নবীন প্রজন্মদের সাক্ষাৎকার সিরিজে এবার আমরা সাক্ষাৎকার নিয়েছি মোঃ রাগিব শাহারিয়ার এর। তিনি বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেক্ট্রিক্যাল এবং কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পিএইচডি শিক্ষার্থী হিসেবে গবেষণা করছেন। সেখানে তিনি এমবেডেড মেশিন লার্নিং (ML), কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), এবং শক্তি সাশ্রয়ী ডিভাইস উন্নয়নের ওপর কাজ করছেন। তার সাক্ষাৎকারটি পড়ুন:
প্রথমেই আপনার সম্বন্ধে আমরা জানতে চাই ?
আমি বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেক্ট্রিক্যাল এবং কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পিএইচডি শিক্ষার্থী হিসেবে গবেষণা করছি। এখানে আমি এমবেডেড মেশিন লার্নিং (ML), কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), এবং শক্তি সাশ্রয়ী ডিভাইস উন্নয়নের ওপর কাজ করছি।
এর আগে, আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (মেকাট্রনিক্স, রোবোটিক্স, এবং অটোমেশন) বিষয়ে এমএস সম্পন্ন করেছি ২০২৩ সালের মে মাসে। সেখানে আমি স্বয়ংক্রিয় রোবোটিক্স এবং ডিভাইসের নকশা, ডেটা প্রক্রিয়াজাতকরণ, এবং মেশিন লার্নিং নিয়ে কাজ করেছি।
আমি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল এবং ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেছি। সেখানে আমার কাজের মধ্যে ছিল রোবোটিক্স ল্যাবে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ এবং গবেষণা করা। আমি ‘RoboSUST’ নামক রোবোটিক্স সংগঠনের সভাপতি ছিলাম এবং সেখান থেকে রোবোটিক্স প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কিছু অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলাম । আমার স্নাতক শিক্ষাজীবনে আমি রোবোটিক্স, সার্কিট ডিজাইন, এবং বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক সিস্টেমের ওপর কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।
স্নাতক শিক্ষাজীবন শেষে, আমি ওয়ালটন ডিগি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজে প্রক্রিয়া উন্নয়ন ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেছি তিন বছর, যেখানে পিসিবি বিশ্লেষণ, এসকেডি এবং এসএমটি প্রক্রিয়া উন্নয়ন এবং রোবোটিক কন্ট্রোল নিয়ে কাজ করেছি।
আপনার গবেষনার বিষয় কি?
আমার গবেষণার মূল লক্ষ্য হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং মেশিন লার্নিং (ML) প্রযুক্তির মাধ্যমে শক্তি সাশ্রয়ী এবং কার্যকরী কম্পিউটিং পদ্ধতি তৈরি করা, যা বিশেষ করে এমবেডেড সিস্টেম এবং সীমিত ক্ষমতাসম্পন্ন ডিভাইসের জন্য কার্যকর। বর্তমানে, মেশিন লার্নিং এবং ডীপ লার্নিং মডেলগুলো প্রচুর শক্তি এবং প্রসেসিং ক্ষমতা প্রয়োজন, যা সীমিত সম্পদের ডিভাইসগুলোতে পরিচালনা করা কঠিন। আমার গবেষণায় আমি এমন এক প্রযুক্তি তৈরি করছি যা স্বল্প শক্তি সম্পন্ন ডিভাইসগুলোতে এই ধরনের উন্নত মডেলগুলোকে সফলভাবে বাস্তবায়িত করতে সক্ষম হবে।
এই লক্ষ্যে আমি ভিশন ট্রান্সফরমার নামে একটি বিশেষ মডেলের ওপর কাজ করছি, যা একটি নির্দিষ্ট ধরনের নিউরাল নেটওয়ার্ক। আমি এই মডেলের আর্কিটেকচার বা কাঠামোকে আরও উন্নত করতে ‘রিগ্রেশন-ভিত্তিক নিউরাল আর্কিটেকচার সার্চ’ ব্যবহার করছি, যা ডিভাইসের সীমিত ক্ষমতা ব্যবহার করে সর্বোচ্চ ফলাফল পেতে সহায়তা করবে। মূলত, এটি একটি ধরনের স্বয়ংক্রিয় ডিজাইন প্রক্রিয়া, যা বিভিন্ন মডেলের মধ্যে সেরা ডিজাইন নির্বাচন করতে সক্ষম।
একজন বিজ্ঞানীর কি কি গুণ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
একজন বিজ্ঞানীর গুণাবলি সম্পর্কে বলতে গেলে, প্রথমেই তার মধ্যে জ্ঞানের প্রতি কৌতূহল এবং অনুসন্ধিৎসা থাকা জরুরি। বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল, এবং নতুন আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে পুরনো ধারণা সংশোধিত হয়। এজন্য বিজ্ঞানীর উচিত সবসময় নতুন কিছু শেখার আগ্রহ এবং পুরনো তত্ত্ব ও প্রমাণকে প্রশ্ন করার সাহস থাকা।
দ্বিতীয়ত, একজন বিজ্ঞানীকে অবশ্যই ধৈর্যশীল হতে হবে। গবেষণা এবং আবিষ্কারের প্রক্রিয়া প্রায়ই সময়সাপেক্ষ এবং ব্যর্থতার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ব্যর্থতাকে শিক্ষার অংশ হিসেবে গ্রহণ করতে না পারলে একজন বিজ্ঞানী সাফল্যের পথে অগ্রসর হতে পারবে না।
তৃতীয়ত, বিজ্ঞানীর সৃজনশীলতা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। সৃজনশীল চিন্তাধারা এবং প্রচলিত পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষমতা তাকে নতুন পথ আবিষ্কার করতে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সাহায্য করে।
বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থী যারা বিজ্ঞানে কাজ করতে চায় – তাদের জন্য আপনার কোন ম্যাসেজ কিংবা বার্তা কি?
বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য আমার বার্তা হলো, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অবদান রাখতে চাইলে তোমাদের উচিত সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া। বর্তমান সময়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে যে কোনো সমস্যা সমাধানের অসীম সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য তোমাদের কৌতূহলকে জীবন্ত রাখতে হবে এবং কঠিন সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।
বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে কঠোর পরিশ্রম ও ধৈর্যের কোনো বিকল্প নেই। গবেষণা করতে গেলে বারবার ব্যর্থতা আসতে পারে, তবে সেই ব্যর্থতাকে শিক্ষার অংশ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি ভুল থেকে শিখে সামনে এগিয়ে যাওয়াই একজন বিজ্ঞানীর সঠিক পথ।
আপনার ইমেইল ঠিকানা : [email protected]
আপনার লিংকডইন : https://www.linkedin.com/in/md-ragib-shaharear-4b1b8b136/
আমরা বিজ্ঞানী অর্গের পক্ষ থেকে মোঃ রাগিব শাহারিয়ার এর উত্তোরত্তর সাফল্য কামনা করি। তিনি আমাদের নবীন গবেষকদের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
Leave a comment