অন্যান্য

অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে সন্তান সুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখর: ভারতের গ্রাম থেকে উঠে এসে নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী!

Share
Share

লেখক: প্রফেসর ড মোহাঃ ইয়ামিন হোসেন
ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

সুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখর: বড় স্বপ্ন ও শিক্ষার শক্তি?

সুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখর, যিনি পরবর্তীতে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন, ভারতের এক সাধারণ গ্রামীণ পরিবার থেকে উঠে এসে বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত বিজ্ঞানী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাঁর জীবন এবং সংগ্রামের গল্প বাংলাদেশের গ্রামীণ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এক বিশাল অনুপ্রেরণা হতে পারে, যা তাদের বড় স্বপ্ন দেখার এবং নিজের লক্ষ্যের প্রতি অটল থাকার অনুপ্রেরণা যোগাবে।

প্রাথমিক জীবন ও শৈশব:

সুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখরের জন্ম ১৯১০ সালের ১৯শে অক্টোবর, ভারতের লাহোর শহরে (তখনকার ব্রিটিশ ভারত)। যদিও তাঁর পরিবার শিক্ষানুরাগী ছিল, তাঁরা অত্যন্ত সাধারণ এবং গ্রামীণ পরিবেশে বড় হয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই চন্দ্রশেখর পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন এবং বিজ্ঞানের প্রতি তাঁর গভীর আকর্ষণ ছিল। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা গ্রামের একটি স্কুলেই সম্পন্ন হয়। কিন্তু গ্রামের সীমাবদ্ধতা তাঁকে দমাতে পারেনি, বরং তাঁর মধ্যে আরও বেশি জানার আগ্রহ সৃষ্টি করেছিল।

উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তি এবং বিদেশে যাত্রা:

চন্দ্রশেখরের মেধা তাঁকে আরও বড় করে চিন্তা করতে শিখিয়েছিল। ১৯৩০ সালে, মাত্র ১৯ বছর বয়সে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য **যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে** ফুলব্রাইট বৃত্তি লাভ করেন। কেমব্রিজে গিয়ে তিনি তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে কাজ শুরু করেন এবং সেই সময় থেকেই তাঁর গবেষণার যাত্রা শুরু হয়। এখানে তাঁর তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে তিনি এক নতুন ধারণা প্রতিষ্ঠা করেন, যা পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নেয়।

ব্ল্যাক হোল এবং চন্দ্রশেখর সীমা:

চন্দ্রশেখর তাঁর গবেষণায় প্রথম দেখান যে একটি বড় নক্ষত্রের মৃত্যু হলে তার ভর যদি নির্দিষ্ট মাত্রা অতিক্রম করে, তাহলে তা এক পর্যায়ে ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবে। এই নির্দিষ্ট মাত্রা বা সীমাকে বলা হয় “চন্দ্রশেখর সীমা” (Chandrasekhar Limit)। এই তত্ত্ব পরবর্তীতে জ্যোতির্বিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞানে এক বিপ্লব সৃষ্টি করে। প্রথমে তাঁর তত্ত্বটি নিয়ে বিজ্ঞানী সমাজে অনেক বিতর্ক সৃষ্টি হয়, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা প্রমাণিত হয় এবং আজকের আধুনিক বিজ্ঞান তাঁর এই তত্ত্বের ওপর নির্ভর করে চলেছে।

নোবেল পুরস্কার অর্জন:

চন্দ্রশেখরের এই অসাধারণ আবিষ্কারের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮৩ সালে তাঁকে পদার্থবিজ্ঞানে **নোবেল পুরস্কার** প্রদান করা হয়। তিনি তাঁর দীর্ঘ গবেষণা এবং তত্ত্বের মাধ্যমে মহাকাশ এবং নক্ষত্রের জীবন সম্পর্কে আমাদের ধারণা বদলে দিয়েছেন। তাঁর কাজ আজও বিশ্বের বিজ্ঞানী মহলে অত্যন্ত সমাদৃত এবং প্রশংসিত।

বিশ্বব্যাপী অবদান ও সম্মাননা:

নোবেল পুরস্কার অর্জনের পরেও, চন্দ্রশেখর বিজ্ঞান গবেষণায় নিবিড়ভাবে কাজ করতে থাকেন। তিনি আমেরিকার **শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে** অধ্যাপনা শুরু করেন এবং বিশ্বব্যাপী জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তাঁর কাজ এবং গবেষণা শুধু পদার্থবিজ্ঞান নয়, বরং সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের জন্য এক মাইলফলক হিসেবে কাজ করে।

তরুণ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা:

সুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখরের জীবন বাংলাদেশের গ্রামীণ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এক বিশাল অনুপ্রেরণা। তাঁর জীবন থেকে শিখে নেয়া যায় যে, দারিদ্র্য এবং গ্রামের সীমাবদ্ধতা কখনও সাফল্যের পথে বাধা হতে পারে না। তিনি দেখিয়েছেন যে যদি শিক্ষার প্রতি গভীর আগ্রহ থাকে এবং কঠোর পরিশ্রম করা হয়, তবে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে উঠে এসে একজন ব্যক্তি নোবেল পুরস্কারের মতো সর্বোচ্চ সম্মান অর্জন করতে পারেন। চন্দ্রশেখরের গল্প তরুণদের শেখায় যে বড় স্বপ্ন দেখা এবং লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

সুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখরের জীবন শুধুমাত্র ভারতের নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি অনুপ্রেরণামূলক দৃষ্টান্ত। গ্রাম থেকে উঠে আসা একজন দরিদ্র ছাত্র থেকে নোবেল বিজয়ী হওয়ার এই যাত্রা বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের মনে বড় স্বপ্ন দেখার এবং নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আশার আলো দেখাবে। আপনিও পারবপন, চেষ্টা করুন, সফলতা দেওয়ার মালিক তো স্রষ্টা! চেষ্টা করতে তো দোষের না!

প্রফেসর ড. মোহাঃ ইয়ামিন হোসেনকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন!”সুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখরের জীবনের অনুপ্রেরণামূলক গল্পটি আমাদের সামনে তুলে ধরার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনার এই লেখাটি শিক্ষার গুরুত্ব এবং অধ্যবসায়ের শক্তিকে অসাধারণভাবে প্রকাশ করেছে, যা তরুণ প্রজন্মকে বড় স্বপ্ন দেখতে এবং লক্ষ্যে পৌঁছানোর অনুপ্রেরণা দেবে।

আপনার এই প্রচেষ্টা এবং নিবেদন সত্যিই প্রশংসনীয়। একটি অর্থবহ ও অনুপ্রেরণামূলক নিবন্ধ রচনার জন্য আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই!

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact:

biggani.org@জিমেইল.com

সম্পাদক: ড. মশিউর রহমান

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

Copyright 2024 biggani.org