যে পাসওয়ার্ড আপনাকে প্রায়শই চট্-জলদি ব্যবহার করতে হয়, হঠাৎ একদিন সেই পাসওয়ার্ড কম্পিউটার-কীবোর্ডে টাইপ্ না করে একই গতিতে পেন বা পেনসিল ব্যবহার করে লেখার চেষ্টা করুন। লক্ষ্য করবেন যে আপনি যথেষ্ট স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন না। এক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড-টি ভুল লিখে ফেলাও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু কেন এমন ঘটে ? মস্তিষ্ক কি আপনাকে পাসওয়ার্ড-টা কোথাও লিখতে বারণ করছে ? বিষয়টাকে মস্তিষ্কের নিষেধ হিসাবে দেখলে আপনার ভালোই হবে কারণ পাসওয়ার্ড ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এক ব্যক্তিগত তথ্য যা শুধু মস্তিষ্কে রাখাই ভালো।
কিছু কিছু তথ্য আছে তা যেন স্মরণ করতে হয় না বা স্মরণে রাখতে হয় না, স্মরণে রয়ে যায়। এদেরকে মস্তিষ্কের “প্রোসিডিউরাল লং টার্ম মেমোরি” বা “পদ্ধতিগত দীর্ঘ মেয়াদী স্মৃতি” বলে। আপনার মস্তিষ্কের যে অঞ্চলগুলি পদ্ধতিগত দীর্ঘ মেয়াদী স্মৃতি ধরে রাখতে সাহায্য করে তাদের মধ্যে “মোটর কর্টেক্স” অন্যতম। এই মোটর কর্টেক্স প্রধানত তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত – “প্রাইমারী মোটর কর্টেক্স”, “প্রিমোটর কর্টেক্স”, এবং “সাপ্লিমেন্টারি মোটর এরিয়া”(এস্.এম্.এ.)।
প্রত্যেকবার যখনই আপনি কম্পিউটার-র কীবোর্ডে পাসওয়ার্ড টাইপ্ করার সিদ্ধান্ত নেন; কীবোর্ড-র কী-গুলি দেখা থেকে শুরু করে তাদের মধ্য থেকে প্রয়োজনীয় কী-গুলিকে খুঁজে নিয়ে সেগুলিতে আঙুলের সাহায্যে একে একে চাপ দিয়ে সম্পূর্ণ পাসওয়ার্ড-টি টাইপ্ করার যে গোটা পদ্ধতি তার ধাপগুলোর পরিকল্পনা করে আপনার মস্তিষ্কের সাপ্লিমেন্টারি মোটর এরিয়া অংশটি। পরিকল্পনা করা শেষ হলে সেই পরিকল্পনা সে জানায় প্রিমোটর কর্টেক্স-র কিছু স্নায়ুকোষকে। প্রিমোটর কর্টেক্স-র এই স্নায়ুকোষগুলি সেই পরিকল্পনা অনুসারে প্রাইমারী মোটর কর্টেক্স-কে পরিচালনা করে। প্রতিবার পাসওয়ার্ড টাইপ করার সময়, মস্তিষ্কের প্রাইমারী মোটর কর্টেক্স প্রিমোটর কর্টেক্স-র সেই নির্দিষ্ট কিছু স্নায়ুকোষের কাছ থেকে একটি নির্দিষ্ট ক্রমে নির্দেশ পায় এবং সেই নির্দেশোনুসারেই সে আপনার হাত ও হাতের আঙুলগুলিকে পরিচালনা করে। তাই পাসওয়ার্ড-র মত তথ্য অতি সহজেই দীর্ঘদিন স্মরণে রাখার জন্য ও চট্-জলদি ব্যবহার করার জন্য,পাসওয়ার্ড টাইপ্ করার সময় প্রিমোটর কর্টেক্স-র ঠিক যে যে স্নায়ুকোষ থেকে যে ক্রমে নির্দেশ আসে তাকে প্রাইমারী মোটর কর্টেক্স মাছি মারার কেরানীর মত ভালোভাবে চিনে রাখতে চেষ্টা করে ! এখন আঙুল ব্যবহার করে পাসওয়ার্ড টাইপ্ করার বদলে হঠাৎ আঙুলে পেন বা পেনসিল ধরে তা লিখতে যাওয়ার অর্থই হলো, মস্তিষ্কের সাপ্লিমেন্টারি মোটর এরিয়া অংশটিতে তৈরি হওয়া পরিকল্পনাটি বদলে গেছে। ফলে প্রিমোটর কর্টেক্স-র কিছু অচেনা স্নায়ুকোষ থেকে অচেনা ক্রমে নির্দেশ আসতে শুরু করে বলে আপনার মস্তিষ্কের প্রাইমারী মোটর কর্টেক্স হতভম্ব হয়ে যায় ! ঠিক এই কারণেই আপনার স্বাচ্ছন্দ্যের অভাব ঘটে।
হুম আপনার লিখাগুলো ভালোই লাগছে। আপনার জন্য দোয়া রইল
ধন্যবাদ