নবীন প্রজন্মদের সাক্ষাৎকার সিরিজে এবার আমরা সাক্ষাৎকার নিয়েছি শামফিন হুসাইন কাশফি এর। তিনি ইনস্টিটিউট অফ বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এ রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট হিসাবে কর্মরত। তার সাক্ষাৎকারটি পড়ুন:
প্রথমেই আপনার সম্বন্ধে আমরা জানতে চাই
আমি শামফিন হোসেন কাশফি। আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালে কৃষিতে স্নাতক শেষ করেছি। এরপর আমি ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এ যোগ দিই এবং শীঘ্রই বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এ আমার মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করতে যাচ্ছি। বর্তমানে, আমি বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের একটি প্রকল্পে গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট হিসেবে কাজ করছি, যেখানে আমরা গমের ব্লাস্ট রোগের জন্য একটি প্রাথমিক সতর্কীকরণ ব্যবস্থা তৈরি করছি, যা এই রোগের মহামারী শুরুর আগে পূর্বাভাস দিতে এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে সহায়ক হবে।
আপনার গবেষনার বিষয় কি?
আমার গবেষণার বিষয় রোগের র্যাপিড মলিকুলার ডায়াগনস্টিকস, অর্থাৎ বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের রোগ দ্রুত শনাক্ত করার পদ্ধতি নিয়ে। আমি বর্তমানে কাজ করছি গমের ছত্রাক জনিত একটি রোগ নিয়ে যার নাম গমের ব্লাস্ট রোগ। এই রোগ এতটাই ভয়ানক যে প্রথমবার রোগের লক্ষণ দৃশ্যমান হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই ১০০% ফসল ধ্বংস করে ফেলতে পারে। আমরা এমন একটি প্রযুক্তি তৈরি করেছি যা রোগকে প্রথম ধাপে শনাক্ত করতে সাহায্য করবে। এটি হল CRISPR ভিত্তিক একটি শনাক্তকরণ পদ্ধতি, যা রোগটি খুব দ্রুত, সঠিকভাবে এবং কম খরচে শনাক্ত করতে পারে। আমরা ইতোমধ্যেই এই পদ্ধতিটি পরীক্ষাগারে উন্নত করেছি, মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা করে সফলভাবে প্রমাণ করেছি, এবং এখন এটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুত।
আপনার গবেষনার কাজগুলি কিভাবে আমাদের উপকৃত করছে?
- আমরা এখনো এমন কোনো টেকসই, বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের উপযুক্ত গমের জাত পাইনি যা গমের ব্লাস্টের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী। তাই কৃষকরা শুধুমাত্র প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে, এবং এ ক্ষেত্রে তাদের প্রধান অস্ত্র হলো ছত্রাকনাশক । কিন্তু এখানে যে সমস্যাটি দেখা দেয় তা হচ্ছে-
- ১. কৃষকরা অনেক সময় গমের রোগটি ঠিকভাবে শনাক্ত করতে পারে না। গমের ব্লাস্ট এবং আরেকটি ফাঙ্গাল রোগ (ফিউজেরিয়াম হেড ব্লাস্ট) দেখতে অনেকটাই এক রকম। তাই ভুল করে তারা ভুল ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে পারে, যা কার্যকর না হওয়ার পাশাপাশি ফসলের আরও ক্ষতি করতে পারে।
- ২. রোগ শনাক্তকরণের জন্য বড় ল্যাবরেটরি এবং জটিল যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়, যা সময়সাপেক্ষ (৫ ঘণ্টা পর্যন্ত) এবং মাঠ পর্যায়ে ব্যবহার করা কঠিন।
- ৩. প্রচুর ছত্রাকনাশক ব্যবহার পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
- আমাদের কিট কীভাবে এই সমস্যাগুলি সমাধান করতে পারে?
