[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]নবায়নযোগ্য জৈব জ্বালানি এর গবেষক ড. আশরাফুল আলম এবার বিজ্ঞানী.অর্গের সাথে এক সাক্ষাতকার দিয়েছেন। তিনি বর্তমানে চীনের Guangzhou Institute of Energy Conversion-Chinese Academy of Sciences এ গবেষনার করছেন। বাংলাদেশে University of Development Alternative (UODA) বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োটেকনলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতক ও উচ্চস্নাতক সমাপ্ত করে চীনের Dalian University of Technology এ পিএইচডি ডিগ্রী নেন।
ড. আশরাফুল আলম কিছুদিন আগে elsevier magazine এ সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ reviewer হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন। একজন বাংলাদেশী হিসাবে এটা আমাদের জন্য খুবই বড় একটি সুখবর। বিজ্ঞানী.অর্গের এর পক্ষ থেকে আমরা তাকে শুভেচ্ছা জানাই। আশা করি তার পথ ধরে আমাদের নবীন বিজ্ঞানীরা আরও সামনে এগিয়ে যাবে।[/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]
বিজ্ঞানী.অর্গঃ আপনার গবেষণার বিষয়বস্তু কি?
ড. আশরাফুল আলমঃ আমি গবেষণা করি নবায়নযোগ্য জৈব জ্বালানি (renewable bio-energy) নিয়ে। আরও বিস্তারিত ভাবে বললে, সবুজ শৈবাল (algae) থেকে তরল জ্বালানি যেমন বায়ো-ডিজেল (bio-diesel), বায়ো ইথানল (bio-ethanol) ইত্যাদি তৈরি করা।[/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]
বিজ্ঞানী.অর্গঃ আপনার প্রাপ্ত আবিষ্কার কোন কোন ক্ষেত্রে অবদান রাখবে?
ড. আশরাফুল আলমঃ সবুজ শৈবাল মাইক্রো এবং ম্যাক্রো ২ প্রকার হয়। আমরা মাইক্রো শৈবাল (microalgae) কে এ আমাদের গবেষণায় ব্যাবহার করি । মাইক্রো শৈবাল আকারে অনেক ছোট (2-30 micro meter) এবং পানিতে মিশে থাকে। আমার PhD গবেষণার মূল টার্গেট ছিল এমন একটা উপায় খুঁজে বের করা যাতে করে পানি থেকে ক্ষুদ্রাকার শৈবালগুলোকে কম শক্তি ও খরচে সংগ্রহ (harvest) করা যায়। গবেষণা এবং অর্থনৈতিক নিরীক্ষা (economical analysis) দ্বারা প্রমাণিত শৈবাল থেকে জৈব জ্বালানি উৎপাদনের মোট খরচের প্রায় ৩০% harvestig এর জন্য হয়ে থাকে। আমরা Biofocculation নামে এক নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করি যা অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভাবে এই শিল্পের জন্য অনেক ভাল আবিষ্কার বলে সমাদৃত হচ্ছে । ওই প্রোজেক্ট এ কাজের সময় আমি Algae flocculation মেকানিজম নিয়ে গবেষণা করি এবং flocculation এর জন্য দায়ী polysaccharide মৌল- এটা প্রমাণ করতে সমর্থ হই। তাছাড়াও আমরা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রক্রিয়ায় ২ টি নতুন শৈবাল পাই যাদের flocculation এর হার সাধারণ শৈবাল থেকে অনেক বেশি । সাধারণত (transestarification) প্রক্রিয়ায় শুকনো শৈবাল থেকে বায়ো-ডিজেল উৎপাদন করা হয় , শৈবাল শুকনো করার জন্য ও একরকম খরচ আছে। আমরা আমাদের সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছি যেখানে শৈবাল শুকনো প্রক্রিয়াটিই বাদ দিয়ে ভেজা শৈবাল থেকে বায়ো-ডিজেল (Biodiesel) উৎপাদনের একধাপ (one-step) প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেছি। আমরা এখন পাইলট স্টেজ এ কাজ করছি পুরো প্রক্রিয়াকে অপটিমাইজ করার জন্য, আমরা খুবই আশাবাদী আমাদের সফলতা সবুজ শৈবাল (algae) থেকে তরল জ্বালানি উৎপাদন খরচ অনেক কমিয়ে দেবে এবং পরিবেশ রক্ষায় বড় অবদান রাখবে। [/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]
বিজ্ঞানী.অর্গঃ চীনে গবেষণা করতে কেমন লাগছে?
