একটু ব্যাক্তিগত জীবনের গল্প দিয়ে শুরু করি। আমার মা’এর হাঁপানি (অ্যাজমা) আছে। প্রবাস থেকে যখন মায়ের সাথে ফোনে কথা বলি, তখন মায়ের কন্ঠ শুনেই বুঝতে পারি যে মায়ের হাঁপানি উঠেছে কিনা। তার স্বাভাবিক কন্ঠস্বরের সাথে পার্থক্য বুঝতে পার। আমাদের মা’রা তাদের অসুস্থতার কথা যতই গোপন করুনক না কেন, ফোনে মায়ের কন্ঠস্বর শুনে সন্তানরা ঠিকই বুঝতে পারে। আপনি হয়তো কাশি দিচ্ছেন কিংবা কারো সাথে ফোনে কথা বলছেন, আপনার কথা শুনে আপনার প্রিয় মানুষটি কিন্তু অনেক সময়েই টের পেয়ে যান যে সম্ভবত আপনি সুস্থ নন। শুধু প্রিয় মানুষগুলিই নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে আপনার কন্ঠস্বর বিশ্লেষন করে সুস্থতা নির্নয় করা যায় কিনা তা নিয়ে কাজ করছেন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI বা Artificial Intelligence) প্রযুক্তির উন্নয়ন দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে, এবং এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুধুমাত্র মানুষের রোগ শনাক্ত করতেই সক্ষম তাই নয়, এটি শোনার মাধ্যমে রোগের পূর্বলক্ষণ শনাক্ত করতেও সক্ষম। সাম্প্রতিক সময়ে, গুগল এবং অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলি বায়োঅ্যাকোস্টিক্সের উপর ভিত্তি করে নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল তৈরি করছে, যা রোগ শনাক্তকরণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনছে।
বায়োঅ্যাকোস্টিক্স: শব্দের মাধ্যমে অসুখের সংকেত
বায়োঅ্যাকোস্টিক্স এমন একটি শাখা যেখানে জীববিজ্ঞান এবং শব্দবিদ্যা মিলিত হয়েছে। এই ক্ষেত্রের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষ এবং প্রাণীর উৎপাদিত শব্দগুলো বিশ্লেষণ করে তাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের করা। উদাহরণস্বরূপ, শ্বাস, কাশি, এবং স্নিফলসের মতো সাধারণ শরীরিক শব্দগুলিতে এমন সূক্ষ্ম সংকেত থাকে যা বিভিন্ন রোগ শনাক্ত করতে সহায়ক।
গুগল-এর হেলথ অ্যাকোস্টিক রিপ্রেজেন্টেশন (HeAR) মডেল এর একটি উদাহরণ, যা শরীরের উৎপন্ন শব্দগুলো থেকে রোগের প্রাথমিক লক্ষণ নির্ণয় করতে সক্ষম। এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেলটি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দূরবর্তী বা গ্রামাঞ্চলে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সহজে রোগ শনাক্ত করতে সাহায্য করবে। কেননা সেখানে প্রচলিত ব্যয়বহুল যন্ত্রপাতি এবং বিশেষজ্ঞ নেই।
টিবি রোগ নির্ণয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন প্রায় ৪৫০০ মানুষ যক্ষ্মায় (TB বা Tuberculosis) মারা যাচ্ছে, এবং প্রতিদিন প্রায় ৩০,০০০ মানুষ নতুন করে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি এই রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণে সাহায্য করছে, যা রোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার মানুষ যক্ষ্মার কারণে মারা যায়। এই রোগ শনাক্তকরণে HeAR মডেলটি প্রশিক্ষিত হয়েছে প্রায় ১০০ মিলিয়ন কাশির শব্দের ডেটাসেট নিয়ে, যা যক্ষ্মার প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করে।
ভারতের হায়দ্রাবাদ-ভিত্তিক স্টার্টআপ Salcit Technologies, গুগলের এই মডেলটিকে তাদের নিজস্ব মেশিন লার্নিং মডেল “Swaasa” এর সাথে সমন্বয় করেছে। “Swaasa” মডেলটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ১০ সেকেন্ডের কাশি রেকর্ড করে তা বিশ্লেষণ করে, যেখানে প্রায় ৯৪% নির্ভুলতার সাথে রোগ শনাক্ত করা সম্ভব। ২০০ রুপি খরচ করে যে কেউ তার মোবাইলের মাধ্যমে এই পরীক্ষাটি করাতে পারে, যেখানে প্রচলিত স্পিরোমেট্রি পরীক্ষার খরচ প্রায় ৩০০০ রুপি।
স্পাইরোমেট্রি পরীক্ষা কি?
