এবারের সাক্ষাৎকার সিরিজে আমরা সাক্ষাৎকার নিয়েছি আল-সাকিব খান পাঠান এর। বর্তমানে তিনি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (UIU), বাংলাদেশ এর কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE) বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। তিনি আমাদের নবীন প্রজন্মের গবেষকদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন। তার সাক্ষাৎকারটি পড়ুন:
প্রথমেই আপনার সম্বন্ধে আমরা জানতে চাই ?
বর্তমানে আমি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (UIU), বাংলাদেশ এর কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE) বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। এর আগে আমি ২০২০-২০২১ সালে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (IUB) এর CSE বিভাগে, ২০১৫-২০২০ সালে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি (SEU) এর CSE বিভাগে, মালয়েশিয়ার IIUM এর কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে ২০১০-২০১৫ সালে, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশে ২০০৯-২০১০ সালে এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (NSU), বাংলাদেশে ২০০৪-২০০৫ সালে কাজ করেছি। আমি কিয়াং হি ইউনিভার্সিটি, দক্ষিণ কোরিয়ার নেটওয়ার্কিং ল্যাবেও গবেষণা করেছি, যেখানে আমি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এমএস এবং পিএইচডি সম্পন্ন করি। আমার বিএসসি ডিগ্রী ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (IUT), বাংলাদেশ থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি (CSIT) এ। আমি কিছু উচ্চমানের জার্নাল ও সম্মেলনের সম্পাদক ও কমিটির সদস্য হিসেবে যুক্ত আছি।
আপনার গবেষণার ক্ষেত্রগুলো কি কি ?
আমার গবেষণার ক্ষেত্রগুলোতে ওয়্যারলেস সেন্সর নেটওয়ার্ক, নেটওয়ার্ক সুরক্ষা, ক্লাউড কম্পিউটিং এবং ই-সার্ভিস প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বর্তমানে, আমি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কৃষি প্রয়োগ, ইলেকট্রিক যানবাহন, শক্তি ইন্টারনেট, ভাষাতত্ত্ব এবং কোয়ান্টাম ইস্যু সহ কিছু বহুবিষয়ক ইস্যু নিয়ে কাজ করছি। আমার গবেষণা প্রধানত মৌলিক এবং প্রয়োগমূলক দুই ভাগে বিভক্ত, যেখানে আমি মৌলিক গবেষণার প্রতি বেশি আগ্রহী যা ভবিষ্যতে প্রযুক্তি ও চিন্তার প্রবাহ পরিবর্তন করতে পারে, যদিও তাৎক্ষণিক প্রভাব না-ও দেখা যেতে পারে।
কেন বাংলাদেশে ফিরে আসলেন এবং গবেষনার কাজগুলি কিভাবে আমাদের উপকৃত করছে কিংবা করবে ?
এই প্রশ্নেটির মুখোমুখি প্রায়ই আমাকে হতে হয়। ২০০৯ সালে পিএইচডি সম্পন্ন করার পর আমি বাংলাদেশে ফিরে আসি মূলত আমার বাবা-মার জন্য, এবং কিছু সাক্ষাৎকারে এই প্রশ্নটি করা হয়েছিল! পরবর্তীতে, আমি বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাই এবং ২০১০-২০১৫ সালে মালয়েশিয়ার IIUM এ কাজ করি। ২০১৫ সালে আবার বাবা-মার ডাকে বাংলাদেশে ফিরে আসার পর পুনরায় একই প্রশ্ন করা হয়েছিল। আমি তখন থেকে বাংলাদেশে কর্মরত আছি। এই প্রশ্নের উত্তরে বলি, গবেষণা সবসময় আমাদের তাৎক্ষণিক উপকারের জন্য নয়, কারণ গবেষণার প্রকৃতি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা দুটি প্রধান শ্রেণীতে বিভক্ত – প্রয়োগমূলক গবেষণা যা সাথে সাথে ব্যবহারিক সুবিধা দিতে পারে এবং মৌলিক গবেষণা যা ভাবনার ধারা ও ভবিষ্যতের প্রযুক্তিতে প্রভাব ফেলতে পারে। আমাদের জীবনযাত্রায় মৌলিক গবেষণার প্রভাব পড়তে পারে ৫, ১০ বা ২০ বছর পরও। বাংলাদেশ বা আমরা প্রযুক্তির দিক থেকে বাকি বিশ্বের থেকে আলাদা নই, তাই মৌলিক গবেষণার ফলাফল একসময় আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলবে। মৌলিক গবেষণার একটি ক্লাসিক উদাহরণ হলো বিদ্যুতের আবিষ্কার, যা প্রাথমিকভাবে কোনো ব্যবহার নির্ধারিত না থাকলেও বহু ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে; একইভাবে, একটি সাধারণ সমীকরণ যেমন E=mc^2 এর উদাহরণ দেই যা শুধুমাত্র শক্তি, ভর এবং আলোর গতির মধ্যে সম্পর্ককে বোঝায়, কিন্তু এর প্রভাব বিভিন্ন ক্ষেত্রে থাকতে পারে এবং তা আমাদের বা অন্যদের সরাসরি উপকারের জন্য সীমাবদ্ধ নয়!
