✍️ নিউজ ডেস্ক, বিজ্ঞানী অর্গ
📩 যোগাযোগ: [email protected]
ইন্টারনেটে তথ্য খোঁজার পদ্ধতি দ্রুত বদলে যাচ্ছে।
এক সময় আমরা গুগলে লিখে উত্তর খুঁজতাম। এখন? অনেকে আর গুগলে যায় না—প্রশ্ন করে সরাসরি চ্যাটজিপিটি, অ্যালেক্সা কিংবা জেমিনির মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) অ্যাসিস্ট্যান্টকে। তারা জানে, উত্তর এক লাইনে, দ্রুত, সাজানোভাবে পেলে বাঁচে সময়, বাঁচে ধৈর্য।
এই পরিবর্তন শুধু ব্যবহারকারীর আচরণ নয়—ব্যবসা, মিডিয়া এবং অনলাইন কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্য এটি এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। কারণ, আপনি যদি এআই-এর দৃষ্টিসীমায় না থাকেন, তাহলে আপনাকে আর কেউ দেখতে পাবে না।
🔍 নতুন তথ্য, নতুন বাস্তবতা
২০২৫ সালের জুন মাসে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্ল্যাটফর্মগুলো শীর্ষ ১,০০০ ওয়েবসাইটে প্রায় ১.১৩ বিলিয়ন ভিজিট পাঠিয়েছে। এটা গত বছরের তুলনায় ৩৫৭% বেশি।
সবচেয়ে বিস্ময়কর তথ্য?
এই এআই-ভিজিটের ৮০%-এর বেশি এসেছে ChatGPT-এর মাধ্যমে।
সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে নিউজ ও মিডিয়া সাইটগুলোতে। এআই থেকে তাদের ট্রাফিক ৭৭০% বেড়েছে এক বছরে।
অর্থাৎ, আজকের দিনে গুগলের অ্যালগরিদমের পাশাপাশি এআই অ্যাসিস্ট্যান্টের সাজেশন-ও হয়ে উঠছে গুরুত্বপূর্ণ।
🤖 এআই কীভাবে সিদ্ধান্ত নেয়?
গুগলে যদি আপনি কোনো প্রশ্ন করেন, আপনাকে একগাদা লিংক দেখাবে। কিন্তু ChatGPT বা Alexa, Gemini কেমন?
তারা আপনাকে “সবচেয়ে ভালো” উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করে।
তারা ওয়েবসাইট বাছাই করে, কনটেন্ট স্ক্যান করে, এবং বিচার করে—কোনটা বেশি প্রাসঙ্গিক, নির্ভরযোগ্য ও উপকারী।
তাদের জন্য “SEO” বা সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন যথেষ্ট নয়। এখন দরকার হচ্ছে “এআই মডেল অপ্টিমাইজেশন”।
📊 নতুন ধারণা: Share of Model
একটি নতুন মার্কেটিং পরিমাপক চালু হয়েছে: Share of Model।
এর মানে হলো—আপনার ব্র্যান্ড, প্রোডাক্ট বা কনটেন্ট কতোটা prominently এবং positively উপস্থিত এআই মডেলগুলোর ভেতরে?
🧠 আপনি কি ChatGPT-এর কাছে পরিচিত?
🤖 Gemini বা Llama কি আপনার সাইট থেকে রেফারেন্স দেয়?
💬 আপনি কি কোনো আলোচনায় আসে যখন ব্যবহারকারী প্রশ্ন করে?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর হচ্ছে Share of Model দিয়ে পরিমাপ করা যায়। যেমন, কেউ যদি ChatGPT-কে জিজ্ঞেস করে, “সেরা রক্তচাপ মাপার মেশিন কোনটি?”—আপনার ব্র্যান্ডের নাম যদি উত্তর আসে, তাহলে বুঝতে পারবেন, আপনি এআই-এর “মস্তিষ্কে” আছেন।
🏪 ব্যবসা, মিডিয়া, কনটেন্ট নির্মাতা—সবাই ঝুঁকিতে
বাংলাদেশে এখনো অনেক প্রতিষ্ঠান SEO নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু এআই মডেল যদি তাদের চিনতেই না পারে?