স্পাইরোমেট্রি হল একটি মৌলিক পরীক্ষা যা ফুসফুসের সমস্যাগুলি সনাক্ত করতে পারে। এটি পরীক্ষা করে আপনি এক জোরে শ্বাসে কতটা বায়ু ত্যাগ করেন। এটি একটি স্পাইরোমিটার দিয়ে করা হয়েছে, এবং এটি একটি ছোট মেশিন যার সাথে একটি মাউথপিস একটি তারের সাথে লাগানো হয়েছে৷ স্পাইরোমেট্রি পরীক্ষার অন্যান্য নাম হল পালমোনারি ফাংশন পরীক্ষা (PFT) এবং ফুসফুসের কার্যকারিতা পরীক্ষা।
স্বাস্থ্যসেবায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্ভাবনা
যক্ষ্মার মতো মারাত্মক রোগ শনাক্তের পাশাপাশি, বায়োঅ্যাকোস্টিক্সের উপর ভিত্তি করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ক্যান্সারসহ অন্যান্য জটিল রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গুগল বর্তমানে তাইওয়ানের Chang Gung Memorial Hospital-এ স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক শনাক্তকরণের জন্য একটি আল্ট্রাসাউন্ড-ভিত্তিক মডেল নিয়ে গবেষণা করছে। এই মডেলটি উন্নত হলে, সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের সুযোগ তৈরি হবে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য।
এই প্রযুক্তি এখনও বাণিজ্যিকীকরণের পর্যায়ে পৌঁছেনি, তবে সঠিক ব্যবহারে এটি ভবিষ্যতে রোগ শনাক্তকরণকে গণতান্ত্রিক ও সহজলভ্য করে তুলতে পারে। কানাডাভিত্তিক কোম্পানি Ubenwa শিশুদের কান্নার মাধ্যমে তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য বিশ্লেষণ করতে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল তৈরি করছে।
নিম্নে তেমন কিছু স্টার্টআপের উদ্দ্যোগের বর্ণনা দেয়া হল যারা এই প্রযুক্তিটি ব্যবহার করছে।
- Swaasa, ভারত: Swaasa একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন যা ব্যবহারকারীদের ১০ সেকেন্ডের কাশি রেকর্ড করে তা বিশ্লেষণ করে যক্ষ্মা (TB) সহ বিভিন্ন শ্বাসজনিত রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করে। Salcit Technologies দ্বারা উন্নত এই অ্যাপটি ভারতে প্রথমবারের মতো মেডিকেল ডিভাইস হিসেবে অনুমোদন পেয়েছে। খুবই সহজভাবে, আপনার মোবাইলের মাধ্যমে কাশির শব্দ রেকর্ড করেই আপনি শ্বাসতন্ত্রের রোগ শনাক্ত করতে পারেন।
- Google HeAR, আমেরিকা: গুগলের HeAR (Health Acoustic Representations) মডেল একটি বায়োঅ্যাকোস্টিক্স প্রযুক্তি, যা শরীরের কাশির শব্দ বিশ্লেষণ করে যক্ষ্মার মতো রোগের প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করে। যদিও এটি এখনও ব্যাপকভাবে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত নয়, তবে শিগগিরই এই প্রযুক্তি আরও সহজলভ্য হবে, বিশেষ করে দূরবর্তী অঞ্চলের জন্য।
- ResApp, অস্ট্রেলিয়া: ResApp একটি অস্ট্রেলিয়ান অ্যাপ যা কাশির শব্দ বিশ্লেষণ করে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, এবং সিওপিডির মতো শ্বাসজনিত রোগগুলো শনাক্ত করতে সক্ষম। এটি iOS এবং Android প্ল্যাটফর্মের অ্যাপ এবং স্বাস্থ্যসেবায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারকে আরও সহজ এবং কার্যকর করছে।
- Ubenwa, কানাডা: Ubenwa অ্যাপটি শিশুর কান্নার শব্দ বিশ্লেষণ করে তাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা যেমন জন্মের সময় শ্বাসকষ্ট নির্ণয়ে সহায়তা করে। যদিও এটি মূলত নবজাতকদের জন্য তৈরি, এটি বায়োঅ্যাকোস্টিক্সের প্রযুক্তি কীভাবে স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে পারে তা প্রদর্শন করে।
ভবিষ্যত সম্ভাবনা
এই ধরনের বায়োঅ্যাকোস্টিক্স এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির আরও অনেক সম্ভাব্য ব্যবহার রয়েছে যা ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিপ্লব আনতে পারে। এখানে কিছু সম্ভাব্য ক্ষেত্র উল্লেখ করা হলো:
১. শ্বাসযন্ত্রের অন্যান্য রোগ নির্ণয়
কাশি, শ্বাসের শব্দ এবং স্নিফলসের মতো শারীরিক শব্দ বিশ্লেষণ করে নিউমোনিয়া, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD), অ্যাজমার মতো শ্বাসযন্ত্রের রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। এগুলো রোগীর শারীরিক অবস্থা বিশ্লেষণে সহায়ক হবে, বিশেষ করে যেখানে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের অভাব রয়েছে।
২. শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য শব্দ বিশ্লেষণ
শিশুদের কান্না এবং শব্দ বিশ্লেষণ করে তাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো যেমন নিউরোলজিক্যাল অসুস্থতা, জন্মের সময় শ্বাসকষ্ট এবং অন্যান্য সমস্যাগুলো সনাক্ত করা সম্ভব। এটি নবজাতকদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
৩. মানসিক স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ
কণ্ঠের বিভিন্ন সূক্ষ্ম পরিবর্তন যেমন কণ্ঠের কম্পন এবং স্বরের উচ্চতার মাধ্যমে ডিপ্রেশন, অ্যানজাইটি, এবং স্ট্রেসের মতো মানসিক সমস্যাগুলো শনাক্ত করা যেতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং বায়োঅ্যাকোস্টিক্স মানসিক স্বাস্থ্য বিশ্লেষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
৪. হৃদযন্ত্রের অসুখ শনাক্তকরণ
শরীরের ভেতরে উৎপন্ন হওয়া কিছু বিশেষ শব্দ, যেমন হার্টবিট এবং শ্বাসের ছন্দ বিশ্লেষণ করে হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন অসুখের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সনাক্ত করা সম্ভব হতে পারে। এর ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি আগাম নির্ণয় করা সহজ হবে।
৫. বয়স্কদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ
বয়স্কদের কণ্ঠ এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের ধরণ বিশ্লেষণ করে তাদের শারীরিক দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। এটি ঘরে বসেই বয়স্কদের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।
৬. অটিজম এবং অন্যান্য নিউরোডেভেলপমেন্টাল সমস্যার শনাক্তকরণ
শিশুদের কথা বলার ধরন এবং অন্যান্য শব্দ যেমন ওহ, আহ, গার্গলিং বিশ্লেষণ করে অটিজম এবং অন্যান্য নিউরোডেভেলপমেন্টাল সমস্যার প্রাথমিক শনাক্তকরণ সম্ভব হতে পারে।
৭. শ্রবণ সমস্যার নির্ণয়
শিশু ও বয়স্কদের শ্রবণ সমস্যার নির্ণয়ে শব্দ বিশ্লেষণ প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে, যা আগাম শ্রবণ সমস্যা সনাক্ত করতে সাহায্য করবে।
৮. শারীরিক কর্মক্ষমতা এবং ক্লান্তি নির্ণয়
কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে শ্বাসের ধরণ এবং শব্দ বিশ্লেষণ করে শারীরিক কর্মক্ষমতা এবং ক্লান্তি নির্ধারণ করা যেতে পারে।
৯. করোনারি আর্টারি রোগ শনাক্তকরণ
বায়োঅ্যাকোস্টিক্স প্রযুক্তির সাহায্যে হৃদযন্ত্রের নির্দিষ্ট শব্দ বিশ্লেষণ করে করোনারি আর্টারি রোগের প্রাথমিক লক্ষণ সনাক্ত করা সম্ভব হতে পারে।
১০. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে বহুমুখী রোগ নির্ণয়
এই ধরনের প্রযুক্তি আরও উন্নত হলে, এটি সাধারণ ফিটনেস এবং স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণেও ব্যবহৃত হতে পারে, যেখানে কাশি, শ্বাস, হৃদস্পন্দন এবং অন্যান্য শারীরিক কার্যকলাপ বিশ্লেষণ করে প্রতিদিনের স্বাস্থ্য তথ্য প্রদান করবে।
এই প্রযুক্তির ব্যবহার শুধু রোগ নির্ণয়েই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যসেবার পরিধি বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
প্রযুক্তির সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ
যদিও এই প্রযুক্তি রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে, তবে চ্যালেঞ্জও কম নয়। গ্রামীণ এলাকায় অনেকে প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত নয়, ফলে সঠিকভাবে কাশি রেকর্ড করা তাদের জন্য জটিল হতে পারে। এছাড়াও, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর নির্ভরতা অনেক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিকর ফলাফলও দিতে পারে। তবে স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই বিপ্লব নিয়ে আশাবাদী ডাক্তার এবং প্রযুক্তিবিদরা।
উপসংহার
বায়োঅ্যাকোস্টিক্সের উপর ভিত্তি করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি রোগ শনাক্তকরণে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। শব্দ এবং সাউন্ড-ভিত্তিক এই প্রযুক্তি রোগের প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করার পাশাপাশি সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য পরীক্ষা ব্যবস্থাও নিয়ে আসছে।
Leave a comment