তবুও, আমাদের উপকারে আসার জন্য বললে, আমার মতে আমার শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে বিভিন্নভাবে চিন্তা করার পদ্ধতি শিখতে পারে, তারা হয়তো নিজেদের অবদান রাখতে পারে এবং আমাদের বিজ্ঞানীদের বৈশ্বিক সমাজে প্রভাবিত করতে পারে। বা, অন্তত, এ ধরনের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে অন্যদের জ্ঞান হস্তান্তর করা যায় যা একাডেমিয়ায় ইতিবাচক কার্যকলাপে অবদান রাখতে উত্সাহিত করে, সেই সাথে শিক্ষার্থীদের এবং শিক্ষকদের রাজনৈতিক নোংরা প্রবণতার থেকে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করে যা আমরা অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের ইতিহাসে দেখেছি। অন্তত একাডেমিক ক্ষেত্রে প্রকৃত পেশাগত কাজে মনোযোগ আনা, একটি স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করা এবং শিক্ষার্থীদের এবং শিক্ষকদের জন্য প্রাকৃতিক চর্চায় নিয়োজিত থাকা যা সাম্প্রতিক অতীতেও দেখা গেছে যে অনেক ক্ষমতাসীন দলের পক্ষপাতমূলক আচরণ, ক্ষমতাবানদের সাথে সম্পর্ক এবং প্রকৃত মেধাবীদের দমন করা হয়েছে।
বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য আপনার বার্তা কী ?
পেশাগত জীবনে সততা ও সত্যবাদিতার মান বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে পেশাগত সততা বা ইন্টিগ্রিটির অভাব লক্ষ্য করা যায়। অনেকেই দ্রুত উচ্চ পদে পৌঁছানোর জন্য শর্টকাট এবং ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও পরিচিতির সহায়তা নেন, যা তাদেরকে দ্রুত উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে। কিন্তু সবসময় পদ ও পদবীর পেছনে না ছুটে, নিজের কাজের উপর মনোযোগী হওয়া উচিত।
২০১৫ সালে যখন আমি দ্বিতীয়বারের মতো দেশে ফিরলাম, তখন দেখেছি আমার নিজস্ব ক্ষেত্রে কিছু মানুষ যাদের প্রকৃত মেধা বা প্রভাব কোনো মাপকাঠিতে দেখা যায় না, তারা পূর্ণ অধ্যাপকের পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। নিজের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে চাইলে এবং সত্যিকার অর্থে একজন বিজ্ঞানী হিসেবে গড়ে উঠতে চাইলে, শীর্ষ পদ-পদবীগুলিকে এড়িয়ে চলাই ভালো হতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের একাডেমিক পরিবেশে, যেখানে এখনো অনেক ক্ষেত্রে এই ধরনের সংস্কৃতি লালিত হয়।
হ্যাঁ, এটি কিছুটা অস্বস্তিকর হতে পারে যখন আপনি দেখবেন কিছু পিছনের সারির সহকর্মী, যাদের আপনি ৫ বছর আগে পেছনে রেখেছিলেন, তারাই হয়তো পূর্ণ অধ্যাপক বা সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী পদে আসীন। কিন্তু তাদের এই “সফলতার” ট্র্যাকে চলার কারণে তারা সত্যিকার অর্থে পেশাগত ক্ষেত্রে একজন দক্ষ ও মানসম্পন্ন বিজ্ঞানী হয়ে উঠার সুযোগ হারিয়ে ফেলেছে।
একজন বিজ্ঞানীর জন্য কী কী গুণ থাকা উচিত বলে আপনি মনে করেন ?
এই প্রশ্নের উত্তর বিভিন্ন হতে পারে, এবং একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে একে দেখতে পারেন। তবে আমার মতে, পেশাগত ক্ষেত্রে সততা ও সত্যবাদিতা থাকা অপরিহার্য। কখনো কখনো মিথ্যা তথ্য বা দাবি দিয়েও উচ্চ স্থানে পৌঁছানো সম্ভব, এবং সেসব ধরা না পড়লে এমনকি পুরস্কৃতও হতে পারে! এটি মোটেও অস্বাভাবিক নয় যে কিছু ক্ষমতাধর ব্যক্তি নিজেদের সুবিধার জন্য কিছু বিজ্ঞানীকে উত্থিত করেন এবং অন্যদের নিচে নামিয়ে রাখেন। তবে দিনের শেষে, এই দুই গুণ—সততা ও সত্যবাদিতা—একজনকে তার নিজস্ব মানসিক সন্তুষ্টি দেয় এবং যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতির বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানোর সাহস জোগায়।
আপনার ইমেইল : [email protected]
আপনার লিংকডইন : https://www.linkedin.com/in/al-sakib-khan-pathan-6173838/
আপনার ওয়েবসাইট বা গবেষনাকাজের লিংক : https://sites.google.com/site/spathansite/
আমরা বিজ্ঞানী অর্গ এর পক্ষ থেকে আল-সাকিব খান পাঠান এর উত্তোরত্তর সাফল্য কামনা করি। তার সাক্ষাৎকারে আমরা খুবই আননন্দিত। তিনি আমাদের নবীন গবেষকদের জন্য এক অন্যতম দৃষ্টান্ত।
First, we want to know about you ?
