সম্প্রতি কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানে এমন এক বিস্ময়কর আবিষ্কার হয়েছে, যা আমাদের হাইড্রোজেনের থেকেও সরল পরমাণু কাঠামোর দিকে নির্দেশ করছে! কল্পনা করুন—এখানে কেবল ইলেকট্রন এবং তাদের প্রতিকণাগুলোর মধ্যে শুদ্ধ তড়িৎচুম্বকীয় আন্তঃক্রিয়া ঘটে। এই আবিষ্কার আমাদের কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান তথা কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও মৌলিক পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে ধারণায় বড়সড় পরিবর্তন আনতে পারে। বিশেষত, টাউনিয়াম সনাক্তের নতুন পদ্ধতিটি কণার পদার্থবিজ্ঞানের পরিমাপের ক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব বিপ্লব আনবে।
একসময় হাইড্রোজেনকে প্রকৃতির সবচেয়ে সরল পরমাণু মনে করা হত, যার গঠন ছিল খুবই সহজ – একটি ইলেকট্রন আর একটি প্রোটন। তবে গবেষণার অগ্রগতিতে, বিজ্ঞানীরা এমন কিছু সহজ পরমাণুর সন্ধান পেয়েছেন যেগুলো তৈরি হয় কাঠামোবিহীন ইলেকট্রন (e-) এবং মিউয়ন (μ-) বা টাউওন (τ-) এর মতো ভারী লেপটন এবং তাদের প্রতিকণাগুলো দিয়ে। এই পরমাণুগুলো শুধু তড়িৎচুম্বকীয় আন্তঃক্রিয়ায় যুক্ত থাকে, যা হাইড্রোজেনের চেয়েও সহজতর পরমাণুর গঠন সৃষ্টি করে। এই আবিষ্কার কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান, মৌলিক সিমেট্রি এবং মহাকর্ষের মতো জটিল বিষয়গুলো নিয়ে নতুন দৃষ্টিকোণ দিতে পারে।
এ পর্যন্ত মাত্র দুটি পরমাণুতে সম্পূর্ণ তড়িৎচুম্বকীয় আন্তঃক্রিয়া দেখা গেছে। একটি ইলেকট্রন-পজিট্রন বন্ধন অবস্থা, যা ১৯৫১ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল, আর অন্যটি ইলেকট্রন-অ্যান্টিমিউয়ন বন্ধন অবস্থা, যা ১৯৬০ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল। এরপর প্রায় ছয় দশক ধরে এ ধরনের আর কোনো পরমাণুর প্রমাণ মেলেনি। তবে গবেষকরা ধারণা করছেন, মহাকাশের রশ্মি বা উচ্চ-শক্তির কোলাইডারে এই ধরনের পরমাণু পাওয়া যেতে পারে।
সম্প্রতি, টাউনিয়াম নামে একটি নতুন পরমাণুর সন্ধান পাওয়া গেছে, যা টাউওন এবং তার প্রতিকণা দিয়ে তৈরি। টাউনিয়ামের বোহর ব্যাস মাত্র ৩০.৪ ফেম্টোমিটার, যা হাইড্রোজেনের প্রায় ১৭৪১ ভাগের ১ ভাগের সমান। এর অর্থ, টাউনিয়াম ক্ষুদ্র জগতের কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান এবং তড়িৎগতিবিদ্যার গভীর বিশ্লেষণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
“Novel method for identifying the heaviest QED atom” শিরোনামে একটি সাম্প্রতিক গবেষণা “সায়েন্স বুলেটিন” জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে টাউনিয়াম শনাক্ত করার একটি নতুন পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, ইলেকট্রন ও পজিট্রনের কোলাইডারে ১.৫ অ্যাট্টোবার্ন (ab-1) ডেটা সংগ্রহ করে টাউনিয়ামের উপস্থিতি নির্ধারণ করা সম্ভব। এই ডেটা থেকে এমন কণার ইভেন্টগুলো বাছাই করা হবে, যেখানে শক্তি বহনকারী নিউট্রিনো নেই, ফলে ৫σ মাত্রার শক্তিশালী পর্যবেক্ষণ মিলবে যা টাউনিয়ামের অস্তিত্বের জন্য দৃঢ় প্রমাণ দেবে।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, এই একই ডেটা ব্যবহার করে টাউ লেপটনের ভর নির্ধারণের নির্ভুলতা ১ keV পর্যন্ত উন্নীত করা সম্ভব, যা বর্তমান পরীক্ষার তুলনায় দ্বিগুণ নির্ভুল। এই ইলেকট্রোউইক তত্ত্বের পরীক্ষা ও লেপটন ফ্লেভার ইউনিভার্সালিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদার্থবিজ্ঞান প্রশ্নে সহায়ক হবে।
চীনের সুপার টাউ-চার্ম ফ্যাসিলিটি (STCF) এবং রাশিয়ার সুপার চার্ম-টাউ ফ্যাক্টরির (SCTF) এক গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হচ্ছে টাউনিয়ামের মতো ভারী পরমাণু আবিষ্কার এবং টাউ লেপটনের ভর নির্ভুলভাবে পরিমাপ করা। এই ধরনের আবিষ্কার ক্ষুদ্র জগতের রহস্য উন্মোচনে এবং এই ক্ষেত্রের বোঝাপড়া আরও গভীর করতে সহায়ক হবে।
Leave a comment