সাক্ষাৎকার

সৈকত বড়ুয়া: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্ভাবনায় এক উজ্জ্বল পথচলা!

Share
Share

শৈশব থেকেই বিজ্ঞান কল্পকাহিনির প্রতি এক অদম্য আকর্ষণ ছিল সৈকত বড়ুয়ার। নতুন কিছু জানার প্রবল কৌতূহল আর অজানাকে জানার নেশা তাঁকে নিয়ে এসেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণার জগতে। ছোটবেলার সেই সৃজনশীল লেখালেখি, দর্শন এবং সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ এখন তাঁর গবেষণার প্রতিটি ধাপে ছাপ রেখে চলেছে।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে স্নাতক সম্পন্ন করার পর, সৈকত এখন একটি গবেষণা-ভিত্তিক স্টার্টআপ তৈরির কাজ করছেন। পাশাপাশি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় পিএইচডি করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁর মূল গবেষণার ক্ষেত্র হলো নিরাপদ ও বুদ্ধিমান সফটওয়্যার সিস্টেম তৈরি, যেখানে তিনি লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (LLM) ব্যবহার করে উন্নত এজেন্ট তৈরি করার সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছেন।

কী এই এজেন্ট?

চ্যাটজিপিটির মতো বড় ভাষার মডেল এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। তবে এর সীমাবদ্ধতাও কম নয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি চ্যাটজিপিটিকে জটিল কোনো অঙ্ক করতে বলা হয়, এটি সঠিক উত্তর দিতে পারে না কারণ গণিতের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দক্ষতা নেই। কিন্তু, যদি এটি একটি ক্যালকুলেটরের সাহায্য পায়, তবে সহজেই সমস্যার সমাধান করতে পারে। সৈকতের গবেষণা ঠিক এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই – কীভাবে বিভিন্ন টুল, ফ্যাক্ট চেকার এবং দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি সংযোজনের মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সক্ষমতা বাড়ানো যায়।

নিরাপত্তা ও নির্ভরযোগ্যতা:

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুধু বুদ্ধিমান হলেই চলে না, এটি অবশ্যই নিরাপদ এবং মানবসম্মত হতে হবে। ২০১৮ সালে Uber-এর স্বচালিত গাড়ির দুর্ঘটনার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে AI-এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। সৈকত এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য নিরলস পরিশ্রম করছেন, যাতে AI সিস্টেমগুলি শুধু দক্ষই না, বরং মানুষের সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধও ধারণ করতে পারে।

গবেষণা কীভাবে উপকারে আসছে?

সৈকতের গবেষণা ভবিষ্যতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে। বিশেষ করে, স্বাস্থ্য খাতে, যেখানে AI নির্ভুল রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা পরিকল্পনা করতে সহায়তা করবে। রোগীদের ডেটা বিশ্লেষণ করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা চিকিৎসা ব্যয় কমাতে এবং স্বাস্থ্যসেবা আরও সহজলভ্য করতে সাহায্য করবে।

অন্যদিকে, ব্যবসা ও অর্থনীতিতেও AI বিশাল পরিবর্তন আনবে। ব্যাংকিং খাতে স্বয়ংক্রিয় ঝুঁকি বিশ্লেষণ এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে আর্থিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে, গ্রাহকসেবার মান উন্নত হবে।

অনুপ্রেরণার গল্প:


