অতিথি লেখক- আজিজুল হক
সহকারী অধ্যাপক, ইয়েংনাম বিশ্ববিদ্যালয়।
গবেষণা ও একাডেমিক প্রকাশনার জগতে সঠিক জার্নাল বেছে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান যুগে অনলাইন ও প্রিন্ট উভয় মাধ্যমেই অসংখ্য জার্নাল পাওয়া যায়। এর মধ্যে কিছু জার্নাল অত্যন্ত মানসম্পন্ন হলেও অনেক নন-ইন্ডেক্সড এবং প্রিডেটরি জার্নালও রয়েছে যেগুলোতে প্রকাশিত গবেষণার কোনো বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। তাই গবেষণাকে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে চাইলে খুব সতর্কতার সঙ্গে জার্নাল নির্বাচন করতে হবে।
আজকাল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগ বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রকাশিত বেশিরভাগ জার্নালের মান প্রশ্নবিদ্ধ। বাংলাদেশ, ভারতসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশে এমন জার্নালের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এসব জার্নালে গবেষণা প্রকাশ করলে সেটি একাডেমিক প্রোফাইলের জন্য বরং ক্ষতিকর। তাই কোনো জার্নালে আর্টিকেল সাবমিট করার আগে ওয়েব অব সায়েন্স বা স্কোপাসে জার্নালটি ইনডেক্সড কিনা তা যাচাই করা খুব জরুরি। কারণ গবেষণায় এখন সবাই গুণগত মান চায়, পরিমাণ নয়।
Web Of Science Journal
Web of Science (WoS) হলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি রিসার্চ ইনডেক্সিং প্ল্যাটফর্ম। এখানে ইনডেক্সড প্রতিটি জার্নাল বৈজ্ঞানিক মান, কঠোর পিয়ার রিভিউ প্রক্রিয়া, প্রকাশনার স্বচ্ছতা, গবেষণার নৈতিকতা এবং আন্তর্জাতিক পাঠক ও গবেষক সমাজের উপযোগিতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়। উন্নত বিশ্বের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও অর্থায়ন সংস্থা গবেষকের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে WoS ইনডেক্সড জার্নাল-এ প্রকাশিত গবেষণাকে বিবেচনা করে। গবেষণা গ্রান্ট, পোস্টডক, স্কলারশিপ, একাডেমিক নিয়োগ কিংবা প্রমোশনের ক্ষেত্রেও WoS ইনডেক্সড জার্নালে প্রকাশনা থাকা বাধ্যতামূলক করে থাকে। তাই গবেষণাপত্র প্রকাশের আগে অবশ্যই যাচাই করুন আপনি যে জার্নালে সাবমিট করতে যাচ্ছেন তা Web of Science-এ অন্তর্ভুক্ত কি না।
WoS ইনডেক্সড জার্নাল যাচাই করতে ভিজিট করুন: https: //mjl. clarivate. com/home
Scopus Journal
Scopus হলো Elsevier কর্তৃক পরিচালিত একটি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একাডেমিক রিসার্চ ডাটাবেস। এই প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত প্রতিটি জার্নালকে বৈজ্ঞানিক মান, শক্তিশালী পিয়ার রিভিউ, সম্পাদনা নীতিমালা এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার ভিত্তিতে নির্বাচন করা হয়। Scopus-এ ইনডেক্সড জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাগুলো বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত এবং একাডেমিক ক্যারিয়ার, গবেষণা অনুদান, স্কলারশিপ এবং উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আপনি যে জার্নালে গবেষণাপত্র পাঠাতে চাইছেন সেটি Scopus-এ তালিকাভুক্ত কিনা তা যাচাই করা খুব জরুরি। কারণ অনেক ভুয়া বা প্রিডেটরি জার্নাল নিজেদের স্কোপাস ইন্ডেক্সড দাবি করে থাকে।
স্কোপাস ইন্ডেক্সড জার্নাল যাচাই করতে ভিজিট করুন: https: //www. scopus. com/sources. uri
Non-Indexed Journal
নন-ইন্ডেক্সড জার্নালগুলো সাধারণত Web of Science বা Scopus-এর মতো আন্তর্জাতিকভাবে কোনো স্বীকৃত ডাটাবেসে তালিকাভুক্ত থাকে না। ফলে এসব জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রোফাইলে যুক্ত থাকলেও উন্নত বিশ্বে তার কোনো মূল্যায়ন নেই। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এসব জার্নালে প্রকাশিত আর্টিকেলের সাইটেশন সংখ্যা বেশি। তবে বাস্তবিক অর্থে সেগুলোর বেশিরভাগই self-citation বা group citation যা গবেষণার প্রকৃত মান নির্দেশ করে না। তাই গবেষণার ভবিষ্যৎ এবং প্রোফাইলের গুণগত মান অক্ষুণ্ণ রাখতে হলে নন-ইন্ডেক্সড জার্নালে আর্টিকেল প্রকাশ থেকে বিরত থাকাই সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত।
Predatory Journal
প্রিডেটরি জার্নাল অর্থের বিনিময়ে খুব সহজে ও দ্রুত গবেষণা প্রকাশ করে। সাধারণত এই জার্নালগুলোতে কোনো সুনির্দিষ্ট পিয়ার-রিভিউ প্রক্রিয়া থাকে না বা থাকলেও তা কেবল লোক দেখানো হয়। অনেক ক্ষেত্রে তারা ভুয়া ISSN, মিথ্যা ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর কিংবা কোনো নামী জার্নালের অনুরূপ নাম ব্যবহার করে গবেষকদের বিভ্রান্ত করে। প্রিডেটরি জার্নালে গবেষণা প্রকাশ করলে তা ক্যারিয়ারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
প্রিডেটরি জার্নাল শনাক্ত করতে Beall’s List ব্যবহার করুন: https: //beallslist. net
Leave a comment