তোমরা যারা খিদা পেটে বাসায় ঢুকেই খাবার চাই খাবার চাই বলে হৈ চৈ বাধিয়ে ফেল। তখন নিশ্চয় দেখেছ তোমাদের মা-বাবা রা দ্রুত খাবার গরম করে দেন মাইক্রোওয়েভ ওভেন দিয়ে। সাধারণ চুলাতে খাবার গরম করতে বসলে নিশ্চয় তুমি তুলকালাম কান্ড বানিয়ে বসতে। মাইক্রোওয়েভ ওভেন দিয়ে খুব দ্রুততার সাথে যে কোন খাবার গরম করে দিতে পারেন। আর এই কাজটি সম্ভব হচ্ছে মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ এর কল্যানে। চল আজকে বিস্তারিত এই প্রযুক্তিটি সমন্ধে জানি।
আমাদের আজকের নিত্যনৈমিত্তিক কাজে মাইক্রোওভেন বেশ প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে৷ আমরা সংক্ষেপে এটিকে মাইক্রোওভেন বললেও এটির পুরো নাম, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ( Microwave Oven)। অনেকে আবার এটিকে ওভেন নামেও বলেন। দিনদিন বাংলাদেশেও এর ব্যবহার বাড়ছে৷ আগে যেখানে ফ্রিজ ছিল মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য একটি স্বপ্নের অংশ, আজ সেখানে মাইক্রোওয়েভ ওভেন কিনবার জন্য মানুষ মধ্যবিত্তরা ভাবছে৷ কিন্তু কীভাবে কাজ করে এই মাইক্রোওয়েভ ওভেন৷ সাধারণ ওভেনে যেখানে খাবারকে সাধারণভাবে গরম করা হয় সেখানে মাইক্রোওয়েভ ওভেন দিয়ে খুব দ্রুত কীভাবেই বা খাবারকে গরম করা হয়?
কিভাবে কাজ করে?
মাইক্রোওয়েভ ওভেন বিদ্যুৎ থেকে শক্তি নিয়ে মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ তৈরি করে। এই মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গগুলি খাবারের জলীয় অণুগুলিকে কম্পন করায় এবং সেই কম্পন থেকে তাপ তৈরি হয়, যা খাবারকে গরম করে। এই প্রক্রিয়ায় মাইক্রোওয়েভ ওভেন খাবারের মধ্যে উপস্থিত জল, ফ্যাট, ও অন্যান্য উপাদানকে গরম করে।
মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গের দৈর্ঘ্য খুব ছোট, এবং এগুলো বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গের একটি রূপ। এটি সরাসরি খাবারের মধ্যে প্রবেশ করে এবং অণুগুলির মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের মধ্যে উত্তাপ সৃষ্টি করে। ফলে খাবারের ভিতরের অংশও দ্রুত গরম হয়, যা প্রথাগত ওভেনের তুলনায় অনেক দ্রুত কার্যকর।
ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক (ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক) বলতে বোঝানো হয় এমন একটি শক্তি ক্ষেত্র যা বিদ্যুৎ এবং চুম্বকত্বের সমন্বয়ে গঠিত। যখন বিদ্যুৎ চলাচল করে, তখন এর চারপাশে একটি চৌম্বক ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়, এবং একইভাবে চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে বিদ্যুৎ শক্তিও প্রভাবিত হয়। এই দুটি প্রক্রিয়া একে অপরের সাথে সম্পর্কিত, যা একত্রে ইলেকট্রোম্যাগনেটিজম নামে পরিচিত। ইলেকট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গের উদাহরণ হলো আলো, রেডিও তরঙ্গ, মাইক্রোওয়েভ, এক্স-রে ইত্যাদি। এই তরঙ্গগুলির মধ্যে বিদ্যুৎ এবং চুম্বকীয় ক্ষেত্র একত্রে স্থানান্তরিত হয় এবং এদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে এদের ব্যবহার নির্ধারিত হয়।
মাইক্রোওয়েভ ওভেনের প্রধান সুবিধাসমূহ
১. দ্রুত রান্না: প্রথাগত পদ্ধতিতে রান্না করার চেয়ে মাইক্রোওয়েভ ওভেন অনেক দ্রুত খাবার গরম করতে পারে। আধুনিক জীবনের ব্যস্ততায় এটি সময় সাশ্রয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২. স্বাচ্ছন্দ্য: মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহার করা খুব সহজ। এর মাধ্যমে এক বোতাম চাপিয়েই খাবার গরম করা বা রান্না করা যায়।
৩. এনার্জি সাশ্রয়ী: মাইক্রোওয়েভ ওভেন কম বিদ্যুৎ খরচে খাবার গরম করতে সক্ষম। প্রথাগত ওভেনের চেয়ে এটি অনেক বেশি এনার্জি সাশ্রয়ী।
৪. গরম করার সমতা: মাইক্রোওয়েভ ওভেন খাবারকে ভিতর থেকে বাইরে সমানভাবে গরম করে। এটি নিশ্চিত করে যে খাবার পুরোপুরি গরম হয়েছে এবং কোনো অংশ ঠান্ডা থাকেনি।
মাইক্রোওয়েভে গরম করা খাবার কি নিরাপদ?