সৈকতের গবেষণায় আগ্রহ জন্মায় ছোটবেলা থেকেই। তিনি বিজ্ঞান কল্পকাহিনি পড়তে ভীষণ পছন্দ করতেন এবং গবেষক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। কলেজ জীবনে তিনি সৃজনশীল লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। পাশাপাশি দর্শন এবং সাহিত্যের বই পড়ার মাধ্যমে চিন্তার জগৎকে প্রসারিত করতে থাকেন। নিজের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে লেখা লিখতে গিয়ে মানুষের মন কীভাবে কাজ করে—এই প্রশ্ন তাঁকে সবসময় ভাবিয়েছে।
একদিন তিনি এমন একটি অ্যাপের খোঁজ পান, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হাইকু (জাপানি সংক্ষিপ্ত কবিতা) তৈরি করতে পারে। বিষয়টি তাঁকে চমকে দেয়—কীভাবে একটি মেশিন অনুভূতি ছাড়াই মানুষের মতো সৃজনশীল কাজ করতে পারে? সেই মুহূর্তেই তাঁর মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতি গভীর কৌতূহল জন্ম নেয়।
অ্যাপটি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সৈকত বুঝতে পারেন, এটি জটিল অ্যালগরিদম এবং ভাষাগত ডেটার উপর নির্ভর করে কাজ করে। এই উপলব্ধি তাঁকে আরও গভীরে অনুসন্ধান করতে উদ্বুদ্ধ করে। তিনি ভাবতে শুরু করেন, একটি মেশিন কীভাবে বিশ্লেষণ এবং শেখার মাধ্যমে সৃজনশীল সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই কৌতূহলই তাঁকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণার পথে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে।
এভাবেই সাহিত্য, দর্শন এবং প্রযুক্তির প্রতি সৈকতের ভালোবাসা মিলেমিশে তাঁকে এআই গবেষণার জগতে প্রবেশ করায়, যেখানে তিনি মানবিক ও প্রযুক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির সংযোগ ঘটিয়ে নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচনের স্বপ্ন দেখতে থাকেন।

ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানীদের জন্য পরামর্শ:

সৈকত মনে করেন, বিজ্ঞান ও গবেষণায় সফল হতে হলে একটি উন্মুক্ত মানসিকতা ও অভিযোজন ক্ষমতা থাকা জরুরি। এআই গবেষণার ক্ষেত্র প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে, তাই সাম্প্রতিক উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। এছাড়া, গভীর অধ্যবসায় ও নিরবিচারে কাজ করার মানসিকতা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার মনোভাবই একজন গবেষককে সফল করতে পারে।

বিজ্ঞান সহজ নয়, এটি কঠিন। তবে কখনো হাল ছাড়বেন না। প্রতিবার নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করুন।

সৈকতের পথচলা এবং গবেষণার এই গল্প বাংলাদেশের তরুণ বিজ্ঞানীদের জন্য নিঃসন্দেহে এক বিশাল অনুপ্রেরণা। তাঁর মতো তরুণ গবেষকরা বাংলাদেশকে প্রযুক্তির অগ্রগতির পথে নিয়ে যেতে এক অনন্য ভূমিকা পালন করছেন।

যোগাযোগ:
সৈকত বড়ুয়া
ইমেইল: [email protected]
লিংকডইন: Saikat Barua
গবেষণা প্রোফাইল: Google Scholar

Saikat Barua: A Promising Journey in Artificial Intelligence!

From a young age, Saikat Barua had an unquenchable fascination with science fiction. His relentless curiosity and passion for discovering the unknown have brought him into the world of artificial intelligence (AI) research. His childhood interest in creative writing, philosophy, and literature continues to influence every step of his research journey.

After completing his Bachelor’s degree in Computer Science and Engineering from North South University, Saikat is now working on establishing a research-based startup. Simultaneously, he is preparing for a PhD in artificial intelligence. His primary research focus is on developing secure and intelligent software systems, particularly leveraging Large Language Models (LLMs) to create advanced AI agents.

What are AI agents?


Large language models, like ChatGPT, have become an integral part of our daily lives, yet they come with limitations. For instance, if ChatGPT is asked to solve a complex math problem, it may struggle to provide the correct answer due to a lack of dedicated mathematical capabilities. However, if it is equipped with tools such as a calculator, it can solve the problem effortlessly. Saikat’s research revolves around enhancing AI capabilities by integrating tools, fact-checkers, and long-term memory to make them more efficient and reliable.

