মানুষের প্রাণ, প্রকৃতি, বিজ্ঞানসহ সবকিছুই আলো খোঁজার অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আলো মানেই সূর্য, বাতি বা শিখা নয়। পৃথিবীর বিশাল অন্ধকারের মধ্যে এমন অনেক জীব আছে, যাদের নিজের শরীর থেকেই আলো নির্গত হয়। এ আলো মশালের মতো উষ্ণ নয়, আবার তারার মতো দূরবর্তীও না হলেও এ আলো জীবিত দেহের অন্তঃস্থ রসায়নের নীরব বিস্ময়। এই আলোর নাম bioluminescence।
অন্ধকারময় সমুদ্রের তলদেশে, বনের গাছপালার ছায়ায়, কিংবা আমাদের চোখের অগোচরে থাকা ক্ষুদ্র কোষের ভেতরও এই bioluminescence জীব বিশেষ এই বৈশিষ্ট দেয়।
Bioluminescence হলো জীবদেহে সংঘটিত একধরণের বিশেষ chemical reaction, যা থেকে আলো উৎপন্ন হয় কিন্তু তাপ উৎপন্ন হয় না। তাই এই আলোকে বলা হয় cold light। প্রকৃতিতে অজস্র আলোকঝলমলে ঘটনা আমরা দেখি তবে firefly এর নরম আলো, deep sea fish এর অপূর্ব নীল আভা, dinoflagellate এর তরঙ্গ-চমক সত্যিই অদ্ভুত সুন্দর।
এই আলোক-প্রক্রিয়ায় সাধারণত দুটি প্রধান উপাদান কাজ করে—
১. Luciferin — এটি এক ধরনের light-emitting molecule
২. Luciferase — এটি একটি enzyme, যা luciferin-এর oxidation ঘটায়
ATP-এর (Adenosine Triphosphate) শক্তি ব্যবহার করে luciferin যখন অক্সিডাইজড হয়, তখনই নির্গত হয় photon। এটাই চোখে আলোরূপে ধরা পড়ে।
Bioluminescence এ প্রায় ৯০–১০০% শক্তি আলোতে রূপান্তরিত হয়। অর্থাৎ, তাপ উৎপাদনের হার এতই কম যে এ আলোতে দাহ কিংবা তাপমাত্রা বৃদ্ধি নেই।
Luciferin–Luciferase Reaction
এই reaction এর তিনটি প্রধান ধাপ থাকে—
১. Luciferin first binds with luciferase
২. তারপর oxygen যুক্ত হয়ে একটি excited-state compound তৈরি হয়
৩. এই molecule যখন আবার ground state-এ ফিরে আসে, তখনই উৎপন্ন হয় আমাদের কাঙ্খিত visible light
বিভিন্ন প্রাণী বিভিন্ন ধরনের luciferin ব্যবহার করে যেমন: firefly luciferin, bacterial luciferin, marine luciferin ইত্যাদি। প্রকৃতির এই বৈচিত্র্যগুলোই বায়োলুমিনেসেন্সের সৌন্দর্যকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
অনেক জীবের শরীরে থাকে বিশেষ আলোক-কোষ, যাকে বলা হয় photocytes।
এখানে luciferin ও luciferase-এর বন্ধনে আলো জন্ম নেয়।
Bioluminescence কেবল chemical reaction নয়, এটি টকইসাথে একটি genetic process।
কিছু ব্যাকটেরিয়ায় lux operon নামে একটি gene cluster পাওয়া যায়, যা luciferase-protein এবং আলো উৎপাদনে প্রয়োজনীয় সমস্ত উপকরণ প্রস্তুত করে।
প্রকৃতিতে Bioluminescence
পৃথিবীর deep sea হলো আলোহীন বিশাল অন্ধকার। সেখানেই বসবাস করে সবচেয়ে বেশি bioluminescent প্রাণী। Anglerfish নিজের মাথার সামনে lure ব্যবহার করে শিকার করে। Jellyfish এর নরম শরীর থেকে বের হওয়া নীল আলো পুরো পরিবেশকে স্বর্গীয় সাজে সাজায়। Dinoflagellate এর আলোতে রাতের সাগরের ঢেউ নীল আগুনের মতো জ্বলে ওঠে।
Firefly এর নরম, ছন্দময় light pulse শুধু সৌন্দর্যই নয়, বরং এটি একইসাথে একপ্রকার mating signal।
Mushroom-এর bioluminescent glow (যাকে বলে foxfire) জঙ্গলের অন্ধকারে অসাধারণ দৃশ্য তৈরি করে।
