বায়োডিজেল হলো উদ্ভিজ্জ তেল থেকে তৈরি এক
ধরনের বিকল্প জ্বালানী। রসায়নের ভাষায় বায়োডিজেল হলো উদ্ভিদ হতে
প্রাপ্ত তেলের মিথাইল বা ইথাইল এস্টার। ধারণা করা হয়, সালোক সংশ্লেষণের
সময় সৌরশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত হয়। এই সঞ্চিত রাসায়নিক শক্তিই
হলো বায়োডিজেলের শক্তির উৎস।
বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ থেকেই বিশ্বব্যাপী তৈরি হচ্ছে বায়োডিজেল। সাধারণত
সূর্যমূখী, নারিকেল, সুগারবিট, আখ, পাম, সয়াবিন প্রভৃতি উদ্ভিদই
বায়োডিজেল তৈরির বহুল ব্যবহৃত উৎস। এসব উদ্ভিদ “Energy Crop” নামে
পরিচিত। সম্প্রতি আমাদের দেশে গবেষণায় দেখা গেছে ‘জাথ্রুপা’ উদ্ভিদের ফল
থেকে বায়োডিজেল তৈরি করা সম্ভব। স্থানীয়ভাবে এই ‘জাথ্রুপা’ উদ্ভিদ
‘জামালগোটা’ নামেই বেশি পরিচিত। উদ্ভিজ্জ তেল ছাড়াও অনেক সময় প্রাণীজ
চর্বি থেকেও বায়োডিজেল তৈরি করা হয়।
সাধারণত প্রচলিত পেট্রোলিয়াম ডিজেলের সাথে মিশিয়ে বায়োডিজেল ব্যবহার
করা হয়। ১০০% বায়োডিজেলকে ইঞ্জিনে ব্যবহারের জন্য ইঞ্জিনের কিছুটা
মডিফিকেশন প্রয়োজন হয়। না হলে এতে ইঞ্জিনের সমস্যা হতে পারে। এছাড়া
শীতকালে ১০০% বায়োডিজেল ব্যবহারে ইঞ্জিনের পারফরম্যান্স ভালো হয় না। তাই
বায়োডিজেল ব্যবহারের আগে ইঞ্জিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষজ্ঞের
পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
বায়োডিজেল ব্যবহারে রয়েছে অনেকগুলো সুবিধা। এগুলো হলো-
১.উৎপাদন খরচ কম
২.উৎপাদন করার প্রক্রিয়া সহজ
৩.দাম কম
৪.পরিবেশ বান্ধব
৫.অবিষাক্ত
৬.ইঞ্জিনের কোনো ক্ষতি করে না
৭.বায়োডিজেল ব্যবহার করতে সাধারণত ইঞ্জিনে কোনো ধরনের রূপান্তরের প্রয়োজন হয় না।
৮.বায়োডিজেল তৈরির কাঁচামাল সহজলভ্য
৯.বায়োডিজেল তৈরির সময় বাই-প্রোডাক্ট হিসেবে তৈরি হয় গ্লিসারল যা সাবান শিল্পে ব্যবহার করা যায়।
১০.অল্প খরচে বায়োডিজেল তৈরির প্লান্ট স্থাপন করা যায়।
১১. বায়োডিজেলের ফ্লাশ পয়েন্ট ১৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস যা পেট্রোলিয়াম
ডিজেলের (৭৭ ডিগ্রী সে.) চেয়ে অনেক বেশি। তাই পেট্রোলিয়াম ডিজেলের চেয়ে
বায়োডিজেল পরিবহন অনেক সহজতর। উল্লেখ্য, জ্বলানীর ফ্লাশ পয়েন্ট হলো যে
তাপমাত্রায় তা জ্বলে উঠে।
এ পর্যন্ত আবিস্কৃত সবগুলো বিকল্প জ্বালানীর মধ্যে বায়োডিজেল হচ্ছে
সবচেয়ে পরিবেশ বান্ধব। বিকল্প জ্বালানী হিসেবে বায়োডিজেল বিশ্বের পরিবেশ
দূষণ রোধের অগ্রদূত এনভায়রনমন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি (EPA)-এর অনুমোদন
পেয়েছে। EPA জানিয়েছে বায়োডিজেল পরিবেশ এবং মানুষের জন্য হবে
আর্শীবাদস্বরূপ। আসুন এক নজরে দেখে নেই বায়োডিজেল পরিবেশের জন্য কতটুকু
ইতিবাচকঃ
>> বায়োডিজেল কার্বন মনোক্সাইডের নির্গমন কমায় ৫০% এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমন কমায় ৭৮%
>> বায়োডিজেল বিষাক্ত অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বনের পরিমাণ অনেক কম।
>> বায়োডিজেলে বিষাক্ত সালফারের পরিমাণ খুব কম।
>> ইঞ্জিন চালিত নৌকায় বায়োডিজেল ব্যবহার করলে পানি দূষণও অনেক কমে যাবে।
বাংলাদেশেও সাম্প্রতিককালে বায়োডিজেল নিয়ে আলোচনা হয়েছিলো। বাংলাদেশ
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় সহ বেশ কিছু
বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ব্যাপারে গবেষনা হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে এখনও এ
ব্যাপারে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য কিছু হয়নি। সম্ভবত কিছু সেমিনারের পর
অন্যান্য বিষয়ের মতো বায়োডিজেলের ব্যাপারটিও ঝিমিয়ে পড়েছে। তবে আমাদের
দেশে রেললাইনের দু’পাশে কিংবা রাস্তার দু’পাশে পতিত জমিতে জাথ্রুপার মতো
‘Energy Crop’ চাষ করা যেতে পারে।
সবকিছুরই একটি নেতিবাচক দিক থাকে। সাম্প্রতিককালে বায়োডিজেলের
সম্ভাবনার পাশাপাশি এর নেতিবাচক দিকগুলো নিয়েও ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক
হচ্ছে। কিছুদিন আগে বিশ্বের সর্বোচ্চ বায়োফুয়েল উৎপাদনকারী দেশ
ব্রাজিলের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের একটি চুক্তি হবার পর এই বিতর্ক আরোও চাঙ্গা
হয়েছে। এমনিতেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে পাল্লা
দিয়ে খাদ্যশস্যের উৎপাদন করতে পারছে না। সেখানে বায়োডিজেল উৎপাদনের জন্য
Energy Crop উৎপাদন হালে কতোটা পানি পায় সেটাই এখন দেখার বিষয়…
[ছবিসূত্রঃ ইন্টারনেট]
কিছুদিন আগের খাদ্যসঙকটের পেছনে অনেকগুলি কারণের মাঝে ছিল বায়োফুএয়ল।
শেষ প্যারাতে সে কথা বলা হয়েছে নেতিবাচক দিক হিসেবে…