অন্যান্য

বিষন্নতা আর মন ভাল করার চাবিকাঠি এবার হাতের মুঠোয়!

Share
Share

– মেহনাজ আলতাফ, সিঙ্গাপুর

‘‘বাগানে রোজ রোজ গাছগুলোর সাথে সময় কাটাই জন্যই দুই -একটা বই যা লিখেছি, তা লিখতে পেরেছি”!

 এই আশ্চর্যজনক উত্তরটি নাথ দিয়েছিলেন যখন ইন্টারভিউয়ার কৌতূহলি হয়েই জিজ্ঞেস করেছিলেন, “নাথ, আপনি বাগানে সময় না দিয়ে যদি সময়গুলো শুধু  লেখালেখির পেছনেই দিতেন, তাহলে নাজানি আমরা  আরও কত কত  ভালো বই পেতাম”!

থিক নাথ হান (Thich Nhat Hanh) একজন নোবেল বিজয়ী বুদ্ধিস্ট মঙ্ক এবং লেখক।নাথ এর এই উত্তর খুব হেঁয়ালির মত শোনালেও  রিসার্চ আর এই হাজার বছরের পুরোনো ফিলোসফি, দুটো আসলে চমকপ্রদভাবে হাত ধরে পাশাপাশি  দাড়ায়।

এদিকে  নাথ এর  হেয়ালিপূর্ণ কথা আমরা ফেলে দিলেও বিজ্ঞানীরা কিন্তু বেশ জোরেসোরে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করেছিলেন। আশি জন পেশেন্ট বেছে  নিলেন  যাদের থাইরয়েড গ্ল্যান্ড কেটে ফেলা হয়েছে। শরীরের একটা গ্ল্যান্ড হারিয়ে স্বভাবতই এই রোগীরা বিশেষ ফুর্তিপূর্ণ মেজাজে ছিলেন না,আর তাছাড়া ব্যথার ব্যাপারটাও ছিল। কিন্তু বিজ্ঞানী  দলটি এদেরই বেছে নিলেন। অপারেশনের পর রোগীদের  মাঝে  সবুজের প্রভাব কি হয় তা দেখতে হবে। 

দেখা গেলো এদের মধ্যে যাদের রুমে ফুল আর গাছ রাখা হয়েছিল তারা দ্রুত রিকভার করলেন, পেইনকিলার এর প্রয়োজনীয়তাও দেখা গেলো এদের কম। আর ওদিকে অন্য দলটি হাসপাতাল ছাড়লেন দেরিতে, পেইনকিলারও বেশি চাইলেন,এদের মন মেজাজও একটু কম ফুরফুরে থাকলো। খুব স্বাভাবিভাবেই প্রশ্ন জাগে গাছপালা কিভাবে কি করলো? আদৌ করলো কি কিছু?

এর উত্তরে ক্ষনেক পরেই আসছি। আর তার আগে আর একটি ব্যাপার একটু তুলে ধরতে চাইছি। প্রশ্নটি হল: একজন পোস্ট অপারেটিভ রোগী আর একজন ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষ, দুজনের মাঝেই একটি অন্তমিল আছে, মিলটা কি পাঠক ধরতে পেরেছেন?
মিলটা হচ্ছে Suffering বা কষ্টভোগ করা।

অপারেশনের পর একজন ব্যথায় কাতর  রোগীর কাছে ব্যথাটা কেবল সত্য, তখন তার আছে বাকি পৃথিবীর সব  কিছুই বায়বীয়। ঠিক তেমনি বিষন্নতা মাথার ভেতর কেবল নেতিবাচক চিন্তাগুলো অটো রিপ্লে দিয়ে থাকা গানের মতো বাজায়, তাই সেও তখন বাইরের পৃথিবীর সাথে পুরোপুরি যোগাযোগহীন। 

