কখনও ভেবে দেখেছেন যে মাছি কেন এত দ্রুত এক স্থান থেকে আরেক স্থানে উড়ে বেড়ায় ? কাঠবেড়ালী কেন এত ছটফটে ? ছোট্ট চড়ুই, কুকুরছানা, বিড়ালছানা, এমনকি মানবশিশুরা এত চঞ্চল কেন ? প্রাপ্তবয়স্ক মানুষেরা সাধারণত অনেকটাই ধীর-স্থির। কিন্তু সমুদ্রের অতিকায় লেদ্যারব্যাক্ কচ্ছপেরা আরও বেশী ধীর গতিতে চলাফেরা করে কেন ? বস্তুত এই বিষয়টি নির্ভর করে প্রাণীদেহের বিপাক ক্রিয়ার হার-র উপর। আবার ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিন-র গবেষকেরা তিরিশেরও বেশী সংখ্যক স্পিসিস-র প্রাণীদের নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছেন যে, প্রাণীদেহে যে বিপাক ক্রিয়া চলে তার হারের সাথে যদি প্রাণীটির দেহের আকারকেও বিবেচনা করা হয়, তবে সেগুলির সাথে প্রাণীটির মস্তিষ্ক দৃষ্টিলব্ধ সময়গত তথ্য বিশ্লেষণ করতে যে সময় নেয় তার একটা সরল সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মস্তিষ্কের দৃষ্টিলব্ধ সময়গত তথ্য বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা সর্বাধিক ১০০ ফ্রেম্স প্রতি সেকেন্ড। মস্তিষ্কের দৃষ্টিলব্ধ সময়গত তথ্য বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা অথবা সহজ করে বললে, মস্তিষ্কের কোন চলচ্ছবি বোঝার ক্ষমতাকে “ফ্রেম রেট” বলে। পরীক্ষালব্ধ ফল বলছে – মাছির দেহের বিপাক ক্রিয়ার হার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ অপেক্ষা বেশী হওয়ায় মাছির গতিবিধি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ অপেক্ষা অনেক বেশী ত্বরিত তো বটেই, মাছি আকারেও অপেক্ষাকৃত অনেক ছোট হওয়ায় মাছির মস্তিষ্ক তাকে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের চার গুণেরও বেশী ফ্রেম রেট-এ দেখতে সাহায্য করে। অন্যভাবে বললে; মাছি সকল জীব, জড় ও জগৎকে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ অপেক্ষা চার গুণেরও বেশী স্লো মোশন্-এ দেখে – হাই স্পিড ক্যামেরা-য় কোন ফুটেজ-কে ঠিক যেমনটি দেখায়! ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরাও সাধারণত খুব চঞ্চল হয়। তাদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা যেতেই পারে, কিন্তু তাদের এই চঞ্চল স্বভাবের খুব বেশী বিরূদ্ধাচরণ করা ঠিক নয় কারণ প্রকৃতিই তাদেরকে এই চঞ্চল স্বভাব দান করে। তারা বড় হওয়ার সাথে সাথে তাদের দেহের আকার যেমন বড় হয়, তাদের দেহের বিপাক ক্রিয়ার হারও কমতে থাকে। ফলে জগৎকে প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় স্লো মোশন্-এ দেখার স্বভাব ও তাদের এই চাঞ্চল্য উভয়ই একটা বয়সের পরে নিজে থেকেই বিদায় নেয়।
আবার লেদ্যারব্যাক্ কচ্ছপের বিপাক ক্রিয়া প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ অপেক্ষা অনেক কম হারে ঘটে বলে লেদ্যারব্যাক্ কচ্ছপের গতিবিধি যদি আপনি পর্যবেক্ষণ করতে বসেন, কিছুক্ষণ পরই আপনার ঘুম পেয়ে যাবে ! এছাড়াও এদের চেহারা বিশাল বলে এদের মস্তিষ্কের যে অংশটি দৃষ্টিলব্ধ সময়গত তথ্যের বিশ্লেষণ করে সেটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রায় এক চতুর্থাংশ ফ্রেম রেট-এ এই জগৎকে দেখতে সাহায্য করে। ফলস্বরূপ এই প্রাণীটি চারপাশের জগৎকে দেখে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ অপেক্ষা অনেক বেশী ফাস্ট মোশন্-এ!