I am currently a Professor at the Computer Science and Engineering department, United International University (UIU), Bangladesh. Previously, I was with the CSE Dept., Independent University, Bangladesh (IUB) during 2020-2021; CSE Dept., Southeast University (SEU) during 2015-2020; Computer Science department at IIUM, Malaysia during 2010-2015; BRAC University, Bangladesh during 2009-2010, and NSU, Bangladesh during 2004-2005. I also worked as a Researcher at Networking Lab, Kyung Hee University, South Korea from September 2005 to August 2009 where I completed my MS leading to PhD in Computer Engineering. My B.Sc. degree was in Computer Science and Information Technology from Islamic University of Technology (IUT), Bangladesh. I am associated with some highly-valued journals and conferences as an editor and committee member.
What is your research topic?
My research interests include wireless sensor networks, network security, cloud computing, and e-services technologies. Currently, I am also working or studying some multidisciplinary issues like quantum issues, agricultural applications, AI, electric vehicle, energy internet, linguistics, and so on. Research in my field can be broadly classified as Fundamental and Applied like many other scientific fields. My inclination is more towards the fundamental research that requires contribution to the body of knowledge, dealing with theory that may have wider implications in future, and perhaps, not immediate effect!
How is your research work or will it benefit us?
Before answering this straight, let me make it clear that this is not the first time I have been asked this question. I came back to Bangladesh immediately after my PhD in 2009, mainly for my parents living here and this question was asked even in some interviews! Then, I left Bangladesh soon after, and worked in IIUM, Malaysia for five years (2010-2015). When I came back again in 2015, once again due to my parents’ call, the same question was asked. Since 2015, I have been working here within Bangladesh. The response to this question is, research works must not be always associated with “our” benefit with immediate effect or expected direct impact like that. Because, the nature of research needs to be understood. I have already mentioned the major two categories of research. While applied research may have practical relevance with immediate impact, the fundamental type basically changes the course of thoughts and future technologies. The impact of that could be on various fields, even after 5 or 10 or 20 years or so. As Bangladesh or “we”, are not separated from the rest of the world in terms of technology’s reach or its usage, eventually, fundamental research works would have impact on our daily lives. A classic example of fundamental type research could be like the invention of electricity for which the application scenario is not defined but it has relevance and use in many other fields; again take for instance, an apparent simple equation like E=mc^2, which is just a theoretical understanding of the relationship between energy, mass, and speed of light but the impact of that could be in practical other fields and it is not confined to just “our” or “their” benefit!
Still, to respond to this question as “our” benefit, I would opine that my students can also learn some ways to think about solutions to the same problem in various ways, perhaps, they can get inspired for their own contributions to the field and make our scientists’ impact known to the global community. Or, at the minimum, perhaps, such kinds of interviews are taken to pass knowledge to others and this can encourage people in contributing to positive activities in the academia instead of losing focus and wasting time with disturbing trends of teachers’ and students’ politics of nasty nature that we have witnessed for more than half of a century in the history of Bangladesh, i.e., “us”. This is the minimum it can do to engage the minds and brains in genuine professional works in the academia, create a healthy competitive environment, and help them get out of the cycle of that kind of pollution in the academia which showed even from the parts of the faculty members, clear sycophantic behaviors, quid pro quo activities, nepotism, climbing ladder without merit just because of certain power-holding political party’s affiliations and links, and suppressing the genuine brains even in the recent past.
What qualities do you think a scientist should have?
This answer could vary and there are too many possible answers as a notable scientist may perceive. However, to me, honesty and truthfulness are a must in the professional works. It is possible to gain heights even with fake data, fake claims and things and sometimes, those may not be caught or even could be awarded! It is not at all uncommon as some power-holders raise some scientists for their own advantage and put down some others. But, at the end, those two qualities even for professional works, would give one his own mental satisfaction and courage to stand against all odds.
What is your message for the young students of Bangladesh who want to work in science?
Be honest and truthful even in the professional arena. What lacks in many in Bangladesh is the professional integrity. Indeed, many try to climb fast with short-cut with links and ties that could rapidly take them to higher positions. Don’t always hanker after for ranks and positions. When I came back in 2015 for the 2nd time, I found too low qualified people with no trace in the actual indexes and impacts anywhere in the field were holding full Professor positions in my own field. Avoiding top roles and positions may be better for you if you would like to make an impact as a scientist in your own field while working within Bangladesh; especially in an environment that still is nurtured in Bangladeshi academia (in most of the places). Yes, it may give you some unease to see some back-benchers that you saw got promotion 5 years before your rank rose to full Professor or they may have taken chairs and decision making positions but with that track of gaining “success”, they also lost any chance of their becoming a genuine caliber scientist in the professional field.
Leave a comment