ড. আশরাফুল আলমঃ চীনের গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার সুযোগ সুবিধা আন্তর্জাতিক মানের । গবেষণার জন্য চীন প্রচুর বিনিয়োগ করছে। আমার গবেষণা এখানে ভাল চলছে । আমার নিজের একটি প্রোজেক্ট (প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা) সহ ৩ টি গবেষণা প্রোজেক্ট এ কাজ করছি। গত ২ বছরে ১৫ টি গবেষণা প্রবন্ধ আন্তর্জাতিক স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে, ৬ টি এর মত আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সম্মেলন এ অংশগ্রহণ করে গবেষণার বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করেছি । সবমিলিয়ে বলা যায় চীনে গবেষণা – আমি আনন্দের সাথেই করছি । [/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]
বিজ্ঞানী.অর্গঃ চাইনিজ একাডেমী অফ সায়েন্স, এই প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে বলুন।
ড. আশরাফুল আলমঃ চাইনিজ একাডেমী অফ সায়েন্সকে আমি Innovation of Powerhouse হিসেবে পরিচয় করাতে পছন্দ করবো । চাইনিজ একাডেমী অফ সায়েন্স এর জন্ম ১৯৪৯ সালে। প্রতিষ্ঠানটির ১০৪ গবেষণা ইন্সটিটিউট, ১২ ব্রাঞ্চ অ্যাকাডেমি, ৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ৩৯ টি টেকনোলজি টান্সফার সেন্টার এবং ১১টি সহযোগী সংস্থা সমগ্র চায়না জুড়ে ছড়িয়ে আছে। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় সত্তর হাজার লোক কাজ করে যাদের মধ্যে ষাট হাজার গবেষক যাদের সকলের PhD আছে এবং ওনারা সহযোগী প্রফেসর অথবা প্রফেসর সমপর্যায়ের। তাদের গবেষণার বিষয়বস্তু ন্যাচারাল সায়েন্স থেকে শুরু করে স্টিম সেল ও আর্টিফিশিয়াল নলেজ পর্যন্ত বিস্তৃত । চাইনিজ একাডেমী অফ সায়েন্স ২৬৭ টি একাডেমিক জার্নাল নিয়মিত প্রকাশ করছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি গেল বছরে গবেষণা প্রবন্ধ ও গবেষণা উর্দিটি এর মাপকাঠিতে পৃথিবী সেরা হয়েছে ।
আমি কাজ করছি কুনাগংযু ইন্সটিটিউট অব এনার্জি কনভারসন- চাইনিজ একাডেমী অফ সায়েন্স এ। এই ইন্সটিটিউট এ নবায়নযোগ্য জ্বালানি (সৌর জ্বালানি, জৈব জ্বালানি, বায়ো গ্যাস, বায়ু ও পানি শক্তি ইত্যাদি) নিয়ে গবেষণা করা হয়। [/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]
বিজ্ঞানী.অর্গঃ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এখন চীন বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাদের এই ঊথানটি কীভাবে সম্ভব বলে আপনি মনে করেন?