তাহলে SEO র্যাঙ্কিং আর কাজ দেবে না।
যে যেই মিডিয়ার জন্য কনটেন্ট লিখছেন—হোক তা ফেসবুক পোস্ট, ইউটিউব ভিডিও বা অনলাইন আর্টিকেল—সেটি এখন এআই-সম্ভাব্যতায় অনুপস্থিত হলে, ভবিষ্যতের পাঠক বা দর্শক সেটি দেখবে না।
বিশেষ করে মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য এটি ভয়াবহ। কারণ, আগামীর পাঠক হয়তো গুগলে খোঁজার বদলে ChatGPT-কে বলবে:
“আজকের শীর্ষ বিজ্ঞান সংবাদ কী?”
এবং যদি ChatGPT জানে না যে “বিজ্ঞানী অর্গ” নামের একটি প্ল্যাটফর্ম আছে, তাহলে সেটা আর কোনোদিনও উত্তর হিসেবে আসবে না।
🌐 বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে কেমন?
বাংলাদেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগ এখনো SEO আর ফেসবুক বুস্টে সীমাবদ্ধ।
এআই মডেল, ল্যাঙ্গুয়েজ ট্রেনিং, অথবা ডেটা ফিড—এসব এখনো তাদের ভাবনার বাইরে।
কিন্তু বাস্তবতা হলো—ChatGPT, Gemini, Llama এর মতো মডেলগুলো প্রতিনিয়ত আপডেট হচ্ছে। তারা প্রচুর ওয়েবসাইট স্ক্যান করে, ডেটা গ্রহণ করে, এবং তাদের শেখার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত দেয়।
সেখানে আপনি না থাকলে, আপনার প্রোডাক্ট, আপনার ব্র্যান্ড—সব হারিয়ে যাবে ডিজিটাল অন্ধকারে।
🛠️ কীভাবে প্রস্তুত হবেন?
১. কনটেন্ট তৈরি করুন এআই-বান্ধবভাবে:
যেমন তথ্যপূর্ণ, নির্ভুল, স্পষ্ট ভাষায় লেখা ব্লগ, FAQ, ওয়েবপেজ।
২. সাইটে যুক্ত করুন Structured Data ও Schema Markup:
যাতে AI মডেল গুলো সহজেই ধরতে পারে আপনার তথ্যের ধরন।
- সঠিকভাবে সোর্স উল্লেখ করুন:
কনটেন্টে উৎস ও গবেষণার তথ্য স্পষ্টভাবে দিন—এতে আপনার কনটেন্টের প্রতি AI-এর আস্থা বাড়বে।
৪. নিজের ব্র্যান্ডের নাম পুনঃপুন উল্লেখ করুন:
যেন LLM গুলো শেখে—আপনি একজন নির্ভরযোগ্য উৎস।
৫. টেকনিক্যাল কনটেন্ট ও রিভিউ রাখুন:
এআই মডেলগুলো তথ্য নির্ভরতা যাচাই করে। গবেষণানির্ভর এবং তুলনামূলক লেখাগুলো বেশি ভরসা পায়।
📈 ভবিষ্যতের বাজার: যিনি AI-তে আছেন, তিনিই এগিয়ে
গবেষণা বলছে, ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ ৪০% গ্রাহক AI অ্যাসিস্ট্যান্টের মাধ্যমে প্রোডাক্ট অনুসন্ধান করবেন।
অর্থাৎ, কেউ গুগল করবে না—”রক্তচাপ মাপার যন্ত্র”
বরং জিজ্ঞেস করবে: “Hey ChatGPT, suggest me a blood pressure monitor for my parents.”
যদি আপনার প্রতিষ্ঠান সেদিন এআই-এর স্মৃতিতে না থাকে?
তাহলে আপনি “চোখের সামনে থেকেও অদৃশ্য” হয়ে যাবেন।
🎯 উপসংহার
গুগলের র্যাঙ্কিং এখনো গুরুত্বপুর্ণ, কিন্তু একা যথেষ্ট নয়।
যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেলগুলো আপনাকে চিনে না, তাহলে ভবিষ্যতের ডিজিটাল দুনিয়ায় আপনার স্থান থাকবে না।
এখন সময়—Share of Model নিয়ে কাজ করার।
আপনার কনটেন্ট, ব্র্যান্ড ও বার্তা যেন এআই মডেলগুলোর কাছে পৌঁছে যায়, সেটাই আজকের ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
এটা শুধু প্রযুক্তির বিষয় নয়—এটা টিকে থাকার লড়াই।
📌 লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে biggani.org প্ল্যাটফর্মে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সমাজ নিয়ে আরও লেখা পড়ুন: www.biggani.org
Leave a comment