মাইক্রোওয়েভ ওভেনে খাবার গরম করা সাধারণত নিরাপদ। মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ খাবারের মধ্যে উপস্থিত জলীয় অণুগুলিকে কম্পন করে, যার ফলে তাপ উৎপন্ন হয় এবং খাবার গরম হয়। এতে কোনো রকম ক্ষতিকর বিকিরণ খাবারে থাকে না। মাইক্রোওয়েভ শুধুমাত্র খাবারকে গরম করার জন্য ব্যবহৃত হয়, এবং এর ফলে খাবারের পুষ্টিগুণও অনেকাংশে অক্ষত থাকে।
মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহারের সতর্কতা
যদিও মাইক্রোওয়েভ ওভেন একটি নিরাপদ যন্ত্র, তবুও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। যেমন:
- ধাতব পাত্র ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ ধাতব পাত্রের সাথে প্রতিক্রিয়া করে স্পার্ক তৈরি করতে পারে।
- মাইক্রোওয়েভে প্লাস্টিকের পাত্র ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকতে হবে। শুধুমাত্র মাইক্রোওয়েভ সেফ প্লাস্টিক ব্যবহার করা উচিত।
- ওভেনের ঢাকনা বা দরজা সবসময় ঠিকভাবে বন্ধ করতে হবে, যেন কোনো তরঙ্গ বাইরে না আসতে পারে।
মাইক্রোওয়েভ ওভেনে ধাতব পাত্র ব্যবহার করা উচিত নয় কারণ মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ ধাতব পাত্রের সাথে প্রতিক্রিয়া করে। ধাতব পাত্র মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ প্রতিফলিত করে এবং এই প্রতিফলনের ফলে স্পার্ক বা স্ফুলিঙ্গ তৈরি হতে পারে। এই স্পার্ক ওভেনের ভেতরে ক্ষতি করতে পারে এবং আগুন লাগার ঝুঁকিও থাকে। এজন্য মাইক্রোওয়েভে শুধুমাত্র মাইক্রোওয়েভ সেফ পাত্র, যেমন সিরামিক বা মাইক্রোওয়েভ-সেফ প্লাস্টিকের পাত্র ব্যবহার করা উচিত।
মাইক্রোওয়েভ ওভেনের পাশে কি রেডিয়েশন বের হয়?
মাইক্রোওয়েভ ওভেনের কার্যপ্রণালীতে মাইক্রোওয়েভ রেডিয়েশন ব্যবহৃত হয়, তবে এটি ওভেনের ভেতরে থাকে। মাইক্রোওয়েভ ওভেনের দরজা এবং গঠন এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে রেডিয়েশন ওভেনের বাইরে না আসে। ওভেনের দরজায় একটি মেটাল মেশ বা নেট থাকে, যা বিশেষ ডিজাইন করা হয় মাইক্রোওয়েভ রেডিয়েশন আটকে রাখার জন্য।
ওভেনের ভিতরে থাকা নেটের কাজ কী?
মাইক্রোওয়েভ ওভেনের দরজায় থাকা মেটাল নেট বা জালি মূলত রেডিয়েশন আটকে রাখে। মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য বড়, কিন্তু নেটের ছোট ছোট ছিদ্রগুলি অনেক ছোট। এই কারণে মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ নেট দিয়ে বাইরে যেতে পারে না। তবে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনেক ছোট, তাই নেটের মধ্য দিয়ে আমরা ওভেনের ভিতরের অংশ দেখতে পারি।
এভাবে নেটটি ওভেনের ভেতরে থাকা রেডিয়েশনকে আটকে রাখে, যাতে বাইরে কোনো রেডিয়েশন ছড়িয়ে না পড়ে এবং আমরা নিরাপদ থাকতে পারি।
সাধারণত মাইক্রোওয়েভ ওভেন নিরাপদ, এবং যদি ওভেনের দরজা সঠিকভাবে বন্ধ থাকে এবং কোনো ক্ষতি না থাকে, তাহলে রেডিয়েশন বাইরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম।
মাইক্রোওয়েভ ওভেনের বিভিন্ন ব্যবহার
মাইক্রোওয়েভ ওভেন শুধু খাবার গরম করার জন্যই নয়, রান্নার বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা হয়। এটি দিয়ে রুটি বানানো, কেক বেক করা, পপকর্ন তৈরি করা, এবং এমনকি নির্দিষ্ট কিছু খাবার ভাজা যায়। এ ছাড়াও, অনেক মাইক্রোওয়েভ ওভেন মিশ্রিত মোডে আসে, যা ওভেন এবং গ্রিলের সুবিধা একই সাথে প্রদান করে। আজকাল নতুন ধরনের মাইক্রোওয়েভ ওভেন বাজারে এসেছে যা দিয়ে শুধু মাত্র খাবার গরম করাই নয় খাবার তৈরি করা যায়, সামনে এমনও দিন আসবে, মাত্র এক মিনিটে ওভেন দিয়ে তৈরি করে ফেলতে পারবেন পোলাও, কোরমা জাতীয় খাবার৷
কি লেখা পড়ে কি তোমাদের খিদা পেয়ে গেল? তাহলে মা’কে বলো খাবারটা মাইক্রোওয়েভ ওভেনে গরম করে দিতে।
thanks a lot, i neded this info.
biggani.com সকল তথ্য আপডেট চাই।