  ঠিক এই জায়গাতাতেই গার্ডেনিং তার থেরাপিউটিক ইফেক্ট নিয়ে আসে। নেগেটিভ হয়ে থাকা  ব্রেইনকে যদি বাগানে  কাজে ব্যস্ত করা যায়, সে নিজের অজান্তেই, বাগানের ফুল, লতাপাতা, পাখি , রং, গন্ধ, শব্দ এসবের জগতে ঢুকে যায়।  এর ফলে নেগেটিভ চিন্তাগুলোর বিরামহীন চরকা থামে আর আমরা  রিলাক্স হই, স্ট্রেস কমে, ফলে ডিপ্রেশন থেকে আমরা বেরিয়ে আসি ।
এর পেছনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আমাদের নিয়ে যায় সুদূর অতীতে। আমাদের পূর্বপুরুষরা অনেক অনেক আগে শিকারের উপর নির্ভরশীল ছিলেন। জঙ্গলে রংবেরঙের ফলমূল খুঁজে পেলে তাদের মুখে হাসি ফুটে উঠতো । সেই স্মৃতি  কিন্তু আজও আমরা বয়ে বেড়াই আমাদের ডিএনএ তে। তাই বাগানের নানান রঙের ফলমূল, ফুল, পাখি আমাদের ডিএনের ভেতর জমে থাকা সেই স্মৃতিকে জাগিয়ে তুলে। আমাদের ভাল লাগার অনুভূতি ট্রিগার হয় আর রিলিজ হয় ডোপামিন। ডোপামিন হল এক ধরণের  হরমোন যে মন কে উৎফুল্ল করে তোলে।

আর একটা ব্যাপার হলো, বাগানে আমরা যখন মাটি হাত দিয়ে ধরি তখন আমরা মাইকোব্যাক্টেরিয়াম ভ্যাকি (Mycobacterium vaccae) বলে এক ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শেও আসি।  রিসার্চ বলে, মাটি আর এই ব্যাকটেরিয়া দুটোই সেরোটোনিন বলে এক হরমোনের রিলিজ করে ব্রেইনে।সেরোটোনিন কে বলা হয় হ্যাপি হরমোন। মন মুহূর্তেই ভাল হয়ে যায় সেরোটোনিন চলে এলে। 

অন্যদিকে, বাগান মাইন্ডফুলনেস প্র্যাক্টিস করার সব থেকে ভাল জায়গা। ধীরেধীরে প্রতিটি ডিটেলস খেয়াল করা শুরু করলে মুহূর্তেই দুশ্চিন্তার জগৎ লাপাত্তা হয়ে যায়। 

আর এসব কারণেই, সেই হাসপাতালে, গাছপালা আর ফুলের মাঝে থাকা রোগীরা দ্রুত ভাল হয়ে গিয়েছিলো। কারণ মন যখন ভাল থাকে তখন শরীরে স্ট্রেস হরমোন কমে যায়। আর এতে অসুখ-বিসুখ সব দ্রুত পালায়।

তাই মন ভাল রাখতে, শরীরকে ফিট রাখতে আর ডিপ্রেশনকে কাবুতে আনতে গার্ডেনিং হতে পারে চমৎকার ন্যাচারাল মেডিসিন।

Share
Written by
নিউজডেস্ক -

আমরা বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবরাখবর ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাতকার প্রকাশ করি। আপনারা কোন লেখা প্রকাশিত করতে চাইলে যোগাযোগ করুন: [email protected], [email protected]

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
অন্যান্য

বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থী ও বিজ্ঞানীদের জন্য মোঃ ইয়ামিন হোসেনের বার্তা!

বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থী এবং বিজ্ঞানীদের নিয়ে মোঃ ইয়ামিন হোসেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও...

অন্যান্য

গবেষণার মান পরিমাপের সূচক

H-index আর্টিকেল সংখ্যা এবং তার সাইটেশন সংখ্যা একসাথে মূল্যায়ন করার একটি জনপ্রিয়...

অন্যান্য

দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর সাফল্যের যাত্রা: ড. আজিজুল হক!

বর্তমান সময়ে আমরা সাক্ষাৎকার নিয়েছি লেখক ড. আজিজুল হক এর। তিনি পিএইচডি...

অন্যান্যসাধারণ বিজ্ঞান

দুই শিকারীর দুই পন্থা – গতি ও কৌশল

চিতার শিকার ধরার পদ্ধতি মানবসভ্যতায় প্রচলিত সাবেকি রণনীতির অনুরূপ যেখানে ক্ষমতা-প্রদর্শনকে বিশেষ...

অন্যান্য

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক স্কলারশিপ

লেখক: ড. আজিজুল হক, Assistant professor Yeungnam University বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.