কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাতথ্যপ্রযুক্তি

টাকো বেলের এআই ড্রাইভ-থ্রু: ক্ষুধার জ্বালা আর যন্ত্রের ঢং

Share
Share

দেইখেন ভাই, রাত তখন প্রায় বারোটা। গাড়ির ভেতর আমি বসা, পেটের ভেতরে যেন গোরস্থানের বাঁশিওয়ালা ঢাক ঢাক করে আওয়াজ দিচ্ছে। সামনে টাকো বেলের সাইন—মনে হলো, আরেকটু পরেই বারিটো হাতে পামু, খিদার আগুন নিভে যাবে। গাড়ি ঢুকাই দিলাম ড্রাইভ-থ্রু লাইনে।

“একটা টাকো, সঙ্গে বাড়তি সস”—গলা খাঁকারি দিয়া মাইক্রোফোনে বললাম। হঠাৎ ওপাশে মানুষের গলা না, রোবটের মতো গম্ভীর আওয়াজ—“আপনার জন্য আঠারো হাজার গ্লাস পানি প্রস্তুত হইতেছে।”

হায় হায়! আমি টাকো চাই, এ আবার বন্যা বানাইতেছে! গাড়ির ভেতর একা বসে মনে হলো—ক্ষুধায় মরুম, তাও আবার এআই সাহেব জলের ভেলায় ভাসাইতে চাইছে।

টাকো বেল ভাবছিলো, আমেরিকা জুড়ে তারা নাকি বিপ্লব ঘটাইবো। ৫০০ শাখায় এআই বসাইছে—অর্ডার নেবো যন্ত্র, মানুষ কমামু, খরচ বাঁচামু। কিন্তু ফল হলো একেবারে ভেলকিবাজি। ভাঙা স্পিকারে চেঁচাইতে হয় আগেও, কিন্তু এখন যন্ত্র এসে হাসির খোরাক বানাইছে।

সামনের গাড়ির চালক ভাইজান ক্ষেপে জানালা থাইকা মাথা বাইর কইরা চিল্লাইতেছে—“ভাই, আমি বার্গার চাইছিলাম, কফি দিয়া দিলো ক্যান?” এদিকে এআই চুপ মেরে বসা—মনে হয় রাগ করসে। অথবা ভেতরে ভেতরে নতুন ক্লাসে ভর্তি হইছে, আবার পড়ালেখা শিখতেছে।

শুধু টাকো বেল না, ম্যাকডোনাল্ডসও একই ঝামেলা পাইছে। প্রথমে আইবিএমের এআই আনছে, অর্ডার এমন গুলাইছিলো যে দোকানের লোকজন মাথা খুইলা ফেলছিলো। পরে তারা প্রকল্প গুটাইলো। এখন আবার গুগলের সঙ্গে হাত মিলাইছে। ওয়েন্ডিসও ঘাটতি বাদ যায় নাই, স্বীকারই করছে—১৪ ফিসদ অর্ডারে মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়া চলেই না। অথচ গ্রাহকেরে গল্প শোনায়, “আমরাই ভবিষ্যত।” আরে ভাই, যদি ভবিষ্যত এইরকম হয়, তবে বর্তমানেই থাকি, খিদা মিটুক অন্তত!

ভাবতে পারেন, এইসব ঘটনা ঢাকায় ঘটলে কী হতো? আজিমপুর মোড়ের দোকানে গ্রাহক বললো—“একটা চিকেন বার্গার দেন।” এআই উত্তর দিলো—“তিন বস্তা ডিম ভাজি রেডি।” দোকানদার দৌড়াইয়া আসতো, “দাদা, যন্ত্রটা মেজাজ হারাইছে, আপনি বসেন।”

এইখানেই আসল শিক্ষা—সবখানে এআই ঢুকাইতে হইবো না। মানুষ যেই কাজটা বহুদিন ধরে ভালোভাবে কইরা আসতেছে, সেইখানে কোটি কোটি টাকা ঢাইলা যন্ত্র বসাইলে আর ভুলভ্রান্তি বাড়লে তা অগ্রগতি না, বরং হাস্যকর ব্যর্থতা।

প্রযুক্তির জায়গা অবশ্যই আছে। স্টক ম্যানেজমেন্ট, হিসাব-নিকাশ, ডেলিভারির সময় বের করা—এইসব কাজে এআই সহায় হইতে পারে। কিন্তু গ্রাহকেরে মুখোমুখি হইয়া সান্ত্বনা দেওয়া, ক্ষুধার্তেরে ধৈর্য ধরাইয়া খাবার ধরায়া দেওয়া—এই জায়গায় এআই এখনো স্কুলছুট ছাত্র।

অবশেষে জানালার সামনে আসলাম। দোকানের লোক হেসে বললো—“স্যার, আজ এআইটা একটু সমস্যা করছে।” আমি হেসে উত্তর দিলাম—“সমস্যায় তো আমি, পেট বিদ্রোহ কইরা বসছে।”

শেষ পর্যন্ত খাবার পাইছি, কিন্তু অভিজ্ঞতাটা মনে করাই দিলো—প্রযুক্তি সব সময় কাজের না, অনেক সময় নতুন সমস্যাও তৈরি করে।

তাই ভাই, শিক্ষা হইলো একটাই: এআইরে সহকারী হিসাবে রাখেন, ম্যানেজার বানাইলে বেগার খাটাইবো। না হইলে ক্ষুধা মিটবে না, বরং পেট খালি নিয়া ভবিষ্যতের পথে যাত্রা শুরু হইবো।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

ডেটা সায়েন্টিস্ট: নতুন যুগের বিজ্ঞানী

“সায়েন্টিস্ট” শব্দটা শুনলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে পরীক্ষাগারে সাদা এপ্রোন পরা একজন...

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাপরিবেশ ও পৃথিবী

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অদৃশ্য বিদ্যুৎ বিল

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জীবনকে সহজ করে তোলে, কিন্তু প্রতিটি চ্যাটবটের উত্তর এবং ছবি...

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচিকিৎসা বিদ্যা

চিকিৎসাবিজ্ঞানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: প্রতিদ্বন্দ্বী না সহযোদ্ধা?

চিকিৎসা ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) বাংলাদেশ এবং বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবাকে রূপান্তরিত করছে। আবিষ্কার...

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচিকিৎসা বিদ্যা

একটুখানি ছবি, এক সাগর তথ্য — কেমন আছে তোমার শরীর বলছে এখন তোমার মুখ!

আবিষ্কার করুন কিভাবে FaceAge, একটি AI-চালিত টুল, শুধুমাত্র একটি ছবি দেখে আপনার...

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাতথ্যপ্রযুক্তি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গল্প: সিস্টেম মনিটরিং করা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

প্রযুক্তির সাথে বাস্তব-বিশ্বের তথ্য, পাইপলাইন, মডেল এবং ব্যবহারকারীর প্রভাবের উদাহরণ মিশ্রিত করে...

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact:

biggani.org@জিমেইল.com

সম্পাদক: ড. মশিউর রহমান

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

Copyright 2024 biggani.org