বেশ কিছু ব্যাকটেরিয়া এবং single-cell organism আবার নিজের স্বার্থেই আলো তৈরি করে। marine bacteria Vibrio fischeri এর একটি আদর্শ উদাহরণ। এটি কখনো squid-এর শরীর আলোকিত করে, আবার কখনো symbiotic সম্পর্ক গড়ে তুলে ন্যাভিগেশনে সাহায্য করে।
অনেক deep sea প্রাণী counter-illumination ব্যবহার করে। তাদের শরীরের নিচের দিক থেকে এমন আলো বের হয়, যা সাগরের উপরের ক্ষীণ আলোকে অনুকরণ করে—ফলে শিকারী বুঝতেই পারে না কোথায় প্রাণীটি আছে।
Anglerfish এর মাথার আলো মাছের টোপ হিসেবে কাজ করে। Jellyfish আলোর চমক সৃষ্টি করে ছোট প্রাণীদের আকর্ষণ করে। Firefly-এর আলো জ্বলা হলো এক ধরনের code—এক্ষেত্রে প্রতিটি species-এর নিজস্ব rhythm আছে। কিছু ব্যাকটেরিয়া quorum sensing ব্যবহার করে আলো জ্বলে ওঠাকে বার্তা হিসেবে ব্যবহার করে। আবার কিছু প্রাণী হঠাৎ তীব্র আলোক-স্রোত ছুঁড়ে শিকারীকে বিভ্রান্ত করে পালিয়ে যায়।
বিজ্ঞানে Bioluminescence
Green Fluorescent Protein (GFP) এবং luciferase ব্যবহৃত হয় biological marker হিসেবে।
জিন কোথায় সক্রিয়, কোন কোষে কী পরিবর্তন হচ্ছে এগুলো আধুনিক গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
Luciferase-based assay দিয়ে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, টিউমার সেল কিংবা metabolic disorder শনাক্ত করা যায়। দ্রুত ফলাফল এবং high sensitivity এর জন্য এ প্রযুক্তি খুবই জনপ্রিয়।
Pollution-detecting bacteria প্রস্তুত করা হয়েছে—heavy metal, toxin বা contamination থাকলে এরা জ্বলে ওঠে।
এ যেন পরিবেশের SOS সিগন্যাল। Bioluminescent biosensor এখন মহাকাশ গবেষণা থেকে শুরু করে hospital lab পর্যন্ত ব্যবহৃত হচ্ছে।
Fluorescence হলো বাহ্যিক আলো শোষণ করে আবার অন্য রঙের আলো নির্গত করার ক্ষমতা।
অন্যদিকে bioluminescence হচ্ছে কোষের ভেতরের chemical reaction-এর ফলাফল—এক্ষেত্রে বাহ্যিক আলো দরকার হয় না।
গাছের মধ্যে bioluminescent gene প্রবেশ করিয়ে এমন light-emitting plant তৈরি করা সম্ভব, যা ভবিষ্যতে রাস্তার light pole-এর বিকল্প হতে পারে।
সমুদ্র গবেষণায় এবং underwater robot-এ bioluminescent signal ব্যবহার করে direction system উন্নত করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে cancer tracking, drug delivery, even gene therapy-তে glow-based real-time monitoring ব্যবহার হতে পারে।
শেষ কথা
Bioluminescence শুধু আলো নয়—এটি জীবন, রসায়ন, বিবর্তন এবং প্রকৃতির নান্দনিকতার এক সম্মিলিত ভাষা। পৃথিবীর গভীরতম অন্ধকারে আলো জ্বলে ওঠার যে দৃশ্য আমরা কখনোই চোখে দেখব না, বিজ্ঞান সেই দৃশ্যকে আমাদের বোধের সামনে তুলে ধরে।
এ আলো আগুন নয়, তবু উষ্ণতা দেয়। মানুষের কৌতূহলকে জাগিয়ে রাখে। প্রকৃতির নীরব বিস্ময়কে আমাদের সামনে টেনে আনে।
তাহসিনুর রাইয়ান,
অষ্টম শ্রেণির ছাত্র,
বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে বিশেষ আগ্রহী।
প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক, রাইয়ান’স রিডারস কর্নার।

Leave a comment