষ্য থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, কেউ একজন শুধু সিএসই (কম্পিউটার সায়েন্স) পড়েই ক্ষান্ত দিয়েছেন, কিন্তু প্রোগ্রামিংয়ের গভীরতা বোঝার বা বিভিন্ন প্র্যাকটিক্যাল প্রজেক্টে কাজ করার সময় পাননি। স্নাতক শেষে চাকরি খোঁজার সময় বুঝতে পারলেন, তার আসল আগ্রহ ছিল গবেষণায় বা ডেটা অ্যানালিটিক্সে। তখন এই পথচলা নতুন করে শুরু করতে আরও পরিশ্রম ও সময়ের প্রয়োজন হয়।
লক্ষ্য নির্ধারণ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
জাপানি দর্শনের Kaizen (改善) ধারণার মূল কথা হলো, ক্রমাগত উন্নতি করা এবং ভুলগুলো দ্রুত সংশোধন করা। যখন তুমি লক্ষ্য নির্ধারণ করবে, তখন তোমার প্রতিটি পদক্ষেপ হবে পরিকল্পিত, এবং ভবিষ্যতে ভুল পথে গিয়ে সময় নষ্ট করার সম্ভাবনা কমে যাবে।
✅ সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণের ফলে:
- সময় ও শক্তি সঠিক কাজে বিনিয়োগ করা যায়।
- ক্যারিয়ারে আগেভাগে প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়।
- যেকোনো প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকা যায়।
কীভাবে একজন শিক্ষার্থী নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করবে?
✅ ১. নিজের আগ্রহ ও দক্ষতা চিহ্নিত করো: কোন বিষয়গুলোতে তোমার স্বাভাবিক আগ্রহ ও দক্ষতা রয়েছে? কোন কাজগুলো তুমি উপভোগ করো?
✅ ২. দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করো: তুমি পাঁচ বছর বা দশ বছর পর কোথায় থাকতে চাও? গবেষক, উদ্যোক্তা, বা কর্পোরেট জগতে সফল হতে চাইলে এখন থেকেই সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
✅ ৩. ভুল হলে দ্রুত সংশোধন করো: যদি বুঝতে পারো যে তুমি ভুল পথে এগোচ্ছো, তবে যত দ্রুত সম্ভব সেটি সংশোধন করো। দেরি করলে পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
✅ ৪. দক্ষতা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত শেখো: শুধু বই পড়ে নয়, বরং অনলাইন কোর্স, গবেষণা, বা হাতে-কলমে কাজের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করা জরুরি।
✅ ৫. সফল ব্যক্তিদের থেকে শেখো: অভিজ্ঞদের পরামর্শ নাও, ভালো মেন্টর খুঁজে নাও, এবং তাদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করো।
জাতিগতভাবে শিক্ষাগ্রহণ: জাতির ভবিষ্যৎ গড়ে ওঠে শিক্ষার্থীদের হাত ধরে
একটি জাতির উন্নতি নির্ভর করে তার তরুণ প্রজন্মের ওপর। যদি শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে প্রস্তুতি নেয় এবং ভুলগুলো দ্রুত সংশোধন করতে শেখে, তাহলে একটি দেশও এগিয়ে যেতে পারে।
আমাদের উচিত নিজের এবং দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে দায়িত্বশীল হওয়া। ভুল সিদ্ধান্ত নিলে সেটিকে যত দ্রুত সম্ভব সংশোধন করা, যাতে তা আমাদের ক্যারিয়ার এবং জাতির অগ্রগতির পথে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়।
সাফল্যের সঠিক পথ: এখনই শুরু করো
তুমি কি জানো, সফল ব্যক্তিরা কীভাবে তাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করেন? তারা নিজের আগ্রহ ও লক্ষ্যকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করে, প্রতিনিয়ত নিজেকে উন্নত করতে সচেষ্ট থাকে, এবং ভুল করলে দ্রুত তা সংশোধন করে।
সুতরাং, যদি তুমি এখনো লক্ষ্য নির্ধারণ করোনি, তাহলে আজই সেটি করো। কারণ ভুল ট্রেনে উঠে সময় নষ্ট করলে ফিরে আসা কঠিন হয়ে যাবে!
সারাংশ
- লক্ষ্যহীনভাবে চললে সময়, শ্রম ও সুযোগ অপচয় হয়।
- নিজের আগ্রহ, দক্ষতা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে লক্ষ্য নির্ধারণ জরুরি।
- ভুল করলে যত দ্রুত সম্ভব তা সংশোধন করতে হবে।
- ধারাবাহিক উন্নতি (Kaizen) বজায় রেখে সামনে এগিয়ে চলাই সাফল্যের মূলমন্ত্র।
📌 তোমার ভবিষ্যৎ নির্ধারণের দায়িত্ব তোমার হাতেই! আজ থেকেই একটি লক্ষ্য স্থির করো এবং ধাপে ধাপে তা অর্জনের পথে এগিয়ে যাও।
তোমার ভবিষ্যৎ তৈরি হচ্ছে এখনই! তুমি কীভাবে লক্ষ্য নির্ধারণ করছো? কমেন্টে জানাও!
Leave a comment