বাড়ির পোষা বিড়াল নাকি প্রভুর বংশবৃদ্ধি চায় না কারণ সে চায় না যে তার জন্য বরাদ্দ খাবারে কেউ ভাগ বসাক। বিড়ালের এইধরনের মনস্তত্ত্ব কিছু মানুষের বিশ্বাস যার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। তবে বিজ্ঞানসম্মতভাবে একথা সত্য যে গর্ভবতী মহিলাদের বিড়ালের পরিচর্যা এড়িয়ে চলা উচিত।
আসলে বিড়াল ইঁদুর বা রেডেন্ট জাতীয় নানা প্রাণী শিকার করে খায় বলে অনেক সময় নিজের কোষের মধ্যে টক্সোপ্লাজমা গন্ডিআই নামক এককোষী একরকম পরজীবী বা প্যারাসাইট-কে স্থান দিয়ে ফেলে যা উষ্ণ রক্তের যেকোন প্রাণী-দেহে “টক্সোপ্লাজমোসিস্” নামক এক সংক্রামক রোগের কারণ।
এই পরজীবীকে বিড়ালের দেহে পাওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশী কারণ প্রায় সকল উষ্ণ রক্তের প্রাণী-দেহে এরা বেঁচে থাকতে পারলেও একমাত্র বিড়ালের দেহেই এরা বংশবিস্তারে সক্ষম।
বিড়ালের দেহে নিজেদের প্রবেশ নিশ্চিত করার জন্য টক্সোপ্লাজমা গন্ডিআই যেন এক গভীর ষড়যন্ত্র রচনা করে। সে ইঁদুর বা ইদুঁরের মত বিভিন্ন রেডেন্ট জাতীয় প্রাণীর মস্তিষ্কে আশ্রয় নিয়ে তাদের মস্তিষ্কের অ্যামিগ্ডালা অংশের মধ্যভাগে উপস্থিত স্নায়ুকোষগুলির ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড বা ডি.এন.এ.-এর বিশেষ বিশেষ জিনে যে মিথাইলেশন প্রক্রিয়া (এই প্রক্রিয়ায় ডি.এন.এ. –তে উপস্থিত নির্দিষ্ট জিন-এ মিথাইল গ্রুপ যুক্ত হয়) চলে তাকে কমিয়ে দেয়। ফলস্বরূপ রেডেন্ট জাতীয় প্রাণীদের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস-র স্নায়ুকোষে তৈরি হওয়া ভাসোপ্রেসিন হরমোন স্বাভাবিক হারে আর্জিনাইন ভাসোপ্রেসিন-এ রূপান্তরিত হতে পারে না। মস্তিষ্কে ভাসোপ্রেসিন ও আর্জিনাইন ভাসোপ্রেসিন-এর ভারসাম্যের এই ব্যাঘাত রেডেন্ট জাতীয় প্রাণীদের মধ্যে তাদের অন্যতম প্রধান খাদক বিড়ালকে এড়িয়ে চলার প্রবণতা অনেক কমিয়ে দেয় আর বিড়ালেরা পেয়ে যায় সুবর্ণ সুযোগ। ফলে টক্সোপ্লাজমা গন্ডিআই-ও পেয়ে যায় বিড়ালের দেহে প্রবেশ করার টিকিট। এই টক্সোপ্লাজমা গন্ডিআই সংক্রমিত বিড়ালকে স্পর্শ করা বিপজ্জনক না হলেও সংক্রমিত বিড়ালের মল থেকে খুব সহজেই মানুষ এই পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।
কোন গর্ভবতী মহিলা সংক্রমিত হলে গর্ভে থাকা শিশুর চোখ বা মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জন্মানো শিশুর মধ্যে কোন সমস্যা পাওয়া না গেলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে সে অন্ধত্ব বা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যার শিকার হয়। সেইজন্য গর্ভবতী মহিলাদের বিড়াল বা বিড়ালের পরিচর্যা এড়িয়ে চলাই ভালো। তবে বিড়ালটিকে যদি সবসময় বাড়ির মধ্যেই রাখা হয় এবং তাকে শুধু ক্যানের শুকনো খাবারই খাওয়ানো হয়, সেক্ষেত্রে বিপদের আশঙ্কা কমে যায়।
Leave a comment