- ১. তাৎক্ষণিক শনাক্তকরণ: আমাদের কিট ব্যবহার করে কৃষকরা যদি কোনো লক্ষণ দেখতে পান, তাহলে তারা মাঠে দাঁড়িয়েই দ্রুত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে পারবেন যে এটি গমের ব্লাস্ট ই কিনা। এতে করে তারা সঠিক সময়ে সঠিক ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে পারবেন।
- ২. সহজ এবং পরিবেশবান্ধব: এই পেপার-ভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকরা সহজেই মাঠেই পরীক্ষা করতে পারবেন, কোনো জটিল ল্যাব বা ভারী যন্ত্রপাতির প্রয়োজন নেই। মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে তারা ফলাফল পাবেন, এবং প্রয়োজন পড়বে শুধুমাত্র একটি পোর্টেবল হিটারের।
- ৩. পরিবেশ রক্ষা: যেহেতু কৃষকরা সঠিক রোগ শনাক্ত করতে পারবে, তাই তারা কম পরিমাণে, সঠিক ছত্রাকনাশক ব্যবহার করবে, যা পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব কমাবে।
- ৪. সহজ ফলাফল বিশ্লেষণ: আমাদের কিটের আরেকটি বড় সুবিধা হলো এর ফলাফল বুঝতে খুবই সহজ। এটি দেখতে অনেকটা প্রেগনেন্সি স্ট্রিপের মতো। যদি স্ট্রিপে দুটি লাল দাগ দেখা যায়, তাহলে বুঝতে হবে মাঠে ব্লাস্ট রোগ আছে। আর যদি একটি দাগ থাকে, তাহলে বোঝায় গমের ক্ষেতে কোনো ব্লাস্ট রোগ নেই।
- এভাবে, আমাদের গবেষণার ফলাফল কৃষকদের হাতে সহজ, দ্রুত এবং সঠিক একটি কিট দিচ্ছে, যা গমের ফসল রক্ষা এবং পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থী যারা বিজ্ঞানে কাজ করতে চায় – তাদের জন্য আপনার কোন ম্যাসেজ কিংবা বার্তা কি?
বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য যারা বিজ্ঞানী হতে চায়, আমার বার্তা হলো- বর্তমান সময়ে, বিশ্ব এবং বাংলাদেশের সামনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা, এবং স্বাস্থ্য সেবা সংকট- এই সমস্যাগুলো বুঝে নেয়া এবং বাংলাদেশে কোন সমস্যাগুলি বেশি প্রভাব ফেলছে, তা জানা জরুরি।
কোন সমস্যা আপনার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক তা চিহ্নিত করুন এবং সেটি সমাধানে মনোনিবেশ করুন। প্রয়োজনীয় ডিগ্রি এবং শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে আপনি সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারবেন। পাশাপাশি, প্রয়োজনীয় দক্ষতা গড়ে তুলতে হবে, যেমন গবেষণার কৌশল, প্রযুক্তিগত দক্ষতা বা সহযোগিতার ক্ষমতা। গবেষণা ক্ষেত্রের পরামর্শদাতা, বিশেষজ্ঞ এবং অন্যান্য ব্যক্তিদের সাথে নেটওয়ার্ক তৈরি করুন, যারা আপনার পথপ্রদর্শক হতে পারে এবং সহযোগিতা করতে পারে।
নিজের গবেষণার প্রকল্প নির্বাচন করুন যা আপনার লক্ষ্যগুলোর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এটি হতে পারে জলবায়ু অভিযোজন কৌশল, রোগ প্রতিরোধী ফসলের উন্নয়ন, অথবা দারিদ্র্যপীড়িত জনগণের জন্য সাশ্রয়ী স্বাস্থ্য সমাধান তৈরি। সঠিক প্রকল্প আপনাকে মূল সমস্যার সমাধানে সাহায্য করবে।
Stay passionate, stay curious, and let your scientific journey be driven by the desire to make the world a better place.
আপনার যোগাযোগের তথ্য:
shamfinhossain (@) জিমেইল.com
আপনার লিংকডইন সাইটের ওয়েবএড্রেস
https://www.linkedin.com/in/shamfinkasfy
আমরা শামফিন হুসাইন কাশফি এর উত্তোরত্তর সাফল্য কামনা করি।
Leave a comment