কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাতথ্যপ্রযুক্তি

বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হল রোবট ম্যারাথন

Share
Share

একটা রোবটের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দৌড়ানোর কল্পনা করতে পারেন?
আপনাদের কল্পনা করতে সমস্যা হলেও বেইজিং সম্প্রতি আয়োজন করলো এক অভিনব অনুষ্ঠান: বিশ্বের প্রথম মানবাকৃতির রোবট হাফ-ম্যারাথন

এক উজ্জ্বল সকালে, যখন শহর জুড়ে হাজার হাজার মানব দৌড়বিদ নিজেদের শক্তি আর সহিষ্ণুতার পরীক্ষা দিচ্ছিলেন, তখন তাদের পাশে দৌড়াতে শুরু করেছিল ২১টি বিশেষ অতিথি—হিউম্যানয়েড রোবট
দর্শকদের কৌতূহল ছিল তুঙ্গে। কে কতদূর যাবে? আদৌ কি রোবটেরা শেষ পর্যন্ত টিকতে পারবে?

বিজয়ীর নাম Tiangong Ultra

রোবটদের মধ্যে প্রথম হয়ে ফিনিশ লাইন পার হয় Tiangong Ultra। সময় লাগে ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিট।
মানব দৌড়বিদদের তুলনায় এটা বেশ ধীর—অনেক শখের দৌড়বিদের চেয়েও পিছিয়ে। তবে এখানে গতি নয়, বরং ইতিহাস রচনা করাই ছিল আসল বিষয়।

Tiangong Ultra একা ছিল না; তার পাশে ছিল একজন মানব সহায়ক, হাতে একটি সিগন্যালিং ডিভাইস—রোবটের চলাচল নির্দেশ করছিলেন তিনিই।
মানুষ ও যন্ত্রের এই যৌথ প্রয়াসই হয়তো ভবিষ্যতের পৃথিবীতে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

রোবট র কেমন করলো?

সব রোবটের গল্প এতটা সাফল্যময় ছিল না। কেউ মাঝপথে স্পার্ক ছড়িয়ে থেমে গেল, কেউ আবার ভ্রান্ত হয়ে বেষ্টনিতে ধাক্কা মারলো, ভেঙে পড়লো, আর কেউ তো দৌড় শুরুর আগেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। তবুও, মাত্র চারটি রোবট নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দৌড় শেষ করেছিল—যেটা নিজেই এক বিশাল সাফল্য।
প্রতিযোগিতার জন্য রোবটদের কিছু কঠিন শর্ত পূরণ করতে হয়েছিল:

  • দুই পায়ে হাঁটার ও দৌড়ানোর সক্ষমতা,
  • মানব-সদৃশ আকৃতি,
  • আর আলাদা নির্ধারিত লেনে দৌড়।

বিতর্ক এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

রোবটের অংশগ্রহণ ম্যারাথনে নিয়ে এসেছে এক ভিন্ন মাত্রার বিতর্ক।
অনেকে দেখছেন প্রযুক্তির জয়যাত্রার নিদর্শন হিসেবে, আবার কেউ কেউ ভাবছেন—প্রতিযোগিতার আসল উদ্দেশ্য কি এতে চাপা পড়ে যাচ্ছে?

একটি বড় প্রশ্নও উঠেছে—
যখন রোবটরা মানুষের সমান বা তার চেয়েও দক্ষ হয়ে যাবে, তখন প্রতিযোগিতার মানে কী থাকবে?

হয়তো ভবিষ্যতের ম্যারাথনে মূল প্রতিযোগিতা হবে মানুষ বনাম রোবট নয়—বরং মানুষ ও রোবটের সম্মিলিত দক্ষতা কতদূর যেতে পারে, তার পরীক্ষায়।

ভবিষ্যতের ম্যারাথনের কল্পচিত্র

কল্পনা করুন, ২০৫০ সালের এক সকালের দৃশ্য:
আকাশে উড়ছে শত শত ড্রোন, সরাসরি সম্প্রচার করছে বিশ্বজুড়ে।
স্টেডিয়ামের বাইরে সারি সারি মানব ও হিউম্যানয়েড দৌড়বিদ—কেউ প্রযুক্তির জাহাজ, কেউ রক্ত-মাংসের মানুষ।
সিগন্যাল লাইট জ্বলে উঠছে, “Go!” নির্দেশ করছে।
দৌড় শুরু—মাটির কাঁপন, ইস্পাতের শব্দ আর মানুষের হাঁপানির সুর মিশে এক অদ্ভুত সিম্ফোনি তৈরি করছে।

কিন্তু ম্যারাথনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তটা ঘটলো তখন—
একজন মানব দৌড়বিদ হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে পাশে থাকা এক রোবট থামলো, হাত বাড়িয়ে দিল সাহায্যের জন্য।
দৌড় তো থাকবেই, তবে মানবতা আর প্রযুক্তির বন্ধন হবে ভবিষ্যতের আসল বিজয়।

ভবিষ্যতের চিন্তা: কী আসছে সামনে?

হয়তো একদিন, রোবট আর মানুষ মিলে দল গঠন করবে—
“টিম হিউম্যান”, “টিম মেশিন”, আর “টিম সিমবায়োসিস” (মানুষ+রোবট মিলে গঠিত দল)।
দৌড়ের মাপকাঠি হবে কেবল গতি নয়, বরং কৌশল, সহযোগিতা আর সহমর্মিতা।

রোবটেরা শিখবে মানবিক মূল্যবোধ—কীভাবে একে অপরকে সাহায্য করা যায়, হার-জিতের বাইরে কেমন করে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা যায়।
আর মানুষ শিখবে রোবটের কাছ থেকে শৃঙ্খলা, ধৈর্য আর সীমাহীন উদ্যমের পাঠ।

প্রতিযোগিতা তখন আর শুধুমাত্র “কে আগে ফিনিশ লাইনে পৌঁছালো”—এটুকু থাকবে না।
প্রতিযোগিতা হবে—কে কাকে আরও ভালোভাবে সাহায্য করতে পারে, কে কাকে আরো এগিয়ে নিতে পারে।

ভবিষ্যতের ম্যারাথন হবে শুধু শরীরের নয়, মন আর মস্তিষ্কের এক মহাযাত্রা।
এমন এক দুনিয়া, যেখানে প্রযুক্তি আর মানবতা একে অপরকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে এগিয়ে যাবে দূর আকাশের দিকে।


যখন সেই দিন আসবে, আপনি কী প্রস্তুত হবেন রোবট-মানুষের যুগপৎ দুনিয়ার অংশ হতে?

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact:

biggani.org@জিমেইল.com

সম্পাদক: ড. মশিউর রহমান

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

Copyright 2024 biggani.org