একটা শুকনো বিকেলে ব্যস্ত মিরপুর রোড ধরে হেঁটে যাচ্ছিলাম। মাথায় তখন সিঙ্গারার স্বাদ। হুট করেই মনে হলো, ফোনটা খুলে অর্ডার দিই না হয়। অর্ডার কনফার্ম করতে না করতেই রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে দেখলাম, একটা ছোট্ট রোবট গুটুগুটু করে এগিয়ে আসছে। রোবটটি দেখতে যেন ছোট বাক্সের মতো—সামনে একটা স্ক্রিন, চারপাশে সেন্সর। সর্বশেষ প্রযুক্তিতে তৈরি এই রোবট ঢাকার ফুটপাত দিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালিত হয়ে এসে আপনার সিঙ্গারা পৌঁছে দিচ্ছে!
এই দৃশ্যটি ২০৩০ সালের ঢাকা শহরের একটি কল্পিত ভবিষ্যৎ চিত্র হলেও, বিশ্বে এখনই রোবটিক ডেলিভারি প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে, Serve Robotics নামে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে লস অ্যাঞ্জেলেসসহ বিভিন্ন শহরে তাদের স্বয়ংক্রিয় রোবট দ্বারা খাবার ডেলিভারি শুরু করেছে। তারা শহরের ফুটপাত ধরে চলতে পারে, ভিড় এড়ায়, রাস্তার প্রতিবন্ধকতা শনাক্ত করে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে যায়। ভবিষ্যতে তারা আরও বড় আকারে বিস্তার ঘটাতে চায়, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শহরও রয়েছে।
ঢাকায় এমন রোবট যদি বাস্তবেই চালু হয়, তা শহরের যানজট আর কর্মঘণ্টা বাঁচাতে দারুণ সহায়ক হতে পারে। লস অ্যাঞ্জেলেসে Serve Robotics-এর সাফল্য দেখে এটা অনুমান করা যায় যে, জনবহুল ও যানজটপ্রবণ ঢাকার মতো শহরেও রোবটিক ডেলিভারির সম্ভাবনা রয়েছে।
কীভাবে রোবট ডেলিভারি কাজ করে? যুক্তরাষ্ট্রে Serve Robotics-এর রোবটগুলো যেখানে একবার নির্দেশনা পায়, সেখানকার কোনো রেস্তোরাঁ বা ফুড আউটলেট থেকে খাবার সংগ্রহ করে এবং রাস্তার জিপিএস তথ্য ও রিয়েল-টাইম সেন্সর ব্যবহার করে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছায়। ঢাকার মতো জনবহুল অঞ্চলে মানুষের চলাচল ও যানবাহনের চাপ অনেক বেশি, তবে ভবিষ্যতে পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী যদি একই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায়, তাহলে এসি, বাতাস, রোদের পাশাপাশি শিশুর দৌড়ঝাঁপ থেকে শুরু করে এলোমেলো পার্ক করা মোটরবাইক—সবকিছু সামলে ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব হবে।
রেস্তোরাঁর সাথে অংশীদারিত্ব যুক্তরাষ্ট্রে Serve Robotics ইতোমধ্যে বেশকিছু জনপ্রিয় রেস্তোরাঁর সঙ্গে অংশীদারিত্ব করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য হলো ডেলিভারি খরচ কমানো ও সময়মতো পৌঁছানোর নিশ্চয়তা দেওয়া। ভবিষ্যতে, ঢাকা বা বিশ্বের অন্যান্য শহরে এ ধরনের পরিষেবা চালু হলে, সেটি হতে পারে খাবার ডেলিভারিতে এক বড় ধাপ।
জনপ্রিয় মতামত মিরপুরের বাসিন্দা (এবং প্রযুক্তি-ভাবনা শেয়ার করা এক নাগরিক) তাহমিনা রহমান বললেন, “যদি সত্যিই এমন রোবট একদিন ঢাকার ফুটপাতে চলে, আমার মতো কর্মজীবী মানুষের জন্য বড় স্বস্তি হবে। রোদে ঘাম ঝরিয়ে বাইরে না গিয়ে সিঙ্গারা পেয়ে যাব—ভাবতেই ভালো লাগে!” অন্যদিকে প্রযুক্তি বিশ্লেষক আরাফাত আনোয়ার মনে করেন, “যুক্তরাষ্ট্রের Serve Robotics যেভাবে মানুষের ভিড়ে রোবট চালাচ্ছে, তাতে বোঝা যায় ব্যস্ত শহরে এই ধরনের ডেলিভারি বাস্তবসম্মত। ঢাকায় এটি চালু হলে প্রযুক্তি-নির্ভর কর্মসংস্থানও বাড়বে।”
কেন গুরুত্বপূর্ণ মানুষের হাতে ডেলিভারি করার মতো কাজ কিছুটা কমে যেতে পারে, তবে একই সঙ্গে রোবট পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে—এআই লজিস্টিকস, রোবট ম্যানেজমেন্ট প্রভৃতি ক্ষেত্রে। Serve Robotics যেভাবে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করছে, সেটা আগামীতে অন্যান্য বড় শহরেও বিস্তার ঘটাতে পারে।
সত্যি বলতে, প্রযুক্তি সবসময় মানুষের দৈনন্দিন কাজকে সহজতর করার জন্যই আসে। হয়তো ২০৩০ সালে ঢাকায় রোবট যদি সিঙ্গারা পৌঁছে দিতে পারে, সেটা কোনো বড় বিস্ময় হবে না—কারণ বিশ্বের কোনো কোনো কোণায় এটাই তো এখন বাস্তবভাবে ঘটছে!
Leave a comment