নবীন বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকার পর্বে এইবার আমরা মুখোমুখি হয়েছিলাম জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিজ্ঞানী রোজানা বিনতে আজাদ এর সাথে। তিনি ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইবিজিই) এ কর্মরত। নিম্নে তার সাক্ষাৎকারটি পড়ুন:
প্রথমেই আপনার সম্বন্ধে আমাদের একটু বলুন।
আমি রোজানা বিনতে আজাদ। আমার জন্ম এবং বেড়ে উঠা নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলা শহরে। আমার বাবা মো: এ. কে. আজাদ বিসিএসএস সরকারি কলেজে অর্থনীতি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। আমার মা রাহেমা খাতুন স্কুল শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুই বোনের মধ্যে আমি বড়। আমার স্কুল এবং কলেজ দুইটাই ছিল নাটোর। পরবর্তীতে আমি বি এস (কৃষি) ডিগ্রি গ্রহণ করি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তারপর এম এস ডিগ্রির জন্য ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইবিজিই) ভর্তি হই। সেখানেই বর্তমানে আমি আমার গবেষণা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
আপনার গবেষনার বিষয় কি?
আমি গবেষণা করছি গমের ব্লাস্ট রোগ নিয়ে। এটি একটি ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট গমের রোগ। ব্লাস্ট রোগমুক্ত উচ্চ ফলনশীল গমের নতুন জাত উদ্ভাবন আমাদের প্রধান লক্ষ্য। সে উদ্দেশ্যে শীতপ্রধান দেশের গমের জাত (উন্টার হুইট) এর সাথে আমাদের দেশীয় গমের জাত (স্প্রিং হুইট) এর কৃত্রিম পরাগায়নের মাধ্যমে গমের লাইন তৈরি করছি যা ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী। উন্টার হুইট থেকে প্রাপ্ত ব্লাস্ট প্রতিরোধী আরএমজি ৮ (Rmg8) নামক জিন দেশীয় গমের জিনোমে ট্রান্সফার করা হচ্ছে যেখানে আগে থেকেই ব্লাস্ট সহ আরো অনেক রোগ প্রতিরোধী ক্রোমোজোম সেগমেন্ট টুএনএস ট্রান্সলোকেশন(2NS Translocation) উপস্থিত। এই পদ্ধতি কে বলা হয় জিন স্টাকিং।বর্তমানের এই রেজিস্ট্যান্স জিন স্টাক্ড গমের এডভান্সড লাইন গুলো ল্যাব এবং ফিল্ডে সন্তোষজনক ফলাফল প্রদান করছে।
আপনার গবেষনার কাজগুলি কিভাবে আমাদের উপকৃত করছে?
বাংলাদেশের কৃৃষি ক্ষেত্রের জন্য গমের ব্লাস্ট রোগ একটি নতুন সঙ্কার নাম। এটি ২০১৬ সালে বাংলাদেশে প্রথম দেখা দেয় এবং সেবছর অনেক কৃষকের মাঠের শতভাগ ফসল এই রোগে নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে রোগটি দেশের গম উৎপাদনকারী অঞ্চল গুলোতে ছড়িয়ে পরছে। উদ্বেক সৃষ্টিকারী বিষয় হচ্ছে আমাদের দেশে ডিউরেবল ব্লাস্ট রেজিস্টান্ট গমের কোনো জাত নেই। সুতরাং ব্লাস্ট রোগমুক্ত উচ্চ ফলনশীল গমের নতুন জাত দেশের কৃষিক্ষেত্রে খুবই প্রয়োজনীয়। এছাড়া আমার গবেষনা আশা করছি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করনে ভূমিকা রাখবে।
একজন বিজ্ঞানীর কি কি গুণ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
বিজ্ঞান চর্চা একটি সাধনার মত। তাই একজন বিজ্ঞানীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুন গুলো মধ্যে পরে ধৈর্য, জ্ঞানচর্চার আগ্রহ এবং নতুন ধারায় চিন্তা করার ক্ষমতা।
বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থী যারা বিজ্ঞানে কাজ করতে চায় – তাদের জন্য আপনার কোন ম্যাসেজ কিংবা বার্তা কি?
আমি মনে করি আমাদের দেশের গবেষণা ক্ষেত্রে ইয়াং মাইন্ড খুবই প্রয়োজনীয়। কারণ তারা মুক্তমনা এবং তাদের যথেষ্ট এনার্জি রয়েছে। তরুণদের উচিত গতানুগতিক ভবে চলিত পদ্ধতির বাইরেও চিন্তা করার সুযোগ করে নেয়া এবং যকোনো আলোচনা ও সমালোচনার জন্য উন্মুক্ত থাকা । আউট অব দা বক্স থিংকিং যেকোনো ইনোভেশনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর গবেষণা কার্যে সবচেয়ে বেশি দরকার ধৈর্য এবং নতুন কিছু জানার আগ্রহ।
আপনার যোগাযোগের তথ্য:
Email: rojanaoyshi0111 [@] gmail
আমরা বিজ্ঞানী রোজানা বিনতে আজাদ এর উত্তোরত্তর সফলতা কামনা করি।
Leave a comment