ড. আশরাফুল আলমঃ বিজ্ঞান গবেষণায় চায়নার আজকের অবস্থান কোন দুর্ঘটনা নয়। চীন সরকারের সফল নেতৃত্ব সুদরপ্রসারি চিন্তার ফলেই তাদের আজকের অবস্থান। বিজ্ঞান গবেষণার উন্নয়নের জন্য পরিবেশ ( A high quality intellectual environment) সৃষ্টি প্রথম কাজ , চাইনিজ বিশ্ববিদ্যালয়-গবেষণাগারে এরকম গবেষণা পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যা শিক্ষার্থী গবেষকদের সব রকম চাহিদার জোগান দিচ্ছে , এখানকার শিক্ষকেরা দীর্ঘ সময় নিয়ে ল্যাবে থাকেন, শিক্ষার্থীদের গবেষণার খোঁজ নেওয়া, তাদের আর্টিকেল পাবলিকেশনের জন্য তৈরি করা , ফান্ড সংগ্রহ এসব কাজ নিয়ে পরে থাকে । বেশি সময় ল্যাবে থাকার ফলে যা হয়, প্রফেসর ল্যাবের গবেষকদের ঠিক মত গড়ে তুলতে পারে। এখানকার শিক্ষকেরা শিক্ষার বাহিরে সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নন। বিশ্ববিদ্যালয় তথা গবেষণায় নিয়োজিত লোকদের প্রোমোশন হয় তার আর্টিকেল, ফান্ড, তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কত মাস্টার্স এবং পিএইচডি ডিগ্রি এসবের উপর, বয়স কিংবা অন্য সম্পর্ক এখানে বিবেচ্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় -শিক্ষক -শিক্ষার্থী মিলে এই high quality intellectual environment টা বজায় রাখে নিজের এবং দেশের উন্নয়নের জন্য।
বিজ্ঞান গবেষণার ফলাফল কাজে লাগিয়ে চীন অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ভাবে নিজেরদের অবস্থান উন্নত করেছে। গত দুইদশকে প্রতি বছর চায়না গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে আস্তে আস্তে আমেরিকা-ইউরোপকেও ছাড়িয়ে গেছে, তার ফলশ্রুতিতে গবেষণায় আজ চায়নার অবস্থান অন্য সব দেশের উপরে। ২০০৭ সাল থেকে চীন natural science and engineering এ পৃথিবীর অন্য যেকোনো দেশ থেকে বেশি পি এইচ ডি ডিগ্রি দিয়েছে। তারা এই ইনভেস্টমেন্ট দেশ ও দেশের বাইরে দুই জায়গায়ই করছে । দেশে গবেষণার পরিবেশ, গবেষণার খরচ, বৃত্তি দিয়ে অন্যদেশের মেধাবীদের নিয়ে আসার জন্য যেমন ইনভেস্ট করছে তেমন করে চাইনীজদের ও বৃত্তি দিয়ে পৃথিবী বিখ্যাত গবেষণাগারে পাঠাচ্ছে অন্য দেশের টেকনোলজি রপ্ত করে আসার জন্য। এসব মেধাবী যারা উন্নত দেশে গিয়েছে কিংবা যারা আগে থেকেই আছে তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য আছে উচ্চ সুযোগ-সুবিধা সহ সরাসরি associate/professor লেভেল এ চাকরি , নিজের ল্যাব স্থাপনের প্রাথমিক সব খরচ সহ নানাবিধ আয়োজন । সরকার, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ফান্ডিং প্রতিষ্ঠান (funding organization) এর সফল নেতৃত্ব , কর্মপরিকল্পনা, এবং এর সঠিক বাস্তবায়নের ফলে চায়না আজ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে।[/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]
বিজ্ঞানী.অর্গঃ কে আপনাকে বৈজ্ঞানিক হবার জন্য উৎসাহ দিয়েছে?