Security and reliability: The key challenges:


AI systems should not only be intelligent but also safe and ethical. Ensuring the security of AI is crucial to prevent incidents like the 2018 Uber self-driving car accident. Saikat is tirelessly working to address these challenges, aiming to create AI systems that are not only efficient but also aligned with human social and ethical values.

How will this research benefit society?


Saikat’s research has the potential to revolutionize various sectors in the future. In healthcare, AI can assist in accurate diagnosis and treatment planning. The ability to analyze patient data quickly will help reduce medical costs and make healthcare more accessible.

Moreover, AI will bring significant changes to the business and financial sectors. In banking, automated risk analysis and rapid decision-making will enhance financial security while improving customer service.

The Inspiration Behind His Research:


Saikat’s interest in research was sparked from an early age. He was an avid reader of science fiction and dreamed of becoming a researcher. During his college years, he engaged in creative writing and expanded his knowledge by reading philosophy and literature. He was always fascinated by the workings of the human mind.

One day, he came across an app that could automatically generate haiku (a form of Japanese short poetry). This discovery amazed him—how could a machine perform such a creative task without human emotions? This moment ignited his deep interest in AI.

As he analyzed the app, he realized that it operated based on complex algorithms and linguistic data. This revelation inspired him to delve deeper into AI, leading him to explore how machines can analyze and learn to make creative decisions. His curiosity ultimately set him on the path of AI research.

Thus, his love for literature, philosophy, and technology merged to guide him into the world of AI research, where he dreams of exploring new horizons by bridging the gap between human and technological perspectives.

Advice for Future Scientists:


Saikat believes that to succeed in science and research, one must have an open mind and adaptability. The field of AI research is constantly evolving, and staying updated with the latest advancements is essential. Additionally, perseverance and a relentless pursuit of knowledge are crucial. Learning from failures and maintaining a forward-thinking mindset is what makes a researcher successful.

“Science is not easy; it is challenging. But never give up. Always try to solve problems from a new perspective.”

Saikat’s journey and research serve as an inspiration for young scientists in Bangladesh. Aspiring researchers like him are playing a vital role in advancing the country’s technological progress.

Contact:
Saikat Barua
Email: [email protected]
LinkedIn: Saikat Barua
Research Profile: Google Scholar

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
সাক্ষাৎকার

সায়েদা রুবাইয়া নাসরিন: কৌতূহল থেকে বিজ্ঞানীর সাফল্যের গল্প!

সায়েদা রুবাইয়া নাসরিন, একজন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী, বর্তমানে জাপানের কিয়োতো বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় নিযুক্ত।...

সাক্ষাৎকার

শাকিরুল ইসলাম লিয়ন: এক কৌতূহলী গবেষকের যাত্রা!

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র শাকিরুল ইসলাম লিয়ন কেবল একজন শিক্ষার্থী...

সাক্ষাৎকার

 শিক্ষা, গবেষণা ও মানবাধিকার: ড. আহমেদ আবিদের গল্প!

ড. আহমেদ আবিদুর রাজ্জাক খান (আহমেদ আবিদ)সহকারী অধ্যাপক, জেনারেল এডুকেশন, ইউনিভার্সিটি অফ...

অন্যান্যসাক্ষাৎকার

ড. আবুল কালাম আজাদ: ক্যান্সার গবেষণায় এক অগ্রণী পথিকৃৎ!

ড. আবুল কালাম আজাদ বর্তমান পদবী: রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট, মেডিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি এবং ইমিউনোলজি...

সাক্ষাৎকার

কাজী শফায়েতুল ইসলাম: গবেষণা ও সহমর্মিতার মাধ্যমে সম্প্রদায়ের সেতুবন্ধন!

জনস্বাস্থ্যের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে চলা কাজী শফায়েতুল ইসলামের জীবনগল্প অধ্যবসায়, জ্ঞানার্জন...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.