ড. আশরাফুল আলমঃ আমার আজকের অবস্থান এ আসার অনুপ্রেরণা অনেকের। অনুপ্রেরণার শুরু পরিবার থেকেই। প্রাতিষ্ঠানিক অথবা মেনটর এর কথা বললে আমি আমার হাই স্কুল এর জীববিজ্ঞানের শিক্ষক জনাব হান্নান স্যার ( চন্দনপুর এম এ উচ্চ বিদ্যালয় ) এর কথা স্মরণ করবো , তিনি বলতেন মুরগীর গোসত খাবার সময় হাড়ের গঠন যত্ন করে দেখে নিতে- ওনার ওই বাক্যটা বিজ্ঞানের অন্যতম শর্ত (Observation করার স্পৃহা) আমাকে শিখিয়েছে , তার পর আসে বিশ্ববিদ্যালয় (ইউডা) জীবনের কথা , প্রফেসর ড. রহমত উল্লাহ্, প্রফেসর ড. রওনক জাহান , প্রফেসর ড. আতাহুজামান, সফিউল আযম সহ অনেকে আমক গবেষনার হাতেখড়ি দিয়েছেন। তার পরে আমার PhD মেনটর প্রফেসর বাই ফেংও (Bai Fengwu) এবং যাও সিনসিং (Zhao Xinqing) আমাকে শিখিয়েছেন কিভাবে একাগ্রতা নিয়ে দীর্ঘ সময় গবেষণার মননিবেশ করে থাকতে হয় নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত। আমার বর্তমান বস প্রফেসর জংমিং ওয়াং (Zhongming Wang) আমাকে দিচ্ছে গবেষণার অবাধ স্বাধীনতা যা PhD পরবর্তী সময়ে আত্ম নির্ভরশীল গবেষক হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করছে । এরকম ভাবে অনেকের অনুপ্রেরণা, উপদেশ নিয়ে এ আমি নিজেকে গড়ে নিচ্ছি। [/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]
বিজ্ঞানী.অর্গঃ আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
ড. আশরাফুল আলমঃ আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হল জৈব জ্বালানির উন্নয়নে নিজের গবেষণা চালিয়ে যাওয়া যাতে করে আমার কাজ জ্বালানি সমস্যায় অবদান রাখতে পারে। বাংলাদেশের জ্বালানি সমস্যায় ও নিজেকে নিয়োজিত করার সুযোগ খুজছি । পাশাপাশি দেশের বিজ্ঞান প্রসারে কাজ করা ও নিজ এলাকার ( মেঘনা উপজেলা) শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখা। [/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]
বিজ্ঞানী.অর্গঃ বিজ্ঞানী.অর্গের বেশিরভাগ পাঠক বাংলাদেশের নবীন প্রজন্ম যারা বিজ্ঞানে কাজ করতে উৎসাহী। তাদের জন্য আপনার ম্যাসেজ কি?
ড. আশরাফুল আলমঃ বাংলাদেশের নবীন প্রজন্ম যারা বিজ্ঞানে কাজ করতে উৎসাহী তাদের জন্য আমার উপদেশ থাকবে, তারা ইউনিভার্সিটি এর প্রথম ডিগ্রি (undergraduate) পাবার পর চীন , কোরিয়া এসব দেশ এ মাস্টার্স এর জন্য বৃত্তির জন্য অ্যাপ্লাই করতে । মাস্টার্স ডিগ্রি হয়ে গেলে PhD সহ উচ্চতর গবেষণার জন্য আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশ এ পারি জমাতে পারবে কিংবা চায়না, কোরিয়া, জাপান ইত্যাদি দেশে সহজেই নিজের গবেষণা চালিয়ে যাতে পারবে। । আমার এই বিশেষ দেশের (চায়না , কোরিয়া) নামের পেছনে যুক্তি হল, মাস্টার্স করতে করতে নিজেদের রিয়েল গবেষণার পরিবেশের সাথে পরিচিত, গবেষণার বেসিক টেকনিকগুলো জানা ইত্যাদি হয়ে যাবে, যা তাদের নেক্সট স্টেপে সফল হতে বিরাট ভাবে সাহায্য করবে। [/box]
[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]
বিজ্ঞানী.অর্গঃ বিজ্ঞানী.অর্গে সাক্ষাৎ দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ড. আশরাফুল আলমঃঃ বিজ্ঞানী.অর্গ এবং আপনাকেও ধন্যবাদ। অনেক অনেক ধন্যবাদ পাঠকদের । [/box]
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে আরো নতুন নতুন সংবাদ জানতে সাবস্ক্রাইব করুন।
[mc4wp_form id=”3448″]
Leave a comment